“মেঘ দেখে তোরা করিস নে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে”।
কবির এই কবিতার মেঘ প্রতিনিধিত্ব করে টেক্সটাইল শিল্পের গোড়পত্তনের নানা প্রতিবন্ধবতাকে যাকে উপেক্ষা করে আজ বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্পে মাথা উঁচু করে বিশ্ব দরবারে দাড়িয়ে আছে।
১৪ শতাব্দীতে ভারতবর্ষে স্পিনিং হুইলের প্রচলন অবিভক্ত বাংলায় টেক্সটাইল শিল্প বিকাশের পরোক্ষ মাধ্যম হয়ে উঠে।
প্রত্যক্ষ ভাবে বাংলাদেশে টেক্সটাইল শিল্পের যাত্রা শুরু হয় ষাটের দশকে,তবে তা কেবলই ব্যাক্তিকেন্দ্রিক অর্থাৎ তার কোন অভ্যন্তরীণ বাজার ছিলনা বললেই চলে। সেসময় ব্যাক্তি উদ্যোগে সরবরাহকৃত কাপড় ও নকশা অনুযায়ী কাপড় তৈরি করত।সেসময় শিশুদের জামা এবং পুরুষদের গেঞ্জি ছাড়া শিল্পউৎপাদন ঘটত না। উদাহারন হিসেবে বলা যায় ১৯৬০ সালে রিয়াজ স্টোর নামে একটি ছোট দোকান কাজ শুরু করে।
সত্তর দশকে এসে পরিচিতি লাভ করে Rmg বা Ready made garments শব্দটি।ধীরে ধীরে বিস্তার পেতে থাকে অভ্যন্তরীণ বাজার।এ দশকের শেষাংশে এসে এটি রপ্তানীমুখী খাতে পরিনত হয়।এ খাতে দেশের শিল্পপতিদের সুনজর পড়ে এবং তারা এখাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়,ধীরে ধীরে পরিবর্তন ঘটে এখাতের সংশ্লিষ্টদের।এদশকের পর আর পিছনে তাকাতে হয় নি টেক্সটাইল শিল্পের। এ দশকে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ থেকে প্যারিসে পৌছায় ১০ হাজার পিস ওভেন শার্ট এর প্রথম চালান যার মূল্য ১৩ মিলিয়ন ফ্রান্ক এর মাধ্যমে বিদেশী ক্রেতাদের আগ্রহ বেড়ে যায়,এর রপ্তানীকারক রিয়াজ স্টোর।
এ দশকেই একজন নারীর হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বৈশাখী’ নামের কারখানা,বর্তমানে অনেক উর্ধতন পদে যুক্ত আছেন নারীরা।
আশির দশকের শুরুতে যেখানে রপ্তানি আয়ের ৫০ শতাংশ আসে পাট ও পাটজাত দ্রব্য থেকে, সেখানে এই দশকের শেষাংশে এসে তৈরি পোশাক শিল্প, পাট শিল্প কে ছাড়িয়ে যায়।
১৯৯৯ সালে এ শিল্পে কর্মসংস্থান হয় ১.৪ মিলিয়ন লোকের যার মধ্যে ৮০% শতাংশই হলো নারী। তাছাড়াও এ শিল্পের অবকাঠামোর সাথে যুক্ত ছিল ২ মিলিয়ন লোকের।
২০০২ সালে এ শিল্পের ক্রমাগত বৃদ্ধির কারনে এ শিল্প দুই ভাগে বিভক্ত হয় যথা নিটিং ও ওভেন। যেখানে পোষাক রপ্তানিতে ওভেন এর অবদান ৫২.০৬% এবং নিট এর অবদান ৮.৫৮%। ২০১০ সালে এ চিত্র উল্টে যায় এবং নিট রপ্তানি আয়ের ৪১.৩৮% দখল করে এবং ওভেন ৩৮.০২%।
নিট এবং ওভেন মিলিয়ে আমদানীকৃত কাচামালের মুল্য দাড়ায় ১২ বিলিয়ন ডলারে,এবং কাজ পায় ২২ লাখ নারী।
১৯৮২ সালে যেখানে পোষাক কারখানার সংখ্যা ৪৭ সেখানে ২০০৯ সালে এ সংখ্যা ৩০০০ এর অধিক হয়। ১৯৮৩-৮৪ অর্থ বছরে রপ্তানি আয়ের ০.৯ বিলিয়ন ডলারের অপরদিকে ১৯৯৮-৯৯ অর্থ বছরে এ আয় দাড়ায় ৫.৫১ বিলিয়ন ডলারে। এ প্রবৃদ্ধি প্রথম ঋণাত্নক হয় ২০০৯ সালে যদিও পরবর্তী বছর গুলোতে এ মন্দা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয় টেক্সটাইল শিল্প।
এভাবেই বিভিন্ন বিপত্তি কাটিয়ে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্প যার বাহক এ শিল্পের সাথে যুক্ত সকল কর্মজীবি।এভাবেই ভবিষ্যতে এগিয়ে যাক টেক্সটাইল শিল্প যা শক্তিশালী করবে দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তিকে।
অপুর্ব মন্ডল
ড. এম. এ ওয়াজেদ মিয়া টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ
এপ্যারেল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট
২য় ব্যাচ
তথ্য সুত্রঃ Wikipidia.com