ফাস্টফুড প্রেমিকদের কাছে মুরগি মানেই অন্যরকম ভালোবাসা। চিকেন ফ্রাই, চিকেন ললিপপ, চিকেন বল সহ নানা মুখরোচক খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত হয় মুরগি। কেউ কি কখনো কল্পনা করেছি- যেই মুরগি আমরা খাই, সেই মুরগি টেক্সটাইলে ঢুকে পড়বে?
গবাদি পশুর চামড়া দিয়ে ব্যাগ,বেল্ট, জুতা আর পোশাক তৈরি হয়, এটা সবাই আমরা কমবেশি জানি। এমনকি মানুষের চামড়া থেকে তৈরি ফাইবার ব্যবহৃত হচ্ছে চিকিৎসা ক্ষেত্রে। কিন্তু মুরগির চামড়া খাবার ছাড়াও বিভিন্ন জিনিস বানাতে কাজে আসতে পারে, এটা কি আমরা ভেবে দেখেছি?
এই ভিন্নধর্মী কাজটি করে দেখিয়েছে ইন্দোনেশিয়ার হ্যারিকা ( HARICA ) নামের প্রতিষ্ঠানটি। হ্যারিকা ব্রান্ডের জুতা তৈরিতে ব্যবহৃত হয় মুরগির পায়ের চামড়া।
দেখতে সাধারন চামড়ার জুতার মতো হলেও এগুলো প্রচলিত কাঁচামালের তৈরি জুতা নয়। দর্শনীয় এবং আরামদায়ক এসব জুতা তৈরিতে গরু, ছাগল কিংবা কুমির নয়; ব্যবহৃত হয়েছে মুরগি।
আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা Boston Consulting Group জানায় , ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্ব খাদ্য বর্জ্য ৩গুণ বেড়ে ২ বিলিয়ন টনে দাঁড়াবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজের ভাবনা থেকেই এমন অভিনব উদ্যোগ নেয়া হয় এবং ২০১৭ সালে ইন্দোনেশিয়ার তরুণ উদ্যোক্তা নোরমান ফেরিয়াকা রামধানী– এর হাত ধরে যাত্রা শুরু হয় হ্যারিকা ব্রান্ডের ।
পদ্ধতি: ফেলে দেওয়া মুরগির পা সংগ্রহ করার পর এই চামড়াগুলো বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। মুরগির পায়ের চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার পর বেশ ভালো মানের কাঁচামাল পাওয়া যায় বলে জানা যায়। এরপর ডাইং করে বিভিন্ন রং দেওয়া হয়। এরপর, বিভিন্ন পলিয়েস্টার ফাইবার দিয়ে সেলাই করা হয় স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করার জন্য।
সাধারণত দুটি অংশে জুতা তৈরি করা হয়ে থাকে; ওপরের অংশ চামড়া দিয়ে এবং নিচের অংশ রাবারের সোল বা কাঠের অংশ দিয়ে তৈরি করা হয়। এরপর দুটি অংশকে গাম বা সলিউশন দিয়ে মেশিনের সাহায্যে চাপ দিয়ে জোড়া লাগানো হয়।এখানে রাবারের সোল এর ভিতরে টেক্সটাইল ম্যাকানিজ ব্যবহৃত হয়, যেমনটা আমরা সচরাচর জুতো তে করে থাকি। সোল এর ভিতরে পলিয়েস্টার লায়লন ইয়ার্ন ব্যবহৃত হয়, যা জুতার স্থায়ীত্ব বৃদ্ধি করে।
এভাবে তৈরি করা হয় বিভিন্ন ডিজাইনের জুতা। একই সাথে এই জুতাগুলো সাশ্রয়ী এবং টেকসই হয়ে থাকে। বিভিন্ন ডিজাইন এ ফেব্রিক ও ইউজ করা যায়। বিভিন্ন ডিজাইন এর ফেব্রিক ইউজ করতে পারি ছোট বাচ্চাদের জুতাতে। সাধারন নরম কাপড় বা কটন পলিয়েস্টার ব্লেন্ড ফ্রেব্রিক ইউজ করা যেতে পারে।
মুরগির পা থেকে প্রাপ্ত জুতাতেও আমরা অদূর ভবিষ্যতে হয়তো এরকম প্রযুক্তি ব্যবহার সহ টেক্সটাইল এর ব্যাপক ব্যবহার দেখতে পরবো।
সম্ভাবনা:
মুরগির চামড়া দিয়ে যেহেতু জুতা বানানো সম্ভব হয়েছে, তাহলে এই পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে চামড়ার ব্যাগ,জ্যাকেট,বেল্ট,হাত ঘড়ির ফিতা সহ আরো বিভিন্ন ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বানানোর কাজে মুরগির চামড়া ব্যবহার করা যেতে পারে।
এছাড়াও, সুদূর ভবিষ্যতে হয়তো মুরগির চামড়ার পাশাপাশি হাঁস এবং অন্যান্য পাখির চামড়া ব্যবহার করে ব্যাগ, বেল্ট, জ্যাকেট ইত্যাদি বানানো হবে। ফলে খাদ্য বর্জ্য গুলো কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন জিনিস বানানো যাবে এবং এটি পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করবে বলে আশা করা যায়।
উল্লেখ্য যে, একজোড়া জুতা বানাতে ৪৫টি মুরগির পা লাগে। এবং এই জুতা বিক্রি করা হয় ৩৫ ডলার (৩০০০ টাকা) থেকে ১৪০ ডলারের (১২,০০০টাকা) মধ্যে।
বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধিতে টেক্সটাইল এর ভুমিকা প্রায় সিংহ ভাগ এবং, ৮২% বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে RMG সেক্টর থেকে। যদি লেদার এন্ড টেক্সটাইল সংযুক্ত করে ইন্ডাস্ট্রি ডেভোলাপ করা যায়, তবে আমাদের দেশের আর্থনীতি উন্নত দেশগুলোর মতো হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
Writer Information:
Ateeya Jahan Labonno
National Institute of Textile Engineering and Research
Department of Industrial and production engineering
Email:[email protected]