সুতা তৈরীর পরের ধাপ হলো ফ্যাব্রিক তৈরী । ফ্যাব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং প্রক্রিয়ায় মূলত পূর্ণাঙ্গ ফ্যাব্রিক তৈরী করা হয়ে থাকে । সাধারণত দুই ধরনের ফ্যাব্রিক দেখা যায়ঃ
ক) ওভেন ফ্যাব্রিকঃ এই ধরনের ফ্যাব্রিক দুই সেট সুতার সমন্বয়ে তৈরী করা হয় । ওয়ার্প এবং ওয়েফট দুই ধরনের সুতার সেট । এই ওয়ার্প এবং ওয়েফট এর সুতার ইন্টারল্যাসমেন্ট এর মাধ্যমেই মূলত ওভেন ফ্যাব্রিক প্রস্তুত করা হয় ।
খ) নিট ফ্যাব্রিকঃ এই ধরনের ফ্যাব্রিক এক সেট সুতার ইন্টারলুপিং এর মাধ্যমে তৈরী করা হয় । এক সেট সুতা হতে হবে হয় ওয়ার্প সুতা অথবা ওয়েফট সুতা ।
ওভেন এবং নিট ফ্যাব্রিক তৈরী করার প্রক্রিয়াই মূলত ফ্যাব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং । এই সিরিজে আমরা এসব প্রক্রিয়ার বিস্তারিত জানবো ।
✅উইভিং প্রিপারেটরী প্রসেস (Weaving Preparatory Process)
এই প্রক্রিয়ায় ওভেন ফ্যাব্রিক তৈরী করা হয় । ওভেন ফ্যাব্রিক তৈরীর ধাপসমূহ হলো
১) ওয়াইন্ডিং
২) ওয়ার্পিং
৩) সাইজিং
৪) লুম (উইভিং) ।
১) ওয়াইন্ডিং (Winding):
উইভিং প্রিপারেশন প্রক্রিয়ার খুবই গুরুত্বপুর্ণ একটি ধাপ হলো ওয়াইন্ডিং । এই প্রক্রিয়ায় মূলত ববিন, রিং, হ্যাঙ্ক থেকে সুতাসমূহকে সুবিধামত প্যাকেজে স্থানান্তর করা হয় । ওয়ার্প এর সুতাসমূহকে কোন, চিজ, ফ্ল্যাঞ্জ ববিন প্যাকেজে এবং ওয়েফট এর সুতাসমূহকে পার্ণ, কোপ প্যাকেজে রুপান্তর করা হয় ।
✅উদ্দেশ্যঃ
১) সুতাসমূহকে সুবিধাজনক প্যাকেজে স্থানান্তর করা হয় ।
২) সুতায় কোন অপদ্রব্য থাকলে তা দূর করা হয় ।
৩) সুতার গুনগত মান বৃদ্ধি করা হয় ।
৪) সুতাসমূহকে সুন্দরভাবে সংরক্ষণ করা হয় ।
৫) সুতার প্রান্ত ভেঙে যাওয়া রোধ করে ।
✅ওয়াইন্ডিং এর প্রকারভেদঃমূলত দুই ধরণের ওয়াইন্ডিং হয়ে থাকে
ক) প্রেসিশন ওয়াইন্ডিং:এই প্রক্রিয়ায় প্যাকেজে সুতার ঘূর্ণণসমূহ সমান্তরাল অথবা প্রায় সমান্তরাল হয়ে থাকে । এই ধরণের প্যাকেজের শক্তি ও স্থায়িত্ব কম হয়ে থাকে তবে প্যাকেজটি ঘন হয় ।
খ) নন-প্রেসিশন ওয়াইন্ডিং:এই প্রক্রিয়ায় সুতার ঘূর্ণণসমূহ হেলিক্স কোণে রাখা হয় এবং একটিমাত্র কয়েল ব্যাবহার করা হয় । এই ধরণের প্যাকেজের ঘনত্ব কম তবে শক্তিশালী এবং দীর্ঘ স্থায়িত্ববিশিষ্ট ।
✅ওয়াইন্ডিং প্যাকেজ এর প্রকারভেদঃ
ক) সমান্তরাল ওয়াইন্ডিং প্যাকেজ (Parallel Winding Package):সুবিধাঃ ১) একত্রে অনেকগুলো সুতা জড়ানো সম্ভব ।২) ট্রাভার্সিং ক্রিয়ার কোন প্রয়োজন হয় না ।৩) ইয়ার্ণ টুইস্ট এর কোন পরিবর্তন হয় না ।৪) প্যাকেজটির স্থায়িত্ব দীর্ঘস্থায়ী হয় ।
অসুবিধাঃ১) প্যাকেজের দুই পাশেই ফ্ল্যাঞ্জ এর প্রয়োজন হয় ।২) প্যাকেজ আনওয়াইন্ডিং এর সময় আলাদা প্রক্রিয়ার দরকার হয় ।
উদাহরণঃ ওয়ার্প বীম এবং ওয়েভার্স বীম ।
খ) প্রায় সমান্তরাল ওয়াইন্ডিং প্যাকেজ (Near Parallel Winding package):
সুবিধাঃ
১) কোনপ্রকার ফ্ল্যাঞ্জ এর প্রয়োজন হয় না ।
২) ইয়ার্ণ টুইস্ট এর কোন পরিবর্তন হয় না ।
অসুবিধাঃ
১) এসব প্যাকেজের স্থায়িত্ব কম হয় ।
উদাহরণঃ পার্ণ এবং কোপ ।
৩) ক্রস ওয়াইন্ড প্যাকেজ (Cross Winding package)
সুবিধাঃ১) কোন ফ্ল্যাঞ্জ এর প্রয়োজন হয় না ।
২) প্যাকেজ শক্তিশালী এবং দীর্ঘ স্থায়িত্ব বিশিষ্ট ।
অসুবিধাঃ
১) ইয়ার্ন টুইস্ট এর পরিবর্তন হয় ।
২) ট্রাভার্সিং প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হয় ।
উদাহরণঃ কোণ, চিজ, স্পুল ইত্যাদি ।
ওয়াইন্ডিং এ ব্যাবহৃত মেশিনসমূহঃ
১) ওয়াইন্ডিং এর ভিত্তিতে দুই ধরনের মেশিন দেখা যায়ঃ
ক) প্রেসিশন ওয়াইন্ডিং মেশিন ।
খ) নন-প্রেসিশন ওয়াইন্ডিং মেশিন ।
২) প্যাকেজের ধরণের ভিত্তিতে পাঁচ ধরনের মেশিন দেখা যায়ঃ
ক) কোণ ওয়াইন্ডিং মেশিন ।
খ) কোপ ওয়াইন্ডিং মেশিন ।
গ) পার্ন ওয়াইন্ডিং মেশিন ।
ঘ) চিজ ওয়াইন্ডিং মেশিন ।
ঙ) ফ্ল্যাঞ্জ ববিন ওয়াইন্ডিং মেশিন ।
৩) ড্রাইভ এর ভিত্তিতে দুই ধরনের মেশিন দেখা যায়ঃ
ক) ডিরেক্ট ড্রাইভ ওয়াইন্ডিং মেশিন ।
খ) ইনডিরেক্ট ড্রাইভ ওয়াইন্ডিং মেশিন ।
✅ওয়াইন্ডিং প্রক্রিয়ার সহায়ক কার্যক্রমঃ
১) ডফিং: যে সকল প্যাকেজে এ সুতাভর্তি করা হয়েছে সেই সকল প্যাকেজ সরিয়ে সেই জায়গা খালি প্যাকেজ দিয়ে পূর্ণ করার যে প্রক্রিয়া তাই ডফিং নামে পরিচিত ।
২) ক্রিলিং: যে সকল প্যাকেজ হতে সুতা অপসারন করা হয়েছে সেই সকল প্যাকেজ সরিয়ে সেই জায়গায় সুতাভর্তি প্যাকেজ স্থানান্তর এর প্রক্রিয়াই ক্রিলিং নামে পরিচিত ।
৩) পিসিং: এই প্রক্রিয়ায় মূলত সুতার শেষ প্রান্ত খুজে বের করা হয় এবং তা প্যাকেজের সাথে যুক্ত করা হয় ।
✅ওয়াইন্ডিং ক্যালকুলেশনঃ
ক) কটন এর ক্ষেত্রেঃ
১) প্রতি ঘন্টায় উৎপাদন (পাউন্ড/ঘন্টা) = (ওয়াইন্ডিং ড্রাম এর পৃষ্ঠের গতি (ইয়ার্ড/মিনিট) × ৬০ × ড্রামের সংখ্যা × দক্ষতা × বর্জ্য ) / ৮৪০ * ইয়ার্ণ কাউন্ট
২) প্রতি ঘন্টায় উৎপাদন (পাউন্ড/ঘন্টা) = (প্রতি স্পিন্ডল এ ইয়ার্ণ এর পরিমাণ (ইয়ার্ড/মিনিট) × ৬০ × স্পিন্ডল এর সংখ্যা × বর্জ্য) / ৮৪০ × ইয়ার্ণ কাউন্ট
খ) জুট এর ক্ষেত্রেঃ
১) প্রতি ঘন্টায় উৎপাদন (পাউন্ড/ঘন্টা) = (ওয়াইন্ডিং রোলার এর পৃষ্ঠ গতি (ইঞ্চি/মিনিট) × ৬০ × ইয়ার্ণ কাউন্ট × স্পিন্ডল এর সংখ্যা × দক্ষতা) / ৩৬ × ১৪৪০০
গ) টেক্স সিস্টেম এর ক্ষেত্রেঃ
১) প্রতি ঘন্টায় উৎপাদন (গ্রাম/ঘন্টা) = (ওয়াইন্ডিং রোলার এর পৃষ্ঠ গতি (সেমি/মিনিট) × ৬০ × ইয়ার্ণ কাউন্ট × স্পিন্ডল এর সংখ্যা × দক্ষতা ) / ১০০ × ১০০০
পরের পর্বে ওয়ার্পিং নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে ।
📝Writer: Tanjidur Rahman Sakib
Department of Apparel Engineering
Sheikh Kamal Textile Engineering College
Email: [email protected]