এটা সকলেরই জানা যে, ওয়েস্টার্ন কান্ট্রিগুলোর পোশাকের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ হলো জিন্স। কাল পরিক্রমায় জিন্স বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই স্থান দখল করে নেয়। কারণ বেশিরভাগ মানুষই মনে করেন, জিন্সের পোশাক ফ্যাশনে আনে গাম্ভীর্যতা। তাই এটি তরুণ প্রজন্মের পোশাকের প্রথম প্রায়োরিটি লিস্টে রয়েছে। শত শত ব্র্যান্ড রয়েছে যারা প্রতিনিয়তই জিন্সের পোশাক তৈরি করে যাচ্ছে এবং নতুন ফ্যাশন ট্রেন্ড নিয়ে হাজির হচ্ছে। আর কিছু লোকাল ব্র্যান্ডও রয়েছে, যারা লাক্সারি ব্র্যান্ডগুলোকে ফলো করে তৈরিকৃত পোশাক খুব সস্তা মূল্যে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। তবে বেশিরভাগ মানুষই মনে করেন দামী পোশাক মানেই তাতে উচ্চমানের পণ্য ব্যবহার করা হয়। তবে এই ধারণাটি সর্বদা সত্য নয়। এই ব্যয় নির্ভর করে ব্র্যান্ডের নাম, কোয়ালিটি, ব্যবহৃত উপাদান এবং শ্রমিকদের দেয়া পারিশ্রমিকের উপর।
নিচে বিশ্বের সেরা ১০ টি ব্যয়বহুল জিন্স ব্র্যান্ড নিয়ে আলোচনা করা হলো:
১. Gucci: আপনি হয়তো জেনে অবাক হবেন যে, বর্তমানে গুচির “Genius Jeans” বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল জিন্স হিসেবে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করেছে। যেখানে গুচির সাধারণ জিন্সের মূল্য ন্যূনতম ৬০০ ডলার, সেখানে এই জিন্সের মূল্য প্রায় ৩ হাজার ১৩৮ ডলার।
১৯৯৮ সালে গুচি ব্র্যান্ডে সৃষ্টি হয় দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থা। তাদের জিন্সগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়াতে দেখা দেয় ফাইবারের ফাটল তথা ছিঁড়ে যাওয়া।আর তাই তাদের ভাগ্যের দুয়ার খুলে দেয়। যা নিয়ে সারা বিশ্বে আলোড়ন তৈরি হয়েছিল। তৈরি হয় “Ripped jeans” নামে নতুন ফ্যাশন ট্রেন্ড। যা এখন ডেনিম ওয়ার্ল্ডের সম্পদ।
২. Guess: ১৯৮১ সালে মার্সিয়ানো ভাইয়েরা দ্বারা প্রতিষ্ঠিত আমেরিকান পোশাক ব্র্যান্ডটি ডিজাইনার জিন্স প্রবর্তনকারী প্রথম ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে একটি ছিল।
৩টি স্টাইল নিয়ে এরা মার্কেটে প্রবেশ করেছিল:
১. স্টোন ওয়াশ্ড
২. স্লিম-ফিটিং জিন্স
৩. জিপ মেরিলিন
পরবর্তীতে এটি “গ্লোবাল লাইফ স্টাইল” ব্র্যান্ডে পরিণত হয়। ‘Nashville’s American Soul’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তারা “Music City” নামে একজোড়া জিন্স তৈরি করে, যা পরবর্তীতে ৪০০ ডলার মূল্যে বিক্রি করা হয়।
৩. Dolce and Gabbana: এই ব্র্যান্ডের পোশাকগুলো একদিকে যেমন বিলাসবহুল, অন্যদিকে খুবই মনোরম। D&G ব্র্যান্ড তাদের জিন্সে ডিস্ট্রেড বিবর্ণ বৈশিষ্ট্যের ফেব্রিক ব্যবহার করে থাকে। যখন তাদের জিন্সের পিছনের পকেটে গোল্ডের লোগো ব্যবহার করেছিল, তখন তারা এর সীমিত সংস্করণে লক্ষ্যে সূচিকর্মে নির্মিত প্রজাপতির ডিজাইন সংযুক্ত করেছিল।
৪. Roberto Cavalli Jeans: রবার্তো কাভাল্লিকে সাধারণত বিশ্বের high-end ফ্যাশন হাউসগুলোর মধ্যে একটি গণ্য করা হয়, যা অভিজাত শ্রেণীর মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। এই ব্র্যান্ড যখন Lush জিন্স তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তখন তাদের হেভি প্রাইস ট্যাগে আসতে হয়েছিল।
তাদের একেকটা ডিজাইনের জিন্স একেকটা রত্ন। এসব তৈরিকৃত জিন্সের একটা অংশ নিউইয়র্ক সিটির ম্যাডিসন এভিনিউতে অবস্থিত তাদের স্থানীয় দোকানে বিক্রি করা হয়।
তবে আপনি যদি বিখ্যাত আমেরিকান অভিনেত্রী ও প্রোডিউসার Sarah Jessica Parker এর পছন্দগুলো ক্রয় করতে চান, তাহলে আগে-ভাগেই আপনাকে ১২০০ ডলার ছাড়িয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে।
৫. Levi Strauss & Co. 501: এদের একটা বিশ্ব বিখ্যাত বাণী হল,”জিন্সের বয়স যত বাড়বে, ততোই ভালো হবে!” সেই সূত্র ধরেই জিন্স বর্তমানে প্রায় সবারই প্রধান পোশাকে পরিণত হয়েছে।
১৮৮০ সালের একজোড়া ভিনটেজ জিন্স Levi থেকে নিলামের মাধ্যমে ৬০,০০০ ডলারে বিক্রি করা হয়।
৬. Earnest Sewn Custon Fit: এ ব্র্যান্ডটির একটি নিজস্ব সংস্থা রয়েছে, যা কাস্টমাইজ জিন্সের পোশাক তৈরি করতে ব্যক্তির মতামত গ্রহণ করে থাকে। তারা তাদের জিন্সে ক্রিস্টাল ও গোল্ডেন চেন ব্যবহার করে থাকে এবং ব্যক্তির শরীরের মাপ অনুযায়ী নিখুঁত পোশাক তৈরি করে, যা সহজে সুন্দর ফিটিং হয়।
৭. Escada: ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত লাক্সারি ফ্যাশন হাউজটি তাদের পোশাক তৈরীর ক্ষেত্রে গ্রাহকদের মতামতের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তাদের রিসার্চে দেখা গেছে, কোনো কোনো গ্রাহক বাটারফ্লাই পছন্দ করে, কেউবা ভিনটেজ জিপার, আবার অনেকে বিবর্ণ ফেব্রিকের জিন্স পছন্দ করে। এভাবে গ্রাহকদের পছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে এস্কাডা একজোড়া কাস্টমাইজড জিন্স ১০,০০০ ডলার মূল্যে বিক্রি করেছিল।
৮. APO Jeans: এ ব্র্যান্ড তাদের জিন্সে সিল্কের পকেটে স্বর্ণ,রুপা এবং প্লাটিনামের সাথে জেমসস্টোন ব্যবহার করে থাকে। আর জিন্সের কাস্টমাইজড জোড়ায় ব্যবহার করে সেরা ফেব্রিক।
৯. 7 For All Mankind: ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ব্র্যান্ডটি জনপ্রিয় “7 Jeans” হিসেবেও পরিচিত। প্রথমদিকে এটি মূলত মহিলাদের জন্য পোশাক তৈরি করলেও ২০০২ সালের পর থেকে পুরুষদের জন্যও জন্য পোশাক তৈরি করা শুরু করে।
তাদের তৈরিকৃত পোশাকের মধ্যে রয়েছে জিন্সের প্যান্টস, শর্টস, স্কার্ট, ডেনিম জ্যাকেট ইত্যাদি। যা আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার ৮০ টিরও বেশি দেশে বিক্রি করা হয়।
১০. Dussault Apparel: এই ব্র্যান্ড সম্পূর্ণরূপে হাতে তৈরিকৃত জিন্সের অ্যাপারেল তৈরি করে থাকে। এই প্রক্রিয়ায় তারা জিন্সকে মোট ১৩ বার ধৌত করে এবং প্রতিবার ধোয়ার মাঝে তারা ডাইং ও পেইন্টিং করে। তৈরিকৃত পোশাকে ১০৮০ গ্রাম ভরের ১৮ ক্যারেট সাদা বা রোজ গোল্ডর সাথে জুড়ে দেয়া হয় একটি ১৬ ক্যারেট রুবি, হাফ ২৫ ক্যারেট হীরা।
এই জিন্স অ্যাপারেলের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫০,০০০ ডলার। যা আপাতদৃষ্টিতে দেখলে আপনার কাছে অতিরিক্ত বেশি মূল্য মনে হলেও তাদের এ নিখুঁত ও কঠোর পরিশ্রমের সাইন হিসেবে এর এমন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
Writer Information:
Tazim Sultana Nandita
Ahsanullah University of Science and Technology (AUST)
Dep. of Textile Engineering (Batch-40)
1st year 2nd semester
tazimsultananandita7@gmail.com