বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় রপ্তানিমুখী শিল্প খাত হলো টেক্সটাইল বা পোশাক শিল্প। বর্তমানে বিশ্বে রেডিমেড গার্মেন্টস রপ্তানিতে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। যার প্রথম স্থানে আছে চীন এবং তৃতীয় স্থানে আছে ভিয়েতনাম।
বর্তমানে কোভিড-১৯ কি তার সম্পর্কে নতুন করে কিছু জানানোর নেই। গত বছর থেকে এই ভাইরাসের প্রকোপে অনেক দেশের অবস্থা অনেক ভয়াবহ হয়ে গেছে।
২০২০ সালের ৮ ই মার্চ বাংলাদেশে সরকারিভাবে প্রথম করোনার আবির্ভাব ঘটে। এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ এটি বাতাসের মাধ্যমে ছড়াতে সক্ষম। সাধারণত লোকসমাগমে এই ভাইরাস সহজে ছড়াতে সক্ষম। দেশের সবার কথা ভেবে সরকার মার্চ মাসের ২৪ তারিখ থেকে ১০ দিনের লকডাউন দেওয়া হয় । যেটি ২৬ মার্চ থেকে কার্যকর করা হয়।
এই টেক্সটাইল শিল্প দেশের সবথেকে বড় বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অংশ এবং পাশাপাশি লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের কর্মস্থল। এই পোশাক শিল্পের উপর ভিত্তি করে যেভাবে দেশ এগিয়ে যাচ্ছিল এবং লক্ষ্ লক্ষ্ শ্রমিকের সংসার চলত ।
দেশের মোট উৎপাদন আয়ের শতকরা প্রায় ৮২ ভাগ আসে পোশাক শিল্প । প্রায় চার মিলিয়ন শ্রমজীবী মানুষের ভাগ্য জুড়ে আছে এই টেক্সটাইল শিল্পের সাথে।
আমাদের আরএমজি খাতে ২০২১ সাল নাগাদ ৫০ বিলিয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্য ছিল। যা বর্তমান বিশ্বের মোট পোশাক রপ্তানির ৮-১০% । বর্তমানে ৩৪ বিলিয়ন ডলার রফতানি করে পুরো লক্ষ্যমাত্রার ৭% পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু তারপরেও ২০২১ সালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব নয়।
করোনার প্রাদুর্ভাব এর কারণে এবং লকডাউন এর ফলে পোশাক রপ্তানি করতে না পারায় বিভিন্ন দেশ তাদের অর্ডার গুলো বাতিল করেন । এর ফলে প্রায় ৩.১৫-৬ বিলিয়ন ডলারের মতো অর্ডার বাতিল হয়। বিদেশি যেসব বায়ার অর্ডার বাতিল করেছে তাদের মধ্যে ৯৮.১ শতাংশই পণ্য বাতিলের ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকার করেন। এরমধ্যে ৭২ শতাংশ বায়ার সাপ্লাইয়ারের ক্রয় করার কাঁচামালের মূল্য দিতে এবং ৯১ শতাংশ বায়ার উৎপাদনের খরচ দিতে অস্বীকার করে। যার ফলে আমাদের দেশের টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিগুলো অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এর ফলে ইন্ডাস্ট্রিগুলো শ্রমিকদের বেতন আটকে রাখে। ফলে সরকার অর্থনৈতিক বিবেচনা করে ইন্ডাস্ট্রি গুলোতে স্বল্প সুদে লোন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বর্তমানে সরকারি বিধিনিষেধ মেনে ইন্ডাস্ট্রি গুলো খুলে দেওয়া হয়েছে ।
এই করোনা ভাইরাস এমন একটি ভাইরাস যার নির্দিষ্ট কোন ভ্যাকসিন এখন পর্যন্ত তৈরি করা সম্ভব হয়নি এবং এই ভাইরাস প্রতিনিয়ত তার রূপ পাল্টাচ্ছে। আগের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠছে। তবে গবেষকরা তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন এই ভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরি করার জন্য। কিছু দেশ ভ্যাকসিন তৈরি করতে কিছুটা সফলতা পেয়েছেন। সকলের সচেতনতার মাধ্যমেই এ করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করা সম্ভব।
লেখকঃ
মঞ্জুয়ারা সুলতানা তিথি
ডিপার্টমেন্ট অফ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং
সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি।
বাহ!🌸