আমাদের পরিবেশ প্রতিনিয়ত ব্যাপক হারে দূষিত হচ্ছে যার বিশাল অংশ আসে টেক্সটাইল শিল্প থেকে । যেহেতু দিনদিন আমাদের পোশাকের চাহিদা বেড়েই চলেছে তাই টেক্সটাইল শিল্পের দূষণও বাড়ছে । এমতাবস্থায় টেক্সটাইল শিল্পের দূষণ কমানো অপরিহার্য হয়ে পড়েছে । আর এ ক্ষেত্রে টেক্সটাইল শিল্পে বায়োটেক্সটাইলের ব্যবহার হতে পারে অন্যতম হাতিয়ার । বায়োটেক্সটাইল বলতে অনুজীব, ব্যাকটেরিয়া, এনজাইম ইত্যাদি ব্যবহার করে টেক্সটাইল শিল্পের বিভিন্ন ধাপ ও প্রক্রিয়া নিরূপণ করাকে বুঝায় । আর এই বায়োটেক্সটাইলের একটি ব্যবহার হচ্ছে এনজাইম ব্যবহার করে কটন ফেব্রিক ফিনিশিং করা, যে পদ্ধতির নাম হচ্ছে বায়োপলিশিং ।
বায়োপলিশিং হচ্ছে টেক্সটাইল ফিনিশিং প্রসেস, যেখানে এনজাইম ব্যবহার করে ফেব্রিকের সার্ফেস বা তল ফিনিশিং করা হয় । এর ফলে ফেব্রিকের তল আরো মসৃণ ও সুন্দর হয় । বায়োপলিশিংয়ের মাধ্যমে ফেব্রিকের পিলিং কমানো , ক্যালার রিটেনশন বাড়ানো এবং শক্তিশালী – টেকসই ফেব্রিক প্রস্তুত করা যায় । এ পদ্ধতিতে ফেব্রিক ফিনিশিং প্রসেসিংয়ের সময় বিশাল আকারে কমিয়ে আনা যায় (প্রায় ১৮০ থেকে ১০০ মিনিট) । এছাড়া খরচ প্রায় ২৫% পর্যন্ত কমে আসে । সাধারণত যেসব ফেব্রিক সেলুলোজ ফাইবার দিয়ে তৈরী সেসব ফেব্রিকে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় ।
🖋সাধারণত বায়োপলিশিং ডায়িংয়ের সময় বা ডায়িংয়ের পরে সম্পন্ন করা হয় । এই প্রসেস দুইভাগে সম্পন্ন হয়ে থাকে ৷ বায়োপলিশিং “কেমিক্যাল” অথবা “বার্ণিং” ফিনিশিং প্রসেস এর পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়। বায়োপলিশিংয়ে ব্যবহৃত এনজাইম পরিবেশ বান্ধব ও বায়োডিগ্রেডেবল । কোনো ধরনের অতিরিক্ত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় না এই এনজাইম ব্যবহার কালে । যার কারণে এ পদ্ধতিতে কম খরচে সম্পন্ন করা যায় । বায়োপলিশিং চলমান অথবা বাথ দুই প্রক্রিয়ায় প্রয়োগ করা যায় ।
“নভোজাইমেজ” হচ্ছে উল্লেখিত এনজাইম যা বায়োপলিশিংয়ে ব্যবহার করা হয় । এর ফলে ফেব্রিকের স্থায়িত্ব, ক্যালার রিটেনশন, মসৃণতা ইত্যাদি দারুণ ভাবে বৃদ্ধি পায় । এছাড়াও ডায়িং এবং বায়োপলিশিং প্রসেসকে একসাথে করে এক নতুন প্রসেস তৈরী করা হয় যার নাম “সেলুসফট কম্বি” । এই পদ্ধতি আরো বেশি সময়, পানি, শক্তি এবং খরচ বাঁচায় । নভোজাইমেজ পরিবেশ রক্ষায় এক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে ।
বয়োপলিশিংয়ে উপাদানসমূহের পরিমাপঃ
➡এনজাইম : 0.5% to 2%
➡পিএইচ(PH): 5 to 5.5
➡তাপমাত্রা : 50 to 55 Celcius
➡সময় : 30 to 60 min
✅উপকারিতাঃ
✔কার্বন এবং পানির ব্যবহার কমায় ।
✔প্রসেসিংয়ের সময় প্রায় অর্ধেক কমিয়ে আনে(১০০ থেকে ১৮০ মিনিট) ।
✔খরচ কমায় ২৫ ভাগ পর্যন্ত ।
✔প্রোডাক্টভটিভিটি বাড়ায় ।
✔অত্যন্ত ভালো প্রোডাক্ট ফিনিশিং করে এবং প্রোডাক্টকে আর্কষণীয় করে তোলে ।
এ পদ্ধতি ব্যবহার করে Marks & spencer তৈরী করেছে তাদের নতুন প্রোডাক্ট “StayNew” গার্মেন্টস ৷ এছাড়া ব্রিটিশ কোম্পানি টেসকো ( Tesco) এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফেব্রিক ফিনিশিং করছে ।
লেখক- মোহাম্মদ রাফি
ডিপার্টমেন্ট অব ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং
১ম ব্যাচ ,ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, পীরগঞ্জ,রংপুর ।