অফিস আদালত, ইন্টারভিউ কিংবা কোনো প্রেজেন্টেশনই হোক না কেনো সব ক্ষেত্রেই ছেলেরা কিন্তু ফরমাল পোশাককেই বরাবরের মতো প্রাধাণ্য দিয়ে আসছে সেই শুরু থেকে। তাই ফরমাল পোশাক পরেন কিন্তু দেশীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড CATS EYE এর নাম শোনেননি এমন মানুষ কমই আছে। যারা এই ব্র্যান্ড সম্পর্কে জানেন না তাদের জন্য চলে এসেছি CATS EYE এর খুঁটিনাটি বিষয়গুলো নিয়ে।
বাংলাদেশের জনপ্রিয় একটি ফ্যাশন প্রতিষ্ঠানের নাম হলো ক্যাটস আই ( CATS EYE ) । মূলত ছেলেদের পোশাকের জন্যই বিখ্যাত CATS EYE। বিশেষত ছেলেদের ফরমাল এবং ক্যাজুয়াল শার্টের জন্যই ক্যাটস আইয়ের সুনাম ঢাকা ছাড়াও সারা দেশব্যাপী। এই ব্র্যান্ডে ক্যাজুয়ালও ফরমাল ড্রেসের পাশাপাশি সবধরনের শার্ট, প্যান্ট, জুতা, জ্যাকেট, টাই, বেল্ট, ওয়ালেট, ক্যাপ পাওয়া যায়। মেয়েদের জন্য আছে উইমেন্স ওয়্যার এন্ড অ্যাক্সেসরিজ।
প্রতিষ্ঠার ইতিহাসঃ
কানাডার দীর্ঘ প্রবাসজীবন ছেড়ে স্ত্রী আশরাফুন সিদ্দিকীকে সঙ্গে নিয়ে দেশে ফেরেন সাইদ সিদ্দিকী। ১৯৮০ সালে দুজন মিলে ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় গ্রীন সুপার মার্কেটে ছোট্ট একটি রকমারির দোকান খোলেন এবং নাম দেন CATS EYE। তখন সেখানে ছেলেদের শার্টের পাশাপাশি গয়না, খাবারদাবার ও ক্যাসেট বিক্রি করতেন তাঁরা। তাদের ছোট্ট সেই দোকানটিতে শার্ট বিক্রিতে ভালো সাড়া পাওয়ায় এটাকে একটি ব্র্যান্ডে রুপ দেওয়ার চিন্তাভাবনা করতে থাকেন আশরাফুন সিদ্দিকী। যেই ভাবনা সেই কাজ ১৯৮৩ সালে এলিফ্যান্ট রোডের মনসুর ভবনের একটি তলা ভাড়া নেন এই সিদ্দিকী দম্পতি। সেখানে একটি দোকানে ছেলেদের পোশাকের এই জনপ্রিয় পোশাক ব্র্যান্ড ‘ ক্যাটস আই ‘এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়ে। ব্র্যান্ডটি পোশাক তৈরির জন্য নিজেদের বাসার গ্যারেজটিকেই ছোট কারখানার রুপ দেয়।
জনপ্রিয় এ-ই ব্র্যান্ডটির শুরুর গল্পটা এমনই। তারপর যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এবং মানুষের রুচি ও চাহিদা অনুযায়ী নতুনত্ব এনেছে ব্র্যান্ডটি। ছেলেদের পোশাকের পাশাপাশি স্বল্প পরিসরে মেয়েদের পোশাকও নিয়ে এসেছে। দীর্ঘ সাড়ে তিন দশকের যাত্রায় এই ব্র্যান্ডটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট, বগুড়া, খুলনা, কক্সবাজার ও বরিশালের মতো বড় বড় শহরগুলোতে নিজেদের ভীত শক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে ক্যাটস আইয়ের শাখা রয়েছে ৩৫ টির বেশি। এলিফ্যান্ট রোডের শোরুমটি ক্যাটস আইয়ের সবচেয়ে বড় শোরুম যার আয়তন ২২০০ বর্গফুট। এখানেও ফরমাল ও ক্যাজুয়াল শার্টের সাথে প্যান্ট, কোর্ট, বেল্ট, ওয়েস্টকোর্ট, জিন্স্যান্ট, মোবাইল প্যান্ট, গ্যাভাডিন প্যান্ট, পাঞ্জাবিসহ আরও অনেক পেশাকে পাওয়া যায়। ক্যাটস আইয়ের সকল শাখাতে ছেলেদের পোশাক পাওয়া গেলেও ক্যাটস আই এর ওয়ারী এবং গুলশান শাখায় মেয়েদের পোশাকের দেখা মেলে।
নব্বইয়ের দশকে যখন চাকুরীজীবিদের জন্য ফরমাল পোশাক জোগান দেওয়ার মতো কোনো দেশীয় ব্র্যান্ড ছিল না তখন সেই শূন্যতা পূরণে ১৯৯৩ সালে Monsoon Rain নামে নতুন একটি ব্র্যান্ড খোলেন সাইদ সিদ্দিকী। ১৯৯৮ সালে খেলাধুলার পোশাক বিক্রির জন্য ক্যাটস আই Unlimited নামে আরও একটি ব্র্যান্ড তৈরি করেন। Monsoon Rain এবং Unlimited দুটো ব্র্যান্ডের তত্ত্বাবধায়ক CATS EYE।
গত ৩৬ বছরে ‘ক্যাটস আই’ এর ব্যবসা বেড়েছে বহুগুন। সবমিলিয়ে বিক্রয়কেন্দ্র দাঁড়িয়েছে ৩৭ – এ। কারখানা ও বিক্রয়কেন্দ্র মিলিয়ে এখানে কাজ করেন ৪০০ জন। প্রধান কার্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ মিলে এই ব্র্যান্ডটি মোট ৫০০ জনের কর্মসংস্থান।
এবছর ফ্যাশন হাউস ‘ক্যাটস আই’-এর শুভেচ্ছাদূত হয়েছেন ক্রিকেটার তামিম ইকবাল। ঢাকার বনানীতে ‘ক্যাটস আই’ কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ক্যাটস আই’ পরিবার তাদের নতুন শুভেচ্ছাদূত হিসেবে তামিম ইকবালের নাম ঘোষণা করেন।
পাশ্চাত্যের সঙ্গে দেশি ট্রেন্ড এবং রুচির সমন্বয় করে ‘ক্যাটস আই’ এর প্রচারণায় অংশ নেবেন তামিম ইকবাল। ইতিমধ্যে ‘ক্যাটস আই’-এর নতুন ডিজাইনের শীতকালীন পণ্যের ফটোশুটে অংশ নিয়েছেন তামিম ইকবাল। এ প্রসঙ্গে তামিম বলেন, ‘কোনো ফ্যাশন হাউসের হয়ে এবারই প্রথম শুভেচ্ছাদূত হওয়া হয়েছে। ‘ক্যাটস আই’ এর পণ্যের প্রচারে আমি সম্পৃক্ত থাকতে পারছি এটা ভেবে ভালো লাগছে।’
এ দিকে, ‘ক্যাটস আই’ এর আরেক শুভেচ্ছাদূত জনপ্রিয় গায়ক ও গিটারিস্ট, নেমেসিস ব্যান্ডের জোহাদ রেজা চৌধুরীও থাকছেন ক্যাটস আইয়ের সঙ্গে।
দেশের মাটি ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও প্রভাব বিস্তার করতে চায় বাংলাদেশের এই জনপ্রিয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড CATS EYE।
Sourse: www.catseye.com
Writer Information:
Tonima Islam
Department of Textile Engineering
1st year, 2nd Semester
Jashore University of Science and Technology