Saturday, November 23, 2024
Magazine
More
    HomeLife Style & Fashionফ্যাশনে এক নতুন বিস্ময় : 3D প্রিন্টিং প্রযুক্তি

    ফ্যাশনে এক নতুন বিস্ময় : 3D প্রিন্টিং প্রযুক্তি

    ফ্যাশন একটি পরিবর্তনশীল ধারা।এই ধারাকে অব্যাহত রাখতে টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে যুক্ত হচ্ছে নিত্যনতুন উদ্ভাবনী প্রযুক্তি। টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে যুক্ত হওয়া নতুন, সম্ভাবনাময় এবং সর্বশেষ প্রযুক্তিটি হল “3D প্রিন্টিং প্রযুক্তি “।একবার ভেবে দেখুন তো,কেমন হয় যদি আপনি ঘরে বসে 3D প্রিন্টার ব্যবহার করে, কোনো ফ্যাশন স্পেশালিষ্ট ছাড়াই, নির্দিষ্ট কিছু উপকরণ ব্যবহারের মাধ্যমে নিজের পছন্দের ডিজাইনের সম্পূর্ণ নতুন একটি পোশাক প্রিন্ট করে নেন?হ্যাঁ,এই কাল্পনিক ধারণাটিকে বাস্তবে রূপ দেওয়া সম্ভব একমাত্র 3D প্রিন্টিং প্রযুক্তির মাধ্যমে। তাহলে আর দেরি না করে চলুন জেনে নেওয়া যাক 3Dপ্রিন্টিং প্রযুক্তি এবং এর ভবিষ্যৎ -সম্ভাবনা সম্পর্কে —


    3D প্রিন্টিং কী?
    3D প্রিন্টিং হচ্ছে বস্তুর ত্রিমাত্রিক মডেল তৈরির প্রযুক্তি। বস্তুর ত্রিমাত্রিক মডেল কম্পিউটারে স্ক্যান করে প্রিন্টারের মাধ্যমে সম্পূর্ণ বস্তুটি তৈরির প্রযুক্তির নামই 3D প্রিন্টিং।

    3D প্রিন্টিং এর ইতিহাস :
    এই 3D প্রযুক্তির যাত্রা শুরু হয়েছিল যাদের হাত ধরে তাদের মধ্যে দুইজনের নাম সবসময় স্মরণীয় হয়ে থাকবে।প্রথমজন হলেন 3D Systems Corp এর প্রতিষ্ঠাতা চার্লস ডব্লিউ হাল,যিনি ১৯৮৪ সালে (বহুমত আছে) স্টেরিওলিথোগ্রাফি প্রসেস এর উপর ভিত্তি করে সর্বপ্রথম কর্মউপযোগী 3D প্রিন্টার আবিষ্কার করেছিলেন এবং দ্বিতীয়জন হলেন জাপানের নাগোয়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের হিদেও কোদামা,যিনি এই প্রযুক্তিকে ব্যবহার উপযোগী হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটান।এই ধারণা থেকে আমারা বলতে পারি,3D প্রযুক্তির ধারণাটি আসলে বর্তমান বিশ্বকে মাতিয়ে রাখা ইন্টারনেটের চেয়ে পুরনো। কেননা, ১৯৮৯ সালে যখন স্যার টিম বার্নার্স লি তার WWW প্রোগ্রামটি লিখেন এর বহু বছর আগেই 3D প্রিন্টিং প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হয়।


    3D প্রিন্টার কীভাবে কাজ করে?
    3D প্রিন্টার হচ্ছে ত্রিমাত্রিক বস্তু প্রিন্ট করার মেশিন,প্রিন্ট না বলে বস্তু তৈরির মেশিনও বলা যেতে পারে।এটা একটা লেয়ারের উপর আরেকটি লেয়ার বসিয়ে এভাবে পর পর অসংখ্য লেয়ার বসিয়ে একটি বস্তু তৈরি করে। 3D প্রিন্টিং এ একে অপরের উপর একাধিক স্তর স্থাপন করে ত্রিমাত্রিক বস্তু তৈরির প্রসঙ্গ হিসেবে অ্যাডিটিভ ম্যানুফ্যাকচারিং ( এএম) নামেও পরিচিত।
    এ পদ্ধতিতে কম্পিউটার সফটওয়্যার ব্যবহার করে কোনো বস্তুর ত্রিমাত্রিক আকার দেওয়া হয়।প্রথমে বস্তুটির ত্রিমাত্রিক ছবি স্ক্যান করে তা কম্পিউটার মডেলের উপযোগী করা হয়।3D প্রিন্টারের কাঁচামাল হিসেবে সাধারণত তরল প্লাস্টিক পলিমার, কাগজ, মোম গুড়ো এবং আধুনিক সংস্করণে সিরামিক ও স্টিল ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। একটি সরু নজেলের মাধ্যমে তরল পদার্থ স্তরে স্তরে সাজিয়ে কাঙ্ক্ষিত বস্তুর রেপ্লিকা তৈরি করা হয়।


    3D প্রিন্টিং এর ব্যবহার :
    বর্তমানে 3D প্রিন্টিং এর ছোঁয়া অনেক শিল্পেই লেগেছে। যেমন – খাদ্য তৈরি, জুয়েলারি শিল্পে,ফুটওয়ার বা জুতো শিল্পে, চিকিৎসাক্ষেত্রে, অ্যারোস্পেস, অটোমোবাইল শিল্পে,আর্কিটেকচার ইত্যাদি। ফোর্বসের একটি নিবন্ধ অনুসারে, কিছু ব্র‍্যান্ড ইতিমধ্যে স্যাম্পলিং এর কাজে 3D প্রিন্টার ব্যবহার করছে,যা উৎপাদন চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় সহায়তা করছে।


    ফ্যাশনে 3D প্রিন্টিং :
    টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে 3D প্রযুক্তি এক নতুন সংযোজন।বিশেষ করে প্রোটোটাইপিং,ম্যানুফ্যাকচারিং এবং ফ্যাব্রিক বর্জ্য অপসারণে 3D প্রিন্টিং প্রযুক্তি অনবদ্য ভূমিকা পালন করছে। ডেনিশের এক সংস্থা Son of Tailor 3D প্রিন্টার ব্যবহার করে ফ্যাব্রিক বর্জ্য হ্রাসকরণের তথ্য তুলে ধরেছেন। সম্প্রতি সংস্থাটি পুরুষদের জন্য তাঁদের 3D মেরিনো উল পুলওভার নিয়ে “Kickstarter Campaign ” সম্পন্ন করেছে, যেখানে তারা ২১% থেকে ১% পর্যন্ত ফ্যাব্রিক বর্জ্য হ্রাসে সফল হয়।তাছাড়া বর্তমানে অনেক ফ্যাশন ডিজাইনার 3D প্রিন্টিং প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে।উদাহরণস্বরূপ,ইসরায়েলি এক ৩২ বছর বয়সী নারীর কথা না বললেই নয়,যিনি সর্বপ্রথম বাণিজ্যিক ভাবে 3D প্রিন্টেড পোশাক সাপ্লাই দিতে সক্ষম হোন এবং তা নিয়েই প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন


    3D প্রিন্টিং এর কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা সমূহ :
    সুবিধা :দ্রুত প্রোটোটাইপিং,চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন, পরিবেশবান্ধব,সময় সাশ্রয়ী, বর্জ্য হ্রাসকরণ,অ্যাক্সেসযোগ্য, দ্রুত ম্যানুফ্যাকচারিং,জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সাথে সাথে 3D প্রিন্টারগুলির সহজলভ্যতা ইত্যাদি।
    অসুবিধা :
    সীমিত উপকরণের ব্যবহার,উৎপাদন সেক্টরে কাজের ক্ষতি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই 3D প্রিন্টেড পণ্যগুলো ব্যয়বহুল হয়,কপিরাইট লংঘন, পরিবেশে অতিক্ষুদ্র ক্ষতিকর কণা নিঃসরণের আশংকা ইত্যাদি।


    3D প্রিন্টিং প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা :
    বলা হয়ে থাকে ভবিষ্যতে যেসব প্রযুক্তি বিপ্লব বয়ে আনবে তার মধ্যে 3D প্রিন্টার অন্যতম।অন্যান্য শিল্পে এই প্রযুক্তির ব্যবহার দ্রুত বৃদ্ধি পেলেও পোশাকশিল্পে এর ব্যবহার বাড়ানোর জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন। পোশাকশিল্পে 3D প্রিন্টিং ব্যবহারের অন্যতম অসুবিধা হচ্ছে এর ম্যাটেরিয়াল।বর্তমানে যে সিনথেটিক ম্যাটেরিয়াল দিয়ে প্রিন্ট করা হচ্ছে তা মোটেও আরামদায়ক নয়।এই সমস্যা দূরীকরণে নমনীয় পলিমারগুলো অন্বেষণ করা হচ্ছে।সসম্প্রতি নিউইয়র্কে প্রথম বারের মত অনুষ্ঠিত হয় 3D প্রিন্টিং ফ্যাশন শো,যেখানে প্রদর্শিত সবগুলো পোশাকই ছিল 3D প্রিন্টেড। যেগুলো তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে Filaflex নামক flexible এক ধরনের পলিমার। গবেষকদের ধারণা, সঠিক পরীক্ষা -নিরিক্ষা এবং সাস্টেইনেবল ম্যাটেরিয়াল অনুসন্ধানের মাধ্যমে আরামদায়ক এবং পরিধানযোগ্য পোশাক তৈরি করতে পারলে 3D প্রিন্টিং প্রযুক্তি ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে।


    বর্তমানে সেরা কয়েকটি 3D প্রিন্টেড পোশাকের নাম নিম্নে দেওয়া হলঃ
    ★Spider Dress 2.0 by Anouk Wipprecht.
    ★Dress from the Voltage Collection by Iris Van Herpen and Julia Koerner
    ★Smoke Dress by Anouk Wipprecht
    ★Incunabula Dress by Kaat Debo,Alexandra Verschueren and Tobias Klein
    ★Interdimensional by threeASFOUR
    ★Skeleton Dress by Iris Van Herpen and Bloch
    ★Gems of the Ocean by Melinda Looi with Samuel Canning.


    তথ্যসূত্র:
    TextileToday
    Wikipedia
    Forbes

    Writer Information :
    Tasfia Sultana
    Textile Engineering College, Chittagong.
    Batch: 14th.

    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    Related News

    - Advertisment -

    Most Viewed