ফ্যাশন মার্কেটিং
ফ্যাশন শিল্পের বিকাশ,প্রচার ,বিক্রয় মূল্য প্রদর্শন,সহ ফ্যাশন ডিজাইন এবং বিপণন এর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করাকেই মূলত ফ্যাশন মার্কেটিং বলা হয়।ফ্যাশন মার্কেটিং বলতে প্রধানত বস্ত্রের ক্রয়,বিক্রয় ও বিপণন সম্পর্কিত বিষয়কে বোঝায় যা টেক্সটাইলের একটি গ্রহণযোগ্য অংশ।ফ্যাশন বলতে সাধারণত বস্ত্রের ধরন, স্টাইল বোঝায় যা ডিজাইনের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় এবং এবং ক্রেতাদের চাহিদা মিটিয়ে থাকে।পণ্যের বিক্রয়ের হার বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে যেকোনো ফ্যাশন ব্র্যান্ড তাদের ব্যবসা পণ্য বা সেবাকে মার্কেটে ও সর্বসাধারণের মাঝে মাঝে প্রচার করে যা মূলত ফ্যাশন মার্কেটিংএর আওতাভূক্ত।গ্রাহকদের চাহিদা যেমনঃনমনীয়তা,স্থায়িত্ব এবং ঔজ্জ্বল্য ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে,বিক্রেতারা বিভিন্ন চিন্তা ধারা কাজে লাগিয়ে গ্রাহকদের পছন্দসই সেবা প্রদান করে থাকে যা মূলত মার্কেটিং এর আওতাভুক্ত।
ফ্যাশন মার্কেটিংয়ের ধরন
গ্রাহকদের চাহিদা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মার্কেটিং ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।টেক্সটাইল সেক্টরে মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে ঋতু বৈচিত্রের পরিবর্তন, আরামদায়ক ও স্থায়িত্বের উপর ভিত্তি করে কম খরচে কম সময়ে অধিক পরিমাণ পণ্য উৎপাদন করতে হয়,যেজন্য অনেক সময় দেশের স্বনামধন্য ব্র্যান্ডগুলোর ওপর নির্ভর করতে হয়।এই করোনাকালীন সময় মানুষ মার্কেটিং সেবা, অনলাইন সেবার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে।তবে এই মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে যা উত্তরণের জন্য চিন্তা ধারা,কাজের ধরন ও সেবায় পরিবর্তন আনতে হবে এবং আধুনিক প্রযুক্তির সহযোগিতা ছাড়াই কম খরচে উচ্চ মানের পণ্য উৎপাদন ও বিপণন সেবা সাধারণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার পথ উন্মোচন করতে হবে।
ফ্যাশন মার্কেটিংয়ের কৌশল
পোশাক ও বস্ত্র শিল্পের বিকাশে ফ্যাশন মার্কেটিংয়ের ভূমিকা অপরিসীম।ফ্যাশন মার্কেটিং এর মাধ্যমে পোশাকের জনপ্রিয়তা মুলত বৃদ্ধি পায় এবং টেক্সটাইল শিল্পের প্রসার ঘটে।ফ্যাশন মার্কেটিং একটি প্রতিযোগিতামূলক জায়গা। ইকমার্স এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সাথে সাথে ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো কেবল রপ্তানির উপর নির্ভর করে না থেকে অনলাইন মার্কেটিং এর প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্রয় ক্ষমতা কম হওয়ায় ঘন ঘন ফ্যাশন পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলা সম্ভব হয় না।এজন্য আপনি ফ্যাশন মার্কেটিং এর মাধ্যমে যেভাবে আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কিত তথ্য আরও শক্তিশালী ভাবে উপস্থাপন ও বিক্রয় বৃদ্ধির উদ্দেশ্য কিছু কৌশল গ্রহণ করতে পারেন তা নিম্নরূপঃ
১.Retargeting – সাধারণতঃ মানুষ একবার কোনো বিজ্ঞাপন বা ওয়েবসাইট দেখেই পণ্য কেনার সিদ্ধান্ত নেয় না বা নিতে পারে না। কারণ অনলাইনে মানুষ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মানসিক অবস্থায় থাকে।এই ক্ষেত্রে সমাধান হলো আপনার ওয়েবসাইট যারা দেখে তাদেরকে পুনরায় আর্কষিত করা।গুগলের বিজ্ঞাপন মাধ্যম এবং ফেইসবুক উভয়ই রিটার্গেটিংয়ের জন্য ব্যবহার করতে পারেন।রিটার্গেটিং হলো কোনো পরিদর্শক আপনার ওয়েবসাইট একবার দেখার পর সে অনলাইনে যেখানেই যাক আপনার বিজ্ঞাপন দেখতে পাবে। এভাবে যদি সে প্রতিদিন ১০-১৫ বার আপনার ব্র্যান্ডের বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দেখে কোনো এক সময় সে পণ্য কিনে ফেলবে আর যদি নাও কিনে অনন্ত আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কে জেনে গেল।
২.Influencer Marketing :ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিংকে বলা হয় ভবিষ্যৎ মার্কেটিং কিন্তু এটা এখন আর ভবিষ্যত না বর্তমানে এর সফলতার পরিমাণ অনেক বেশি তাছাড়া এটা সামগ্রিক মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রেও গুরুত্ব বহন করে। ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং হলো একটা ব্র্যান্ডের মূল চাবিকাঠি যুক্ত কর্মচারীরা যাদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে তথ্য পৌছে দেয়া যায়।বাইরের দেশে অনেক ইনফ্লুয়েন্সার কর্মী পাওয়া যায় কিন্তু বাংলাদেশে এটা নেই বললেই চলে।সেক্ষেত্রে আপনার একটা পরিকল্পনা হতে পারে ফ্যাশন মডেলদের কে ব্যবহার করা। ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং-এ সাধারনত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করা হয়। তাই সেই সব মডেলদেরকেই ব্যবহার করা ভালো যাদের ফেইসবুক বা ইনস্টাগ্রামে অনেক ফলোয়ার আছে। এদেরকে ব্যবহার করতে পারেন এই ভাবে যে আপনি আপনার ব্র্যান্ডের পোশাক পরিয়ে ছবি তুলে তাদের পেজ থেকে ছড়িয়ে দিতে পারে অথবা তাদের পেজ থেকে আপনার ব্র্যান্ডকে পর্যালোচনা করতে পারে। এতে যেটা হয় নতুন দর্শক এর পাশাপাশি পুরানো ক্রেতার কাছে আপনার ব্রান্ডের বিশ্বাস যোগ্যতা বাড়ে।
৩. Email or SMS remainder– আপনার ওয়েবসাইটে এমন কিছু পরিদর্শক আছে যারা নিয়মিত কেনাকাটা করে আপনার ওয়েবসাইট অথবা দোকান থেকে।এই ক্ষেত্রে যেটা হয় অনেক সময় তারা ওয়েবসাইটের বিভিন্ন পেজে বিভিন্ন সময়ে ঘোরে এবং তাদের পছন্দসই পণ্য গুলো ‘প্রিয়’ বা ‘নিজস্ব স্থানে’তালিকা করে রেখে দেয় পরে কিনবে তাদের সুবিধামত সময়ে এই সব চিন্তা করে। একজন মানুষের কাছে আসলে অনেক ব্র্যান্ডই ভালো লাগতে পারে তো সেই কারণে সে সব ব্রান্ডের ওয়েবসাইট ঘোরে এবং তার পছন্দসই পণ্য গুলা তালিকা করে রেখে দিতে পারে।এই ক্ষেত্রে যেটা হয় সে অনেক সময় ভুলে যেতে পারে আপনার ব্র্যান্ডকে কারণ সে তার প্রিয় ব্র্যান্ড গুলোর সব ওয়েবসাইটেই এগুলা করে থাকে। সুতরাং তাদেরকে মানে যারা আপনার ওয়েবসাইটে এর নির্দিষ্ট পণ্য পছন্দ করে রেখেছে তাদেরকে চিহ্নিত করে ইমেইল বা এস.এম.এস রিমাইন্ডার দিতে পারেন।এতে আপনার বিক্রয় বৃদ্ধি পাবে।
৪.Birthday wishing – জন্মদিন সব সময়ই সবার কাছে একটা আবেগের বিষয়।আর একজন বিক্রেতাকে সেটাই পুঁজি করে তার ক্রেতাকে খুশি করতে হয়।জন্মদিনে আসলে একজনকে অনেক জায়গা থেকে শুভ কামনা জানায় – তার পরিবার থেকে, বন্ধুদের কাছ থেকে, প্রিয়জনের কাছ থেকে ইত্যাদি এবং সে এটা আশাও করে।এখন যদি আপনি আপনার ক্রেতাকে জন্মদিনে শুভ কামনা জানান, তখন তার কাছে এটা একটু আলাদা মনে হবে, আশ্চর্য হবে এবং ভাববে আপনি তাকে আলাদা মনোযোগ দিচ্ছেন বা মূল্য দিচ্ছেন কারণ এটা সে আশা করে না।এভাবে আপনার ব্র্যান্ডের সত্যতা পাশাপাশি বিক্রিও বাড়বে।এখন প্রশ্ন হলো এটা আপনি কিভাবে করবেন ? খুব সহজ।যারা আপনার দোকান বা অনলাইনে এসে পণ্য কেনে তাদের কাছ থেকে তাদের নাম, মোবাইল নম্বর, ইমেল আইডি এবং জন্মদিন সংগ্রহ করে তথ্য ভান্ডার হিসেবে রেখে দিন।এবার প্রতিদিন ঐ তথ্য ব্যবহার করে তাদেরকেই ইমেল ও এস.এম.এস পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানান,যাদের ঐদিনে জন্মদিন।এই ক্ষেত্রে আপনি তাদেরকে বিশেষ অফারও (যেমন ১০% ডিসকাউন্ট) দিতে পারেন। এতে আপনার বিক্রয় বৃদ্ধি পাবে।
৫.Style guide:স্টাইল গাইড হলো একটা ব্রান্ডের যে বিভিন্ন রকম পোশাক যেমন শার্ট, টি-শার্ট, ডেনিম, বটম, সালোয়ার-কামিজ, টিউনিক ইত্যাদি সংগ্রহ থাকে সে গুলোকে নিয়ে একটা বই বা গাইড তৈরী করা যেখানে গল্প আকারে বর্ণনা করা হয় কিভাবে পোশাক গুলা পরতে হয়, কোনটার সাথে কোনটা মিলিয়ে পরতে হবে, কখন এবং কোন ঋতুতে পরলে ভালো হবে, পোশাক তৈরিতে কি কি উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে, কেন এই উপাদান গুলা ব্যবহার করা হয়েছে পাশাপাশি এটা কিভাবে একজন ব্যবহারকারীর দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলবে ইত্যাদি।এটা হতে পারে বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা ঋতুকে চিহ্নিত করে যেমন বসন্ত, গ্রীষ্ম,শীত, ফল, বিবাহ, অনুষ্ঠান ,যাতায়াত,ছুটির দিন ইত্যাদি।এটা আপনি আপনার ওয়েবসাইটে রেখে উপস্থাপন করতে পারেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, এস.এম.এস বা ইমেইল মার্কেটিং-এর মাধ্যমে অথবা লিফলেট আকারে বিলি করতে পারেন যেটা আপনার বিক্রয় বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।
৬.ভিন্ন রকমের ক্রেতা- যারা প্রথম আপনার দোকান বা ওয়েবসাইটে আসে সাধারনত সব সময় তারা কোনো পণ্য কিনতে প্রস্তুত থাকে না। ওই সমস্ত ক্রেতার কাছ থেকে খুব কৌশলে নাম, মেইল আইডি বা ফোন নম্বর নিয়ে রাখতে পারেন। তারপর তাদেরকে টার্গেট করে এস.এম.এস বা ইমেইল মার্কেটিং করে তাদেরকে জানাতে পারেন আপনার নতুন নতুন কালেকশন, সাম্প্রতিক কালেকশন,ঋতুভেদে কালেকশন ইত্যাদি এবং যখন আপনি এটা করবেন তখন সে এর মাধ্যমে আপনার ব্র্যান্ডের সাথে পুনরায় যোগাযোগ করতে পারবে এবং এক সময় সে কিছু কেনার জন্য আপনার দোকানে আসবে এবং কিনবে।
৭.Gift guide – ১২ মাসে ১৩ পার্বনের দেশ বাংলাদেশ।তাই বছর জুড়েই আসলে কোনো না কোনো অনুষ্ঠান লেগেই থাকে বাঙালির জীবনে যেমন জন্মদিন, বিবাহ বার্ষিকী, ভেলেন্টাইন ডে, মাদারস ডে, ঈদ, পূজা ইত্যাদি এবং মানুষ বছর জুড়েই এই সব সামাজিক অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন উপহার কিনে থাকে তার প্রিয় মানুষদের জন্য।
৮.Website এ বিনিয়োগঃ বেশিরভাগ ফ্যাশন মার্কেটার তাদের ওয়েবসাইটকে নিজের সন্তানের মত করে থাকে যা আপনাদের অনেকেরই অজানা।যদিও এটা কিছুটা নাটক মনে হতে পারে তবে এর মূল কারণ হলো ওয়েবসাইটের সামগ্রিক সাজসজ্জা,তথ্যসমূহ একটি ব্র্যান্ডের সামগ্রিক প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে।অনেটা কাইরাল কার্বন এর মতো।এজন্য ব্র্যান্ডের ওয়েবসাইটগুলোকে ‘virtual storefront‘বলা হয়ে থাকে।তাই প্রয়োজন নিরবিচ্ছিন্ন আপডেট,সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করা ঠিক যেমনটা দোকানগুলো অফলাইনে করে থাকে।
৯.You tube channel খোলাঃ মনে করি,ইতিমধ্যে আপনি আমাদের বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে ভিডিও ব্যবহার করা শুরু করেছেন।তাহলে আপনি কি চাবেন না আপনার প্রচেষ্টা নতুন দর্শকের কাছে তুলে ধরতে?কেননা ফ্যাশন সচেতন মানুষেরা নিত্য নতুন ফ্যাশন ধারনা পেতে YOU tube এ সার্চ করেন।এটা আপনার কাঙ্ক্ষিত গ্রাহকদের পাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
১০.Recycling Process: আমরা বেশি বেশি উৎপাদন করবো আর বেশি অপচয় করব তা আর নয় আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও পরিবেশ দুটোর কথাই ভাবতে হবে এতে আমাদের আর্থিক ও পরিবেশগত দিক থেকে লাভবান হবে এবং আমাদের আমাদের অপচয়
১১.Ramp walk: আপনার ব্র্যান্ডকে অফলাইনে নেওয়ার ক্ষেত্র তৈরি করতে দুর্দান্ত উপায় হলো একটি জনপ্রিয় রেস্তোরাঁ কিংবা পর্যটন স্পটে ফ্যাশন শো হোস্ট করা।
১২.Google display ads প্রচারঃ অনেক সময় দেখা যায় যে মানুষের গুগোল কোন কিছু সার্চ দেওয়ার সময় কিংবা কেনাকাটার সময় আকর্ষণীয় অনলাইন বিজ্ঞাপন দেখে কিছুক্ষণ সময় কাটাতে পছন্দ করেন। এর সহায়তায় গুগলের এই বিজ্ঞাপন মাধ্যমের দ্বারা প্রচার অভিযান শুরু করুন।
১৩.সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ফ্যাশন ব্লগারদের সাথে পার্টনারশিপঃযদিও এটিকোন নতুন মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি নয় তবু খুবই কার্যকরী একটি মার্কেটিং স্ট্রাটেজি হওয়ার বেশিরভাগ ফ্যাশন মার্কেটাররা এ পদ্ধতি অবলম্বন করেন।আপনি আপনার ব্র্যান্ডের পণ্য বিজ্ঞাপনের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইনফ্লুয়েন্সারদের মাঝে ভাগ করে দেওয়ার মাধ্যমে তাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেন।এতে তাদের যেমন ফলোয়ারের সংখ্যা বাড়বে,তেমনি আপনার ব্র্যান্ডের অনুসারীর সংখ্যা বাড়বে।
১৪.সামাজিক প্রতিযোগিতা চালু করা: আপনার টার্গেটের গ্রাহকদের নতুন সেট আপনার সামনে তুলে ধরতে এবং আপনার ব্র্যান্ডের সাথে তাদের জড়িত করতে সোশ্যাল মিডিয়া প্রতিযোগিতা একটি দুর্দান্ত উপায়।একটি প্রতিযোগিতায় কয়েক বন্ধুকে ট্যাগ করা, আপনার পোস্ট শেয়ার করা, ব্র্যান্ডের হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা এমন টাইপ অথবা এটাকে আরো জটিল করে তুলতে পারবেন যে আপনার ব্র্যান্ড থেকে শপিং করে তার রিভিউ দেয়ার মাধ্যমে প্রতিযোগিতা সিলেক্ট করবেন।
পেশা হিসেবে ফ্যাশন মার্কেটিং:
বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে।বর্তমানে দেশে প্রায় 12 হাজার গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির রয়েছে।যার মধ্যে অসংখ্য বায়িং হাউজ,সোয়েটার ফ্যাক্টরি,টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি এবং কোয়ালিটি কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান ও ফ্যাশন ডিজাইন হাউজ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে অনার্স কোর্স করার পরে চাকরির সুযোগ রয়েছে। ফ্যাশন মার্কেটিং ডিগ্রী অর্জন কারী ব্যক্তিরা একজন ফ্যাশন বিক্রেতা,ভিজুয়াল ডিজাইনার, ট্রেন্ড ফরকাস্টার বা স্টোর ভিত্তিক বিক্রয় ও পরিষেবা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতে পারে।এই সেক্টরে যারা কাজ করে তাদের নিজস্ব প্রতিভাকে কাজে, লাগিয়ে পোশাকের ডিজাইন ও সৌন্দর্য বর্ধনের নিরলস পরিশ্রম করতে হয়,তারপর মার্কেটে আনতে হয়।ভোক্তার চাহিদা অনুসারে ফ্যাশনে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়।বর্তমানে পোশাকশিল্প ও বায়িং হাউজে লোক নিয়োগ করা হচ্ছ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফ্যাশন মার্কেটিংয়ে অধ্যায়নরতদের উচ্চ বেতনে কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে।ফ্যাশন মার্কেটিং অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং একটি সেক্টর,তবে নিজের দক্ষতা ও সৃজনশীলতা দ্বারা এই পেশায় সফল হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশে ফ্যাশন মার্কেটিংয়ের অগ্রগতিঃ
আশির দশকের গোড়ার দিকে পোশাক শিল্পের বিকাশ ঘটে।পরবর্তীতে এই শিল্পের দ্রুত প্রসার ঘটেছে এবং দেশের তৈরি পোশাক বিদেশে রপ্তানি হয়েছে। বিজ্ঞানের প্রসারে সাথে সাথে মানুষ মানুষ তাদের জীবন ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনেছে। ফলে ফ্যাশন মার্কেটিং এর প্রসার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।বর্তমানে বাংলাদেশে সারা বছর প্রায় 8 হাজার কোটি টাকার মার্কেট ধরতে ছুটে চলেছে প্রায় ৫০০০ এর উপরে ফ্যাশন ও বুটিক হাউসগুল। সাথে আছে এক হাজারের উপরে ই-কমার্স সাইট ও দশ হাজারের মতো ফেসবুক পেজ (ফেসবুক মাধ্যমে পণ্য বিক্রির পেজ)।তাই এদেশে ফ্যাশন মার্কেটিং এর অগ্রগতি প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে।
বাংলাদেশের বিখ্যাত ফ্যাশন হাউস:
বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই এখন ফ্যাশনেবল। কারণ বাংলাদেশের সমস্ত ফ্যাশন হাউজ ডিজাইনার ক্রমাগতভাবে ক্রেতাকে নতুন নতুন ডিজাইন দিয়ে যাচ্ছেন।বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক মানুষের ফ্যাশনের চাহিদা পূরণ করার জন্য রয়েছে অসংখ্য ফ্যাশন বা বুটিক হাউজ।
আড়ং (Aarong)-
আড়ং বাংলাদেশের টপ লেভেল এর ফ্যাশন হাউসগুলো মধ্যে অন্যতম। আড়ং এর পণ্যগুলো গুণগতমান সম্পন্ন।এখানে সালোয়ার কামিজ,শার্ট,পেন্ট সহ পুরুষ ও নারীদের বিভিন্ন পোশাক পাওয়া যায়।
কেটস আই(Cats Eye)-
কেটস আইস বাংলাদেশের অন্যতম ফ্যাশন হাউজ। এটি ট্রেন্ডিং ফ্যাশনের জন্যজনপ্রিয়।জিন্স,স্যুট,পাঞ্জাবি,কার্গো প্যান্ট,সালোয়ার কামিজ,কুর্তি,পালাজো প্যান্টস,টুপি, জুয়েলারি, ব্যাগ,ল্যাগেজ, স্যু ইত্যাদি বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে বাংলাদেশের মানুষকে পৃথক পৃথক মনমুগ্ধকর ডিজাইন দিয়ে মুগ্ধ করেছে।
রিচম্যান (Richman)-
রিচম্যান বাংলাদেশের শীর্ষ ফ্যাশন হাউসগুলোর মধ্যে একটি। বাংলাদেশে এটি পুরুষদের ফ্যাশনের জন্য জনপ্রিয়। দীর্ঘ সময় ধরে তারা পুরুষদেরকে বিভিন্ন ভাবে ফ্যাশনের দিক দিয়ে সাহায্য করছে।
ইয়েলো (YELLOW)
বাংলাদেশের ট্রেন্ডেস্ট ফ্যাশন ব্রান্ড, এটি আন্তর্জাতিক মানের ডিজাইন এবং কাপড় তৈরি করে। ইয়েলোর ফ্যাশনেবল পোশাক গুলো সত্যিই মনমুগ্ধকর।
এক্সট্যাসি (Ecstasy)-
অন্যান্য ফ্যাশন হাউজের তুলনায় এটি খুবই তাড়াতাড়ি মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে। এটি বিখ্যাত বাংলাদেশি ফ্যাশন হাউজ। এর পোশাক এবং আনুষঙ্গিক এক্সেসরিজ এর ডিজাইন বাংলাদেশের যুবকদের মধ্যে খুব জনপ্রিয়।
রং বাংলাদেশ (Rang Bangladesh)-
বর্তমানে এটি বাংলাদেশের মাঝে বিখ্যাত ফ্যাশন হাউজ। রং বাংলাদেশ ছেলে এবং মেয়েদের ফ্যাশন নিয়ে কাজ করে।
কে ক্রাফট (Kay Kraft)
ধীরে ধীরে মানুষের মন জয় করে বর্তমানে বাংলাদেশের শীর্ষ ফ্যাশন হাউজের তালিকায় রয়েছে। এটি মহিলা পুরুষ এবং বাচ্চাদের জন্য পোশাক তৈরি করে।
দর্জিবাড়ি (Dorjibari)
দর্জিবারি ও বাংলাদেশের মধ্যে বিখ্যাত ফ্যাশন ব্র্যান্ড।এর বেশিরভাগ পণ্য বিদেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় নির্মাতাদের মধ্যে তারা পদার্পণ করেছে। দর্জিবারি পুরুষ মহিলা এবং বাচ্চাদের জন্য ফ্যাশনেবল পোশাক তৈরি করে।
অঞ্জনস(Anjan’s)
বর্তমানে অঞ্জনস বাংলাদেশের একটি বিখ্যাত ফ্যাশন হাউজ। বর্তমানে ইয়াং জেনারেশন দের মধ্যে অঞ্জনস এর পোশাকের চাহিদা অনেক বেশি। এই প্রতিষ্ঠানটি পুরুষ এবং মহিলাদের ফ্যাশন নিয়ে কাজ করে।
বিবিয়ানা (Bibiana)
বিবিয়ানা তার সূক্ষ্ম কাজ এবং ঐতিহ্যবাহী পোশাকে দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে মনমুগ্ধকর করেছে। বর্তমানে বিবিয়ানা সেরা ফ্যাশন হাউসগুলোর মধ্যে একটি। এই ফ্যাশন হাউসটি পুরুষ, মহিলা এবং বাচ্চাদের ট্রেডিশনাল ঐতিহ্যবাহী পোশাক নিয়ে কাজ করে।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে ফ্যাশন মার্কেটিং এর গৃহীত পদক্ষেপঃ
১. সম্ভব হলে পন্যের অবমূল্যায়ন না করা। এমনটি করলে ক্রেতা মনে করতে পারে প্রতিষ্ঠানটি আগে অধিক মূল্য নিয়ে তাকে ঠকিয়েছে। মূল্য হ্রাসের চেয়ে অধিক সময়ের গ্যারান্টি অথবা কারিগরি সহায়তা বাড়িয়ে দিলে ভালো হবে।
২. শান্ত থাকা এবং বিক্রয়কর্মীরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে যেন বিক্রির জন্য মরিয়া হয়ে না উঠে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৩. অল্প সংখ্যক সম্ভাব্য ক্রেতার প্রতি মনোযোগী হতে হবে। তবে তাদের সাথে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে।
৪.পুরাতন ক্রেতাদের প্রতি মনোযোগ কমানো যাবে না।মনে রাখতে হবে নতুন ক্রেতা ধরার চেয়ে পুরনো ক্রেতা ধরে রাখা কম ব্যয়বহুল।
৫.বিক্রয়কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রেষণা ও প্রণোদনার মাধ্যমে পেশাগত মানোন্নয়নের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
৬.করোনা পরবর্তী কালে ভোক্তারা দরিদ্র হয়ে যাবে অথবা তাদের মধ্যে দারিদ্র্যের অনুভূতি চলে আসবে। তারা অনেক ভেবেচিন্তে খরচ করবে। এই সময় বাজারীকে ক্রেতাকে অভয় দিয়ে বলতে হবে, ‘চলুন আমরা একসাথে মিলে সময়টা পাড়ি দেই’।
৭.মন্দার সময় ক্রেতার সাথে থেকে পরিস্থিতি মোকাবেলাই হবে বাজারজাতকারীর একমাত্র উপায়। সাশ্রয়ী দামে যে কোম্পানি অনাড়ম্বর কিন্তু গুনে ভালো (গুড-ভ্যালু) এমন পণ্য বিক্রি করবে তারাই মন্দার সময় ভালো করবে। ন্যূনতম বিজ্ঞাপন দ্বারা সমর্থিত স্বল্প দামের পণ্যগুলো তাদের বাজার অংশ ধরে রাখতে পারবে। মধ্য আয়ের বাজারকে টার্গেট করা কোম্পানিগুলো এসময়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
৮.এসময়ে বিজ্ঞাপন খরচ কমানো যাবে না। মন্দার সময় বিজ্ঞাপন কমিয়ে ভালো ফল পাওয়া যায় না। কেউ কেউ এসময়ে বিজ্ঞাপন বাড়িয়ে প্রতিযোগীর বাজারে সফলতার দেখা পাবে।
মূলত ফ্যাশন মার্কেটিং বিষয়ে পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করা এবং গ্রাহকদের চাহিদার পরিবর্তনের সাথে চিন্তাধারা ও কাজের ধরনের কিছুটা পরিবর্তন এনে উপযুক্ত সেবা প্রদান করাই মূল উদ্দেশ্য। ভবিষ্যতে মার্কেটিং সেক্টরে মানুষ আরো আগ্রহী হবে,এই সেক্টর আরো উন্নতি লাভ করবে এবং আমরা এই সেক্টরে আরও বিস্ময় সৃষ্টি করতে পারবো এমনটাই কাম্য।
তথ্যসূত্র:
Textile Lerner
Forbes
Writers Information:
Soniya Tonni
Chittagong Textile Engineering College
Batch :14