বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব কান সম্পর্কে আধুনিক তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে আমরা সকলেই কমবেশি জানি।আর এরই সাথে ১৯৯৪ সালে বিশ্বসুন্দরী হওয়া ঐশ্বরিয়া রায় কে চিনে না এমন মানুষ ও বোধহয় পাওয়া যাবে না।তো চলুন জেনে নেয়া যাক বিশ্বখ্যাত এই উৎসব এবং আমাদের সকলেরই প্রিয় এই বিশ্বসুন্দরীর উৎসবে পরিধেয় পোশাক সম্পর্কে –
কানের পথযাত্রা /ইতিহাস :
১৯৩০ সালে সর্বপ্রথম ফ্রেঞ্চ, ব্রিটিশ ও আমেরিকানদের সহায়তায় কানের চিন্তাভাবনার শুরু তবে তা বাস্তবে রূপ নেয় ১৯৩৮ সালে যখন জিন জেই নামক ফ্রান্সের মন্ত্রী, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, ফিলিপি এরলারজার এবং চলচ্চিত্র গবেষক রবার্ট ফেভ্রে লে ব্রেট ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ব্রিটিশ এবং আমেরিকানদের সহায়তায় কান উৎসব এর আয়োজন করেন।১৯৪৬ সাল থেকে এটি বছরে একবার মে মাসে আয়োজিত হতো। মূলত ২০০৩ সাল পর্যন্ত এটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব নামেই ইংরেজদের কাছে পরিচিত ছিল যা পরবর্তীতে কান চলচ্চিত্র উৎসব নামে পরিচিতি লাভ করে ফ্রান্সে।
চলুন এবার জেনে নেয়া যাক বিশ্বসুন্দরী এবং বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জনকারী ঐশ্বরিয়া রায় /ঐশ্বরিয়া রায় বচ্চনের(যার চোখের নীল সমুদ্রের মাঝে নাকি হারিয়েও যাওয়া যায় বলা হয়ে থাকে) আকর্ষণীয় ও জাঁকজমক কিংবা জনসাধারণের কাছে বিশেষভাবে জনপ্রিয় ও সর্বত্র সমাদৃত কান উৎসবে পরিহিত তার পোশাকসমূহের কথা।
বিশ্বসুন্দরীর কানে পদার্পণ: (২০০২)
বিশ্বসুন্দরী ঐশ্বরিয়া রায় সর্বপ্রথম কানের লাল গালিচায় পা রেখেছিলেন ২০০২ সালে ‘দেবদাস’ ছবির পরপরই ছবির নির্দেশক সঞ্জয় লীলা বানসালীর সাথে এবং তখন তিনি পরেছিলেন বেশ আকর্ষণীয় একটি সোনালি রঙের শাড়ি আর শাড়িতে নারী মানেই অসাধারণ এরই সাথে তার সরল এবং মার্জিত ব্যক্তিত্ব যেন শাড়িটির সৌন্দর্য আরও বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছিল ।
সাল(২০০৩):ঠিক তার পরবর্তী বছরই তিনি উৎসবে পরেছিলেন গাঢ় সবুজ রঙের একটি শাড়ি সোনালি বর্নের ব্লাউজ এর সাথে যা তার সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলেছিল।
সাল (২০০৪):২০০৪ সালে তিনি কানের ব্র্যান্ড এম্বাসাডর হিসেবে কানের লাল গালিচায় পা রেখেছিলেন ডিজাইনার নিতা লুল্লার ডিজাইন করা রূপালি রঙের ঝলমলে একটি ব্যাক ও স্লিভলেস গাউন এবং এরই পাশাপাশি লাল-মেরুন বর্নের বেশ আকর্ষণীয় একটি টপ ও স্কার্ট-আর বলা বাহুল্য যে দুটি আউটফিটই তাকে বেশ মানিয়েছিল।
সাল (২০০৫):এই বছর তিনি পরেছিলেন দুইটি আউটফিট -এর মধ্যে একটি ছিল জর্জ আরমানির ব্ল্যাক (কালো) শোল্ডার গাউন এবং অপরটি ছিল কালো,সাদা,গোলাপি বর্নের মিশ্রণের একটি অসাধারণ গাউন।আর দুটি আউটফিটই দর্শকের নজর কেড়েছিল।
সাল (২০০৬)-এ সময় তার পরনে ছিল মিডনাইট ব্লু(নীল) রঙের একটি ব্যাকলেস গাউন যা তার ব্যক্তিত্বকে আরও স্বতন্ত্র করে তুলতে সক্ষম।
সাল (২০০৭):এ বছর আবারও তিনি তার পছন্দের জর্জ আরমানির রূপালি সাদা বর্নের স্ট্র্যাপলেস একটি আকর্ষণীয় গাউন পরেছিলেন যা তার শুভ্রতা ও স্বচ্ছতাকে ফুটিয়ে তুলেছিল।
সাল (২০০৮): এ সালের কান উৎসবে তার পরনে ছিল চারটি ভিন্ন ভিন্ন আউটফিট-১)রবার্ট কাউয়ালির গোলাপি বর্নের একটি স্লিভলেস গাউন
২)সোনালি বর্নের গাউন
৩) আরমানির গোল্ডেন লেস গাউন
৪)এবং সবুজ এম্ব্রয়ডেড গাউন
সাল (২০০৯):কান উৎসবের প্রথম দিন তাকে দেখা গিয়েছিল আলবার্ট ফেরাটির ব্যাকলেস ও স্ট্র্যাপলেস সাদা গাউনে এবং এরপর দিন তাকে দেখা গিয়েছিল এলি সাবের নীল রঙের অসাধারণ একটি গাউন ও গ্রে এলিসার ওয়ান শোল্ডার গাউনে।এর পাশাপাশি রবার্ট কাউয়ালির সাদা গাউনও ছিল।
সাল (২০১০):এ কান উৎসবের প্রথম দিন তিনি পরেছিলেন এলিসার মারমেইড গাউন, দ্বিতীয় দিন পরেছিলেন গুচির ব্যাকলেস কালো গাউন আর তৃতীয় দিন পরেছিলেন আরমানির স্ট্র্যাপলেস গোলাপি গাউন আর এরই সাথে সব্যসাচী ক্রিয়েশনের সোনালি রঙের শাড়ি।
সাল (২০১১):দুটি আউটফিটে তাকে দেখা গিয়েছিল ১)এলি সাবের একটি গাউনে এবং
২)আরমানি প্রাইভের ছাই বর্নের একটি ওয়ান শোল্ডার্ড গাউনে।
সাল (২০১২):মিডনাইট ব্লু গাউন,ওয়াইট এম্ব্রয়ডেড গাউন,আবু জানিয়ান সন্দ্বীপ খোসলার শাড়ি এবং জ্যাকেট ব্লাউজ -এ তিনটি আউটফিটে ছিলেন তিনি।
সাল (২০১৩):ভিন্ন ধারার চারটি লুকে হাজির হয়েছিলেন তিনি সে বছর।
১)গুচির ওয়ান শোল্ডার্ড গাউন
২)ব্ল্যাক এন্ড গ্রে এলিসা গাউন
৩)গোল্ডেন শিমারি তারান তেহলিয়ানীর শাড়ি
৪)সন্দ্বীপ খোসলার সি গ্রীন রঙের শাড়ি
চারটি লুকেই তাকে অসম্ভব সুন্দর লেগেছিল বলে জানিয়েছিলেন দর্শকেরা।
সাল (২০১৪):রবার্ট কাউয়ালির গ্ল্যামারাস ও স্ট্র্যাপলেস গোল্ডেন গাউন এবং আইভরির শিমারি ওয়াইট গাউনে চমকেই দিয়েছিলেন তিনি সকলকে।
সাল (২০১৫):বেশ কয়েকটি লুকে তাকে দেখা গিয়েছিল সে বছরের কান উৎসবে।চলুন জেনে নেই।
১)ব্লু এলিসা গাউন
২)ম্যারুন ব্যাক এন্ড স্লিভলেস গাউন
৩)এলি সাবের ওয়াইট এন্ড ব্ল্যাক বলরুম গাউন
৪)রাল্ফ রুশোর পার্পল /ভায়োলেট গাউন
সাল (২০১৬):এলি সাবের গোল্ডেন শোল্ডার গাউন এবং রোহিত বালা এম্বলিশড জ্যাকেট (সর্ব জিত ছবির প্রোমোশনের জন্য)পরেছিলেন তিনি।
সাল(২০১৭):এই বছর পরিধেয় তার আউটফিটটি বেশ সাড়া তুলেছিল জনসাধারণে।তিনি পরেছিলেন মার্ক বামগানার সী ব্লু ফ্লোরটাচ প্রিন্সেস বলরুম গাউন যা বর্তমানে সিন্ড্রেলা গাউন নামেই অধিক পরিচিত। এই আউটফিটের জন্য বেশ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন তিনি কারণ এক কথায় সেদিন তার লুকটি ছিল এমন যাকে বলে সিম্পলি গর্জিয়াস।এছাড়াও রাল্ফ রুশোর লাল গাউনটিও বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল।
সাল (২০১৮):এ বছর কান উৎসবে তিনি পরেছিলেন মাইকেল সিনসোর বেগুনি বর্নের বাটারফ্লাই গাউন যা বেশ আকর্ষণীয় ও সুন্দর হওয়ায় দর্শকের মনজয় করেছিল আর রামি কাদির রূপালি রঙের ব্যাক এবং স্ট্র্যাপলেস গাউন।
সাল(২০১৯):এবছরই সর্বশেষ কান উৎসবটি আয়োজিত হয়েছিল কারণ এর পরই করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হয়ে যায়।আর সর্বশেষ এ বছর আমাদের বিশ্বসুন্দরীর পরনে ছিল আশি স্টুডিও-এর সাদা পালকের ন্যায় একটি অসাধারণ পোশাক এবং সোনালি বর্নের একটি গাউন।
শেষ এ বছরই তিনি কানের অফিশিয়াল ব্র্যান্ড এম্বাসাডর হিসেবে যুক্ত হয়েছিলেন।
এভাবে প্রতিবছরই নতুন নতুন এবং বেশ আকর্ষণীয় আউটফিটে নিজেকে উপস্থাপন করে তিনি খ্যাতি অর্জন করে জনসাধারণের কাছে বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করেন।আশা করি করোনার প্রভাব শেষ হলে আবার ও আমরা তাকে আরও বেশ কিছু নতুন এবং আকর্ষণীয় আউটফিটে তাকে দেখতে পাবো।
তথ্যসূত্রঃগুগল,ইউটিউব,ফ্যাশন এন্ড টেক্সটাইল
Writer Information:
Tasnim Tajmi Islam Arjita
Ahsanullah University of Science and Technology
Department of Textile Engineering
(Batch -40)
1st year 2nd semester