৩৮ তম বিসিএস সার্কুলারে প্রিলিমিনারিতে আবেদন পড়ে প্রায় ৩ লাখ ৯০ হাজারের মত। সেখানে পাশ করে ১৬ হাজার ২৮৬ জন। এর পরের ধাপে লিখিত পরীক্ষায় পাশ করে ৯ হাজার ৮৬২ জন। এরপর গত ৩০ জুন প্রকাশিত ফলাফলে ২ হাজার ২০৪ জন ক্যাডার হিসেবে সুপারিশ প্রাপ্ত হন। বাকীরা নন ক্যাডার হিসেবে উত্তীর্ণ হন।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) থেকে ৩৮ তম বিসিএসে এবার ৮ জন সুপারিশপ্রাপ্ত হন। এর মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারে সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হন মোঃ মামুন সরকার। তিনি বুটেক্সের ৩৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। এছাড়াও কিছুদিন আগে তিনি প্রধানমন্ত্রী এর কার্যালয়ের (NSI) তে সহকারী পরিচালক হিসেবে উত্তীর্ণ হন। এই প্রতিবেদনটিতে থাকছে উনার বিসিএস ক্যাডার হওয়ার পিছনের গল্প এবং কিছু পরামর্শ। সবার উদ্দেশ্যে উনার সাক্ষাৎকারটি সরাসরি তুলে ধরা হলো:
প্রশ্ন: কখন থেকে আপনি বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন?
উত্তর: তখন সরকারি বিজ্ঞান কলেজে পড়ি। কাজী নজরুল ইসলাম হলের ২১০ নাম্বার রুমে থাকতাম। জানালার পাশেই আমার পড়ার টেবিল। প্রায় দেখতাম সামনের বাসা থেকে একজন ভদ্রলোক অফিসে যান সুন্দর একটি গাড়িতে করে। একদিন জানালা দিয়ে দারোয়ান কে জিজ্ঞেস করলাম উনি কি করেন? বললেন সচিব। শুনে মনে হলো আমিও যদি একদিন সচিব হতাম। কিন্তু তখন জানতাম না কি করে হতে হয়।
প্রশ্ন: কবে থেকে বিসিএসের প্রস্তুতি শুরু করেছিলেন?
উত্তর: বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুটেক্স) যখন তৃতীয় বর্ষে পড়ি তখন দুজন বন্ধু বিসিএস দিবে বলে বাজার থেকে একটি বাংলা বই কিনে আনে। ওরা দুইজন একে অন্যকে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতো। একদিন ভাবলাম আমিও একটু পড়ে দেখি। প্রথমে বাংলা সাহিত্যের আদি গ্রন্থ “চর্যাপদ” দিয়ে শুরু করলাম। বইটি পড়ে মনে হলো বিসিএস আমার দ্বারা হবে না। পড়া বাদ দিলাম। যথারিতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে জীবনের প্রথম জব নিলাম কমফিট কম্পোজিট নীট লিঃ এ। চাকুরী করার সময় মনে হলো বিসিএস দেওয়া প্রয়োজন। যাই হোক ২-৫ বছর চাকুরী করার পর DBL গ্রুপের coloy city তে। য়োগদান করি। তখন ২০১৭ সাল, NSI এর এক্সাম দেই। খুব ভালো এক্সাম দিয়েও প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হয়নি। তখন ভাবলাম চাকুরী করে হবে না আমাকে বিসিএস এর জন্য পুরো মনোনিবেশ করতে হবে। ২০১৭ তে চাকুরী ছেড়ে দিয়ে উত্তরাতে চলে আসি এবং বিসিএস এ মনোনিবেশ করি।
প্রশ্ন: কিভাবে বিসিএস এর প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?
উত্তর: আমি প্রথমেই বিসিএস সিলেবাসটা ভালো করে বুঝলাম। তারপর আমি যেসব বিষয়ে দুর্বল সেগুলো আইডেন্টিফাই করি। যেগুলোতে দুর্বল ছিলাম ঐ গুলো বিসিএস সিলেবাস ধরে ধরে সময় নিয়ে সব টপিক শেষ করি। কিন্তু নিজের প্রস্তুতি সম্পর্কে ভালো ধারণার জন্য একটি কোচিং এ এক্সাম ব্যাচে ভর্তি হই।এতে আমার দুর্বলতা ও অবস্থান সম্পর্কে ধারনা পাই। ইংরেজি গ্রামার, ভোকাবুলারি, বাংলা গ্রামার খুব ভালো করে পড়া শুরু করি। কিছু কিছু বিষয় সম্পর্কে এমন ধারণা নেই যাতে প্রশ্ন যেখান থেকেই আসুক আমি পারবো।
প্রশ্ন: যারা বিসিএস দিতে চান তাদের জন্য আপনার উপদেশ কী?
উত্তর: বিসিএস এ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ প্রিলিমিনারি। প্রিলিতে ২০০ নাম্বারের পরীক্ষা হয়। এর মধ্যে যে কোনো প্রশ্নে ১২০+ নিরাপদ মনে করি। যেহেতু নেগেটিভ মার্কিং হয় তাই সব প্রশ্নের উত্তর করতে যাওয়া বোকামি মনে করি। পরীক্ষায় সময় ব্যবস্হাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর গ্রুপ ডিসকাশন অত্যন্ত কার্যকর, এতে গভীর কিছু জানা যায়। প্রিলির পর লিখিত। প্রিলি দিয়েই আমি মনে করি লিখিত পড়া শুরু করে দেওয়া উচিত। সব টপিক ধরে ধরে বুঝে পড়ে ধারণা নিতে হবে। শুধু মুখস্থ করে বিসিএস ক্যাডার হওয়া যায় না। নিজের মত করে সব
কিছু লিখতে হবে। অন্যের থেকে নিজের খাতা যেন আলাদা হয় সেটা মাথায় রাখতে হবে। লিখায় বিভিন্ন গ্রাপ, ছক, ম্যাপ, চিত্র ইত্যাদি যুক্ত করতে পারলে ভালো হয়। লিখিতের জন্য বাংলা ও ইংরেজি essay নোট করে ২০ টি পড়লেই বাংলাদেশ বিষয়াবলীর ৬০% প্রস্তুতি হয়ে যায়। লিখিত সময় মেইনটেইন করার জন্য মডেল টেস্ট দেওয়া উত্তম। লিখিত প্রতিটি বিষয় কমন না পড়লেও মোটামুটি ধারণা থেকে লিখে হলেও পূর্ণ নম্বর উত্তর করা উচিত।
প্রশ্ন: মৌখিক পরীক্ষায় কিভাবে প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে?
উত্তর: লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে ২০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। মৌখিক পরীক্ষায় প্রশ্ন পারার চেয়ে চেয়ে আপনি কিভাবে সিচুয়েশনটা ফেইস করছেন গুরুত্বপূর্ণ। মৌখিক পরীক্ষায় ভালো করার জন্য নিয়মিত পত্রিকা, মাননীয় প্রাধানমন্ত্রী ও মহামান্য রাষ্ট্রপতি কখন কোথায় যাচ্ছেন,কি করছেন, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ, আন্তর্জাতিক দ্বন্দ্ব, ভৌগোলিক মানচিত্র, বিভিন্ন দেশ, রাষ্ট্রদূত (গুরুত্বপূর্ণ দেশসমূহে নিয়োজিত), সভ্যতা, প্রনালী, নিজ জেলা, নিজের পঠিত বিষয়, বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি সম্পর্কে ভালো ধারণা নিতে হবে। সর্বোপরি যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে আত্মবিশ্বাস। যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। কখনো হতাশ হওয়া যাবে না।আল্লাহর উপর বিশ্বাস ও নিজের আত্মপ্রত্যয় থাকলে সফলতা আসবেই। আমার কাছে আরেকটি গুণ বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় তা হচ্ছে নিজেকে আগে ভালো মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।
রিপোর্টার:
তানভির আহামেদ ফাহাদ
বুটেক্স (৪৪ ব্যাচ)