নিজস্ব প্রতিবেদক,TES।
করোনা মহামারী ব্যাপক বিস্তারের মাঝেই আজ (রোববার) অনুষ্ঠিত হচ্ছে “বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (BGMEA)” এর নির্বাচন। দীর্ঘ ৮ বছর পর BGMEA এর দুই হাজারের বেশি সদস্য ভোট দেয়ার মাধ্যমে পরিচালক নির্বাচন করবেন।
নির্বাচনে রয়েছে ২ টি প্যানেল। একটি হলো সম্মিলিত পরিষদ, অপরটি ফোরাম প্যানেল। সর্বমোট ৩৫ টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উভয় প্যানেলের ৭০ জন প্রার্থী। উভয় প্যানেলে এবার বেশ কয়েকজন তরুণ প্রার্থী রয়েছেন। তাদের বাবা-মা বর্তমানে এবং আগে বিভিন্ন মেয়াদে বিজিএমইএকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
ঢাকা অঞ্চলে ১ হাজার ৮৫৩ এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৪৬১ পোশাক কারখানা মালিক ভোট দেবেন। ঢাকা অঞ্চলে “হোটেল রেডিসন ব্লু” তে এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে তাদের নিজস্ব কার্যালয়ে ভোট নেয়া হচ্ছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ঢাকার ভোটের সময়েও কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন সূচি অনুযায়ী তিন ঘণ্টা সময় বাড়িয়ে রোববার সকাল ৯টা থেকে ৭টা পর্যন্ত ভোট হবে। চট্টগ্রামে ভোট গ্রহন চলবে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে, সেজন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
নির্বাচনী বোর্ডে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ ফরহাত আনোয়ার। গতকাল তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী জোটগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের। নির্বাচনের সময় সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা করা হয়েছে মূলত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের লক্ষ্যেই। ভিড় এড়াতেই এ পদক্ষেপ। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে সরকারের ১৮ দফা দিকনির্দেশনা মেনেই সব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ফোরামের ইশতেহারঃ ফোরামের মূল ইশতেহারটি ১৩ ভাগে বিভক্ত। এগুলো হলো, ভাবমূর্তি উন্নয়ন, ব্যবসা পরিচালন ব্যয় কমানো ও সহজীকরণ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, ব্যবসা থেকে প্রস্থান নীতি প্রণয়ন, পণ্যের দাম ও ক্রেতার জবাবদিহি নিশ্চিত, শিল্পের নিরাপত্তা ও নিজস্ব সক্ষমতা বৃদ্ধি, বাজার সম্প্রসারণ, প্রযুক্তি সক্ষমতা বাড়ানো, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যাত্রা শুরুর আগে প্রস্তুতি সম্পন্ন করা, শ্রমিককল্যাণ ও স্বচ্ছ–পরিচ্ছন্ন বিজিএমইএ গঠনের মাধ্যমে টেকসই পোশাকশিল্প গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট ফোরাম।
সম্মিলিত পরিষদের ৮১ প্রতিশ্রুতি : করোনার সংকট প্রতিকারে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পের উদ্যোগ নেয়া হবে। শিল্পের ক্ষতিগুলো চিহ্নিত করে তা সামলে ওঠা এবং শিল্পের পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে সরকারের কাছে স্বল্প মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি নীতি-সহায়তা প্রস্তাব করা হবে। এছাড়া শিল্প পুনরুদ্ধারে প্রণোদনার অর্থ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো হবে। পোশাকশিল্পে ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা ১৮ মাস থেকে বাড়ানো ও কিস্তির আকার ছোট করার জন্য সরকারকে প্রস্তাব দেয়াসহ ৮১টি প্রতিশ্রতি দিয়েছে সম্মিলিত পরিষদ। এতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানার উন্নয়ন, ব্যবসা থেকে প্রস্থান নীতিমালা, নতুন বাজার সম্প্রসারণ, কাস্টমস, কর ও মূসক নীতিমালা সংস্কার, শ্রম ও ব্যাংকিং নীতিমালা সংস্কার, ভাবমূর্তি উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয় রয়েছে।
এর আগে ২০১৩ সালে ফোরাম ও সম্মিলিত পরিষদ প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিজিএমইএ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। সেবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম সম্মিলিত পরিষদ থেকে সভাপতি হয়েছিলেন।
দুই বছর পর সমঝোতার ভিত্তিতে নেতৃত্ব নির্বাচনে যায় উভয় প্যানেল। সম্মিলিত পরিষদের সিদ্দিকুর রহমানকে সভাপতি করে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়।
এরপর নানা কারণে কমিটির মেয়াদ দুই বছর থেকে তিন দফায় বাড়িয়ে চার বছর (৪৩ মাস) করা হয়েছিল। ২০১৯ সালে আবারও সমঝোতার নেতৃত্ব আনার চেষ্টা করা হলেও শেষ মুহূর্তে স্বাধীনতা পরিষদের উত্থানে ভোটগ্রহণের বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়। ওই বছর ফোরাম ও সম্মিলিত পরিষদ জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করে ৩৫টি পদের সবগুলোতে বিজয়ী হয়।
এবারের নির্বাচনে ফোরামের নেতৃত্ব দেবেন হান্নান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ‘এবিএম শামসুদ্দিন মিয়া’ এবং সম্মিলিত পরিষদের নেতৃত্ব দেবেন জায়ান্ট টেক্সটাইলের ‘ফারুক হাসান’।
আগামী ২০ এপ্রিল বিজিএমইএর নতুন পর্ষদের দায়িত্ব নেয়ার কথা রয়েছে।