উৎসব মানেই নতুন পোশাক। আর বাঙালিদের উৎসব হলে তো তা আরও একটু ভিন্নমাত্রা যোগ করে দেয়।বাংলাদেশের আজকের ইতিহাসের জন্য দীর্ঘতম সময় অতিবাহিত করতে হয়েছে।এই সময়কালের মধ্যে আমরা বাঙালিরা বিভিন্ন শাসকদের শাসনকাল পাড়ি দিয়ে এসেছি যাদের মধ্যে রয়েছে প্রাচীন হিন্দু শাসক,নবাব,মোগল,ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি।আর তাদেরই বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য আজও বাঙালি ধারণ করে আছে। এই সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রভাব রয়েছে বাঙালির পোশাক পরিচ্ছদ এর ধরনেও।
বিভিন্ন উৎসবভেদে বাঙালিদের পোশাকের ধরনেও আসে ভিন্নতা। বলা হয়ে থাকে “বাঙালির বার মাসে,তের পার্বন”।আর প্রতিটি উৎসবেই পোশাকের নতুনত্ব,নিত্যনতুন পোশাক এর ধরন,রঙ,ডিজাইনই যেনো উৎসবের আমেজকে আরও রঙিন করে তোলে।বিভিন্ন পূজা, ঈদ,পহেলা বৈশাখ,বসন্ত উৎসব,বৌদ্ধপূর্ণিমা,বড়দিন সহ বিভিন্ন উৎসবে নতুন নতুন পোশাক অন্যরকম একটি মাত্রা যোগ করে দেয়।এবার জেনে নিই বাঙালির কিছু ঐতিহ্যবাহী পোশাক সম্পর্কে।
*লুঙ্গিঃ
বাঙালির ঐতিহ্যবাহী পোশাক এর কথা বলতে গেলে প্রথমেই এসে যায় লুঙ্গি।বিভিন্ন নকশা এবং বিভিন্ন সুতায় বুনা হয়ে থাকে এই পোশাকটি।ধুতি চাদরের মতো হলেও লঙ্গি স্কার্ট এর মতো করে গোল করে সেলানো হয়।বিভিন্ন সম্প্রদায় ভেদে লুঙ্গি পুরুষ ও মহিলা উভয়ই বিভিন্নভাবে কোমড়ে বেধে পড়ে থাকে।বর্তমান ফ্যাশন যুগে পোশাক এর স্টাইল ও ডিজাইন এর এর মধ্যে ভিন্নতা আসলেও,বিভিন্ন উৎসব পার্বনে আজও লুঙ্গির কদর রয়েছে। শুধু বাংলাদেশ নয় ভারত,শ্রীলঙ্কা,মিয়ানমারেও এর এই পোশাকের প্রচলন দেখা যায়।
*ধুতিঃ
ধুতি আর লুঙ্গি প্রায় একই শুধু পার্থক্যটা সেলাই এর ভিন্নতা। বাঙ্গালি পুরুষদের একটি ঐতিহ্যবাহী হলো ধুতি।বাংলাদেশে এর চলন তেমন একটি নেই। তবে ভারতে এর খুব চলন রয়েছে। এটি সাধারণত সেলাইবিহীন ৭ হাত লম্বা চতুষ্কোণ একখণ্ড কাপড় যা পা ও কোমড় জড়িয়ে রাখে এবং কোমড়ে গিট দিয়ে রাখা হয়।বিভিন্ন উৎসবে পাঞ্জাবির সাথে এর কদর এখনো রয়েছে।
*পাঞ্জাবিঃ
পাঞ্জাবি ছাড়া প্রায় প্রতিটি উৎসবই যেনো রংহীন। কথায় বলা হয় অন্যান্য পোশাক থেকে পুরুষদের নাকি পাঞ্জাবিতে বেশ মানায়।পাঞ্জাবির ব্যবহার হয়ে আসছে দীর্ঘযুগ ধরে।দিনে দিনে আসছে হরেক রকম এর ডিজাইন এবং রঙ এর মিশেল।পুজা,ঈদ,পহেলা বৈশাখ,বসন্ত উৎসব সহ বাঙালিদের বিভিন্ন বিয়ের অনুষ্ঠানেও পুরুষদের পাঞ্জাবি না হলে চলেই না।শুধু বাংলাদেশই নয়,বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আছে পাঞ্জাবির ব্যবহার।
*ফতুয়াঃ
পাঞ্জাবির মতো দেখতে বাঙ্গালি পুরুষদের আরও একটি ঐতিহ্যবাহী ও আরামদায়ক পোশাক হচ্ছে ফতুয়া।বিভিন্ন উৎসব গুলোতে বিভিন্ন ডিজাইন এর ফতুয়া পরিধান করা হয়ে থাকে।
*শাড়িঃ
অনেক তো হলো পুরুষদের পোশাকের কদর এবার আশা যাক নারীদের পোশাকে। নারীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকের কথা বলতে গেলে প্রথমেই চলে আসে শাড়ির নাম।কথায় বলা হয়ে থাকে,শাড়িতেই নাকি নারীর সৌন্দর্য্য।বাংলাদেশ, ভারতসহ ভারতীয় উপমহাদেশের নারীদের ঐতিহ্যবাহী এবং পছন্দের পোশাক হচ্ছে শাড়ি।শাড়ি লম্বা এবং সেলাইবিহীন কাপড় দিয়ে তৈরি হয়,যা বিভিন্ন ভাবে ভাজ দিয়ে পরিধান করা হয়।শাড়ি সাধারণত পেটিকোট এর উপরে পড়া হয় এবং উপরের অংশের পোশাক হিসেবে ব্লাউজ ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে নারীরা বিভিন্ন ধাচের শাড়ি পরিধান করে থাকেন।
*সালওয়ার-কামিজঃ
নারীদের পোশাকের মধ্যে রয়েছে সালওয়ার-কামিজ।বাংলাদেশ বাদে ভারত ও শ্রীলঙ্কায় এটি মেয়েদের পোশাক হিসেবে বিবেচিত হয় তবে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে এটি পুরুষ-নারী অভয়ই পরিধান করে থাকে।মোগল ঐতিহ্য থেকে এই ধাচের পোশাকের আগমন।বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানে নারীরা বিভিন্ন ডিজাইন এবং রঙ এর সালওয়ার কামিজ পরিধান করে থাকেন।
এছাড়াও বাঙালি পোশাক পরিচ্ছদের মধ্যে নতুন নতুন ফ্যাশনেবল পোশাকও যুক্ত হচ্ছে।আজকাল আধুনিক যুগে এসে নারী-পুরুষ উভয়ের পোশাকেই এসেছে ভিন্নতা। বিভিন্ন ডিজাইন এর পোশাক এর ব্যবহার বেড়ে চলছে দিনদিন।ঐতিহ্যবাহী পোশাকের সাথে সাথে দৈনন্দিন জীবনে শার্ট,প্যান্ট,টিশার্ট,স্যুট ইত্যাদি পাশ্চাত্য পোশাকের ব্যবহার হচ্ছে। বাঙালি মুসলিম নারীদের হিজাব/নিকাব/বোরকা পরিধানের প্রচলন হয়ে এসেছে অনেক আগে থেকেই।তবে বর্তমানে বছরের দুই ঈদ সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ডিজাইন এর হিজাব/নিকাব/বোরকা ব্যবহার করছেন মুসলিম নারীরা।
তথ্যসুত্রঃ উইকিপিডিয়া ও Google
লেখক:
মোহাম্মদ আরশিল আজীম
Batch: 201
Department of Textile Engineering
BGMEA University of Fashion & Technology(BUFT)