পাখির মত উড়তে কার না ইচ্ছে করে।মেঘের সাথে সখ্যতা গড়তে চায় মানুষ সবসময়।সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই মানুষ উড়ার চেষ্টা করে আসছে।কালের বিবর্তনে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে মানুষ উড়তে সক্ষম হয়।প্রথমে প্যারাসুট জাম্পিংয়ের মাধ্যমে এবং পরবর্তীতে উড়োজাহাজ বা এরোপ্লেনের মাধ্যমে।
উড়ার কথা বললেই আমাদের প্রথমে মনে পড়ে রাইট ভ্রাতৃদ্বয়ের কথা।১৯০৩ সালে স্যার উইলবার রাইট এবং স্যার অরবিল রাইটের প্রচেষ্টায় প্রথম আকাশযান উড়ে আকাশে।কিন্তু তারও বহুকাল আগে থেকে দুঃসাহসী মানুষ উড়ার চেষ্টা করে আসছে।যা প্রকাশ পায় লিওনার্দো দা ভিঞ্চির চিত্রকর্মে।
ইতিহাসঃ
আজ থেকে প্রায় ৪০০০বছর পূর্বে প্যারাসুটের ধারণা দিয়েছিলেন চীনের পর্যবেক্ষকরা।তারা প্রথম লক্ষ করেন যে বায়ুর প্রতিরোধে পতন হ্রাস পায়। জনশ্রুতিতে আছে যে,দুটি বাঁশের তৈরি টুপি ব্যবহার করে প্রথম প্যারাসুট জাম্পিং করা হয় একটি গাছ থেকে লাফ দিয়ে। সাল ৮০০এর দশকে আব্বাস ইবনে আর্মেন নামের এক ব্যাক্তি ডানার মত একটি বড় জামা ব্যবহার করে একটি টাওয়ার থেকে লাফ দিয়েছিলেন। ১১০০সালের দিকে রাজতন্ত্র দখল করার জন্য নিয়মিত স্টান্ট হিসেবে বেইজ জাম্পিং (উচু বাঁধ থেকে প্যারাসুটিং)শুরু হয়েছিল চীনে।
প্রাচীনতম প্যারাসুটটি ইতালি রেনেসাঁসে ডিজাইন করা হয় ১৪৩০ সালে।পরবর্তীতে লিওনার্দো দা ভিঞ্চি একটি উন্নত পিরামিডাল নকশা তৈরি করেন।যা সফলভাবে ২০০০বার পরিক্ষা করা হয়।
১৭৮৩ সালে লুইস সেবাস্টিন ল্যানরম্যান্ড নামের একজন ফরাসি কেমিস্ট সর্বপ্রথম আধুনিক প্যারাসুট জাম্প করেন এবং তাকেই প্রথম স্কাইডাইভারস হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়। তিনি ল্যাটিন ভাষা থেকে “প্যারা” (বিপরীতে) এবং ফরাসি ভাষা থেকে “সুট” (পড়া) নিয়ে নতুন শব্দ প্যারাসুট গঠন করেন যার অর্থ “একটি পতনের শুরু ” (To avert a fall)
তিনি প্যারাসুটে ব্যবহার করেছিলেন সিল্কের তৈরি দুই ছাতাওয়ালা বেলুন।পরবর্তীতে রেমন্ড ইয়ং নামের একজন লেখক তার আর্টিকেলে সর্বপ্রথম স্কাইডাইভ শব্দটি ব্যবহার করেন।
প্যারাসুট কি?
প্যারাসুট এমন একটি বস্তু যা দেখতে ছাতার ন্যায় এবং এটি বায়ুমন্ডলে একধরনের টান বল তৈরি করে উচু স্থান হতে ভূমিতে পড়ার গতি হ্রাস করে। প্যারাসুট নির্মাণ সামগ্রী খুব শক্তিশালী হতে হবে এবং লোড হতে হবে ধীর বস্তু।এছাড়াও হতে হবে হালকা,শক্ত এবং সিল্কের কাপড় বা নাইলনের তৈরি।
প্রকারভেদ ও বিস্তারিতঃ
প্যারাসুট মূলত দুই প্রকারের হয়।একটি গম্বুজ ছাউনির এবং অপরটি আয়তাকার প্যারাফয়েল। গম্বুজ ছাউনির প্যারাসুট বায়ু প্রবাহের বিপরীতে উচ্চ চাপের অঞ্চল তৈরি করে গতি হ্রাস করে।
আয়তাকার প্যারাফয়েলকে র্যাম এয়ার ক্যানোপিও বলা হয়।এর টিউবুলার সেল থাকে যা ডানার মত কাজ করে।এই সেলগুলো জাম্পারকে তার লক্ষ্যের দিকে পরিচালিত করে।প্যারাসুট জাম্পিংয়ে উৎস এবং লক্ষ্যে পৌছানো প্যারাসুটের গঠন উপাদানের উপর নির্ভর করে। তাই গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো হতে হয় হালকা,নমনীয় এবং জলরোধী। এই গঠনের কারনেই উচু উচ্চতা এবং পরিবেশগত উপাদানগুলো পরিচালনা করতে সক্ষম হয়।
প্যারাসুট তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ঃ
★ক্যানভাস
★সিল্ক
★ড্যাক্রন
★কেভলার
★নাইলন
আর বস্তু ধরে রাখার অংশটি “রিসস্টপ” নাইলন দিয়ে তৈরি যা সামান্য দূরত্ব রেখে ডাবল বা অতিরিক্ত থ্রেড দিয়ে বোনে ছোট স্কয়ারের প্যাটার্ন তৈরি করে।এই কাঠামোগত গঠন প্যারাসুটের বহনকৃত বস্তু বা ব্যক্তিকে ছড়িয়ে পড়া হতে রক্ষা করে।
এটির ব্যাপ্তিযোগ্যতা ফেব্রিক এর পোরোসিটির উপর নির্ভরশীল। পোরোসিটি মূলত ফেব্রিক বুননের দৃঢ়তা দ্বারা নির্ধারিত হয়। অতএব যে কোনও ফেব্রিক যাতে যুক্তিসঙ্গতভাবে শক্ত বুনা থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
প্যারাসুট জাম্পের প্রকৃত সময় বসন্ত।
প্যারাসুটের কাপড়ের স্তরের ভাঁজগুলি দ্রুত উন্মুক্ত হওয়া ঋতুভেদে আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে,বায়ুমন্ডলের বাতাস কাপড়ের ভাজ গুলো ছুটে যেতে এবং খামকে দ্রুত স্ফীত করে দিতে সাহায্য করে। কাপড়ের স্থিতিস্থাপকতা খামের উপরে আরও সমানভাবে বিতরণ করতে থাকে, যার ফলে খামের অঞ্চলে অতিরিক্ত চাপের বিকাশ রোধ করা হয়।
প্যারাসুট-এ ভর দিয়ে ঝাঁপ দেওয়াটা খুব বিপদজনক হয়ে ওঠে মাঝে মাঝে। এতে অনেক সময়ে দড়ি পেঁচিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। অনেক সময়ে বাতাসের বেগ তীব্র থাকায় জাম্পের লক্ষ্যস্থল ভুল হয়ে যায়। তখন প্যারাট্রুপাররা দিকভ্ৰষ্ট হয়ে সমুদ্র, নদী, বা অরণ্যে নেমে পড়তে বাধ্য হন। বর্তমানে সেনাবাহিনী ছাড়াও সাধারণ মানুষদের নিয়ে দেশে দেশে প্যারাসুট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। টেক্সটাইলের ব্যাপকতা ছড়িয়ে যেতে যেতে এখন সেটা আকাশপথেও পৌছে গেছে প্যারাসুট এর মাধ্যমে।
তথ্যসূত্রঃউইকিপিডিয়া,ব্রিটানিকা, প্যারাসুটহোম
Writer Information:
Alia Yasmin
Dr. M A Wazed Miah textile Engineering College.
Team member-TES(DWMTEC)