বিশ্বব্যাপী করোনা তান্ডবের ভয়াবহতা অজানা থাকবার কথা নয় কারোরই। করোনা তার সীমা লংঘন করে ক্রমেই এগিয়ে চলছে ধ্বংসলিলার ষোলকলা পূরণের লক্ষ্যে। অদৃষ্টের ষোলকলা পূরণের নেশায় কুপকাত দেশের পোশাক খাত। বর্তমান সময়ে দেশে যে খাত গুলোকে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় বলে গণ্য করা হচ্ছিল তন্মধ্যে পোশাক খাত অন্যতম। দেশে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় যখন সারাদেশে চলছিলো লকডাউন, উক্ত পরিস্থিতিতে গুটি কয়েক পোশাক কারখানা ব্যাতিত বেশিরভাগ কারখানাই ছিলো উন্মুক্ত। যদিও পরবর্তীতে তথাকথিত ঘোষণায় বন্ধ রাখা হয় কারখানা গুলো,তবে প্রকৃতপক্ষে বেপারটি জল ঘোলা করবার মতোই। যে শ্রমিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানীমূখর খাত তিলে তিলে এগিয়ে যাচ্ছিলো সমৃদ্ধির পথে, সে শ্রমিকদের কর্মজীবন আজ হুমকির মুখে দাঁড়িয়ে খুজছে ছন্দপতনের শেষ বিন্দুটি মিলবে কোথায়।
দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে যেখানে দেশব্যাপী শিথিল করা হচ্ছে লকডাউন পরিস্থিতি, কর্মজীবী মানুষ গুলো নতুন করতে বুনতে শুরু করেছিলো জীবিকার নতুন দিনের স্বপ্ন, সেখানে বিধিবাম দেশের পোশাক শ্রমিকদের।নিয়তির কালোছায়া যেনো পূর্ণরূপে গ্রাসের অপেক্ষায় চেয়ে আছে পোশাক শ্রমিকদের দিকে।বর্তমান সময়ে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ শ্রমিকদের নিয়ে কি ভাবছেন বা তাদের নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি,কিংবা কেমন ই বা হতে পারে পোশাক খাতের শ্রম বাজারে শ্রমিকদের অবস্থান এমন প্রশ্ন ওঠা সময়ের দাবি বলা যেতে পারে।চলতি মাসের ৪ জুন বিজিএমইএ এর সভাপতি “ড. রুবানা হক” ‘স্টেট অব দ্য আর্ট কোভিড-১৯ ল্যাব’ ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে উদ্বোধন কালে শ্রমিকদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি নিয়ে কিছু মতামত ব্যাক্ত করেন। সভাপতি ড. রুবানা হক এর কিছু মতামত সরাসরি লৈখিক রূপে তুলে ধরবো পাঠকের মাঝে।
কনফারেন্স কালে রুবানা হক বলেন, ‘করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে বিশ্বব্যাপী ক্রেতাদের চাহিদা কমে যাচ্ছে। ফলসরূপ দেশের পোশাক কারখানা গুলোর কাজের পরিমাণ ও প্রায় ৫৫ শতাংশ কম পরিলক্ষিত হচ্ছে। এমতাবস্থায় পোশাক শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় জুন থেকেই পোশাক শ্রমিক ছাঁটাই করা হবে। এ ব্যাপারে আমাদের সংগঠনের আওতায় কারখানা মালিকদের করার মতো কিছুই নেই। যাদের ছাটাই করা হবে তাদের জন্য কী করা যায়, তা নিয়ে সরকারের সঙ্গে বসে দ্বীপাক্ষিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। শ্রমিক ছাঁটাই একটি অনাকাঙ্ক্ষিত বাস্তবতা, কিন্তু করার কিছু নেই। তবে পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে পারে। সেক্ষেত্রে ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদেরকেই অগ্রাধিকার দেয়া হবে নতুন করে যুক্ত হবার জন্য। জুলাই মাসে পোশাক খাতে কী হবে বলা যাচ্ছে না। হয়তো সে সময় আরও কঠিন বাস্তবতার মোকাবিলা করতে হবে। এটি অপ্রত্যাশিত কিছু নয়।করোনা প্রভাবে বর্তমানে প্রায় ৩ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্যের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। তন্মধ্যে মাত্র ২৬ শতাংশ ফেরত এসেছে,যা হতাশাজনক। প্রতিদিন আমরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শ্রমিকদের তথ্য সংগ্রহ করছি। বুধবার রাত পর্যন্ত ২৬৪ জন শ্রমিক করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের সবাইকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসার সব ব্যয় বহন করছেন কারখানাগুলোর মালিকরা।’
ভিডিও কনফারেন্সিং এ ড. রুবানা হক যে কথা গুলো বলেন তার একাংশ তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।বিজিএমইএ কর্তৃক গৃহীত উপর্যুক্ত সিদ্ধান্তে শ্রমিক আইন কতটুকু বাস্তবায়ন করা হবে তা সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। পোশাক শ্রমিক ছাটাই সম্পর্কে কি বলছে শ্রমিক আইন? তাহলে চলুন জানা যাক।
ছাটাই সংক্রান্ত আইনে শ্রমিকদের জন্য বলা রয়েছে, “শ্রমিকদের ছাঁটাই করা হলে এক মাস আগে তা তাদের অবহিত করতে হবে। প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক যত বছর চাকরি করবেন, ছাটাই কালে তত বছরের হিসেবে মূল বেতন ভাতা তাদের দিতে হবে”। বাস্তবে শ্রমিক আইন কতটুকু বাস্তবিত হবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছে, তবে দেখবার বিষয় কর্তৃপক্ষ কিভাবে শ্রমিক আইন বাস্তবায়ন এবং অধিকার নিশ্চিত করণে কাজ করে। পোশাক শ্রমিকদের দুর্দশা নিয়ে নতুন ভাবে আলোচনা করার কিছুই নেই। শুধু এতটুকুই বলবার আছে,দেশ তথা বিশ্বব্যাপী বর্তমানে যে সংকটময় সেই সাথে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে বিরাজমান, ঠিক সে সময়ে পোশাক শ্রমিকদের ছাঁটাই করে তাদের জীবন ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেওয়াটা অত্যন্ত অমানবিক।
হ্যাঁ এটাও দুঃখজনক সত্য যে করোনার থাবায় পোশাক শিল্পে দেশের রপ্তানি আয় বন্ধ হয়ে গিয়েছে, বন্ধ হয়েছে অভ্যন্তরীণ বাজারও। রপ্তানী নির্ভর জোরদার এ বাজারটি চলে যেতে পারে অন্য দেশের হাতে। তাই বলে এ ভার শ্রমিকদের উপরে চাপিয়ে দিতে পারেনা কর্তৃপক্ষ। শিল্পগত দিক দিয়ে এগিয়ে যাওয়ায় পোশাক শিল্পের কোন বিকল্প হতে পারে না।সে সাফল্যের কৃতিত্ব শ্রমিকদেরও সমান প্রাপ্য। মালিক, শ্রমিক, জ্ঞান, প্রযুক্তির কোন এক উপকরণের কমতি হলে এগিয়া যাওয়া স্থবির হয়ে থাকবে। ভয়াল এই মুহূর্তে আমরা অনেক পিছিয়ে যাবো। আমাদের এ পিছিয়ে যাওয়াটাকেই সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য শক্তিতে রুপান্তর করতে হবে উন্নতির সকল উপকরণ কে সংগী করে। সবশেষে একটাই কথা বলতে চাই, কর্তৃপক্ষ দেশের বৃহত্তর স্বার্থে আরো সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে পোশাক শিল্পের সকল ঘাটতি কাটিয়ে দেশের প্রধান রপ্তানী খাতকে আরো সমৃদ্ধি করবেন তথা সমৃদ্ধ করবেন দেশের শিল্প খাতকে।
নিজস্ব প্রতিবেদক;
মুনতাসির রহমান