গ্লাস ফাইবার বা ফাইবার গ্লাস,বাংলায় বলা হয় কাচ তন্তু যা কাচের অনেকগুলো সুক্ষ্ম এবং শক্তিশালী তন্তুর সমন্বয়।১৮৯৩ সালে Edward Drummond Libbey (১৮৫৪-১৯২৫) সর্বপ্রথম রেশম সুতার সাথে কাচ তন্তু মিশ্রিত করে প্রথম কাচ তন্তুর তৈরি পরিধেয় পোশাক World’s Columbian Exposition এ প্রদর্শন করেন।তাপ নিরোধক হিসেবে বহুল ব্যবহৃত ফাইবার গ্লাস উৎভাবন করেন Russel James Slayter।এটি একটি বিশেষ কাচতন্তু হলেও এটি ফাইবার গ্লাস নামে ট্রেডমার্ক করা আছে।
মুলত গ্লাস ফাইবার তাপ ও বিদ্যুৎ নিরোধক হিসেবে ব্যবহার করা হয় তবে অনেকক্ষেত্রে বিভিন্ন ফাইবারের পলিমারকে শক্তিশালী করতেও গ্লাস ফাইবার ব্যবহার করা হয়।অতি প্রাচীন কাল থেকেই কাচনির্মাতারা কাচের তন্তু নিয়ে গবেষণা করে আসছেন।গ্লাস ফাইবারের একটি প্রাকৃতিক উৎস হচ্ছে আগ্নেয়গিরি। আগ্নেয়গিরি থেকে উৎপন্ন কাচ থেকেও কাচতন্তু উৎপাদন করা হয়ে থাকে।
গ্লাস যেরকম গঠন,রাসায়নিক প্রতিরোধের ক্ষমতা, উচ্চক্ষার প্রতিরোধের ক্ষমতা,উচ্চশক্তিসম্পন্ন,স্থিতিস্থাপকতা ইত্যাদি বিষয়ের উপর নির্ভর করে উৎপাদন করা হয়, তেমনি গ্লাস ফাইবার ও একই বিষয়ের উপর নির্ভর করেই উৎপাদন করা হয়।
*গ্লাস ফাইবার তৈরির উপাদানের মধ্যে কাঁচামাল হিসেবে রয়েছে কোয়ার্টজ বালি(SiO2),অ্যালুমিনিয়াম,চুনাপাথর(CaCO3),ডলোমাইট,সোডা অ্যাশ,বোরিক এসিড,গ্লাবারের লবন,ফ্লোরাইড,এবং অন্যান্য আরও কিছু উপাদান রয়েছে।
যখন সিলিকাভিত্তিক যৌগ ও অন্যান্য কাচ জাতীয় যৌগকে সুতার মতো খুব পাতলা এবং নমনীয় আকৃতি প্রদান করা হয় তখন গ্লাস ফাইবার সৃষ্টি হয়।কাচকে বা বালি জাতীয় পদার্থকে উত্তপ্ত করে টেনে লম্বার করে এজাতীয় সূতার মতো তন্তু তৈরির পদ্ধতি অতি প্রাচীন কাল থেকে থেকেই প্রচলিত কিন্তু তার সঠিক নিয়ম জানা যায় বিংশ শতকে এসে।
*গ্লাস ফাইবার মূলত দুটি পৃথক পদ্ধতিতে তৈরি হয়ঃ
১.Continuous Filament Process.
২.Staple Fiber Process.
গ্লাসের প্রকারভেদ এর ভিত্তি করেই গ্লাস ফাইবার এর প্রকারভেদ করা হয়ে থাকে। নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
১.A-গ্লাসঃ এটি মুলত জানালায় ব্যবহৃত গ্লাস(Window Glass) এর প্রায় সমতুল্য।এই ধরনের কাচ প্রক্রিয়াজাতকরণ এর সরঞ্জাম জার্মানিতে তৈরি হয়।
২.C-গ্লাসঃ রাসায়নিক প্রভাব প্রতিরোধের জন্য এই কাচ ব্যবহার করা হয়।
৩.E-গ্লাসঃ এ জাতীয় গ্লাসের মধ্যে C-গ্লাসের মতো বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। তার সাথে সাথে বিদ্যুৎ নিরোধক হিসেবেও এই গ্লাস ব্যবহৃত হয়।E-গ্লাস হলো অ্যালুমিনো বোরসিলিকেট যার মধ্যে ১% এরও কম অ্যালকালাই অক্সাইড রয়েছে এবং তা প্রধানত প্লাস্টিকের শক্তি বৃদ্ধিতে ব্যবহৃত হয়।
৪.AE-গ্লাসঃ এই ধরনের গ্লাস ক্ষারজাতীয় পদার্থ প্রতিরোধে সক্ষম।
*রাসায়নিক প্রভাবঃ
১.গ্লাস ফাইবারের কোন সাধারণ গলনাংক নেই তবে ১২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উত্তপ্ত করলে তা নরম হয়ে যায় এবং গলতে শুরু করে।
২.১৭১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় অনু গুলো মুক্ত ভাবে চলাচল শুরু করে তবে এই তাপমাত্রা থেকে ঠান্ডা করে সংগ্রহ করা হলে তাকে আবার গ্লাস ফাইবার এর আকৃতিতে আনা সম্ভব হয় না।
৩.ব্লিচিং পাউডারের সাথে কোন প্রকার ক্রিয়া হয় না তাই কোন প্রকার ক্ষতি সাধন ও হয় না।
৪.হাইড্রোক্লোরিক বা গরম ফসফোরিক এসিডে ক্রিয়া করে বিধায় ক্ষতি সাধন হয়।
৫.Alkali তে প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো।
৬.সূর্যের আলোতে কোন ক্ষতি হয় না।
৭.পোকামাকড় দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।
* গ্লাস ফাইবার এর ব্যবহার –
তাপ,শব্দ, বিদ্যুৎ নিরোধক ফেব্রিক তৈরি করার জন্য ফাইবার গ্লাস ব্যবহার করা হয়।তীর,ধনুক,গাড়ি,জাহাজ,নৌকার হাল ইত্যাদি তৈরির ক্ষেত্রেও ফাইবার গ্লাসের ব্যবহার হচ্ছে।বাড়ির ছাদ এবং মেঝে তৈরিতেও ফাইবার গ্লাসের ব্যবহার হচ্ছে। তাছাড়া বর্তমানে বায়োমেডিকেল অ্যাপ্লিকেশন গুলো ব্যবহার করা হচ্ছে গ্লাস ফাইবার এবং লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিতে লিথিয়ামকে প্রতিস্থাপন করে ব্যবহৃত হচ্ছে সোডিয়াম ভিত্তিক কাচের তন্তু গুলো।
গ্লাস ফাইবার এর বানিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় ১৯৩৬ সাল থেকে।দুটি বৃহৎ কাচ উৎপাদনকারী কোম্পানি ওয়েন্স-ইলিনয়িস গ্লাস কোম্পানি এবং করনিং গ্লাস কোম্পানি একত্রিত হয়ে ওয়েন্স-করনিং ফাইবার গ্লাস করপোরেশন গঠন করে।তারা কন্টিনিউয়াস ফিলামেন্ট (Continuous Filament Process) পদ্ধতিতে ফাইবার গ্লাস বা গ্লাস ফাইবার উৎপাদন শুরু করে। তবে বর্তমানে আরও কিছু প্রতিষ্ঠান গ্লাস ফাইবার উৎপাদন করে যাচ্ছে।
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া এবং Google
লেখকঃ
মোহাম্মদ আরশিল আজীম
Batch: 201
Department of Textile Engineering
BGMEA University of Fashion & Technology(BUFT)