বাংলাদেশে এক সময় ছিলো যখন পাট এর ব্যবহার প্রায় সব ক্ষেত্রেই ছিলো। তখন পাট চাষি দের ও ছিলো কদর। বাংলার ঘরে ঘরে পাট চাষ হতো। ন্যায্য মূল্য দিয়ে পাট বিক্রি করতো কৃষকরা। সেই পাট দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করা হতো।বর্তমানে ও হয় কিন্তু আগের তুলনায় কম।
পাট এক প্রকার সোনালী আঁশ । পাট ও পাটজাত দ্রব্য রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রচুর পরিমান বৈদাশিক মুদ্রা অর্জন করে । এজন্য বাংলাদেশে পাটকে সোনালী আশঁ বলা হয় ।
সাধারণত দুই ধরনের পাট বাংলাদেশে দেখতে পাওয়া যায়: Corchorus capsularis (সাদা পাট) ও Corchorus olitorius (তোষা পাট)। এটি Tiliaceae পরিবারের অন্তর্গত একটি উদ্ভিদ।
দেশের চাহিদা পুরনে এবং রপ্তানিযোগ্য পাটজাত পন্য উৎপাদনের লক্ষ্যে সম্প্রতি পাট বস্ত্র তৈরীর নিমিত্তে চিকন সুতা (১০০ টেক্স) উৎপাদন পদ্ধতি উদ্ভাবনসহ পাটের বহুমুখী ব্যবহারের জন্য রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবর্তন করে বিভিন্ন প্রকার একক পাটজাত দ্রব্য এবং কৃত্রিম আঁশের সাথে পাট আঁশ মিশ্রিত করে বিভিন্ন প্রকার পাট বস্ত্র তৈরী করা হয়েছে। এছাড়া নিম্নমানের পাটের মানোন্নয়ন, মুল্য সংযোজন পন্য উৎপাদন, স্বল্প খরচে ঔষধে ব্যবহৃত মাইক্রোত্রিুষ্ট ালাইন সেলুলোজসহ অন্যান্য মুল্যবান পার্শ্বজাত দ্রব্যাদি উৎপাদন পদ্ধতি উদ্ভাবন এবং এক্ষেত্রে ব্যবহৃত মেশিন উন্নয়ন করা হয়েছে।
পাটজাত পণ্য সব সময়ই পরিবেশবান্ধব। ইদানীং চট, বস্তা, পলিথিন ছাড়াও চোখ ধাঁধানো শোপিস, চেয়ার, দরজা, ফুলদানি, শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, স্যুট-প্যান্ট, চাদর, এমনকি ডেনিমও পাট থেকে তৈরি হচ্ছে। এসব পণ্য যেমন সৌন্দর্যবর্ধক তেমনি শতভাগ পরিবেশবান্ধব এবং দামও সাধ্যের মধ্যে। ফলস্বরূপ, এসবের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে বিশ্ববাজারের ক্রেতাদের। ফলে নিঃসন্দেহে এ শিল্প দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
২০১১ সালে ফ্রান্সের কান চলচ্চিত্র উৎসবে ১৫ হাজার অংশগ্রহণকারীর হাতে যে আকর্ষণীয় ডিজাইনের পাটের ব্যাগ তুলে দেয়া হয়েছিল, সেগুলো গিয়েছিল বাংলাদেশ থেকেই। আশ্চর্য হলেও সত্য, বর্তমানে নামিদামি গাড়ি তৈরির কোম্পানিও পাট ব্যবহার করছে।
জার্মানির বিএমডব্লিউ কোম্পানির সর্বাধুনিক ইলেকট্রিক গাড়ির ভেতরে বক্স বডি ও এর উপাদান তৈরির কাঁচামাল হিসেবে পাট ব্যবহৃত হচ্ছে। জার্মানির ভক্সওয়াগন, জাপানের নিশান ও টয়োটা গাড়ির কাঁচামাল হিসেবেও বাংলাদেশের পাটের কদর রয়েছে।
সব দিক বিবেচনায় পাটের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। তাই দ্রুত বিভিন্ন যুগোপযোগী উদ্যোগের মাধ্যমে পাটের ব্যবহার বহুমুখীকরণ করতে হবে
পাট উৎপাদন থেকে শুরু করে পাট সংগ্রহ, সংরক্ষণ- সবকিছুতে আরও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। তবে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় পাট চাষে কৃষকরা দিন দিন আগ্রহ হারাচ্ছে।
তাই পাটের চাষ বৃদ্ধি করতে কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ সুবিধাসহ কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে যাবতীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে সহায়তা করতে হবে। এর ফলে তাদের মধ্যে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা বাড়বে। পরিণতিতে পাট চাষ অনেক বাড়বে
বাংলার পাট চাষিদের ঘরে ঘরে আবার খুশি ফিরে আসুক।
তথ্য ও ছবি :উইকিপিডিয়া।
ফৌজিয়া জাহান মিতা
ডিপার্টমেন্ট অফ টেক্সটাইল ইন্জিনিয়ারিং
নিটার ১০ম ব্যাচ