“বাংলা মানেই গ্রাম আর বিস্তর মাঠ ঘাট
বাংলা মানেই বিশ্ব সেরা আমার দেশের পাট”
অর্ণব সাহা
পাট বাংলাদেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল। দেশের অর্থনীতির একটা সিংহভাগ এই পাট বা পাট জাত দ্রব্য থেকে আসে। দেশের প্রায় ৫০ লক্ষ কৃষক সরাসরি পাট চাষের সাথে সরাসরি জড়িত। দেশের মোট রপ্তানির আয়ের শতকরা ৩-৪ ভাগ আসে পাট ও পাট জাত পণ্য থেকে। পাট উৎপাদনে শীর্ষে ভারত আর ২য় অবস্থানে বাংলাদেশ। তবে পাট রপ্তানিতে ১ম অবস্থানে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ বিশ্বের মোট পাটের ৩৩% উৎপাদন করে, এবং কাঁচা পাটের ৯০% রপ্তানি করে। বাংলাদেশের মোট পাটকল ৩০৭ টি। সরকারি ২৫ টি এবং বেসরকারি ২৮২ টি। দেশে পাটের অবস্থান খুব ভালো। এবং এর সাথে পাট থেকে তৈরি এর সকল প্রকার দ্রব্যও খুব জনপ্রিয়।
আজ আলোচনা করবো পোশাক শিল্পে পাট এর ব্যবহার বা এর ভূমিকা সম্পর্কে।
পোশাক শিল্পে পাটেরও বিশেষ অবদান রয়েছে। পাটের মাধ্যমে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সুতা তৈরি করে কাপড় তৈরি করা হয়। আর এই কাপড় এখন বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। অধিকাংশ দেশে পাটের তৈরি পোশাক বা এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাটের আশের মাধ্যমে নানা ধরনের কাপড় তৈরি করা হয়।
বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিতে পাট থেকে ডেনিম কাপড় তৈরি করা হয়। পাট ও তুলার মিশ্রনে সুতা তৈরি করা হয়। এই সুতা দিয়ে তৈরি করা হয় বিশেষ ডেনিম কাপড়। এই কাপড় দিয়ে তৈরি হয় শার্ট, প্যান্ট, জ্যাকেট ইত্যাদি। এই বিশেষ কাপড় এর ৫০% হলো ডেনিম এবং বাকি ৫০% কটন। এর অন্য একটি নাম হলো জুটন পোশাক। পোশাক ছাড়াও জুটন দিয়ে তৈরি হয় পার্স,ব্যাগ, পর্দা সহ সৌন্দর্য বর্ধন নানান উপকরন। এই সব পোশাক তুলনামূলক ভাবে মোটা হয় যার কারনে গরম লাগে। তাই ঠান্ডার দেশে এই কাপড় এর পোশাকের চাহিদা বেশি। তবে বাংলাদেশেও এখন এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
একসময় এই দেশে পাটের সুতোয় তৈরি শাড়ির বেশ প্রচলন ছিলো। প্রায় ঘরে ঘরে পাটের সুতোর তৈরি শাড়ি ছিলো। আজও হয়তো বাংলার ঘরের দাদি নানিদের পুরোনো আলমারি ঘাটাঘাটি করলে সেই শাড়ি পাওয়া যাবে। তবে বর্তমানে পাটের সুতোয় তৈরি শাড়ির আর নেই।
পাট দিয়ে দেশেও অনেক ফ্যাশনেবল পোশাক এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষের মধ্যে এর ডিজাইন খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে।
পাটের আঁশ কে নানা ভাবে পরিশুদ্ধ করে রাসায়নিক ওয়াশের মাধ্যমে সেটা পড়ার উপোযোগী করা হয়। বিশেষ করে শীতের সময় তৈরি হয় পাটের পোশাক। কারন পোশাক গুলো তুলনামূলক গরম। পাটের আশ দিয়ে কাপড় তৈরি করে সেখানে চামড়া বা মেটালের ব্যবহার করা হয়। কোলাজ, এম্ব্রয়ডারি, স্ক্রিনপ্রিন্ট বা কনট্রাস্ট রঙে নকশা করা হয়। এতে কাপড় গুলো বেশ আকর্ষনীয় হয়ে ওঠে। কাপড় কোয়ালিটি ও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কাপড়ে বিভিন্ন রকম রঙ করা যায়। পাটের আশ দিয়ে তৈরি এইসব কাপড় থেকে বানানো হচ্ছে জ্যাকেট,ওভার কোট, ব্লেজার, টপ, প্যান্ট, মুজিব কোট ইত্যাদি। দেশে তৈরি এইসব পণ্যের চাহিদা বিদেশেও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে পাট শিল্পের ও ব্যাপক উন্নতি হচ্ছে। চাহিদা বৃদ্ধি পেলে পাট এর উৎপাদন ও বৃদ্ধি পাবে। কৃষকরা লাভবান হবেন। দেশের অর্থনীতির চাকা আরে সচল হবে।
পাট এর তৈরি এই সব পোশাকে সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য জরুরি হলো সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা এবং বিনিয়োগ। এই খাতে টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি গুলোকে বিনিয়োগ করতে হবে। সরকারের সাহায্য প্রয়োজন। আর সাধারণ মানুষ যেনো এই পোশাক সম্পর্কে জানতে পারে সেই জন্য নিয়মিত ফ্যাশন শোর আয়োজন করতে হবে৷ কারন ফ্যাশন শোর মাধ্যমে এই পোশাক সম্পর্কে সবাই ধারনা পাবে। প্রাথমিক ভাবে দাম একটু বেশি হলেও সেটা পরবর্তীতে কমে যাবে। মানুষের হাতের নাগালে এই পাট পোশাক পৌঁছাতে পারলেই সেটা ব্যবসা সফল হবে। পোশাক শিল্পে পাট এখন খুবই পরিচিত একটি নাম। দেশের বাজারে এই রাজকীয় দুটি খাত তাদের যুগলবন্দী পণ্য সরবারাহে সফল হলে সেটা দেশের জন্যই মঙ্গল।
Writer information:
Arnob Saha
Primeasia University
Batch: 201
Campus Core Team Member (TES)