মনে করুন, আপনার দু’হাতে দুইটি পলিথিন ব্যাগ রয়েছে যা দেখতে হুবুহু এক রকমের । কিন্তু এদের মধ্যো একটি পরিবেশ বান্ধব,বায়োডিগ্রেডেবল পলিথিন ব্যাগ।
ভাবছেন এ কি করে সম্ভব! পলিথিন কিভাবে পরিবেশ বান্ধব??
হ্যা, সত্যিই তাই বর্তমানে হুবুহু পলিথিনের মতো দেখতে এক প্রকার ব্যাগ বাজারে আসছে যা মূলত পাট থেকে তৈরি। এ ব্যাগ পাট থেকে তৈরি বলে এর আরেক নাম জুট পলিব্যাগ।এসব ব্যাগ বানানো হবে শুধুমাএ পাটের আঁশ ব্যবহার করে। আমদানি করা যে সব পচনশীল পলিমার ব্যাগ বাজারে পাওয়া যায় তার ৫ ভাগের ১ ভাগ দামে পাওয়া যাবে এটি। যদিও প্রথমে এর উৎপাদন ব্যায় বেশি বিদায় দাম একটু বেশি থাকতে পারে, পরবর্তীতে বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদন শুরু হলে দাম সমন্নয় করা হবে।
পাটের তৈরি এ ব্যাগ অনেক টেকসই এবং মজবুত। পাটের সূক্ষ সেলুলুজকে প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি করা এ ব্যাগ কয়েক মাসের মধ্যই মাটির সাথে মিশে যেতে পারে।
পাটের আঁশ থেকে পলিমার তৈরির এ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন বিজেএমসি’র প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা অধ্যাপক মোবারক আহমেদ খান।এই পদ্ধতি উদ্ভাবনের জন্য তিনি বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি তাকে ২০১৫ সালে তাকে স্বর্ণপদক দেন। । ২০০৯ সালে এই বিজ্ঞানী পাটের সঙ্গে পলিমারের মিশ্রণ ঘটিয়ে মজবুত, তাপ বিকিরণরোধী ও সাশ্রয়ী ঢেউটিন ‘জুটিন’ বানান।
একই প্রযুক্তি ও কাঁচামাল ব্যবহার করে তিনি হালকা অথচ মজবুত হেলমেট, স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগারের রিং, স্ল্যাব, চেয়ার, টেবিল, টাইলসসহ বেশ কয়েকটি নিত্যব্যবহার্য পণ্য তৈরি করেছেন।
পাটকলে চলছে কর্মযজ্ঞ
ডেমরায় শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম তীরে সরকারি পাটকল লতিফ বাওয়ানী জুট মিল। দেয়ালঘেরা কারখানা চত্বরে পাটের ব্যাগ তৈরির ব্যস্ততা। ঘটরঘটর শব্দে চলছে পাটকলের যন্ত্রপাতি। বাতাসে চটের সতেজ গন্ধ। এই কর্মযজ্ঞ পেরিয়ে পূর্ব দিকের একটি কোণে একটি আয়তাকার গুদামঘরে চলছে সম্পূর্ণ ভিন্ন রকম আরেক ব্যস্ততা। দরজা দিয়ে ঢুকলে মনে হবে কোনো রসায়নবিদের গবেষণাগার। সেখানে বড় বড় যন্ত্রপাতিতে চলছে অধ্যাপক মোবারক আহমদ খানের পলিমার তৈরির কাজ। যন্ত্রগুলো সবই দেশে তৈরি।
যেভাবে তৈরি হচ্ছে পাটের পলিমার
পাটকলে ফেলে দেওয়া পাটের আঁশ থেকে প্রথমে সূক্ষ্ম সেলুলোজ আহরণ (এক্সট্রাকশন) করে আলাদা করে নেওয়া হয়। পানিতে অদ্রবণীয় এই সেলুলোজকে পরে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে পরিবর্তন (মডিফিকেশন) করা হয়। দ্রবণীয় সেলুলোজের সঙ্গে ক্রসলিঙ্কার মেশানো হয়। বিশেষ তাপমাত্রায় রাসায়নিক বিক্রিয়ায় দ্রবণটি ড্রায়ার মেশিনের ভেতরে পরিচালিত হয়। তাতে তা শুকিয়ে প্লাস্টিকের শিটের আকারে যন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসে। পরে শিট কেটে চাহিদামতো পলিব্যাগের আকার দেওয়া হয়।
পলিথিন ব্যাগ ও পাট-পলিমারের পার্থক্য
যান্ত্রিক শক্তিমত্তা পরীক্ষায় দেখা গেছে, পাটের তৈরি পলিমারের ব্যাগ সাধারণ পলিব্যাগের চেয়ে দেড় গুণ টেকসই ও মজবুত। মাটি চাপা পড়লে পাট পলিব্যাগ চার থেকে পাঁচ মাস পর পচে মাটির সঙ্গে মিশে যেতে শুরু করে। পানিনিরোধক এই পলিব্যাগ দামেও খুব একটা বেশি নয়। এক কেজি পলিথিন ব্যাগের বাজারমূল্য যেখানে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, সেখানে এক কেজি পচনশীল পাটের পলিব্যাগের দাম পড়বে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের পর বাজারে এলে আরও দাম কমবে বলে উদ্ভাবকের আশা। পাটের পলিব্যাগ তৈরি করতে সেখানে সেমি অটোমেটিক প্ল্যান্টে সেলুলোজ এক্সট্রাকশন মেশিন, রিঅ্যাকশন চেম্বার, কাস্টিং মেশিন, কাটিং অ্যান্ড প্রিন্টিং মেশিন ও প্যাকেজিংয়ের ভারী যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে এখন চলছে প্রতিদিন ১ হাজারের বেশি পাট পলিব্যাগ উৎপাদন।
বিজেএমসি কর্তৃপক্ষ প্রথম আলোকে জানিয়েছে, পাইলট প্রকল্প শেষে সরকার এখন পলিব্যাগের বিকল্প হিসেবে বাণিজ্যিকভাবে পাটের ব্যাগ তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনে স্থাপন করা হয়েছে।
বর্তামানে এই পলিব্যাগের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ইতোমধ্য অনেক কোম্পানি এবং অস্ট্রেলিয়ার সিটি মেলবোর্ন কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ এই পলিব্যাগ কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।এমনি দেশের মধ্যও এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
মোঃ তানভীর হোসেন সরকার
ডিপার্টমেন্ট অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড রিসার্চ (নিটার)।
5