কম-বেশি আমরা সকলেই ‘বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট’ নামের সাথে পরিচিত। তবে ইদানিংকালে বিভিন্ন মোবাইল এবং কম্পিউটার গেম-এর বদৌলতে তরুণ সমাজের কাছে ‘ভেস্ট’ একটি বহুল পরিচিত শব্দ। এই ‘ভেস্ট’ই হলো বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট বা বুলেট প্রতিরোধক পোশাক। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক ‘ভেস্ট’ তথা ‘বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট’ এর আদ্যোপান্ত।
‘বুলেটপ্রুফ পোশাক’ নাম থেকে খুব সহজেই বুঝা যায় এ এমন এক পোশাক যা বন্দুক হতে নিক্ষিপ্ত বুলেটকে পরিধানকারীর দেহে প্রবেশ প্রতিরোধ করে। বুলেটপ্রুফ পোশাক আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে ব্যবহৃত কোন সাধারণ পোশাক নয়। এটি এক বিশেষ পোশাক যা সামরিক দেহ সজ্জার এক অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বুলেট প্রতিরোধক পোশাক নিক্ষিপ্ত বুলেট অথবা বিস্ফোরকের ক্ষুদ্র কণার প্রভাব প্রতিহত করে পরিধানকারীর দেহের সুরক্ষা প্রদান করে। ‘Safety Textile’ নামে পরিচিত বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, বুলেটপ্রুফ ভেস্ট, ব্যালিস্টিক ভেস্ট সাধারণত পুলিশ, নিরাপত্তা রক্ষী, দেহরক্ষী অথবা সামরিক সৈন্যরা টর্সো তে পরিধান করেন।
বুলেটপ্রুফ পোশাক তৈরির নেপথ্য
বুলেটপ্রুফ জ্যাকেটের ধারণা প্রথম আসে ১৫০০ সালে যখন ইটালিয়ান ও রোমান সাম্রাজ্য সর্বপ্রথম সৈন্যদের বুলেটের আঘাত থেকে রক্ষা করতে ধাতব পাতের একাধিক স্তর বিশিষ্ট দেহবর্ম তৈরি করে। অবশ্য এসকল দেহবর্ম আগ্নেয়াস্ত্রের সামনে খুব একটা কার্যকর ছিল না। পরবর্তীতে ১৮০০ সালে জাপানিজরা সিল্কের দেহ বর্ম তৈরি করে। সিল্কের তৈরি এই দেহ বর্ম কার্যকর হলেও তা ছিল ব্যয়বহুল। ১৯০১ সালে আমেরিকান মিলিটারিদের বাধ্য করা হয় নমনীয় দেহবর্ম ব্যবহার করতে কারণ সিল্কের তৈরি বর্ম আধুনিক সমরাস্ত্র প্রতিহত করতে ব্যার্থ হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আবিষ্কার হয় ‘ফ্ল্যাক জ্যাকেট’। ফ্ল্যাক জ্যাকেট তৈরি করা হয় ব্যালিস্টিক নাইলন ফাইবার দিয়ে তাই তা ছিল অত্যন্ত ভারী। ভারী হবার কারণে অধিক নিরাপদ ভাবায় সৈনিকদের মধ্যে এই জ্যাকেট জনপ্রিয়তা পায়। তবে প্রকৃত অর্থে ফ্ল্যাক জ্যাকেট খুব একটা কার্যকর ছিল না।
তবে সত্যিকারের বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট যা সম্পূর্ণরূপে বুলেট প্রতিহত করতে পারে তা তৈরি করা সম্ভব হয় ‘৬০ এর দশকে যখন নতুন বিশেষ ফাইবার আবিষ্কৃত হয়। ‘৭০ দশকের শুরুর দিকে বিখ্যাত ক্যামিক্যাল কোম্পানি ‘DuPont’ উদ্ভাবন করে ‘কেভ্লার’ ব্যালিস্টিক ফ্যাব্রিক। এই ফ্যাব্রিক অবশ্য তখন টায়ার তৈরিতে ব্যবহৃত হতো। একাধিক ফ্যাব্রিক লেয়ারের সমন্বয়ে কেভ্লার এর শক্তি এবং পানিরোধী ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এই ধারণা থেকেই অবশেষে বুলেটপ্রুফ ফ্যাব্রিক বাস্তব রূপ পায়।
বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট গঠন
বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট প্রধানত ২টি অংশে বিভক্ত-
১। ভেস্ট আকৃতির ব্যালিস্টিক প্যানেল
২। ফ্যাব্রিক শেল
ব্যালিস্টিক প্যানেল
বুলেটপ্রুফ জ্যাকেটের ভেস্ট আকৃতির ব্যালিস্টিক প্যানেল তৈরি করা হয় বেশ কয়েকটি পাত দিয়ে। এই পাত গুলো আবার তৈরি করা হয় ব্যালিস্টিক ফাইবার বা ফিলামেন্টের এক্কাধিক স্তর একত্র করে। ব্যালিস্টিক ফাইবার একই সাথে মজবুত এবং ওজনে হালকা। Kevlar, Dyneema, Spectra Shield, Twaron, Bynema হলো বহুল ব্যাবহৃত ব্যালিস্টিক ফাইবার। Woven ব্যালিস্টিক ফাইবারের ক্ষেত্রে স্তর গুলো একত্রে সেলাই করা হয় ঐ একই ব্যালিস্টিক ফাইবারের তৈরি সুতা দিয়ে। যেমন: কেভ্লার ফাইবারের স্তরগুলো সেলাই করা হয় কেভ্লার সুতা দিয়ে। আবার non-woven ফিলামেন্টের স্তর গুলো সেলাই এর পরিবর্তে রেসিন প্রলেপ দিয়ে আবদ্ধ করা হয়। তারপর ব্যালিস্টিক মেটেরিয়ালের স্তর গুলো রাখা হয় প্রতিরক্ষামূলক আচ্ছাদনের ভেতরে যা poluethylene film এর তৈরি। এরপর এই আচ্ছাদন উত্তপ্ত করে সিল করা হয়। এভাবেই তৈরি হয় ব্যালিস্টিক প্যানেল। অবশেষে ব্যালিস্টিক প্যানেলটি ফ্যাব্রিক শেলের ভেতরে রাখা হয়। মূলত এই ব্যালিস্টিক প্যানেল বুলেট প্রতিহত করে।
ফ্যাব্রিক শেল
বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট এর ফ্যাব্রিক শেল তৈরি করা হয় নাইলন অথবা কটন/নাইলন এর ব্লেন্ড ফাইবার দিয়ে। ফ্যাব্রিক শেল এর যে অংশটি দেহের সংস্পর্শে থাকে তা এক ধরণের শোষণকারী মেটেরিয়ালের(যেমন Kumax) স্তরের সাথে সেলাই করা থাকে। এটি পরিধানকারীকে বাড়তি আরাম দেয়। ফ্যাব্রিক শেলের বাইরের দিকে বাড়তি নিরাপত্তার জন্য থাকে নাইলন প্যাডিং। জ্যাকেট পরিধানকারী দেহের সাথে আটকে থাকার জন্য ফ্যাব্রিক শেলে মেটালিক বাক্ল এর সাথে একাধিক ইলাস্টিক স্ট্র্যাপ যুক্ত থাকে।
বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট কিভাবে কাজ করে?
বুলেটপ্রুফ জ্যাকেটে বুলেট আঘাত করলে বুলেটটি জ্যাকেটের ব্যালিস্টিক ফাইবার এর ‘ওয়েব’ এ বাধাপ্রাপ্ত হয়। বুলেটের সমস্ত প্রভাব শক্তি শোষণ করে এবং ছড়িয়ে দিয়ে ঘর্ষণ এর মাধ্যমে বুলেটের গতি কমিয়ে দেয়। বুলেটের সমস্ত শক্তি শোষণ করে জ্যাকেট বুলেটটি থামিয়ে দেয়। জ্যাকেটে বাধা পেয়ে বুলেটের আকৃতি পরিবর্তিত হয়ে ‘মাশরুম’ এর আকার ধারণ করে।
বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট কতটা কার্যকর?
বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট সাধারণত কোন একটি নির্দিষ্ট ধরণের বুলেট এবং তার ক্ষমতা প্রতিহত করার জন্য ডিজাইন করা হয়। তাই এটি ভাবার কোন অবকাশ নেই যে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট সব ধরনের বুলেট হতে সুরক্ষা প্রদান করবে। এছাড়াও একটা নির্দিষ্ট সময় পর জ্যাকেটের কর্মক্ষমতা হ্রাস পেতে শুরু করে। ব্যবহারের ধরনের উপরও নির্ভর করে একটি জ্যাকেট কতদিন কার্যকর থাকবে। তাই সম্ভাব্য ঝুকি ও ব্যবহারের ক্ষেত্রের কথা মাথায় রেখে নির্ধারণ করা উচিত বুলেটপ্রুফ জ্যাকেটের ধরন।
Source: textilefocus.com, Wikipedia, youtube
Writers information:
Sconce Lawrence Gomes
3rd year, 1st semester
Textile 37
Ahsanullah University of Science and Technology
Thanks for sharing this. Now my concept about bullet prof jacket is clear.