প্রাচীনতম ফাইবার এর কথা আসলেই সব চেয়ে উপরের দিকে যে ফাইবারটি থাকবে তা হলো রেমি ফাইবার। হাজার হাজার বছর আগে থেকে বিভিন্ন দেশে এই রেমি ফাইবার ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু মজার বিষয় হল এই রেমি উদ্ভিদকে দেখলে মনেই হবে না এর থেকেও এত উন্নত মানের টেক্সটাইল ফাইবার উৎপাদন করা যায়।রেমি গাছকে “চায়না ঘাস” ও বলা হয়ে থাকে। এর প্রথম ব্যবহার চীনেই শুরু হয়েছিলো বলে ধারনা করা হয়। প্রাচীনকালে এই রেমি ফাইবার খুব জনপ্রিয় ছিল। রেমি ফাইবারকে ঐতিহ্যবাহী ফাইবার বলেও আখ্যায়িতও করা যায়।রেমি ফাইবারের ব্যাপারে একটি মজার তথ্য হলো ১০০% রেমি ফাইবার দিয়ে তৈরিকৃত পোশাককে খুব সহজে কোনো প্রকার আলাদা যত্ন ছাড়া ব্যবহার করা যায়।
ইতিহাসঃরেমি বহু শতাব্দী ধরে চীনে উৎপাদিত হয়ে আসছে। প্রাচীন চীনের কৃষকরা পোশাক তৈরিতে এই রেমি ফাইবারটি ব্যবহার করেছেন বলে জানা যায়। মিশরে মমি মোড়ানোর জন্য এই রেমি ফাইবার দ্বারা তৈরিকৃত কাপড় ব্যবহৃত হয়েছে বলে ধারণা করা হয় কারন এই ফাইবার অত্যন্ত উচুমানের এন্টিব্যক্টেরিয়াল। তাইওয়ানের আদিম মানুষেরা হাজার বছর আগে থেকে কাপড় তৈরিতে রেমি ফাইবার ব্যবহার করে আসছেন এবং এই রেমি ফেব্রিক এখনও তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক তৈরিতে ব্যবহৃত হয় যা তারা তাদের বিভিন্ন উৎসবে পরিধান করে থাকে। এই রেমি ফাইবারকে মেচেরা নামে একটি খোলা-বুননকৃত(open-weaven) ফ্যাব্রিক তৈরি করতে ব্যবহার করা হত,যা উষ্ণ জলবায়ুর জন্য উপযুক্ত শার্ট এবং গাউন তৈরির জন্য ব্যবহৃত হত। ফরাসী চিত্রশিল্পী রাউল ডুফি ২০ শতকের গোড়ার দিকে ফরাসি শার্টমেকার চারভেট দ্বারা ব্যবহৃত মেছেরায় প্রিন্টের জন্য নকশায় এই রেমি ফেব্রিক ব্যবহার করেছিলেন বলে জানা যায় ।
উৎপাদনকারী দেশসমূহঃমুলত চীনে সব চেয়ে বেশি পরিমানে রেমি ফাইবার উৎপাদন করা হয়। যার অধিকাংশ জাপানে এবং ইউরোপে রপ্তানি করা হয়ে থাকে। অন্যান্য উৎপাদকের মধ্যে রয়েছে জাপান, তাইওয়ান, ফিলিপাইন এবং ব্রাজিল। তবে উৎপাদিত রেমি ফাইবার খুব কম পরিমানে আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করা হয়। রেমি ফাইবার আমদানিকারক দেশ গুলোর মধ্যে রয়েছে জাপান, জার্মানি, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্য। বাকি দেশগুলো নিজেদের ব্যবহারের জন্য স্থানীয়ভাবে রেমি ফাইবার উৎপাদন করে থাকে।
রেমি ফাইবারের গাঠনিক বৈশিষ্ট্যঃ
Denier: ৩.০
Average fiber length (mm): ৪০
Mean breaking load (g): ৩০.০৯
CV% of B load: ৯.০
Tenacity(g/d): ১০ Mean breaking elongation(%): ৪.৫
CV% breaking elongation: ২০.৫
Moisture regain (%): ১৭.৫
Density(g/cc): ১.৫
রেমি ফাইবারের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যঃ
সেলুলোজঃ ৬৮.৬-৭২.২%
লিগনিনঃ ০.৬-০.৮%
হেমি সেলুলোজঃ ১৩.১-১৬.৭%
পেকটিনঃ ১.৯%
মোমঃ ০.৩%
রেমি ফাইবারের গুণাগুণ:১/রেমি ফাইবার অন্যতম শক্তিশালী প্রাকৃতিক ফাইবার।
২/এটি ভেজা অবস্থায় আরো বেশি শক্তিশালী হয়ে যায়।
৩/এটি অন্যান্য ফাইবারের মত টেকসই না হওয়ার কারনে অন্যান্য ফাইবারের সাথে এর ব্লেন্ড করা হয়। সাধারনত কটন এবং উল এক্ষেত্রে ব্যবহার হয়।
৪/এই ফাইবারের বিশেষত্ব হল ফেব্রিকের আকৃতি ধরে রাখে।
৫।ফেব্রিকে সিল্কের মত উজ্জলতা দেয়।
৬/ এটিকে যত বেশি ধোয়া হয় তত বেশি উজ্জ্বল হতে থাকে।
উপকারিতা:
১/রেমি ফাইবার আন্টিব্যকটেরিয়াল অর্থাৎ ব্যকটেরিয়া, বিভিন্ন ধরনের কীট বা পোকার আক্রমণ প্রতিরোধী।
২/এর ডাইং করা মোটামুটি সহজ।
৩/ফেব্রিকের আকার ধরে রাখে এবং সহজে সংকুচিত হয় না।
৪/ সহজে ব্লিচ করা যায়।
৫/লন্ডারিং এর সময় পানির উচ্চ তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে।
৬/মজবুত এবং অধিক টেকসই।
৭/ এটি কটনের তুলনায় প্রায় ৮ গুন বেশি এবং সিল্কের তুলনায় ৭ গুন বেশি মজবুত হয়ে থাকে।
অপকারিতা:
১/তুলনামূলক কম স্থিতিস্থাপক।
২/তুলনামুলক কম ঘর্ষন প্রতিরোধক।
৩/ডি-গামিং প্রক্রিয়ার দরকার হয়।
৪/উৎপাদন খরচ অধিক।
৫/শক্ত এবং ভঙ্গুর।
রেমি ফাইবার এর ব্যবহারঃ
১/ এদের সুইং থ্রেড, প্যাকিং উপকরণ, ফিশিং নেট তৈরিতেও ব্যবহার করা হয়।
২/এটি গৃহসজ্জার সামগ্রী (গৃহসজ্জার সামগ্রী, ক্যানভাস) তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়।
৩/ এদেরকে প্রায়শই অন্যান্য টেক্সটাইল ফাইবারগুলির সাথে মিশ্রিত করা হয়।
৪/ছোট ছোট ফাইবারগুলি কাগজ শিল্পে ব্যবহার করা হয়।
৫/স্যুট, স্কার্ট, জ্যাকেট, শার্ট, ব্লাউজ, প্যান্ট এবং রুমাল সহ পোশাকের জন্য রেমি ফ্যাব্রিক ব্যবহৃত হয়।
৬/ শিশুদের ডায়পার তৈরিতেও রেমি ফাইবার ব্যবহৃত হয়।
৭/তাছাড়া প্যারাশুটের কাপড় তৈরিতেও রেমি ফেব্রিক ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশের কয়েকটি রেমি ফাইবার ম্যানুফ্যাক্টারিং কোম্পানিঃ
১/ARP GROUP
২/Action Pro Fashion Ltd.
৩/Adams Apparels Ltd
৪/Astro Stitch Art Limited
৫/Centex Textile & Apparels Ltd
৬/Classic Fashion Concept Ltd
৭/Energypac Fashions Ltd
৮/Fancy Fashion Sweaters Ltd
৯/Nassa Denim
১০/Panna Textile Industries Pvt Ltd
১১/Preematex
১২/Pro Makers Sweater Ind Ltd
বর্তমানে আমাদের টেক্সটাইল শিল্প প্রাকৃতিক ফাইবার এর উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল হয়ে পরেছে। ক্রেতা সমাজও বুঝতে শুরু করেছে প্রাকৃতিক ফাইবার দ্বারা তৈরিকৃত পোশাকের গুরুত্ত্ব। বর্তমানে পুরো পৃথিবীতে টেক্সটাইল শিল্পে রেমি ফাইবার এর তত টা আধিপত্য না থাকলেও এই রেমি ফাইবার ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হওয়া শুরু করেছে।তাই বাংলাদেশের টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির মালিকদেরও উচিত এই রেমি ফাইবার ব্যবহার করে বাংলাদেশের টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। তা না হলে পরবর্তীতে আমাদের বিশ্ব-বাণিজ্যের বাজার ধরা কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে।
Source:www.Wikipedia.com
www.textilelearner.blogpost.com
Writer:Omar Saif
Department of Textile Engineering (3rd Batch)
Jashore University of Science and Technology