শীতে তীব্রতা থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে মানুষ বিভিন্ন রকম পরিকল্পনা গ্রহণ করে থাকেন। তারমধ্যে উষ্ণ ও আরামদায়ক কাপড় সংগ্রহ করার প্রবণতা বেশি থাকে। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে পোশাক নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো নিত্য নতুন নকশা ও আকর্ষণ নিয়ে হাজির হচ্ছে আমাদের মাঝে। আপনি কি জানেন এই উষ্ণ ও আরামদায়ক পোশাক কি থেকে তৈরি হয়? নিশ্চয়ই বড় কোন কোম্পানির কথা ভাবছেন কিন্তু উষ্ণ ও আরামদায়ক এসব পোশাক তৈরি হয় ভেড়ার পশম থেকে ।
★ভেড়া গৃহপালিত পশু হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। যা মূলত মাংস ও দুধের চাহিদা মিটিয়ে থাকে এর পাশাপাশি এর চামড়াটাকে কাজে লাগানো হয়। ভেড়া স্তন্যপায়ী প্রাণী হওয়ায় এর শরীরে লোম (পশম) থাকে । যা আগে কোন কাজে ব্যবহার করা হতো না । কিন্তু প্রযুক্তি উন্নয়নের কারণে এই পশম থেকে বিভিন্ন প্রকার বস্ত্রসামগ্রী তৈরি করা হচ্ছে।
★প্রাচীনকালে মানুষ পশুর চামড়া কে পোশাক হিসেবে ব্যবহার করতো কিন্তু প্রযুক্তি উন্নয়নের কারণে এখন চামড়ার উপর যে লোমটা থাকে তা দেখে পোশাক তৈরি করা হচ্ছে।
★ভেড়ার লোম এর একটি উপাদান পলিয়েস্টার(১০০% পলিয়েস্টার)। পলিস্টার এর কয়েকটি প্রকারভেদ ফিলামেন্টস, স্পুন এবং ম্যাক্রো- মেরু ফ্লেস । দীর্ঘ ফাইবার ভেড়ার লোম সাধারণত পলিয়েস্টার ফিলামেন্ট থেকে বোনা হয় এবং পলিস্টার 150D96G,150D48F, 150D144F,150D288F অনুরুপ সঙ্গে বোনা যেতে পারে । সাধারণ ভাবে F এর মান যত উচ্চতর হয় ফ্রাবিক এর মান ভালো হয় ভেড়ার দামও বেশি হয়।
★ উল হল ভেড়া খরগোশ উট ও অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের প্রথম থেকে তৈরি ফাইবার।
২০১৯ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে প্রায় ৩৬ লাখ ৬৮ হাজার ভেড়া পালন হয় ।যা থেকে ১০ লাখ ৪০ হাজার কেজি ভেড়ার পশম পাওয়া যায় । একটি ভেড়া থেকে বছরে প্রায় 900 থেকে 1000 গ্রাম পশম পাওয়া যায় । দেশের দেশি ভেড়া যেসব ধরনের পশু উৎপাদন করে তা কার্পেট মোটা পশমের অন্তর্ভুক্ত ।
★পরীক্ষামুলকভাবে ভেড়ার পশম থেকে বস্ত্র তৈরীর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যে সফলভাবে কম্বল চাদর তৈরি হয়েছে। এদিকে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় ভেড়ার পশম পাঠ তুলা সংমিশ্রণ করে বিভিন্ন বস্তু সামগ্রী বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন ও বিপণনে পরিকল্পনা নিয়েছে।এক প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা গেছে যে বাংলাদেশের প্রতি বছর ১৫ থেকে ১৬ লাখ টন পাট উৎপন্ন হয় যার মধ্যে চার থেকে পাঁচ লাখ দেশে ব্যবহৃত করা হয়। বাকিটা বিদেশে রপ্তানি করা হয় । আর এই ভেড়া পালন করা হয় ৩৬ লাখ ৬৮হাজার । যা থেকে প্রতিবছর তিন হাজার 400 টন পশম উৎপাদন হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে এর বিশেষ চাহিদা রয়েছে । কারণ এটা থেকে তৈরি হচ্ছে অভিজাত পোশাক। ইউরোপ সহ বিভিন্ন শীতপ্রধান দেশে ভেড়ার পশম তৈরি কম্বল, জ্যাকেট ও চাদরের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে । এক প্রতিবেদন অনুযায়ী ভেড়ার পশমের বহুমুখী ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে সেই লক্ষ্যকে বাস্তবায়ন করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে ।পরবর্তীতে ভেড়ার পশম, পাট ও তুলা থেকে সুতা তৈরি করা হচ্ছে । যার উৎপাদন ব্যয় অনেক কম।
★ এক গবেষণায় দেখা গেছে একটি ভেড়ার শরীর থেকে একেবারে 750 গ্রামের মতন পশম পাওয়া যায়।
এই পরিমান পশম রং অনুসারে আলাদা করে ধুয়ে নিলে 400 গ্রাম পশম পাওয়া যায় ।একটি ভেড়ার শরীরের ৭ রং এর পশম থাকে। তাই পশম কৃত্রিমভাবে রং করতে হয় না। একেবারে রঙিন সুতা পাওয়া যায় । তবে আন্তর্জাতিক বাজারে সাদা রঙ্গের ভেড়ার পশমের অনেক চাহিদা রয়েছে। যে ভেড়ার পশম তুলনামূলকভাবে পাতলা পালকের ন্যায় হয়। ফলে সহজেই সুতা বুনা যায়।ভেড়ার পশম ধোয়া পানিতে অন্যান্য কাপড় ধোয়া যায় । ভেড়ার পশমের কৃত্রিম রাসায়নিক পদার্থ আছে । যা দিয়ে ধোয়া পানি অন্য কোন কাপড় ধুলে এর জন্য কোন ডিটারজেন প্রয়োজন হয় না ।
★ বাংলাদেশের অধিকাংশ ভেড়া খামারিরা এখনো ভেড়ার পশমের ব্যবহার সম্পর্কে জানেনা ।
সরকারি উদ্যোগ নিয়ে সম্ভাবনাময় শিল্প কি কয়েকটি প্রকল্পের আওতায় নিয়ে খামারিদের কে প্রশিক্ষণ দিয়ে ।
ভেড়ার পশম ও পশম থেকে সুতা ও বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর পরিমাণে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
একটু হিসাব করি : বাংলাদেশ বার্ষিক সম্ভাব্য পরিশুদ্ধ পশম উৎপাদন
= ৩৬ লাখ × ০.৪ কেজি
=> ১০ লাখ ৪০ হাজার কেজি
=> তা দিয়ে ৫ লাখ কম্বল তৈরি করা সম্ভব
প্রতিটি কম্বল 2000 টাকা করে বিক্রি হলে বাষিক সম্ভাব্য আয় ১০৪ কোটি টাকা।
অর্থাৎ আমাদের দেশীয় ভেড়া থেকে আহরণযোগ্য পশম পরিকল্পিতভাবে সংগ্রহ করলে নতুন একটি অর্থনৈতিক খাত তৈরি হবে যা আমাদের জিডিপি কি সমৃদ্ধ করবে।
উৎস: উইকিপিডিয়া,এগ্ৰিকেয়ার,উল ডট নেট, ফাইবার নেটওয়ার্ক।
মোবারক হোসেন জনি
ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং (দ্বিতীয় ব্যাচ)
ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ,পীরগঞ্জ ,রংপুর