যুগ যুগ ধরে আমরা কাপড় ব্যবহার করে আসছি। সঠিকভাবে কারো জানা নেই যে কাপড় কত সালে আবিষ্কার হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা পূর্ব ইউরোপে অবস্থিত জর্জিয়ার একটি গুহাতে খ্রিস্টপূর্ব ৩৪,০০০ সালে তৈরি রং করা কাপড় আবিষ্কার করেছেন। তখন থেকেই কাপড় তৈরিতে বিভিন্ন রকমের উপাদান ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিবর্তনের সাথে সাথে উন্নত হয়েছে টেক্সটাইল সেক্টর। বর্তমান বিশ্বের কাছে পরিবেশ দূষণ একটি বড় সমস্যা। আর এই সমস্যার জন্য অন্যতম ভাবে দায়ী করা হয় টেক্সটাইল কারখানাগুলোকে। তাই বর্তমানে মানুষ পরিবেশবান্ধব টেক্সটাইল ব্যবহার করতে বেশি পছন্দ করে। পদ্ম ফুলের তৈরি ফাইবার এর একটি উদাহরণ ,এটিকে লোটাস সিল্কও বলা হয়।
বিভিন্ন ধরনের লোটাস ফাইবার:
আমরা লোটাস ফাইবারের ব্যবহার সাধারণত চারভাবে হতে দেখি। সেগুলো হলো-
১. খাঁটি লোটাস টেক্সটাইল
২. মিশ্রিত প্রাকৃতিক কাপড়
৩. লোটাস ভেগান লেদার
৪. অ্যান্টিমাইক্রোফাইব্রিল লোটাস টেক্সটাইল
আজকে আমরা কথা বলতে যাচ্ছি খাঁটি লোটাস টেক্সটাইল নিয়ে। খাঁটি লোটাস টেক্সটাইল ঐগুলোকে বলা হয় যেগুলোতে শুধুমাত্র লোটাস ফাইবারই ব্যবহার করা হয়। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরিবেশবান্ধব ফেব্রিক এবং বিশ্বের প্রথম প্রাকৃতিক মাইক্রো ফাইবার । হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের কাছে পদ্মফুল একটি পবিত্র ফুল। তাছাড়াও পদ্ম গাছের রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা রয়েছে এবং এর তৈরি ফেব্রিক পরলেও স্বাস্থ্য ভালো থাকে বলে মনে করা হয়। কম্বোডিয়া, মায়ানমার এবং সম্প্রতি ভিয়েতনাম সহ আরো কিছু জায়গায় ছোট আকারে লোটাস সিল্কের ব্যবহার দেখা যায়। ৯০ দশকে জাপানের ডিজাইনাররা একটি ওয়ার্কশপ সেটাপ করে কিন্তু জাপানে চাহিদা কম থাকার কারণে ফেব্রিকটি বিরল এবং হস্তনির্মিত শিল্প হিসেবে রয়েগেছে। কিন্তু বর্তমানে এর চাহিদা ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে। যার অন্যতম কারণ এটি একটি প্রাকৃতিক ফাইবার , ভালো আদ্রতা শোষণ করে, নরম, আরামদায়ক এবং মজবুত।
তৈরি পদ্ধতি:
পদ্ম গাছ এপ্রিল থেকে অক্টোবরের মধ্যে সংগ্রহ করা হয়। এগুলোকে কোন যন্ত্রের সাহায্যে নয় বরং হাতেই সংগ্রহ করা হয়। বেশ কিছু কান্ড একসাথে নিয়ে মোচড় দেওয়ার মাধ্যমে পদ্ম তন্তু গুলোকে বের করা হয়। পরবর্তীতে সুতা তৈরির জন্য পাতলা ফিলামেন্ট গুলোকে একক থ্রেডে ঘোরানো হয় একাজে একজন অভিজ্ঞ তাতের ২০ থেকে ২৫ জন কর্মী প্রয়োজন হয়। এই সুতো গুলোকে খুবই সাবধানে ওজন করা হয় কারণ এগুলো খুবই ভঙ্গুর অবস্থায় থাকে। কিন্তু একবার কাপড় বোনা হয়ে গেলে তা যথেষ্ট মজবুত হয়।
ফান থি থুয়ানসের ২০ জন কর্মী প্রতি মাসে মাত্র ১০ থেকে ২০ টি স্কার্ফ তৈরি করে। কিন্তু ২৫ সেন্টিমিটারের একটি স্কার্ফও ২০০ ডলারের বেশিতে বিক্রি হতে পারে। লোটাস ফাইবার দিয়ে তৈরিকৃত কাপড়ের দাম, মান ও চাহিদা খুবই বেশি। লোরও পিয়ানা লোটাস সিল্ক দিয়ে একটি জ্যাকেট তৈরি করে যার বিক্রি হয়েছিল ৫৬০০ ডলারে যার বাংলাদেশের মূল্য হবে প্রায় ৪,৭৫,০০০ টাকা, যেখানে রুপার বর্তমান বাজার মূল্য প্রতি কেজিতে ৮৩৮ ডলার । এসব কাপড় এত ভালো হওয়ার সত্তেও দাম বেশি হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষ এগুলো কিনতে পারে না। এসব কাপড়ের দাম এত বেশি হওয়ার কারণ হল বাণিজ্যিকভাবে লোটাস ফাইবারে তৈরি কাপড় উৎপাদন না করা। হয়তো আমরা ভবিষ্যতে লোটাস ফাইবারে তৈরি কাপড় বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন হতে দেখব, তখন এর দাম অনেকটাই কমে যাবে।
Reference:
wsj.com
samatoa.com
textilesworldwide.com
fashionunited.uk
fibre2fashion.com
Wikipedia
Writer information:
Ifrad Uddin Ahmed
Niter 10th Batch
Department of Textile Engineering