আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অতি প্রয়জনীয় বস্তু হলো কাপড় । কিন্তু আমরা কি কখনও চিন্তা করে দেখেছি , আমরা যে কাপড়টি পরিধান করি এটা কি ধরনের কাপড় বা কি ধরনের সুতা দিয়ে তৈরি ? এটি না জেনে থাকলে আমরা আমাদের চাহিদা মতো সঠিক কাপড় খুজে পাই না । এর ফলে আমাদের মনে কাপড়টি নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন আসে যেমনঃ কাপড়টি কি কটন দিয়ে তৈরি আবার কটন হলে এটা কি ১০০% কটন নাকি অন্য কোনো পদার্থ মিশ্রণ আছে । এই ধরনের সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদেরকে কাপড়ের প্রকারভেদ সম্পর্কে জানতে হবে ।
তাহলে আসুন জেনে নেই কাপড় কত প্রকার বা কাপড়ের প্রকারভেদ এর উপর ভিতরগত কিছু বিষয় নিয়ে।
কাপড় হচ্ছে একটি নমনীয় উপাদান যা প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম সুতা বা তন্তুর দিয়ে তৈরী হয়। ফেব্রিক মানে কাপড় । বিভিন্ন ধরনের ইয়াং এর সমন্বয়ে উইভিং বা নিটিং এর মাধ্যমে ফেব্রিক তৈরি হয় । আবার ইয়াং বিভিন্ন ধরনের ফাইবার দ্বারা গঠিত । সুতা বা ইয়াং এর একক হচ্ছে ফাইবার । কাপড় তৈরি করার প্রথম ধাপ হচ্ছে টেক্সটাইল ফাইবারকে স্পিনিং পদ্ধতির মাধ্যমে ইয়াং বা সুতা তৈরি করা । এরপর ঐ ইয়াং দিয়ে নিটিং বা উইভিং , ডায়িং , প্রিন্টিং ও ফিনিশিং ইত্যাদি পদ্ধতির মাধ্যমে কাপড় তৈরি করা হয় । আর এই কাপড়ই গার্মেন্টসে পোশাক তৈরির কাচামাল হিসাবে ব্যাবহৃত হয় ।
এবার আরেকটা বিষয় নিয়ে কথা বলবো মাঝে মাঝে আমরা ক্লোথ ও ফেব্রিক্স একই অর্থে ব্যাবহার করে থাকি । কিন্তু প্রকৃত পক্ষে দুটো দুই অর্থ বহন করে। প্রক্রিয়াজাত ফেব্রিকসকেই সাধারনত ক্লোথ বলে ।
ফেব্রিক বা কাপড় কতো প্রকার ?
আমার যত সহজে প্রশ্নটা বলতে পাচ্ছি কাপড়ের প্রকারভেদ কিন্তু এতোটা সহজ নয়। চলুন এটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি । উৎসভেদে কাপড়ের প্রকারভেদ প্রধানত: দুই ধরনের হয়ে থাকে। যথা-
১.ন্যাচারাল বা প্রাকৃতিক এবং
২.কৃত্রিম ।
ন্যাচারাল ফেব্রিকস পুনরায় তিন প্রকারের হয়ে থাকে:
১) উদ্ভিদ জাত ফেব্রিকস: যেমন- কটন ,পাট ।
২) প্রাণি জাত ফেব্রিকস: যেমন- উল, সিল্ক ।
৩) খনিজ পদার্থ হতে: যেমন এসবেসটস ।
কৃত্রিম ফেব্রিকসও আবার উৎসের উপর ভিত্তি করে তিন ধরণের হয় :
১) ন্যাচারাল পলিমারঃ রেয়ন, লয়সেল ।
২) সিনথেটিক পলিমারঃ নাইলন, পলিষ্টার, এক্রিলিক, স্পানডেক্স ।
৩) রিফেকটরি এবং রিলেটেড ফাইবারঃ কার্বন , গ্লাস , মেটাল ।
বাজারে কোন কোন ধরনের কাপড় পাওয়া যায় ?
বাজারে বিভিন্ন ধরনের কাপড় পাওয়া যায় । এর মধ্যে কোন কপড়টি আপনার জন্য সঠিক বা কোন কাপড়টি আপনি কোন সময় ব্যাবহার করবেন তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো । আমাদের দেশীয় বাজারের কিছু জনপ্রিয় কাপড় হলোঃ-
কটনঃ- ইহা তুলা গাছ থেকে প্রপ্ত তুলার আঁশ দিয়ে তৈরি ফেব্রিকস । গৃষ্মকালে এই ধরণের ফেব্রিকস দিয়ে তৈরি কাপড় বহুল ব্যবহৃত হয়। কাপড়টি খুবই আরামদায়ক হয় ।
লিনেনঃ- Flax নামক গাছের মুলের ফাইবার হতে তৈরি হয় । এই ধরনের ফাইবার শীত প্রধান দেশে বেশি উৎপাদিত হয় । এটি কটন ফাইবার তুলনায় শক্তিশালী ।

উলঃ- এটি একটি প্রকৃতিক উৎস থেকে পাওয়া ফেব্রিক । মূলত ভেড়ার পশমের মাধ্যমে এই ফেব্রিকটি তৈরি করা হয় । যা শীত নিবারণে কার্যকরী ভূমিকা রাখে । [Picture-3(Wool).jpg]
ডেনিমঃ- বর্তমানে যুব সমাজের কাছে সবচেয়ে পছন্দের কাপড় হচ্ছে ডেনিম । এটি সাধারণ মানুষের কাছে জিনস নামে পরিচিত । ফ্রান্সের “De Nimes” শহর থেকে এর আবির্ভাব হয়েছে তাই এর নামকরণ করা হয় ডেনিম । এটি শতভাগ কটন দিয়ে তৈরি করা হয় তবে কখনও কখনও এর সাথে সিনথেটিক ফাইবার পলিস্টার মেশানো হয় । এই ডেনিম কাপড় খুবই শক্ত প্রকৃতির, টেকসই ও আরামদায়ক ।
ক্যাম্ব্রিঃ- খুবই হালকা ও সুক্ষ ধরনের সুতা দ্বারা তৈরি করা হয় । শিশুদের পোশাক তৈরিতে ব্যাবহার করা হয় এবং কাপড়টি খুবই মসৃণ হয়।
লোনঃ- এই ধরনের ধরনের কাপড় খুবই নরম ও আরামদায়ক হয় । থ্রি-পিস ও মহিলাদের অন্যান্য পোশাক লোন কাপড় দিয়ে বানানো হয়।
চামব্রেঃ- সুতি কাপড় হালকা থেকে মাঝারি ওজনের হয় । এই ধরনের কাপড় শার্ট, টপস ও বিভিন্ন পোশাক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
ভেলভেটঃ- এর পৃষ্ঠটি বেশ উজ্জ্বল, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিশেষ রেশম দ্বারা গঠিত হয় । এই কপড়টি পর্দায় , সোফার কভার , হোটেল ও হিয়েটারে সাজানোর জন্য ব্যাবহার করা হয়
সিনোঃ- এটি একটু ভারি সুতি কাপড়। সাধারণত ইউনিফর্ম ও ট্রাওজারস তৈরি এটি ব্যাবহার করা হয় ।
সোর্সঃ- NTF Note (Engineer Md. Noor Alam) & Google
সৈয়দ মোঃ সিয়াম
ফেব্রিক ইজ্ঞিনিয়ারিং
ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, পীরগঞ্জ, রংপুর ।