আমাদের পানি খাওয়ার পর বোতলটি বর্জ্য হিসেবে ফেলে দিচ্ছি, আর এই প্লাস্টিকের বোতল
পরিবেশ দূষণের প্রধান কারন। এই প্লাস্টিকের বোতল পরিবেশের সাথে টিকে থাকে প্রায় ৪৫০বছর।
২০১২ সালে গবেষণায় দেখা গেছে সমুদ্রের মধ্যে প্রায় ১৬৫ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য আছে। আরো
বলা হয়েছে সমুদ্রে প্রায় ৫ ট্রিলিয়নের বেশি প্লাস্টিক ভেসে থাকে ।যা কিনা আমাদের মিল্কিওয়ে
গ্যালাক্সিতে যে পরিমানে তারা আছে তার চেয়ে বেশি পরিমানে সমুদ্রে প্লাস্টিক আছে । যার ফলে
এই প্লাস্টিক বোতল এর কারেণ প্রাণীজগত আজ হুমকির মুখে।আমাদের আশেপাশের রাস্তায় থাকা
বোতল গুলাকে কুড়িয়ে নিয়ে আসে এবং বাজারে বিক্রিয় করে থাকে। এই প্লাস্টিকের বোতলগুলো
থেকে ফাইবার তৈরি হচ্ছে । এই ফাইবার দিয়ে সুতা বানিয়ে রং-বেরঙের পলিয়েস্টার কাপড় তৈরি
হচ্ছে, গেঞ্জি, জার্সি, ট্রাউজার, এবং ব্লেজারের মতো দামী কাপড়ে প্লাস্টিকের সুতার ব্যবহার করা
হয়। যেখানে বছরে প্রায় ৪০-৫০ লাখ বেল তুলার চাহিদা থাকে সেখানে মাত্র ১ লাখ বেল তুলা
উৎপাদন হয়। যার ফলে এই তুলার চাহিদা রয়েছে। এই তুলা আবার বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি
করে বছরে কোটি কোটি টাকা আয়ের পথ তৈরি হয়েছে। প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবহার করে রি-সাইকেল
পদ্ধতিতে তুলা তৈরির এই কাজটি এখন দেশেই হচ্ছে।
বাংলাদেশে বর্জ্য থেকে পলিস্টার সুতা তৈরি প্রথম কারখানটি ঢাকার অদূরে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের
পানিয়াশাইলে চীনা প্রযুক্তিতে কারখানাটি তৈরি হয়েছে। মুমানু পলিয়েস্টার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে
ওই কারখানাটিতে গত কয়েক মাস ধরে প্লাস্টিক বোতল দিয়ে দৈনিক প্রায় ৪০ টন তুলা উৎপাদন
করা হচ্ছে এবং বছরে প্রায় ২০০ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব হয়েছে ।জানা গেছে, এ ধরনের
তুলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে চীনসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে। চীন, ভারত, পাকিস্তান ও
থাইল্যান্ডে এ ধরনের কারখানা থাকলেও বাংলাদেশে প্রথম কারখানা বর্জ্য থেকে ফাইবার উৎপাদন
এটিই ।
আগে চীন কাঁচামাল হিসেবে সরাসরি প্লাস্টিক বোতল আমদানি করে নিজেরাই এ ধরনের তুলা
উৎপাদন করতো। বর্তমানে দেশটি প্লাস্টিক বোতল আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। যার ফলে এখন
ফিনিশড পণ্য হিসেবে ফাইবার বা পি.এস.এফ. আমদানি করে থাকে দেশটি। এ কারণে রপ্তানি পণ্য
হিসেবে এ ধরণেন পি.এস.এফ তুলার কদর বাড়ছে। মুমানু পলিয়েস্টার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের এই
ধরনের কারখানা গড়ার পেছনে দুটো উদ্দেশ্য কাজ করেছে।
ফাইবার তৈরির কাঁচামাল হিসেবে প্লাস্টিকের ফেলে দেওয়া বোতল ব্যবহার করায় পরিবেশ দূর্ষণের
হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে বাংলাদেশ । আর এই বর্জ্য থেকে উৎপাদিত ফাইবার বিদেশে রপ্তানি করে
প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ তৈরি হয়েছে। কারখানার কর্মকর্তারা
জানান, বাংলাদেশে এই প্রথম স্থাপিত এ ধরনের কারখানা থেকে দৈনিক প্রায় ৪০ মেট্রিক টন তুলা
উৎপাদিত হচ্ছে, যা শিগগিরই ৮০ মেট্রিক টনে উন্নীত হবে এবং বার্ষিক ১২,৮০০ মেট্রিক টন
ক্ষমতা সম্পন্ন একটি উৎপাদন লাইন । তাদের চিন্তা হচ্ছে বার্ষিক ১৯,২০০ মেট্রিক টন ক্ষমতায়
নিয়ে যাওয়া। প্রতি কেজি পি.এস.এফের রপ্তানি মূল্য এক ডলার হলেও দৈনিক প্রায় ৮০ হাজার
ডলারের তুলা উৎপাদনে সক্ষম ওই কারখানাটি। তাদের এই শিল্পে ২০২০ সালে ৭% বোতলকে
রিসাইকেল করে , যা তাদের ২০২১ সালে ২০% এ নিয়ে যাবার চিন্তা ।
তবে সম্ভাবনাময় এই শিল্পটিতে সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। কারখানার
কর্মকর্তারা জানান, নতুন প্রযুক্তির কারখানাটি স্থাপনের পর কাঁচামাল সংগ্রহসহ দেশীয় বাজারে
উৎপাদিত তুলার যথাযথ মূল্য না থাকায় এটি অলাভজনকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে
সরকার বোতল ফ্লেক্স রপ্তানিতে ১০ শতাংশ হারে ভর্তুকি দিচ্ছে। কারখানা সংশ্লিষ্টরা বোতল ব্যবহার
করে ফাইবার উৎপাদন করার ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজন করছেন। এই খাতে তারা ২০ শতাংশ রপ্তানি
ভর্তুকির সুযোগ চান সরকারের কাছে। তাদের উৎপাদিত ফাইবারের চাহিদা বিদেশে থাকলেও দেশে
এখনো সে ধরনের চাহিদা তৈরি হয়নি। ফলে যথাযথ মূল্য পাওয়া যাচ্ছে না। এই অবস্থায় সরকার
রপ্তানি ভর্তুকি দিলে সম্ভাবনাময় এই শিল্প খাতের বিকাশ ঘটবে। এতে ফেলে দেওয়া বর্জ্য ব্যবহার
করে যেমন বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে, তেমনি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে সম্ভাবনাময় এই
শিল্পে।
Writer Information:
Afsar Uddin
Department of Textile Engneerin
BGMEA University of Fashion & Technology