পোশাক আবিষ্কারের পর থেকে নিত্য নতুন চ্যালেঞ্জ এর সম্মুখীন হয়ে আসছে টেক্সটাইল সেক্টর।কখনো কাপড়ের গুনগত মান আবার কখনো ফ্যাশন নিয়ে প্রতিনিয়ত গবেষণা লেগেই রয়েছে।যত দিন যাচ্ছে এসব চ্যালেঞ্জের উত্তর দিয়ে টেক্সটাইল সেক্টর সামনের দিকে দ্রুত এগিয়ে চলছে।অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফ্যাশনেবল পোশাকে কম্ফোর্টনেসের বিষয়টি এখন একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।এটা সত্য যে,ফ্যাশনের দিক দেখতে গিয়ে আমরা অনেক সময় শরীরের স্বস্তি ও অস্বস্তির দিকটা নিয়ে অতটাও চিন্তা করি না।শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ত্বক যা শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোকে প্রতিরক্ষায় বড় ভুমিকা রাখে।এছাড়াও এই ত্বক সারা দিন রাত আমাদের শরীরের উষ্ণতা ও শীতলতার ভারসাম্য রক্ষা করছে।এত উপকৃত হয়েও আমরা এই ত্বকের প্রাকৃতিকভাবে সঠিক যত্ন নিচ্ছি তো!
আমরা ত্বক নিয়ে এতটাই যত্নশীল যে,বর্তমানে স্কিনকেয়ার নিত্য রুটিনের অংশ।আর এটাও বলা যায় যে স্কিনকেয়ারে ব্যবহৃত কৃত্তিম প্রোডাক্টের ছোঁয়া অজান্তেই স্কিনের ক্ষতি করছে।এছাড়াও আমাদের এখনকার দৈনন্দিন কার্যাকলাপ সূর্যের তেজস্ক্রিয়তাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে যে,যার বিপরীত প্রতিক্রিয়া হিসেবে আমরা ইদানিং স্কিনে ক্যান্সার হতে শুনছি।ত্বকে কম বেশি সকলের ফুসকুড়ি,চুলকানি,শুষ্কভাব লেগেই থাকে।এ সব কিছুর সমাধান হিসেবেও রয়েছে টেক্সটাইলের তৈরি পোশাকের অবদান যা আমাদের ত্বকের অসুবিধাগুলোকে অনেকটা লাঘব করতে সক্ষম।তবে সব কাপড়ের পোশাক ত্বককে আরামে রাখতে পারে না।তাই পোশাক কিনতে গেলে আমাদের প্রথম প্রশ্নটা হতে হবে যে,আমরা যে কাপড়গুলো কিনছি তা আমাদের ত্বকের জন্য কতটা স্বাস্থ্যকর এবং পরিধানে কতটা আরামদায়ক।কিছু ফাইবারের পোশাক আছে যা পরিধানে আমাদের ত্বকের সমস্যা হতে পারে,যেমন:পলিস্টার,রায়ন,নাইলন,স্পানডেক্স ইত্যাদি।আবার এমনও কিছু পোশাক আছে যা আমাদের স্কিনের জন্য অনেক স্বাস্থ্যকর এবং স্কিন-বান্ধব,তাদের মধ্যে ৫টি অধিক ব্যবহৃত হলো:
১)অরগানিক কটন:এই ফাইবারের কাপড় সকল বয়সের মানুষের কাছে পরিচিত,এমনকি প্রথম পছন্দও বলা যায়।জৈব কটোন তুলনামূলক হালকা,নরম ও শতভাগ হাইপোলার্জিক।এই ফাইবারের তৈরি পোশাকে ত্বকের কোনো ক্ষতি করে না বরং যাদের অ্যালার্জিক সমস্যা তাদের জন্য বেশ স্বাস্থ্যসম্মত।গরম আবহাওয়াতেও সহজেই ত্বকে বাতাসের প্রবাহ ঘটায়।যার কারণে ঘাম কম হয় এবং শরীরে ফুসকুড়ি হয় না।শোনা যায় যে,এর ব্যবহারের সাথে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা হ্রাসের একটি সম্পর্ক রয়েছে।এই পোশাক টেকসই,জীবানুপ্রতিরোধী হওয়ায় ধুলিকণা,সাধারণ অ্যালার্জেন ও ক্ষতিকর রশ্মি প্রতিহত করে।
২)লিনেন:ফ্লাক্স ফাইবার যা লিনেন হিসেবে পরিচিত।এটি অত্যন্ত শক্তিশালী প্রাকৃতিক ফাইবার যার ভেন্টিলেটিং ও ফিল্টারিং ব্যবস্থা ।তাই এ ফাইবারের পোশাক আমাদের স্বস্তির আরেক নাম এবং শরীরের প্রায় ২০% পর্যন্ত আদ্রতা শোষণ করে,শরীরকে শীতল রাখে।আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এটির সাথে খুব বেশি ব্যবহারে পরিচিত না হলেও আমাদের দেশে বেডশিটগুলোতে এর ব্যবহার প্রায়শই দেখা যায়।এই ফাইবারকে অ্যালার্জেনিক,অ্যান্টি-স্ট্যাটিক, অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল,অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ফাইবারও বলা হয়।প্রাকৃতিক এই ফাইবার ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য ধরে রেখে ত্বককে নরম রাখে।পরিবেশবান্ধব, টেকসই ও এতো গুনাবলী থাকা সত্ত্বেও এই কাপড়গুলো দাম তুলনামূলকভাবে কম।
৩)হেম্প :হেম্প গাছ বহুমুখী গুনের জন্য বিখ্যাত।এই গাছের কোনো বাড়তি পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না বলে উৎপাদন ক্ষেত্রে এর খরচ অনেকাংশে কম।ঔষুধ থেকে শুরু করে পরণের কাপড়েও রয়েছে এই গাছের ব্যবহার।এই গাছের ফাইবার দিয়ে তৈরি পোশাক অন্যান্য কাপড়ের তুলনায় অনেকটা টেকসই ও পরিবেশবান্ধব।এই কাপড়ের ইউভি-প্রতিরোধী গুনাবলি ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করে।এই ফাইবারের পোশাক নরম,গন্ধ প্রতিরোধী,হাইপোলারজিক ও টক্সিন মুক্ত হওয়ায় মানব শরীরের জন্য উপযোগী।
৪)সিল্ক:সিল্কের কাপড়গুলো হাইপোলারজিক যা অ্যালার্জিক ব্যক্তিদের জন্য একটি অন্যতম পছন্দের কারণ।এছাড়াও উষ্ণ আবহাওয়ায় এই কাপড় আমাদের শীতল রাখে এবং শীতকালে আমাদেরকে উষ্ণ রাখে।আমরা অনেকেই হয়তো সিল্কের বালিশ ও বেডশীটের কথা শুনেছি।সিল্কের বালিশ ও বেডশিটে ঘুমানোর কারণে ত্বক ও চুলের সমস্যা অনেকটা হ্রাস পেতে পারে,এমনকি হাচি কাশিও কম হতে পারে।এই অত্যন্ত শোষণকারী,কম রক্ষণাবেক্ষণশীল কাপড় ত্বকের জড় ভাব কাটিয়ে ত্বককে নরম ও মসৃণ রাখে এবং চুলকে চকচকে রাখে।তাই যাদের ত্বকের সমস্যা, চর্ম বিশেষজ্ঞরা অনেক সময় তাদের সিল্কের কাপড় ব্যবহারের পরামর্শ দেয়।
৫)উল:উল ফাইবারের অনেক ইতিবাচক গুন রয়েছে।তবে অনেকের ক্ষেত্রে এটি নেতিবাচক হয়ে উঠতে পারে।ময়লা,ধূলিকণা প্রতিরোধী এই ফাইবারের পোশাক আদ্রতা শোষণে অসাধারণ ক্ষমতা রাখে।এই ফাইবারের কাপড় আমরা সব ঋতুতে পরতে পারব না।এটির ব্যবহার শীতকালীন পোশাকগুলোতে।উলের সোয়েটার শীতকালে আমাদের শরীরকে উষ্ণ রাখে।আবার অনেকক্ষেত্রে বাড়ির অ্যালার্জেনের সংখ্যা হ্রাসের কারণে আসবাবপত্রে উলের কাপড়ের ব্যবহার করা হয়।অনেক মানুষের জন্য উলের কাপড় পরিধান ত্বক ও অ্যালার্জির কারণ হতে পারে।তাই উলের কাপড় পরতে সমস্যা হলে তা অবিলম্বে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
তথ্যসূত্র: fibre2fashion,Youtube,The Indian Express, juliannarae.
Writer’s Information :
Bipro Brota Roy
Ahsanullah University of Science and Technology
Department of Textile Engineering
(Batch-40)