ফৌজিয়া জাহান মিতা।
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
বাংলাদেশের অর্থনীতির অধিকাংশ টাকা আসে যখন রপ্তানি শিল্প থেকে।
করোনাভাইরাস সঙ্কটে দেশের অর্থনীতিও এখন হাবুডুবু খাচ্ছে । দীর্ঘদিন যখন বন্ধ রপ্তানি শিল্প। তখন রপ্তানির তালিকায় নতুন এক পণ্য যোগ করল বাংলাদেশ।
কভিড-১৯ রোগ বিশ্বব্যাপী এক নজিরবিহীন মহামারিতে রূপ নিয়েছে।৷ এই মহামারীর সময় দেশকে এবং দেশের মানুষের রোগ ঠেকানোর লড়ায়ে যারা রয়েছে সামনের সারিতে তাদের সুরক্ষায় ব্যবহার করা হয় পিপিই । পিপিইর চাহিদা বেড়েছে বিশ্বজুড়ে; আর পিপিই রপ্তানি শুরু করলো বাংলাদেশ।
বেশ কয়েকটি তৈরি পোশাক কারখানা পিপিই তৈরিতে নামলেও প্রথম চালানটি যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছে বেক্সিমকো কোম্পানি।
বেক্সিমকো টেক্সটাইল দেশের শীর্ষ স্থানীয় পোশাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন ৪০ হাজার কর্মী
বিশ্বমানের উৎপাদন ও গবেষণা স্থাপনা সমৃদ্ধ, বাংলাদেশের একমাত্র এফডিএ-সনদপ্রাপ্ত ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মা সম্প্রতি বিশ্বের প্রথম কোম্পানি হিসেবে রেমদেসিভিরের জেনেরিক সংস্করণ উৎপাদন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ এই রেমদেসিভিরকে কোভিড-১৯ রোগের চিকিৎসায় জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। প্রাথমিক ক্লিনিক্যাল উপাত্ত থেকে জানা যাচ্ছে যে, এই ওষুধ কোভিড-১৯ ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর।।।।
২৫শে মে বেক্সিমকোর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড হেইনসের কাছে ৬৫ লাখ পিপিই গাউনের একটি চালান পাঠানো হয়েছে। এই চালান পৌঁছাবে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (ফেমা) কাছে।।
২৫শে মে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রপ্তানি পন্য চালানের উদ্ভোদনের সময় উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার, জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান জামালউদ্দীন আহমেদ, বেক্সিমকোর টেক্সটাইল ডিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও গ্রুপের পরিচালক সৈয়দ নাভিদ হোসেন, বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান প্রমুখ।।এ সময় —
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বেক্সিমকোর প্রশংসা করে বলেন, “সংকটময় সময়ে বাংলাদেশ মাত্র দুই মাসের মধ্যে এই মুহুর্তে স্বাস্থ্য খাতের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিশ্বের এক গুরুত্বপূর্ণ বাজারে রপ্তানি করছে; তাও আবার ১০/২০ হাজার নয়, ৬৫ লাখ পিস। এক অভাবনীয় অর্জন।”
বেক্সিমকো টেক্সটাইলসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ নাভেদ হোসেন বলেন, “কোভিড-১৯ ভাইরাসের কারণে বিশ্বের কার্যপদ্ধতি পাল্টে গেছে। তাই বেক্সিমকোকেও জরুরিভিত্তিতে সক্রিয় হতে হয়েছে।
“মাত্র দুই মাসের মধ্যে আমরা আমাদের বিশ্বমানের উৎপাদন, প্রযুক্তিগত ও ডিজাইন দক্ষতা ও সক্ষমতা প্রয়োগ করে পিপিই তৈরি করতে শুরু করি। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাপী অতিপ্রয়োজনীয় পিপিই-এর সরবরাহ বৃদ্ধিতে অবদান রাখে বেক্সিমকো।”
বেক্সিমকো ফার্মার ম্যানেজিং ডিরেক্টর নাজমুল হাসান এমপি এ অনুষ্ঠানকে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘আজ আমরা বিপুল পরিমাণে বিশ্বমানের পিপিই উৎপাদনকারী দেশের কাতারে যোগ দিলাম।’ তিনি বলেন, ‘মহামারির প্রথম দিকে দেশে পিপিই’র প্রচুর চাহিদা ছিল এবং বেক্সিমকো পিপিই আমদানি করে দেশের স্বাস্থ্য খাতের প্রয়োজন মেটাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।’
‘কিন্তু চাহিদা বাড়তে থাকায় বিশ্বজুড়ে পিপিই’র স্বল্পতা দেখা দেয়। এরপর আমরা বৈশ্বিক চাহিদা মেটাতে পিপিই উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিই। এখন আমরা শুধু দেশের জন্য প্রয়োজনীয় পিপিই সরবরাহই নয়; বরং বিশ্বে পণ্য মানের দিকে কড়া নজরদারির দেশগুলোতেও তা রপ্তানি করছি।’
অনুষ্ঠানে জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জামালউদ্দিন আহমেদ বলেন, “বেক্সিমকোকে অর্থায়নের সুযোগ পেয়ে জনতা ব্যাংক গর্বিত। আমরা অন্যান্য রপ্তানিকারকদেরও অর্থায়ন করব যেন অর্থনীতির চাকা সচল থাকে; না হলে সব কিছু” ভেঙে পড়বে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর. মিলার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে এই প্রথম বড় ধরণের পিপিই’র চালান যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘বিশ্ববাজারের জন্য বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যায় বৈশ্বিক মানের পিপিই উৎপাদনের পদক্ষেপকে স্বাগত জানায় যুক্তরাষ্ট্র। বেক্সিমকো ও হেইনস’র চুক্তিতে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এ দুটি মহান দেশ কোভিড-১৯ মোকাবেলায় কীভাবে লড়াই করছে।””
সোর্স:বিডিনিউজ,প্রথম আলো