কম দামে ভালো জিনিস ক্রয় করা যেমন একজন ক্রেতার উদ্দেশ্য,তেমনি বেশি লাভে যে কোন পণ্য বিক্রি করা একজন বিক্রেতার থাকে সর্বোচ্চ চেষ্টা।আচ্ছা একটা বিষয় খেয়াল করে দেখেছেন কি? একজন ক্রেতা হিসেবে আপনার হাতে দুইটা আবশ্যিক বিষয় থাকেঃ
(i)আপনি ভালো পণ্য কিনবেন;
(ii)অল্প দামে কিনবেন।
কিন্তু একটা-বার ভেবে দেখুন তো,একজন বিক্রেতার হাতে একটা অপশন-ই থাকে,সেটা হলো তাকে লাভ করতে হবে।তো সহজেই বোঝা যায় যে,একজন ক্রেতাকে সব দিক বিবেচনা করেই পণ্য কিনতে হয়,যদি আপনি পরিস্থিতিটিকে একজন বিক্রেতার সাথে তুলনা করে থাকেন তাহলেই আর কি।”যার মূল্য বেশি,সে-ই ভালো”-এই উক্তিটি মানুষের ক্ষেত্রে না খাটলেও,পণ্যের ক্ষেত্রে এটি আপনাকে অবশ্যই মানতে হবে। তো দাম যার বেশি,গুণ তার অবশ্যই একটু হলেও ভালো হবে।
বর্তমানযুগের সকলেই গ্যাবার্ডিন নামক একধরণের ফেব্রিকের সাথে পরিচিত। ফ্যাশনের এই দুনিয়ায় গ্যাবার্ডিন কাপড়ের ব্যবহার,জিন্স কাপড়ের তুলনায় কোন অংশেই কম নয়।যার উদাহরণ আমরা চারপাশেই দেখলেই উপলব্ধি করতে পারি।সময়ের সাথে সাথে মানুষের রুচিবোধের মাঝে গ্যাবার্ডিন জায়গা করে নিয়েছে এক অন্যরকম স্থান।তরুণদের পাশাপাশি মধ্যবয়সী পুরুষেরাও গাবার্ডিনকে বেছে নিয়েছে নিত্যদিনের সঙ্গী হিসেবে।অনেক ফ্যাশন বিশ্লেষকদের ধারণা,ক্যাজুয়াল ও সেমিফরমাল দুই ধরণের লুকেই গ্যাবার্ডিনের প্যান্ট মানিয়ে নেওয়া যায় বলে,এর চাহিদা দিনকে দিন বেড়েই যাচ্ছে।গ্যাবার্ডিন প্যান্টের সাথে মানানসই হিসেবে বেছে নেওয়া যেতে পারে কলার টি-শার্ট।তবে প্যান্টের কালারের উপর নির্ভর করে,কিরকম টি-শার্ট আপনি বেছে নিবেন।
উল্লেখ্য যে,সাধারণ গ্যাবার্ডিনের কাপড় কিনতে হলে আপনাকে নূন্যতম খরচ করতে হবে ৫০০ থেকে ৯০০ টাকা।তবে রঙের ব্যাপার নিয়ে চিন্তিত থাকলে,আপনার জন্য রয়েছে ১২০০ থেকে ৩৫০০ টাকার মধ্যে ব্রান্ডের গ্যাবার্ডিং প্যান্ট।
বাংলাদেশে প্রচলিত ৬ টি স্টাইলিশ টপ ব্রান্ডের গ্যাবার্ডিন প্যান্ট এর নামঃ
১.American Eagle: কম দামে কোয়ালিটিফুল প্যান্ট কিনতে চাইলে,এটি অপেক্ষাকৃত জনপ্রিয় ব্রান্ড।এটি মূলত আমেরিকান ব্রান্ডের ফেব্রিক,যার বাজারমূল্য ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা।
২.C&S : যারা নিয়মিত গ্যাবার্ডিন প্যান্ট ক্রয় করে থাকেন,তাদের কাছে এই ব্র্যান্ড প্রচুর পরিচিত।ইতালিয়ান ব্রান্ডের এই ফ্যাব্রিকটি বাজারে ৪০০-১০০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যেতে পারেন।
৩.Dockers: US ফ্যাশন ব্র্যান্ড Dockers খাকি গার্মেন্টস ব্রান্ড হিসেবে যাত্রা শুরু করে।এর বাজার মূল্য ৪০০-৮০০ টাকা।
৪.Zara Man: কোয়ালিটির দিক থেকে বিশ্বমানের ব্র্যান্ড।টাইট এবং স্ট্রেচড প্যান্ট পড়তে চাইলে spanish ব্রান্ডের এই ফ্যাব্রিকটি আপনার জন্য।
৫.US Polo: যুক্তরাষ্ট্রের ১ম সারির একটি ব্র্যান্ড এর ফ্যাব্রিক হলো US polo।
৬.Celio : ফ্রান্সের সেন্ট-ওয়েন সদর দপ্তরের জনপ্রিয় ব্র্যান্ড এটি।ফ্যাশনকে একটি অন্য মাত্রায় নিয়ে যেতে,ফরাসি পুরুষেরা Celio নামক ব্র্যান্ডটি চালু করে।মাত্র ৩০০-৮০০ টাকার মধ্যে সহজেই বাজারে পাওয়া যায়।
বর্তমান সময়ে গ্যাবার্ডিন প্যান্ট সম্পর্কে তো অনেক কিছু জানা হলো।চলুন এবার জানা যাক কিভাবে এই ফ্যাব্রিকটি আসলো?
গ্যাবার্ডিন হলো এক প্রকার শক্ত বোনা কাপড়,যা বিভিন্ন স্যূট,ওভারকোট,ট্রাউজার্স,ইউনিফর্ম,উইন্ডব্রেকার এবং অন্যান্য পোশাক তৈরিতে ব্যাবহৃত হয়।১৫ শতাব্দীর শুরুর দিকে গ্যাবার্ডিন বলতে শুধুমাত্র একপ্রকার long cassock(লং ক্যাসোক) নামক কাপড়কে বোঝানো হতো।বলা বাহুল্য যে,cassock হলো Roman Catholic-দের (রোমান ক্যাথোলিক) দ্বারা পরিধিত এক প্রকার সাধারণ পোশাক।এই পোশাকে রয়েছে button closure (বাটন ক্লোসার)এবং লম্বা sleeves (স্লিভস) যার মাধ্যমে এটি বডির সাথে শক্তভাবে লেগে থাকে।
পরবর্তীতে ১৬ শতাব্দীতে গ্যাবার্ডিন Rain clock (রেইন ক্লক) অথবা Protective Smock-frock ( (প্রোটেকটিভ স্মোক-ফ্রক) হিসেবে ব্যবহৃত হয়।উল্লেখ্য যে,Smock-frock হলো এক প্রকার ঐতিহ্যবাহী পোশাক যা গ্রামের কর্মচারীরা মূলত রাখাল এবং ঘোড়া চালকদের দ্বারা পরিধিত হতো।
১৮ শতাব্দীতে smock-frock ফেব্রিকটি ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস-এ চিত্রশিল্পীদের নিকট অতিরিক্ত পোশাক হিসেবে পরিধিত হয়,যা তাদের কাপড়কে রঙ থেকে রক্ষা করে।
গ্যাবার্ডিন ফ্যাব্রিক কিভাবে তৈরী করা হয়?
মূল ফ্যাব্রিকটি ১৮৭৯ সালে Thomas Burberry উদ্ভাবন করেন উলের সাথে তুলার মিশ্রণ ঘটিয়ে।বুননের পূর্বে তৈরীকৃত ফ্যাব্রিকটি পানি-রোধী করা হয় ল্যানোনিন ব্যবহার করে।আরামদায়ক বৈশিষ্ট্য গণ্য করতে চাইলে রাবারাইজড ফেব্রিক অপেক্ষা পানিরোধী টাইট গ্যাবার্ডিন শ্রেয়।
ফাইবারের সামগ্রিক বৈশিষ্টের উপর নির্ভর করে,গ্যাবার্ডিন ফ্যাব্রিক মসৃণ এবং শক্ত পৃষ্টযুক্ত হয়ে থাকে।নিয়মিত ব্যবহার করার কারণে ফ্যাব্রিকটির গুণাগুণ ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।বর্তমানে একটি উক্তি প্রায় সবার মুখে শুনতে পাওয়া যায়,”একটি পণ্যের মূল্যের উপর,তার গুণাগুণ শতভাগ নির্ভর করে।”ব্যবসা নির্ভর এই দুনিয়াতে আসল পণ্য এর পাশাপাশি নকল পণ্যও বাজার খুব ভালোভাবেই দখল করে নিয়েছে।আপনি কোনো একটি কাপড় বাজারে কিনতে যাচ্ছেন,আপনার বাজেটের উপর নির্ভর করবে যে,আপনি আসল পণ্য ক্রয় করতে পারবেন নাকি নকল পণ্য।গ্যাবার্ডিন প্যান্ট ক্রয়ের সময়ও একজন ক্রেতাকে এই সমস্যাটি ভোগ করতে হয়,যখন গ্যাবার্ডিন কাপড়টি ধোয়ার প্রয়োজন পড়ে!দেখা যায় আপনি ঠিক-ই ডিটারজেন্ট দিয়ে কাপড়টি ধুয়ে নিচ্ছেন,কিন্তু কাপড়ের ময়লা এর সাথে সাথে আপনার পকেটের টাকা এবং রঙ দুই-টাই পানির সাথে চলে যাচ্ছে তা কি খেয়াল করেছেন কখনো?!তাই কম দামে গ্যাবার্ডিন না কিনে,একটু বেশি দামে ব্রান্ডের কাপড় কেনা-ই শ্রেয়।
যেভাবে গ্যাবার্ডিন প্যান্ট ওয়াশ করবেনঃ-
Cotton গ্যাবার্ডিন নিয়মিত ব্যবহারের ফলে এর ফাইবার কিছুটা সংকুচিত হয়ে যায়।এজন্য কাপড়টিকে মেশিনে ধোয়া অপেক্ষা হাত দিয়ে ধোয়া অপেক্ষাকৃত ভালো এবং এরপর ড্রায়ারের পরিবর্তে রোদে শুকিয়ে নিলে ফাইবারের ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা কম থাকে।
Wool গ্যাবার্ডিন-গুলো পানির সাধারণ তাপমাত্রায় সংকুচিত হয়ে যায়,যদি না সঠিক পদ্ধতিতে ওয়াশ করা হয়।এই ধরণের ফ্যাব্রিক ওয়াশ করার জন্য,একটি ওয়াশ বেসিনে ২টি ক্যাপফুল বা উলের ও কেশমেয়ার(Cashmere) শ্যাম্পুর একটি স্কার্ট যুক্ত করা হয় অথবা শীতল জল দিয়ে ভরাট করা হয়।তাতে ফ্যাব্রিকটি ডুবিয়ে পরিমিতভাবে ওয়াশ করা হয়।
সিল্ক বা সিন্থেটিক আইটেমগুলোর জন্য ডেলিকেট ওয়াশ ব্যাবহার করা হয়।
বাংলাদেশের যেসব কোম্পানিগুলো গ্যাবার্ডিন প্রডাক্ট সাপ্লাই করে থাকেঃ
১) M/S Hater Choya Fabrics;
২)Coming Fashion Tex;
৩)Quality Denim Fabrics Ltd
৪)RS International
৯০-এর দশকে যেখানে জিন্সের ব্যবহারকে ফ্যাশনের তকমা দেওয়া দেওয়া হতো,সেখানে বর্তমানে জিন্সের পাশাপাশি গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পাশাপাশি অবস্থান করেছে।ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও গ্যাবার্ডিন প্যান্ট-কে বেছে নিয়েছে ফ্যাশনের মাধ্যম হিসেবে।তাহলে ভবিষ্যতে কি গ্যাবার্ডিন জায়গা করে নিবে মানুষের পছন্দের সিড়িটা?
উত্তরটা কঠিন হলেও,আন্দাজ করাটা কিন্তু মোটেও অতোটা কঠিন নয়।
সোর্সঃtradeford,প্রথম আলো,উইকিপিডিয়া,The Laundress.
Writer Information:
Bhuban Kanti Dey
Campus Ambassador(TES)
Department of Fabric Engineering
Dr.M A Wazed Miah Textile Engineering College,Rangpur.
Email: [email protected]