রবীন্দ্রনাথ একটা কথা বলেছিলেন, ‘খোসা হইতে আঁটি পর্যন্ত কিছুই ফেলা যাইবে না।’ অর্থাৎ আগাগোড়া সম্পূর্ন অংশ যার ব্যবহারযোগ্য! আনারসের ক্ষেত্রে অনেকটা সেরকমই ঘটে। আনারসের নাম শুনলেই জিভে পানি চলে আসে। এই অত্যন্ত মিষ্টি, রসাল সুস্বাদু ফল। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের ফল এই আনারস।যার বৈজ্ঞানিক নাম “এনান্যাস সেটাইভ্যাস”। পর্তুগীজ শব্দ এনান্যাস থেকে আনারস শব্দের উৎপত্তি।যার অর্থ চমৎকার ফল। রাসায়নিক বিচারে ব্রোমাইল এ্যালকোহলের জন্য আনারস স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয়। তবে আনারস এমনই একটি ফল যা যেমন ফলের যোগান দেয়, ঠিক তেমনই এর পাতা হতে প্রাপ্ত ফাইবার দিয়ে আধুনিক ও রুচিশীল পোশাক তৈরি করা যায় । আনারস থেকে প্রাপ্ত ফাইবারের নাম “পিনা ফাইবার”। এই পিনা ফাইবারের মধ্যে আলফা সেলুলসিক , হেমি সেলুলসিক ও উল্লেখযোগ্য পরিমানে লিগ্নিন রয়েছে। পিনা ফাইবার থেকে উৎপন্ন সুতা দিয়ে সুন্দর ও রুচিশীল ফ্যাশানেবল পোশাক প্রস্তুত করা হয়।
🔷আনারস চাষের ইতিহাস:
পর্তুগীজ নাবিকরা ১৫৪৮ সালে প্রথম ভারতের কেরালা রাজ্যে আনারস নিয়ে আসেন। ভারতের আবহাওয়া আনারসকে চমৎকারভাবে মানিয়ে নেয়। খৃস্টান মিশনারীরা সপ্তদশ শতাব্দীতে কেরালা থেকে মেঘালয়ে আনারস নিয়ে যান। গারোপাহাড়ের ভাজে ভাজে শুরু হয় সফল আবাদ। গারোরা জুম চাষে আনারসকে সম্পৃক্ত করে। ১৯৪২ সালে মধুপুর উপজেলার পাহাড়ি টিলায় আনারস আবাদ শুরু হয়। বর্তমানে মধুপুর ছাড়াও গড় এলাকার মুক্তাগাছা, ফুলবাড়িয়া ও ঘাটাইল উপজেলায় প্রায় ২০ হাজার একরে আনারস আবাদ হয়।
🔷পিনা ফাইবার উৎপাদন প্রক্রিয়া:
বাগান হতে ফল সংগ্রহের পর বিপুল পরিমান আনারস পাতা ও কান্ড বর্জ্য হিসাবে ফেলে দেয়া হয়। বস্তুত ধারনা করা হয়ে থাকে এটি কোনো কাজেই আসেনা। তবে এ ফলজাত বর্জ্যকে আর ফেলনা মনে করার অবকাশ নেই । গবেষণায় আনারসের পাতা ব্যবহারের উপায় পাওয়া গিয়েছে। প্রযুক্তিগত ব্যবহারের মাধ্যমে এবং সঠিক প্রক্রিয়াজাতকরনের মাধ্যমে আনারসের পাতা থেকে সুতো বের করে নেওয়া সম্ভব। আনারস পাতা থেকে সুতো তৈরি কিন্তু কঠিন কিছু নয়।
আনারসের পাতা থেকে পিনা ফাইবারকে দুইভাবে নিষ্কাশন করা হয় । প্রথমত হাত দ্বারা “ম্যানুয়ালি” নিষ্কাশন করা যায় আবার “মেকানিক্যালি” নিষ্কাশনও করা যায়।
✅ ম্যানুয়ালি নিষ্কাশন প্রক্রিয়া :
প্রথমে বাগান থেকে আনারসের পাতা সংগ্রহ করে ধুয়ে শুকাতে হয় । এরপর হাতে দিয়ে ছোট সিরামিক/স্টীলের প্লেট দ্বারা আঁচড়িয়ে আঁশ নিষ্কাশন করা হয়। সেই আঁশ রোদে শুকিয়ে প্রস্তুত হয় সুতার গুটি। এভাবে একজন শ্রমিক দিনে সর্বোচ্চ ৫০০ পাতাকে ফাইবারে রূপান্তর করতে পারে।
✅মেকানিক্যালি নিষ্কাশন প্রক্রিয়া :
যদি মেক্যানিক্যালি নিষ্কাশন করা হয় তবে সেই মেশিনে ৩ প্রকারের রোলারে থাকতে হবে। এক্ষেত্রে প্রথমে আনারসের পাতাকে Feed Roller দিয়ে চালনা করলে তা Leaf Scartching Roller পৌছায় । তখন পাত্র উপেরর Waxy Layer গুলো Scartching Roller এর ব্লেড দ্বারা আঁচড়ানো হয় ফলে বেরিয়ে আসে কাঙ্ক্ষিত “পিনা ফাইবার”
আবার ওই পাতা ৩-৪দিন জলে পচালেও সুতো বেরিয়ে আসে।
🔷পিনা ফাইবারের বৈশিষ্ট্য:
🍁Pineapple Fiber অত্যন্ত নরম এবং মোলায়েম
🍁এটি Hemp Fiber এর তুলনায় বেশ soft
🍁ফাইবারটি লিনেনের মতই সুন্দর এবং প্রাকৃতিক ঔজ্জ্বল্য আছে
🍁ওজনে হালকা এবং অন্যান্য ফাইবারের সাথে সহযেই মেশানো যায়।
🍁সহযেই ধোয়া যায় এবং ড্রাইওয়াশের প্রয়োজন হয়না।
🍁এই ফাইবার বেশ পরিবেশবান্ধব
🔷পিনা ফাইবার থেকে উৎপন্ন সামগ্রী :
পিনা ফাইবার ব্যবহার করে বর্তমানে বিভিন্নধরনে ফ্যাশানেবল পোশাক প্রস্তুত হচ্ছে। ফিলিপাইনে এই ফাইবারের সাথে আরও কিছু ফাইবারের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে “barong tagalog” নামক পোষাক বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এছাড়াও আরও কিছু ব্যবহার্য উপাদান প্রস্তুত সম্ভব:
★বাহারি হাতব্যাগ
★ভেনিটি ব্যাগ
★গহনার বক্স
★ওয়াল ম্যাট
★টিস্যুর বাক্স
★কলমদানি
★কুশন এবং পাপোশ
★হ্যাট
★বিভিন্ন ধরনের খেলনা
ইত্যাদি
🔷শেষকথা:
বিশ্বজুড়ে আর্টিফিশিয়াল বিভিন্ন ফাইবারের ভয়ানক ক্ষতির ব্যাপারে সবাই বেশ সচেতন। কেননা এটা শরীর ও পরিবেশ দুটোর জন্যেই বিপজ্জনক। সেদিক থেকে ন্যাচারাল ফাইবার তথা “পিনা ফাইবার” ব্যবহার বেশ পরিবেশবান্ধব। শুধু তাই নয় “সাসটেইনেবল ফাইবার” হিসেবেও পিনা ফাইবার বেশ জনপ্রিয়। এই পন্য ব্যবহার যেরকম পরিবেশবান্ধব তেমনি লাভজনকও।
সরকারের এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের এই দিকে নজর দেয়া প্রয়োজন। এতে করে যেমন অনেক কর্মসংস্থান বাড়বে তেমনি আমাদের টেক্সটাইল সেক্টর আরও একধাপ উপরে পৌছাবে।
তথ্যসূত্র: Google, Canvas.com, aparadhbichitra.com
🖊Writer information:
Md Rashid
Dept of Fabric Engineering
First Batch
Dr. M A Wazed Miah Textile Enginneeing College,Pirganj,Rangpur.