প্রাণের ক্যাম্পাস নিটার ভালো নেই। ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড রিসার্চ( নিটার), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তি ইউনিট অন্তর্ভুক্ত ৭ টি প্রতিষ্ঠান এর একটি।
নিটার এ গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে বিভিন্ন বিষয় এ সংস্কার এর জন্য আন্দোলন চলছে।
নিটার এর প্রাক্তন অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান,যার বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে ২০২১ সালে নিটারে সংগঠিত কোটি টাকার দুর্নীতি ও যৌন হয়রানি মূলক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয় ও তাকে পদত্যাগ এ বাধ্য করা হয়।
পরবর্তীতে এই নিপীড়ক পূর্ববর্তী সরকারের কাছের লোক হওয়ার সুবাদে ঢাকা ইউনিভার্সিটির লেদার ইইন্সটিটিউট এর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পান এছাড়াও নিটার এর পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বিটিএমএ এর উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন।
নিটার থেকে উৎখাত এর পরও নিটার এর বিভিন্ন বিষয় তার নির্দেশেই চলতে থাকে। ২০২১ এ তার বিরুদ্ধে আন্দোলন এর সময়ও সে স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতা দের দ্বারা ও পুলিশ প্রসাশন দ্বারা আমাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে আন্দোলন থেকে সরে আসার চাপ দিচ্ছিলো। নিটার পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়া বিটিএমএ এর গভর্নিং বডিতে যায়গা হওয়ার পর তার নির্দেশেই তার নিটার পরিচালনার সময় তাকে অনুসরণকারী টিচারদের দ্বারা অনিয়ম চলতে থাকে। এই শিক্ষকগনের অনেকেই মিজানের সাহায্যে কাজের সুবাদে পদন্নোতি পেয়ে এসোসিয়েট অধ্যাপক, এসিস্ট্যান্ট অধ্যাপক ও হয়ে যান।
মিজানের নিটার পরিচালনার সময় নিটার এর শিক্ষক যারা মিজানের দূর্নীতির জন্য দ্বায়ীদের ছিল ও সাহায্যকারী ছিল তাদের কোনো শাস্তি নিশ্চিত করা হয়নি, এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণাদি পেশ করার পর এডমিন কর্তৃক সেসব ধ্বংস করা হয়।
গত ৫ আগষ্ট সৈরাচারী সরকারের পতনের পর মিজানের লেদার ইন্সটিটিউট এবং ২০২১ পরবর্তী বিভিন্ন স্থানে অপকর্ম গুলো সামনে চলে আসে এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে চলে আসে।
সৈরাচার সরকারের পতনের পর নতুনভাবে আমাদের নিটার কে গঠনের জন্য এবং বিভিন্ন অনিয়মের, দুর্নীতি স্বমূলে উচ্ছেদ এর জন্য আমরা নিটারিয়ান রা এক হয়ে আন্দোলন শুরু করি।
আন্দোলনে ২০২১ এর আগে এবং মিজান এর নিটার ছাড়ার পর বিভিন্ন অপকর্ম,দূর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা,মিজানের সহকারী হিসেবে যেসকল শিক্ষক এতদিন নিটার এর গঠনতন্ত্রের ধ্বংসে কাজ করেছেন তাদের পদত্যাগ এর দাবী জানানো হয়।
শিক্ষার্থীরা ১৪ জন শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো হয়ে গতকাল রোববার বিকেল থেকে এ বিক্ষোভ শুরু হয়।
দাবীগুলোর মধ্যে রয়েছে-
-নিটার থেকে প্রতি মাসে ২ কোটি+ টাকা ইন্সলমেন্ট ফী নিয়ে থাকে,মাসিক বেতন ও অন্যান্য আনুসাঙ্গিক খরচের পর ১ কোটি+ টাকা থেকে যায়,যার বিপরীতে আমাদের সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে না।এই টাকা নিটার এর ফান্ডে থাকার কথা থাকলেও নানা অনিয়মের কারণসেটা থাকছে না।
-বিভিন্ন সময় ছোটখাটো নানা দাবি প্রশাসনকে জানাতে চেয়ে শিক্ষার্থীরা ব্যর্থ হয়েছেন। কর্তৃপক্ষ বিষয়গুলোর কোনো গুরুত্ব না দিয়ে উল্টো শিক্ষার্থীদের পরিবারের কাছে অভিযোগ দেওয়াসহ অভিভাবকদের ডেকে এনে হয়রানিসহ নানাভাবে অপদস্থ করা। মিজানের অপকর্মে সম্মিলিত ভাবে সাহায্য সহযোগীতা এতদিন যারা এসব কর্মকান্ডে জরিত ছিলেন তাদের “অভিযোগ স্বীকারপূর্বক পদত্যাগ”।
-পরীক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে একজনকে ২ বার সুযোগ দিয়ে দুই বছরের জন্য দায়িত্ব দেওয়া
-নিটারের পিপিপির নামে বিটিএমএ ও বিটিএমসির সঙ্গে কীভাবে সংযুক্ত হয়ে পিপিপির সকল সুযোগ–সুবিধা নোটিশ আকারে প্রকাশ করা।
-এছাড়া মেয়েদের হোস্টেলের বিষয়ে মানোন্নয়ন, হোস্টেলের ভেতরে শিক্ষকদের আবাসিক কোয়ার্টার অপসারণ করা
-বিভিন্ন বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কারণে বাতিলকৃত সকল শিক্ষার্থী সিট পুনর্বহাল, সেইসঙ্গে সুনির্দিষ্ট হল কমিটি গঠন করে কার্য প্রণালী প্রকাশ করা
-যেকোনো পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১৬টির বেশি ইনস্টলমেন্ট নেওয়া যাবে না, তিন মাস পর পর নেয়া।
-“পূর্বের আন্দোলনে এ শিক্ষার্থীদের পাশে থাকায় ও মিজানের বিরুদ্ধে বলায় অপসারণকৃত শিক্ষকদের দ্রুত নিয়োগ দিতে হবে বলে দাবি করেছে শিক্ষার্থীরা।”
-এছাড়াও ১১ তম ব্যাচ এর স্কলারশিপ বন্ধ রাখার কারণ দর্শানো এবং অযথা হয়রানির কারণ দেখাতে হবে এবং বৈষম্যবাদ দিয়ে সকল সুযোগ–সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
-এছাড়া আমরা মোট ১৬টি দাবি শিক্ষকদের সামনে তুলে ধরি।
এই সকল বিষয় এ কথাগুলো শোনার জন্য গতকাল
বিক্ষোভ চলমান অবস্থায় দুপুর ১২টার দিকে নিটারের গভর্নিং বডির সদস্য বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের (বিটিএমসি) চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়াউল হক প্রতিষ্ঠানটিতে আসেন ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণের মৌখিক আশ্বাস দেন। তবে শিক্ষার্থীরা লিখিতভাবে দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন।
এমতাবস্থায় আমরা সকল শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ ভাবে ক্যাম্পাস এ অবস্থান করছিলাম। এবং এডমিন ভবনে টিচার রা অবস্থান করছিল রবিবার থেকে এবং আমাদের দাবীগুলো মেনে নিতে অস্বীকার জানিয়ে আসছিল। আমরা নিটার এর ভেতর এর মুখে শান্তিপূর্ণ ভাবে অবস্থান করছিলাম।
এমতাবস্থায় আজ সকাল ৮ টার পর ১৫০+ শিক্ষক-কর্মকর্তা কতিপয় শিক্ষক ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে উদ্যত হন। এর মাঝে সৈরাচার স্বরকার ও মিজানের কতিপয় শিক্ষক দোসর রা আমাদের শিক্ষার্থীদের মারধর করে ও গেট এর তালা ভেঙে বের হয়ে যায়।
নিটার এর ১০ ব্যাচ এর “মেহেদী” এখন হাসপাতালে আছেন।
সেনাবাহিনী ক্যাম্পাস এর সামনের প্রাঙন অবরুদ্ধ করে রেখেছেন।
আমাদেত এই শান্তিপূর্ন বিক্ষোভ এ যেসব শিক্ষক আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের উপর হামলা ও মারধর করলো তারা কখনোই ছাত্রদের ভালো চাইতে পারেন না,এরা প্রকৃত শিক্ষক হতে পারেন না।এনাদের হাতে ছাত্ররা সেফ নাহ। ছাত্রীরাও তাদের হামলা থেকে বাঁচতে পারেননি।
এই অবস্থায় ক্যাম্পাস বন্ধ করে দিয়ে তারা দ্বায়মুক্ত হতে চাচ্ছে। আমরা কখনই সকল শিক্ষকের বিরুদ্ধে নই। সকল স্তর থেকে বৈষম্যকারী শিক্ষকদের অপসারণই আমাদের দাবী।
আজ সেই সকল শিক্ষকই আমাদের ক্যাম্পাস কে বন্ধ করে আমাদের অস্তিত্ব ও আমাদের ভবিষ্যৎ হুমকীর মুখে ফেলে দিয়েছে।
আমরা এই ক্যাম্পাস সৈরাচার মুক্ত না করে ঘরে ফিরতে পারিনা।আমাদের দেশের সকল শিক্ষার্থী ভাই দের এই অবস্থায় আমাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।