আশিক মাহমুদ,নিজস্ব প্রতিনিধি।
বর্তমান পরিস্থিতিতে কোভিড ১৯ মোকাবিলায় পুরো বিশ্ব স্থবির প্রায়। এ সময়ে বিশ্ব মুখোমুখি হয়েছে অর্থনৈতিক সংকটের। বিশ্বের কিছু কিছু অঞ্চল স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও আধিকাংশ অঞ্চলের একাটি বড় জনগোষ্ঠী এখনো কাজে ফিরতে পারছে না।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও যে সবার কর্মহীনতা ঘুছবে তা বলা যাচ্ছে না। কারন, এ পরিস্থিতিতে যখন সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে তখন মালিকরা উৎপাদন ও সরাসরি সেবা খাতে স্বয়ংক্রিয়করণের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। যদিও মহামারির আগে থেকেই রোবটের কাছে কাজ হারাতে শুরু করে মানুষ। বহু প্রতিষ্ঠান ধীরে ধীরে প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি করতে থাকে। তখন এ বিষয় নিয়ে সমালোচনা হয়েছে অনেক। অনেকে আবার প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীলতা অনেক হয়েছে বলে আপাতত ক্ষান্ত হতে শুরু করেছিল। কিন্তু যখন কোভিড ১৯ এসে হাজির হল এবং দূরত্বই এর প্রধান ঔষধ হিসেবে হাজির হল তখন দেখা গেল যে আসলে কিছুই পুরোপুরি সয়ংক্রীয় হয়নি তখন প্রতিষ্ঠান গুলো সয়ংক্রীয়করনের পিছনে পাল্লা দিয়ে ছুটছে।
এই পরিস্থিতের অনেক মানুষই রয়েছে চাকরি হারানোর আশংকায়। কোভিড-১৯–এর কারণে সারা বিশ্বের কর্মক্ষম মানুষের অর্ধেকই কাজ হারাবে বলে আগেই পূর্বাভাস দিয়েছিল আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা। কোভিড-১৯–এর কারণে শুধু এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলেই অন্তত সাড়ে ১২ কোটি মানুষ কাজ হারাবে। যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে চার কোটির বেশি মানুষ বেকার হওয়ার খবর এসেছে। আর ইউরোপে পাঁচ কোটির বেশি মানুষ কাজ হারাবে। এই তথ্য গুলোই বলে দিতে পারে যে কি গভীর সংকট অপেক্ষা করছে অদূর ভবিষ্যতে।
এই পরিস্থিতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন পাল্লা দিয়ে ছুটছে সয়ংক্রীয়করনের পেছনে।
প্রযুক্তির উৎকর্ষে অনেকটাই এগিয়ে চীন। বিশ্বের এই অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তিও অটোমেশনের ওপর তার নির্ভরতা বাড়াচ্ছে। কতটা? বলা হচ্ছে, বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে চীনে এ প্রযুক্তি বেশি ব্যবহার হচ্ছে। সেন্টার ফর ইনোভেটিং ফিউচার জানাচ্ছে, বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় চীন অটোমেশন বেশি ব্যবহার করে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কারখানার কাজে রোবট ব্যবহার থেকে শুরু করে নানাভাবেই তারা এটি করছে। অথচ বেশি জনঘনত্বের দেশ হওয়ায় অন্য রকমই ভাবা হতো।
চীনের সরকারি তথ্য বলছে, গত বছর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক গবেষণায় দেশটি তাদের মোট দেশজ উৎপাদনের আড়াই শতাংশ বা ৩৫ হাজার ৫৪০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছিল। একই খাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগই একমাত্র চীন থেকে বেশি। এই বৈশ্বিক মহামারির সময়ে অন্য সব দেশের মতোই চীনের অর্থনীতিও বিপাকে রয়েছে। কিন্তু এই সময়েই চীন এ খাতে ৪২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে। আগামী ছয় বছরের মধ্যে উচ্চ প্রযুক্তির খাতে চীন ২ লাখ ৪৭ হাজার ডলার বিনিয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছে সাংহাই সিকিউরিটিজ নিউজ।
আগেই বলেছি যে সয়ংক্রীয়করনের বিষয়ে নানা সমালোচনা হয়েছে। অনেকেই মনে করেছিলেন যে যতেষ্ট সয়ংক্রীয়করন হয়েছে। কিন্তু এই মহামারি সময় কালে সয়ংক্রীয়করনের পক্ষে সমর্থন প্রায় দ্বিগুন হয়েছে বলা যায়। স্বভাবতই এখন সয়ংক্রীয়করনের ধারা বেগবান হবে। এবং গোটা বিশ্বকেই মোকাবেলা করতে হবে এক নতুন বাস্তবতার।
এই নতুন বাস্তবতা কোনভাবেই মধুর হতে যাচ্ছে না। তখন নিজের তৈরি সাম্রাজ্য যন্ত্রের হাতে সপে দিয়ে ফিরে যেতে হবে। তখন কেবল অদক্ষ শ্রমিকরাই বিপদের সম্মুক্ষিন হবে না, দক্ষ ও শিক্ষিত শ্রমিকরাও তাদের দলে যোগ দিবে। আর কেবল কোন একটি শিল্পক্ষেত্র এক্ষেএে লাভবান হলেই অন্য সকল ক্ষেএও সয়ংক্রীয়করনের দিকে আগ্রহী হবে। ফলে এতে আক্রান্ত হবে বিশাল একটি জনগোষ্ঠী। আর এই নতুন বাস্তবতা মোকাবিলা করা সামাজিক বা রাজনৈতিক কোন ভাবেই সুখকর হবার নয়।