লুঙ্গি বাংলাদেশের পুরুষদের প্রধান পরিধেয় পোশাক হলেও এর ইতিহাস অনেকেরই অজানা। চলুন আজকের পর্বে জেনে নেওয়া যাক লুঙ্গির ইতিহাস।
★লুঙ্গি দেহের নিচের অংশে পরিধান করার একধরনের পোশাক। বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার এমনকি শ্রীলংকাতেও এর প্রচলন দেখা যায়।
যদিও এর সূচনা দক্ষিণ ভারতে কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার অনেক সম্প্রদায়ই এটি ব্যবহার করে থাকে।
★সাধারণত এক রঙের লুঙ্গিই বেশি জনপ্রিয় তবে এটি বিভিন্ন নকশা ও রঙে সুতায় বোনা হয়। নকশা ও রঙ ছাড়াও এর উপরে ও নীচের অংশে ডোরা কাটা দাগ থাকে। বিভিন্ন সম্প্রদায়ভেদে নারী ও পুরুষ উভয়ই বিভিন্ন ভাবে কোমড়ে বেঁধে লুঙ্গি পরিধান করে থাকে।
★উৎসঃ গবেষণায় দেখা গেছে, লুঙ্গির সূচনা হয়েছে দক্ষিণ ভারতে যা বর্তমানে তামিলনাড়ু নামে পরিচিত। ভেস্তি নামক একধরণের পোশাককে লুঙ্গির পূর্বসুরী বলে মনে করা হয়। ইতিহাসে উল্লেখিত আছে,মসলিন কাপড়ের ভেস্তি পোশাক তামিল থেকে ব্যবিলনে রপ্তানি হতো।ব্যবিলনের প্রত্নতাত্ত্বিক নিবন্ধে ‘সিন্ধু’ শব্দ খুঁজে পাওয়া যায়। তামিল ভাষায় সিন্ধ অর্থ পোশাক বা কাপড়। ‘বারাদাভারগাল’ নামের তামিলনাড়ুর জেলে সম্প্রদায় পশ্চিম আফ্রিকা, মিশর ও মেসোপোটেমিয়া অঞ্চলে লুঙ্গি রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বর্তমানে লুঙ্গি বাংলাদেশ, বার্মা, শ্রীলংকা,ইন্দোনেশিয়া ও পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতে বেশ জনপ্রিয়।
★বিভিন্ন দেশে লুঙ্গির ব্যবহারঃ
ভারতঃ ভারতের কেরালায় নারী ও পুরুষ উভয়ই লুঙ্গি পরিধান করে থাকে। তবে অঞ্চলভেদে এর বিভিন্ন নাম রয়েছে। যেমনঃ মুন্ডু, কাসাভু,মুন্ডা ইত্যাদি।
★মায়ানমারঃ মায়ানমারে লুঙ্গিকে বার্মিজ ভাষায় লোঙ্গাই বলে ডাকা হয়,যা পুরুষরা পরিধান করে।এখানে মহিলাদের জন্য এটি তামাইন নামে পরিচিত যা খুবই জনপ্রিয়। লোঙ্গাই মায়ানমারের জাতীয় পোশাক হিসেবে স্বীকৃত।
★ইয়েমেন ও সোমালিয়াঃ এখানে এ ধরনের পোশাককে ‘মা আউইস’ বলে ডাকা হয় যা পুরুষরা পরিধান করে থাকে।
★বাংলাদেশঃ এ দেশের সকল সম্প্রদায়ের পুরুষদেরই লুঙ্গি পরিধান করতে দেখা যায়। সুতার নকশা করা,বাটিক অথবা সিল্কের লুঙ্গি কখনও কখনও বিয়ের উপহার হিসেবে বরকে দেওয়া হয়। এ দেশের উপজাতিও নারী ও পুরুষ লুঙ্গির মতো এক ধরনের পোশাক পরিধান করে যা থামি নামে পরিচিত।
★★জানা যায়, দেশে ১৯৯৮ সালে বিদ্যুৎচালিত পাওয়ার লুমে লুঙ্গি তৈরী শুরু হয়।বর্তমানে এধরনের তাঁতেই ৯০ ভাগ লুঙ্গি তৈরী হচ্ছে। এছাড়া চিত্তরন্জন ও পিটলুমেও লুঙ্গি তৈরী হচ্ছে। বাংলাদেশের বৃহত্তর পাবনা থেকে শুরু করে সিরাজগঞ্জ, টাংগাইল ও নরসিংদী জেলার তাঁতিদের তৈরী লুঙ্গির সুনাম ও কদর দেশের গন্ডি পেরিয়ে এখন বিশ্ব বাজারে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতি বছর বিশ্বের ২৫টি দেশে প্রায় ২ কোটি পিস লুঙ্গি রপ্তানি করা হচ্ছে। এ খাত থেকে বছরে প্রায় ১ হাজার দুইশো কোটি টাকা আয় হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা জানান,রপ্তানি হওয়া দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারত,সৌদি আরব,কাতার, মালয়েশিয়া, ওমান,বাহারাইন,দুবাই, ইরাক,কুয়েত, লিবিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কানাডা,ইংল্যান্ড, আমেরিকা উল্লেখযোগ্য।
★দেশে প্রথম লুঙ্গি ব্র্যান্ডিং শুরু করে নরসিংদীর হেলাল এন্ড ব্রাদার্স। এছাড়া বাজারে সোনার বাংলা টেক্সটাইল, ডিসেন্ট, ইউনিক,স্ট্যান্ডার্ড,আমানত শাহ,রুহিতপুরী,স্মার্ট, অমর,পাকিজা,এটিএম,বোখারী, ফজর আলী,জেএম স্কাই,রংধনুসহ ১২৫ ব্র্যান্ডের লুঙ্গি বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ৮০/৮০,৬২/৮০,৬২/
৬২,৪০/৬২,৪০/৪০ কাউন্ট সুতাতে এ সব লুঙ্গি তৈরী হচ্ছে। মান ভেদে প্রতি পিস লুঙ্গি ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ৭০০০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি করা হয়। বাংলাদেশের একটি লুঙ্গির প্রচলিত মাপ হলো ৫ হাত।
★বাংলাদেশ লুঙ্গি ম্যানুফ্যাকচারার্স, এক্সপোর্ট এন্ড ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও আমানত শাহ গ্রুপের চেয়ারম্যান মোঃ হ
েলাল মিয়া জানান, বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের লুঙ্গির মান সব চেয়ে ভালো। তাই প্রতিবছরই রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি আরো জানান,সরকারি সহযোগিতা পেলে তৈরী পোশাকের পর লুঙ্গি দিয়েই বিশ্ব বাজারে নতুন করে জায়গা করে নেওয়া যাবে।
তথ্যসূত্রঃ সমকাল ও উইকিপিডিয়া
Sadia Tamanna Binte Taifur
4th year, Batch 21
Clothing & Textile
Bangladesh Home Economics College.