রেমি একটি প্রাকৃতিক উডি ফাইবার (Woody Fibre)।গাছের কান্ডে পাওয়া যায় বলে একে “বাস্ট ফাইবার” বলা হয়।রেমি তন্তুর বস্ত্র চায়নাতে “চায়না গ্রাস ক্লথ” নামে পরিচিত। রেমি ফাইবারের বৈজ্ঞানিক নামঃ(Boehmeria nivea বা Beohmria tenacissem).
ইতিহাসঃ
রেমি বহু শতাব্দী ধরে চীনে উৎপাদিত হয়ে আসছে। খৃষ্টপূর্ব ৫০০০-৩৫০০অব্দের তৈরি মিশরীয় মমি আচ্ছাদনকারী কাপড় হিসেবে এক প্রকার ছাল জাতীয় আশেঁর নির্দশন পাওয়া যায়, যা “রেমি বা চায়না ঘাস” নামে পরিচিত। B.nivea এর চাষ প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই ভূমধ্য সাগরীয় অঞ্চলে লক্ষ্য করা যায়। আমেরিকার আদিবাসিরা রেমি তন্তু ব্যবহার করত।চীন,জাপান, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ইউরোপের দক্ষিণাঞ্চলে রেমির চাষ হয়।
চাষ পদ্ধতিঃ
রেমি একটি বারমেসে গাছ এবং গ্রীষ্ম মন্ডলীয় ভালো জন্মে।রেমি চাষের জন্যে উষ্ণ ও ভিজা জলবায়ু উপযুক্ত। মাঝারি ধরনের দোআঁশ এবং ঝুরঝুরা ধরনের মাটিতে রেমি গাছ ভালো জন্মে।মাসিক গড় বৃষ্টিপাত সাড়ে ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি দরকার।তবে মাটিতে বৃষ্টির পানি কোন ক্রমেই দাড়াতে পারবে না।কারণ এতে শিকড় পচে যায়।প্রয়োজনে পানি সেচ দেবার ব্যবস্থা করতে হবে।শক্তিশালী বাতাসের প্রবাহ আছে সেখানে রেমি চাষ না করাই ভালো।কারণ বাতাসে রেমি গাছ ভেঙে আঁশ নষ্ট হয়ে যায়।
শিকড় কান্ড বা বীজ থেকে রেমি চাষ করা যায়।৫-৬ ইঞ্চি মাটির গভীরে রেখে শিকড় লাগাতে হয়।অবশ্য কোথাও কোথাও শিকড় কেটে অংকুরোদগমের জন্য ৭-১০ দিন রেখে দেয়া হয়।অতঃপর অংকুরিত শিকড় জমিতে লাগানো হয়।
কান্ড থেকে একই ভাবে রেমি চাষ করা যায়। তবে ও পদ্ধতি বেশী শ্রমসাধ্য।কারণ কাটা কান্ড লাগানো হলে বহু সংখ্যক মারা যায়। তাই প্রথমে বীজতলায় কাটা কান্ড লাগানো হয় এবং শিকড় গজানোর পর জমিতে লাগানো হয়। বীজ থেকে চাষ পদ্ধতি আরও শ্রমসাধ্য এবং আঁশের গুনাগুণ অনেক ক্ষেত্রেই পরিবর্তিত হয়ে যায়। তাই পরীক্ষাগারেই এর ব্যবহার প্রায় সীমিত। প্রতিটি শিকড় বা কান্ডের খন্ড থেকে অনেক সংখ্যক গাছ জন্মে।যখন গাছের গোড়ার দিকটা হলুদ হতে শুরু করে তখন আঁশ সংগ্রের জন্য গাছ কাটা হয়।এ সময় গোড়া থেকে আবার নতুন চারা জন্মে। একবার শিকড় লাগিয়ে সাধারণত ২-৫বছর ফসল সংগ্রহ করা হয়।হবে ক্ষেত্র বিশেষে ২০-৩০বছর পর্যন্তও ফসল সংগ্রহ করা যায়।
আঁশ সংগ্রহঃ
ডি কর্টিকেশন(Decortication):
রেমি গাছ থেকে আঁশ ছাড়ানোর প্রক্রিয়া কে ডিকর্টিকেশন বলে।রেমি গাছকে পাটের ন্যায় পচানো হয় না।বরং গাছ কাটার সাথে সাথেই আঁশগুলো গাছ থেকে টেনে আলাদা করা হয়। তবে কখনও কখনও গাছগুলিকে পাথরের উপর পিটানো হয় বা কাঠের মন্ডুর দিয়ে গাছের কান্ড থেতলে দেয়া হয়।ফলে আঁশ ছড়ানো সহজতর হয়।ইন্দোনেশিয়াতে ভোতা ছুড়ি দিয়ে এমন ভাবে গাছ চাঁছা হয় যে আঁশ গুলি ভিতরের কান্ডীয় অংশের বিপরীতে কিছুটা জড়িয়ে যায় এবং সহজেই আলাদা করা যায়। পুরো পদ্ধতি গুলিই ম্যানুয়ালি।
ডিগামিং(Degumming):
ডিগামিং হলো রেমি প্রক্রিয়াকরণের অন্যতম প্রধান পদ্ধতি।রেমিতে কিছু প্রাকৃতিক আঠালো পদার্থ থাকে,যেমন-গ্রীস,ফ্রুটগাম ও হেমিসেলুলোজ।স্পিনিং এর পূর্বে আঁশকে অবশ্যই প্রাকৃতিক আঠা থেকে মুক্ত করে রেমি ফাইবার তৈরি করা হয়। যেখানে পুরা পদ্ধতি সাধারণভাবে মানুষ দ্বারা সম্পন্ন করা হয়।সেখানে আঁশগুলিকে ভিজানো হয় এবং ছুড়ি দিয়ে বার বার চেঁছে আঠা আলাদা করা হয়। সম্ভব হলে সোডা বা চুনের দ্রবণ ব্যবহার করা হয়।তবে বাণিজ্যিক ভাবে এ পদ্ধতি সম্পন্ন করার জন্য আঁশগুলিকে ৪ ঘন্টার জন্য কস্টিক সোডার দ্রবণে ভিজিয়ে রাখা হয়।এরপর ব্লিচিং পাউডার দ্বারা প্রক্রিয়া করণের পর এসিডের লঘু দ্রবণে ডুবানো হয়।যতক্ষণ পর্যন্ত না সমস্ত আঠা মুক্ত হয়।ততক্ষণ পর্যন্ত বার বার ব্লিচিং পাউডার এবং এসিড দ্রবণে প্রক্রিয়া করা হয় সবশেষে ধুয়ে রোদে শুকানো হয়।
রেমি এর রাসায়নিক উপাদানের শতকরা হারঃ
সেলুলোজ – ৭৬.৬%
হেমিসেলুলোজ – ৮.০%
লিগনিন – ৫.৬%
পেকটিন – ৩.৮%
পানিতে দ্রবণীয় – ৫.৬%
চর্বি এবং মোম – ০.৪%
রেমি ফাইবারের ব্যবহারঃ
১।বিভিন্ন ধরনের মোটা কাপড় তৈরিতে রেমি ব্যবহৃত হয়।যেমন-ক্যানভাস,প্যাকিং কাপড়।
২।আপহোলস্টেরি,আসবাবপত্রের কাপড় এমনকি পরিধেয় কাপড়েও ব্যবহৃত হয়।
৩।মাছ ধরার জাল তৈরিতে এবং সেলাই সুতা তৈরিতেও রেমি ব্যবহৃত হয়।
৪।সরু ও মোটা দড়ি রেমি দিয়ে তৈরি করা হয়।
৫।তাছাড়া ছোট ফাইবার গুলো কে কাগজ শিল্পে ব্যবহার করা হয়।
তথ্য সংগ্রহ:
১।টেক্সাইল ‘র’ ম্যাটেরিয়াল-1
২।টেক্সাইল ফাইবার (এম.এ.সাইম)
লেখক পরিচিতি:
ফাতেমা
১ম বর্ষ, ব্যাচ-২৪
বস্ত্র পরিচ্ছদ ও বয়নশিল্প বিভাগ