আচ্ছা ভেবে দেখুন তো, এমন পোশাক যদি তৈরী করা হয় যা মশা এবং বিভিন্ন ক্ষতিকর কীটপতঙ্গের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করবে তাহলে কেমন হয় । আসলেই দারুণ হবে না ব্যাপারটা । হ্যাঁ এটি অবাস্তব কিছু নয়। আধুনিক টেক্সটাইলের ছোঁয়ায় তা সম্ভব হয়েছে । আজকে কথা বলবো “ভেক্টর টেক্সটাইল প্রো-টেক্স” প্রযুক্তি নিয়ে । এটি নতুন আবিষ্কৃত একটি প্রোটেকটিভ প্রযুক্তি ।
“ভেক্টর টেক্সটাইল প্রো-টেক্স” হচ্ছে একধরনের টেক্সটাইল বেস প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যা মশা ও বিভিন্ন ক্ষতিকর কীটপতঙ্গের হাত থেকে আপনাকে সূরক্ষা প্রদান করবে । কোনোরূপ রাসায়নিক পদার্থ কিংবা পতঙ্গনাশক পদার্থের ব্যবহার ছাড়াই এই প্রযুক্তি কাজ করে । এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে একধরনের ফেব্রিক তৈরী করা হয় যা দেহকে সুরক্ষা প্রদান করে । এ ফেব্রিক আরামদায়ক, টেকসই এবং দেহে বায়ু চলাচল বজায় রাখে । ঘরে কিংবা বাইরে পরিধান করার জন্য উপযোগী এবং গরম বা শীত উভয় আবহাওয়ায় কার্যকর ।
ফেব্রিকে দুই ধরনের সুরক্ষা স্তর দেয়া হয় । প্রথম স্তর হচ্ছে ইনার লেয়ার বা বেস লেয়ার এবং আরেকটি হচ্ছে ফিটেড টপস স্তর । CAD সফটওয়্যার এবং মশার নিডেল বা সূচ অথবা মুখের অংশের ওপর ভিত্তি করে প্রথমে কৃত্রিমভাবে ফেব্রিক ডিজাইন করা হয় । এরপর ফেব্রিক তৈরী করে পরীক্ষা চালানো হয় যে ফেব্রিকটি মশার কামড় প্রতিরোধ করতে পারে কিনা । এক্ষেত্রে মশার দ্বারা ফেব্রিকটি ভেদ করার ক্ষমতা যাচাই করা হয় । সাধারণত মশারা কাপড়ের স্তর ভেদ করতে না পারলে, কাপড়ের দুর্বল জায়গা খুঁজতে থাকে যেখান দিয়ে কাপড় ভেদ করা যাবে । আর এই বিষয়টি ল্যাবে পর্যবেক্ষণ করে, কাপড়ের দুর্বল জায়গাগুলো চিহ্নিত করে মশা প্রতিরোধী হিসেবে গড়ে তোলা হয় । ওভেন ফেব্রিক, নিটেড ফেব্রিক কিংবা নন-ওভেন ফেব্রিক, প্রায় সবরকম ফেব্রিক ব্যবহার করা যায় এই প্রযুক্তিতে । সহজেই পরিধান করা যায় এমন ভাবে তৈরী করা হয় এই পোশাক । যার ফলে গর্ভবতী মহিলারাও এ পোশাক পরিধান করতে পারে । তবে এখনো এই প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা চলছে । কারণ মশা অথবা কীটপতঙ্গ প্রতিরোধী ফেব্রিক সহজেই তৈরী করা গেলেও একে আরামদায়ক এবং টেকসই করা একটু কঠিন ।
“বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার” তথ্যমতে প্রতি বছর মশাবাহিত রোগে ৭,২৫০০০ জন মানুষ মারা যায় । যা অন্যান্য যে কোনো কীটপতঙ্গ বা প্রাণীর তুলনায় বেশি । ম্যালেরিয়া, জিকা ভাইরাস, ডেঙ্গু ইত্যাদি মশা বাহিত রোগেই প্রাণহানি বেশি ঘটে । আর এক্ষেত্রে ভেক্টর টেক্সটাইল প্রো-টেক্স প্রযুক্তি হতে পারে এক যুগান্তকারী এবং প্রাণ রক্ষাকারী প্রযুক্তি ।
ব্যবহার এবং সুবিধাঃ
এই প্রযুক্তির দ্বারা তৈরী পোশাক বা ফেব্রিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারেঃ
মিলিটারি ইনসেক্ট বাইট প্রতিরোধী ভেস্ট তৈরী করতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাবে ।
মশা এবং কীটপতঙ্গ প্রতিরোধী সাধারণ পোশাক তৈরী করতে ব্যবহার করা যাবে ।
ফসলকে কীটপতঙ্গের হাত থেকে রক্ষা করতে সুরক্ষা বেস্টনী হিসেবে ব্যবহার করা যাবে ।
এছাড়াও আরো নানা ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে এই প্রযুক্তি ।
যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনা অঙ্গরাজ্যে স্টেট ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক এই প্রযুক্তি সর্বপ্রথম আবিস্কার করেন এবং এখনো গবেষণা করছেন ।
তথ্যসূত্রঃ ফেব্রিক লিংক,উইকিপিডিয়া
লেখক-মোহাম্মদ রাফি
ডিপার্টমেন্ট অব ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং
ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ।