প্রসেনজীৎ পাল , ক্যাম্পাস প্রতিনিধিঃ
৮ এপ্রিল ২০১৪ সাল। ২য় বারের মত শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রাঙ্গণে এসেছিলেন ৪র্থ ব্যাচের তনুজ প্রভা দাস। ১০ এপ্রিল ৪র্থ ব্যাচের ওরিয়েন্টেশন ক্লাস ছিল, নির্ধারিত তারিখে ক্লাস শুরু হল। নতুন জায়গা, নতুন মানুষদের সাথে পরিচয়। তাই বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবসর সময়টা কাটে নতুন বন্ধুদের সাথে তনুজ প্রভা দাসের। যথারীতি একদিন চলছে আড্ডা। হঠাৎ এক বড় ভাইয়ের ফোন। তোর ব্লাড গ্রুপ কি? ভাই, “ও+”। “আমার আপুর জরুরী ব্লাড লাগবে, তুই সদর হাসপাতালে চলে অায়।” “আচ্ছা ভাই।”
জীবনে প্রথম ব্লাড দিবে তাই একটু ভয় ভয় লাগছিল । ব্লাড নেয়ার সময় যখন সুচ প্রয়োগ করলো, তখন ভয়ে ব্লাড ব্যাগের দিকেও তাকাতেই পারে নি তনুজ দাদা। কিন্তু রক্ত দেওয়ার পর, তার মনের মধ্যে কি যে একটা ভাল লাগার অনুভূতি কাজ করছিল সেটা হয়তো যে রক্তদান করেনি তার পক্ষে অনুভব করাটা অসম্ভব। এমনি তার অাবেগ অাপ্লুত কন্ঠে অবলীলায় বলে যাচ্ছে,তার ভিতের স্বত্তাটাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে। রক্তদানের সাহসটা বেড়ে গেল। এরপর হঠাৎ একদিন রাত ১১টায় আর এক বড় ভাইয়ের ফোন অাসল “এ+” ব্লাড লাগবে। রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ। স্থান “শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল”
এক বন্ধুকে সাথে নিয়ে রওনা হলেন হাসপাতালের পথে। যাওয়ার পর জানতে পারপন, রোগীর ব্লিডিং নাকি বন্ধ হচ্ছে না। আরো ২ ব্যাগ ব্লাড লাগবে। রাত তখন প্রায় ১২টা। ফোন করলেন, আরো ২ বন্ধুকে। তারা দিতে রাজিও হলো। এদিকে হঠাৎ শুরু হলো প্রবল বৃষ্টি। যদিও সেই বৃষ্টি কাল হয়ে দাঁড়াতে পারেনি, তার বন্ধু ধ্রুব ও সবুজের সামনে। মাহেন্দ্রা ভাড়া করে চলে আসলেন হাসপাতালে। সময়মতো রক্ত না পাওয়ায় সেদিনই দেখেছে তনুজ দাদা “একটি মানুষের কাছের মানুষটিকে ফিরে পাওয়ার আর্তনাদ”।
সেদিনের ঐ মুহুর্তের দৃশ্যটা তনুজ দাদার চোখে এখনো ভাসে। আর তখনই তিনি ভাবনাটা চূড়ান্ত করে ফেলল, যে রক্ত দান নিয়ে তাকে কাজ করতে হবে। তাতে এসব মানুষের কিছুটা হলেও উপকারে আসতে পারবো। আর তার বন্ধুরা যে এ কাজে শতভাগ তর পাশে থাকবে সেটা ঐ রাতেই প্রমাণ দিয়েছে তারা। এরপর টুকটাক যাত্রা শুরু হলো তাদের রক্তদান কর্মসূচি। হঠাৎ একদিন ৩য় ব্যাচের আল নাঈম ভাই তনুজ দাদাকে ফোন দিয়ে বললেম, “তুই তো ব্লাড নিয়ে কাজ করিস। তো তুই শেরে-বাংলা মেডিকেলে চলে আয়, তোকে একটা ক্লাবের সাথে যুক্ত করে দেই।”
গতি বাড়তে থাকলো, তাদের রক্তদান কর্মসূচির। রক্ত দাতাদেরকে দেখে অনুপ্রাণিত হতে থাকলো আরো অনেকে। এমন অনেক দিন আছে যেদিন ৪-৫ বারও মেডিকেলে যেতে হয়েছে। এদিকে দেখতে দেখতে ক্যাম্পাসে ৪র্থ ব্যাচের বিদায় ঘণ্টা বেজে উঠল। যেতে হবে নতুন গন্তব্যে। তাই এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা সচল রাখার জন্য কাছে পেলেন খুবই আন্তরিক কিছু ছোট ভাইকে। শিহাব মাহমুদ (৫ম), তৈয়বুর রহমান (৬ষ্ঠ), সাইদুর রহমান রাফি (৭ম) হামিম আশরাফি আকাশ (৮ম) ব্যাচ তনুজ দাদার পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে যে পরবর্তী ব্যাচ গুলো থেকেও এমন একটি মহৎ কর্মে অনেক সহযোগী যুক্ত হবে। এই কাজটিকে আরও গতিশীল করার জন্য চালু করা হয়েছে ”SARSTEC Blood Donors Club (SBDC)”.
সবসময়ই ইচ্ছা ছিল ক্যাম্পাস নিয়ে ভাল কিছু করার মহৎ মনের অধিকারী তনুজ দাদার। জানিনা কতটা সফল হয়েছে দিন শেষে তনুজ দাদা। অনুজদের কাছে তনুজ দাদার একটাই অনুরোধ, কোন কারণে কাজটি যেন আটকে না যায়, গতি না হারায়। সিনিয়ররা সবসময়ই তোমাদের পাশে ছিলাম, আছি এবং থাকবো।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার: SARSTEC এর সেই সকল মানব দরদি রক্ত দাতাদের প্রতি। যাদেরকে একবারের জায়গায় দুই বার রক্তদানের কথা বলতে হয় নি,আমরা যারা এটা নিয়ে কাজ করি তারা শুধুমাত্র একটি মাধ্যম ছাড়া আর কিছুই না। সকল প্রশংসার দাবিদার রক্ত দাতার।
তনুজ দাদার অনুরোধ:” আমরা যারা শারীরিকভাবে সুস্থ এবং রক্তদানে সক্ষম তারা যেন প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গা থেকে মানবতার সেবায় এগিয়ে আসি। রক্তদানে নিজে সচেতন হন এবং অপরকে সচেতন করি” অনেক ধন্যবাদ,শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো ”SARSTEC Blood Donors Club (SBDC)” এর সকল সদস্যদের প্রতি এবং আমার প্রথম ভালবাসা SARSTEC পরিবারের প্রতি। #Donate_Blood #Save_Lives #SBDC
সার্বিক সহোযোগিতায়ঃ তনুজ দাদা( ৪র্থ ব্যাচ ) শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, বরিশাল।
ক্যাম্পাস প্রতিনিধিঃ প্রসেনজীৎ পাল ডিপার্টমেন্টঃ ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং