ভুমিকাঃ
মাকড়সা প্রাণীটিকে আমরা কমবেশি সবাই যেমন চিনি, তেমন মাকড়সার জাল বা Spider web ও হয়তো নিজ চোখে দেখেছি বা টিভিতে দেখেছি। আশ্চর্য এই জিনিসটি যেরকম প্রাণীজগতের অন্যতম সেরা শিল্পকর্ম বলা যায় নিঃসন্দেহে, তেমনি প্রাণীরা তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহে কতই না বিস্ময়কর সব বস্তু ব্যবহার করে, বিস্ময়কর সব আচরণ করে সে সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়।শুরু থেকেই বিজ্ঞানীদের আগ্রহ, পরীক্ষা নিরীক্ষা ও আকর্ষণ এর কেন্দ্রে ছিল মাকড়সার জাল।
আবিষ্কারের কালঃ উল্লেখযোগ্য গবেষণাসমুহের মধ্যে ১৯৯০ সালে জিনোম সিকোয়েন্স নির্ণয় করা হয় Xu, M. ও Lewis, R. V এর নেতৃত্বে। ১৯৬০ সালে Fischer, F.ও Brander, J এমিনো এসিড বিশ্লেষণের মাধ্যমে কেমিক্যাল বেসিস সম্পর্কে জানতে সক্ষম হন। ১৯৯৪ সালে Simmons, A. এবং et al যৌথভাবে প্রথমবারের মত NMR Study করেন।
মাকড়সার রেশমের গাঠনিক উপাদান, উৎস ও অভ্যন্তরীণ বৈশিষ্টঃ
মাকড়সার জাল মুলত এক ধরণের প্রোটিন তন্তু (যেটি Spider Silk বা মাকড়সার রেশম নামে পরিচিত) দ্বারা গঠিত । মাকড়সার প্রজাতি অনুসারে এই রেশমের ও প্রকারভেদ রয়েছে।ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্টের তন্তগুলো ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে মাকড়সাকে বেচে থাকতে অসামান্য ভুমিকা পালন করে থাকে। যেমন Dragline Silk, এটি অত্যন্ত শক্তিশালী, দুটি প্রোটিন এর সমন্বয়ে গঠিত,প্রোটিনগুলোকে Spidroins বলে প্রতিটি প্রোটিনে আবার ৩টি ভিন্ন ভিন্ন এলাকা থাকে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট সহ, এর মধ্যে একটি যেমন কাজ করে স্থিতিস্থাপকতার জন্য,নমনীয়তার জন্য, আবার বাকি দুটি এলাকা ভঙ্গুরতার জন্য দায়ী।এভাবেই ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্টের প্রোটিনের সমন্বয়ে শক্তিশালী কিন্ত স্থিতিস্থাপক জাল তৈরী হয়।
একটি dragline silk এর শক্তি এতটাই যে তা স্টিলের সাথে তুলনীয়। স্টিলের ৬ ভাগের ১ ভাগ ঘনত্ব বিশিষ্ট dragline silk এর শক্তি ঘনত্ব 1.2×108 J/m3 । আরো একটি চমকপ্রদ ব্যাপার হচ্ছে Dragline Silk −40 °C থেকে 220 °C তাপমাত্রা পর্যন্ত তার শক্তি ধরে রাখতে সক্ষম। উল্লেখ্য যে মাকড়সার জালে শুধুই প্রোটিন নয়, বরং অন্যন্য উপাদান যেমন চিনি,লিপিড ইত্যাদি ও থাকে। বলে রাখা ভালো, ৭টি গ্রন্থি থেকে ৭ রকমের তন্তু বের হতে পারে, তবে সাধারণত সবগুলো একটি মাকড়সার দেহে থাকে না, পুরুষ মাকড়সার ক্ষেত্রে অন্তত ৩টি ও স্ত্রী মাকড়সার ক্ষেত্রে অন্তত ৪টি গ্রন্থি উপস্থিত থাকে। অবশ্যই ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশ ও ভিন্ন ভিন্ন কাজের জন্য উপযুক্ত বলে প্রমাণিত হয় গ্রন্থিগুলো থেকে উৎপন্ন তন্তুগুলো।
বাণিজ্যিক ব্যবহার ও প্রয়োগঃ
মাকড়সার জাল এর বিশেষ বৈশিষ্টের কারণে বানিজ্যিকভাবে তা বাজারজাত করা, বা কৃত্রিমভাবে তা প্রস্তুত করার প্রতি বরাবরই। যেমন ২০১৭ সালে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক কৃত্রিমভাবে তন্তু উৎপাদন এর পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলেন। আমরা যদি Spider Silk এর বানিজ্যিক প্রয়োগ এর তালিকার দিকে লক্ষ রাখি তাহলেই কিছুটা আন্দাজ করা যাবে বিজ্ঞানীদের আকর্ষণ এর কারণ কি। বন্দুকের গুলি অভেদ্য পোষাক, দড়ি, জাল,সিটবেল্ট,প্যারাশুট ,মটরসাইকেল,নৌকার জন্য মরিচা মুক্ত প্যানেল বা ব্যান্ডেজ তৈরী, মাকড়সার তন্তর প্রয়োগ রয়েছে ব্যাপক।সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন যে তারা প্লাস্টিক এর বিকল্প হিসেবে মাকড়সার রেশম ও কাঠ একসাথে ব্যবহার করে নতুন একটি উপাদান তৈরীর পথ খুজে পেয়েছেন। উপসংহারে বলতে হয় আমাদের দেশেও হয়তো কোনো এক সময় উন্নত দেশগুলোর মত মাকড়সার জাল,তন্তু নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা ও বানিজ্যিক প্রয়োগ শুরু হবে।
সুত্র ঃ গুগল, উইকিপিডিয়া ইত্যাদি।লেখক ঃ আবু জোনায়েতআশ্রাফুল ইসলামডিপার্টমেন্ট অফ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংসাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি