Thursday, November 21, 2024
Magazine
More
    HomeTechnical Textileফ্লেদার নাকি লেদার…???

    ফ্লেদার নাকি লেদার…???

    “হায়্রে ভানু লালপাল,
    ভেবেছিলো গরুর চামড়া টিকবে চিরকাল।।”

    কিন্তু সে আশায় মাটি দিলো আগামীর লেদারশিল্পের জন্য “নেক্সট জেনারেশন লেদার” হিসেবে আখ্যা পাওয়া “ফ্লেদার”,
    ইয়ে মানে Fungal লেদার।।

    কি অবাক হচ্ছেন? Fungal লেদার কিভাবে বর্তমানে প্রচলিত চামড়া কে টেক্কা দিবে??

    জিহ হা!! তা জানানোর চেষ্টা করবো পুরো আর্টিকেল জুড়ে।।
    তবে,
    আচ্ছা আচ্ছা দাঁড়ান দাঁড়ান, জিহ হা আপনাকেই বলছি, আগে বলুন টিম “চঁন্দ্রবিন্দু” কর্তৃক সদ্য প্রকাশিত হওয়া ৬ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডের ভিডিও টি দেখেছেন তো?

    আচ্ছা আচ্ছা, না দেখলে অবশ্যই আর্টিকেল পড়ার পরেই দেখে নিবেন যাতে করে আপনি এই সম্ভাবনাময় লেদার সম্পর্কে পুরোদস্তুর একটি স্বচ্ছ ধারণা পান।

    সময়ের সাথে সাথে বিজ্ঞানের বিভিন্ন আবিষ্কার মানুষের মাঝে জায়গা করে নিয়েছে। যারই আদর্শ উদাহরণ হলো- fungal leather। কে ভেবেছিলো, খাবারের টেবিলে স্থান পাওয়া মাশরুম একসময় পৃথিবীর সবচেয়ে দামী লেদারে পরিণত হবে?
    আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি, এমন একটি অবিশ্বাস্য আবিষ্কার করেছেন ইন্দোনেশিয়ার একটি startup “Mycotech Company”.

    সাধারণত মাশরুম ২ টি অংশ নিয়ে গঠিত। ফ্রুটবডি এবং মাইসেলিয়াম। মাশরুমের অসংখ্যা হাইপি একত্রিত হয়ে মাইসেলিয়াম গঠন করে।

    ইন্দোনেশিয়ার ব্যানডাং নামক গ্রামের আদি রেজা এবং তার টিম প্রায় অর্ধদশক পরিমাণ সময় ব্যয় করে এই লেদার আবিষ্কারের জন্য।আবর্জনায় জন্ম নেওয়া ফানগি এর মাইসেলিয়ামকে বিলিয়ন ডলারের একটি আইডিয়া তে পরিণত করেছে তারা..!!

    হাজারীবাগ কিংবা সাভারের হেমায়েতপুরের ট্যানারী শিল্পের পাশ দিয়ে যাতায়াত করেছে কিন্তু সেখানকার চামড়া পঁচা গন্ধ পায়নি,এইরকম মানুষ খুঁজে পাওয়া হয়তো দুঃসাধ্য ব্যাপার। মূলত এই চামড়াগুলো থেকেই লেদার বা এই জাতীয় পণ্য প্রস্তুত করা হয়। উল্লেখ্য যে, ট্যানিং প্রক্রিয়া সম্পাদনের জন্য Ammonium এবং Chromium এর মতো ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়।
    বর্তমানে বিশ্বে দুইটি উৎস থেকে লেদার প্রস্তুত করা হয়ঃ
    ১) প্রাণির চামড়া দিয়ে;
    ২)প্লাস্টিক থেকে;
    তাহলে একপ্রকার লেদার আসে, কোনো প্রাণির মৃত্যু থেকে এবং আরেকপ্রকার লেদার আসে প্লাস্টিক জাতীয় পদার্থ থেকে..!! আপনি হয়তো শখের বশে বাজার থেকে কম দামে লেদারের জ্যাকেট, ঘড়ি, মানি ব্যাগ ইত্যাদি কিনে নিচ্ছেন, কিন্তু আপনার এই শখের কারণে একটি জীবন্ত প্রাণির মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
    যেখানে আপনি সামান্য আবর্জনায় জন্ম নেওয়া মাশরুম থেকে লেদার পেয়ে যাচ্ছেন,তাহলে সেটি উপেক্ষা করা উদ্ভট নয় কি??

    Fleather সম্পর্কে এতো কিছু জানার পর প্রশ্ন জাগতেই পারে যে, এটি কিভাবে তৈরি করা হয়? প্রশ্ন-উত্তরের জটিল বিষয়কে সহজ করার জন্যই, চলুন জেনে আসা যাক কিভাবে একটি fungal leather প্রস্তুত করা হয়ঃ

    কার্যপদ্ধতিঃ

    ১. প্রথমে বিভিন্ন sawdust, sugarcane, এবং agricultural waste সংগ্রহ করা হয় এবং সেগুলোকে steaming(বাষ্পীকরণের) এর মাধ্যমে sterilized (জীবাণুমুক্ত) করা হয়। উল্লেখ্য যে, Sawdust বলতে কাঠের গুড়োকে বোঝানো হয়।

    ২. তারপর একটি পলিথিনে মাশরুমের স্পোর গুলোকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি-সমৃদ্ধ sawdust এ ভালো ভাবে মেশানো হয়। উল্লেখ্য যে, মিডিয়াম সমৃদ্ধ পলিথিনটিকে bag log বলা হয়।

    ৩. ২৩-২৮°C তাপমাত্রায় bag log-গুলোকে একটি আবদ্ধ রুমে ১ মাস ব্যাপী রেখে দেওয়া হয়। খেয়াল রাখতে হবে যেন রুমটি কিছুটা স্যাঁতস্যাঁতে এবং সেখানে পর্যাপ্ত ভ্যান্টিলেশনের ব্যবস্থা থাকে।

    ৪. মাশরুমের স্পোর গুলো sawdust থেকে পুষ্টি শোষণ করে এবং তা থেকে মাইসেলিয়ামের সৃষ্টি হয়। ফলশ্রুতিতে এই মাইসেলিয়াম থেকেই মাশরুম উৎপাদিত হয়।

    ৫. তারপর bag log-গুলোকে নির্দিষ্ট চর্তুভূজাকার ফ্রেমে ভেঙ্গে ভেঙ্গে ভরাট করতে হবে। তার পূর্বে ফ্রেমটিকে অ্যালকোহল এর মাধ্যমে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। ভরাটকৃত ফ্রেমটিকে ভালোভাবে পলিথিনে ঢেকে দিয়ে একটি কক্ষে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রেখে দিতে হবে যাতে করে মাইসেলিয়াম দ্বারা পুরো ফ্রেমটি আবৃত হয়ে যায় এবং এতে করে সেটি অনেকটাই মজবুত আকার ধারণ করে।

    ৬. তারপর প্রাপ্ত ব্লক গুলোকে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় তাপ দিতে হবে এবং সেখান থেকে দুটি আবরণ পৃথক করা হবে। যার মধ্য দিয়ে ব্লকগুলো mylea এবং biobo হিসেবে ভাগ হয়ে যায়।

    ৮. মাইলিয়ার(mylea) ক্ষেত্রে পৃথককৃত অংশটিকে বয়লিং এর মাধ্যমে এবং কিছু ক্যামিকাল যেমনঃ ইথিলিন গ্লাইকল, গ্লাইকেরল ইত্যাদি ব্যবহারের মাধ্যমে নরম করা হয় এবং এর পর সেখান থেকে প্রাপ্ত অংশগুলোকে পরিষ্কার করে dying করে লেদারগুলোকে রোদে শুকানো হয়।

    ৯. পরবর্তীতে mylea এর স্তরগুলোকে একত্রিত করে, কাঙ্ক্ষিত লেদার বাজারজাত করা হয়ে থাকে। এইক্ষেত্রে mylea থেকে জ্যাকেট, ঘড়ি, জুতা ইত্যাদি প্রস্তুত করা হয়।

    ১০. অপর দিকে mylea ব্যাতিত অংশটিকে ৭০-১৩০°C তাপমাত্রায় pressure দেওয়া হয়। যাকে Biobo হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।

    ১১. Biobo কে তাপ দিয়ে টাইলস, চেয়ার, টেবিল এবং অন্যান্য আসবাবপত্রে রুপান্তর করা হয়।

    ফ্লেদারকে বর্তমান যুগের লেদারের বিকল্প হিসেবে ধরে নেওয়া হচ্ছে। যার আয়ু অবশ্য স্বাভাবিক লেদারের চেয়ে তুলনামুলকভাবে কম। ১৯৫০ সালে সর্বপ্রথম মাশরুমের মাইসেলিয়াম থেকে fungal mats তৈরি করা হয়। যা প্রায় ৬৭ বছর পর mylea এবং biobo আবিষ্কারের মধ্যে দিয়ে পুনঃযাত্রা শুরু করে।

    Mycoworks এর কো-ফাউন্ডার Sophia Wang বলেছেন-

    “With leather, you are limited to the skin that animal produces over its life. Whereas mycelial mats can be grown to specifications.”
    এছাড়াও,একটি গবেষণায় দেখা যায় mycotech একটি ফ্লেদার আবিষ্কারে মাত্র ১২ লিটার পানি ব্যবহার করে যেখানে একটি কটনের টি-শার্ট তৈরিতে ২৫০০ লিটার পানি খরচ হয়।

    বর্তমান সময়ে ৪র্থ শিল্প-বিপ্লব প্রযুক্তিখাতে মানুষকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে। তাই আগামীর বেটার ও সাস্টেনেবল পৃথিবীর জন্য পরিবেশ সচেতন হওয়া সবচেয়ে বেশি জরুরি। সনাতন পদ্ধতিতে পশুর চামড়া থেকে লেদার তৈরির চামড়া সংগ্রহ করা হয় যা প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় চুন দিয়ে পানিতে পচানো হয়। এতে পানি দূষণের পাশাপাশি পানিতে বসবাসকারী মাছেরও ক্ষতিসাধন হয়। আবার Synthetic leather, যার মূল কাঁচামাল প্লাস্টিক, সেটি প্রস্তুত করার জন্য প্রচুর পরিমাণ তেল ও অন্যান্য ক্ষতিকারক কেমিক্যাল ব্যবহার করতে হয়। এই কেমিক্যাল হয়তো সাময়িকভাবে আপনার ক্ষতি করছে না, কিন্তু সরাসরি পরিবেশের উপরই প্রভাব ফেলছে। যা পরবর্তীতে আমার, আপনার তথা পুরো মানবজাতির জন্যই এক হুমকির কারণ হতে পারে। কি বিশ্বাস হচ্ছে না..!!!
    একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, বিশ্বের প্রতিটা মানুষের একটি কাপড়ের গড় আয়ু ৩বছর। ৩ বছর পর আপনি লেদারটি যদি বাইরে ফেলে দেন, লেদারের প্লাস্টিক ও কেমিক্যাল পদার্থগুলো কিন্তু মাটিতেই থেকে যায়।

    পক্ষান্তরে, মাইসেলিয়াম থেকে উৎপন্ন লেদার যা প্রায় ২ বছর ব্যবহার করা সম্ভব, সেই কাপড়টি ব্যবহারের পর মাটিতে ফেলে দিলে প্রায় তিনমাসের মধ্যে এটি মাটির সাথে মিশে যায়। তাছাড়া, এতে কোনো কৃত্রিম ডাই বা কেমিক্যাল ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না বিধায় পরিবেশ দূষণের কোনো সম্ভাবনাও থাকে না। ইতোমধ্যে, USA, Indonesia, Koria সহ বেশ কিছু দেশ এর পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু করেছে এবং ফ্লেদার জ্যাকেট, ব্যাগ, ঘড়ির বেল্ট, জুতা তৈরি করছে। সেই সাথে, সহজে ও অল্প খরচে চাষযোগ্য হওয়ায় আগামীর লেদারশিল্পের জন্য ফ্লেদারকে নেক্সট জেনারেশন লেদার অ্যাখায়িত করা হয়।

    তাহলে বাংলাদেশই বা পিছিয়ে কেনো?
    চলুন, “ট্যানারী শিল্পকে বর্জন করি, বাংলাদেশে ফ্লেদারের ব্যবহার শুরু করি।”

    তথ্যসূত্রঃ mycotec, google scholar, fashion2fiber, উইকিপিডিয়া, ইউটিউব।

    About Author:
    Bhuban Kanti Dey
    Arafat Khan Pritom
    Md. Istiaque Hossain Ullash
    Md Farhan
    Dr. M A Wazed Miah Textile Engineering College

    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    Related News

    - Advertisment -

    Most Viewed