বাংলায় একটা কথা প্রচলিত আছে, সেটা হলোঃ“কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা” অর্থাৎ ক্ষতিকর বস্তুকে ব্যবহার করেই ক্ষতির পরিমান রোধ করা।এমনটাই সাধারণত হয়ে থাকে টেক্সটাইল রিসাইক্লিং এর ক্ষেত্রে।
পরিত্যক্ত বর্জ্য থেকে পুনরায় নতুন পন্য উৎপাদন আমাদের টেক্সটাইল খাতে নতুন কিছু নয়। প্রতিনিয়ত এই শাখাটি ব্যবহার করে যেমন সম্ভবপর হচ্ছে বর্জ্য নিষ্কাশন নতুন নতুন পন্থা উদ্ভাবন তেমনি চেষ্টায় উন্নতি হচ্ছে পরিবেশে দূষণ কমানোর। এইবার সেই ধারায় অফিসিয়ালি পা রাখলো বিশ্ববিখ্যাত স্পোর্টস ব্র্যান্ড “এডিডাস”। এই স্পোর্টসওয়ার ফার্মটি নিশ্চিত করেছে যে তারা সমুদ্র দূষন কমাতে সমুদ্রে নিষ্কাশিত প্লাস্টিকের ব্যবহার করে খেলাধুলার জন্য উপযোগী পোশাক তৈরি করতে যাচ্ছে।
তথ্যটি সর্বজনবিদিত যে প্লাস্টিকের বর্জ্য বিশ্বের সমুদ্রগুলিতে বিশাল দূষণের সমস্যা সৃষ্টি করছে।বিশেষ করে প্লাস্টিকগুলি বিশ্বের সামুদ্রিক ধ্বংসাবশেষের প্রায় ৮০ শতাংশ হিসাবে অনুমান করা হয় এবং ২০১৫ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রায় 8 মিলিয়ন মেট্রিক টন বর্জ্য প্রতি বছর সমুদ্রকে দূষিত করে। তাই এডিডাসের মত একটি বিশ্ব নন্দিত sportswear manufacturing company এর এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে পরিবেশবিজ্ঞানীরা।
তবে এডিডাস এর গৃহীত এই পদ্ধতি তাদের জন্যে একদম নতুন নয়। ২০১৫ সালেই এডিডাস পার্লির সাথে সমন্বয় করে যেই সংগঠনটি আসলে সমুদ্রে নিষ্কাশিত প্লাস্টিকের হুমকি নিয়ে কাজ করে থাকে। অতঃপর উক্ত সংগঠনের সহায়তায় এডিডাস সমুদ্র এবং সমুদ্র উপকূলের প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করে জুতা বানানো শুরু করে এবং ২০১৯ সাল নাগাদ ১১ মিলিয়ন জুতা তৈরিতে সক্ষম হয়। তবে উল্লেখযোগ্য যে উক্ত সংখ্যাটি তাদের লক্ষ্য ৪০০ মিলিয়নের একটি নাম মাত্র অংশ এবং তাদের ধারনা মতে ২০২০ সালেও তারা ১৫-২০ মিলিয়ন জুতো তৈরিতে সক্ষম হবে।
তাই অ্যাডিডাস ২০২০ সালেও সমুদ্রের প্লাস্টিকের ব্যবহার করে পার্লি -ব্র্যান্ডের জুতোর পাশাপাশি “প্রাইমব্লু” নামে ফেব্রিক তৈরির করার কাজ ও চালিয়ে যাবে বলে ঘোষনা দেয়।
The Ellen MacArthur Foundation যা একটি দাতব্য সংস্থা যা বর্জ্য নিষ্কাশনে সাহায্য করতে অর্থ প্রদান করে থাকে এডিডাসের বিষয়ে উল্লেখ করে বলেন,”পোশাকের জন্য ব্যবহৃত 1% এরও কম উপাদানের পুনর্ব্যবহার করা হয়, প্রতি বছর 100 বিলিয়ন ডলারের বেশি সামগ্রীর ক্ষতি হয়।তাই নতুন পন্থা অবলম্বনে পোশাক তৈরি এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।”
এডিডাসের ভাষ্যমতে পুনর্ব্যবহৃত পলিয়েস্টার কাপড় এ ১০% এর মত পুনর্ব্যবহার যোগ্য থাকে যা ব্যয় কমাতে খুব বেশি লাভজনক নয়। তাই লভ্যাংশ বৃদ্ধি এবং গ্রাহকের চাহিদার মিটানোর জন্যেই গৃহিত এই নতুন উদ্যোগ যেখানে বর্জ্যের তৈরি কাপড়ের রিসাইক্লিং এ তারা বর্জ্যপ্লাস্টিকের তৈরি ফেব্রিক ২০২০ সালে ৫০ শতাংশ এবং ২০২৪ সাল নাগাদ ১০০ শতাংশই পুনর্ব্যবহারযোগ্য হিসেবে দেখছে।
এডিডাসের ব্র্যান্ড স্ট্র্যাটেজির ভাইস প্রেসিডেন্ট জেমস কারনেস রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ”আমরা যা লক্ষ্য, পরিমাণ ও পরিবর্তনের চেষ্টায় আছি তা এখন শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার।”
অন্যদিকে মার্কেট ধরে রাখা ব্র্যান্ড “Nike” এর জনপ্রিয় ফ্লাইকনিট জুতাগুলির আপারগুলির জন্য পুনর্ব্যবহৃত করেছে এক ধরনের পলিয়েস্টার সুতা যা বর্জ্যের স্তুপ থেকে 4 বিলিয়ন প্লাস্টিকের বোতল সরিয়ে নিতে সহায়তা করেছে।
তবে এডিডাস শুধুমাত্র প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারে আটকে নেই। বছরের শেষের দিকে তারা নতুন কিছু পন্য উন্মোচন করবে যেগুলো তৈরি করা হয়েছে অন্যান্য পলিয়েস্টার এর পুনর্ব্যবহার করে। নতুনত্ব এই যে কাঙ্ক্ষিত পন্য গুলো হবে ১০০ শতাংশই পুনর্ব্যবহারযোগ্য।
সুপার বাউলের আগে নির্ধারিত এক ঘোষণায় আডিডাস বলেছিল যে মেজর লীগ সকার এবং জাতীয় হকি লীগের মতো মার্কিন স্পোর্টস পার্টনারদের সাথে টেকসই কাপড়ের তুলনায় আরও ইউনিফর্ম তৈরির পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
“পুনর্ব্যবহারযোগ্য পলিয়েস্টার ফাইবারের উপস্থিতি বৃদ্ধি বৈশ্বিক শক্তি এবং সংস্থান প্রয়োজনীয়তাগুলিকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।স্পোর্টসওয়্যারগুলি অনেক পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিচ্ছে।” বলেন Barclays বিশ্লেষক আনুশকা চালাওয়ালা।
একটি অভাবনীয় সাড়া ফেলার অপেক্ষায় এই টেক্সটাইল রিসাইক্লিং
Source: Wikipedia, Reuter
✍Writer:
Sabbir Alam Shuvo
Department: Fabric Engineering
Institution: Dr. M A Wazed Miah Textile Enginering College