ঘুম ভাঙতেই মোবাইলের স্ক্রিনে ভেসে উঠলো, ‘শীত মানে আনন্দ, শীত মানে খুশি, শীতের পিঠার দাওয়াত না পেলে মারবো এক ঘুষি।’ শীতের আগমন উপলক্ষে এক বন্ধু মজা করেই এমন ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েছে। সাধারণত হেমন্ত থেকেই আসে শিশিরভেজা হালকা শীতের সকাল। কিন্তু, প্রকৃতির সচরাচর নিয়ম ভেঙ্গে এবার একটু আগেই ধরায় শীতের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জায়গায় কুয়াশার আগমন ঘটেছে। তাপমাত্রাও রেকর্ড হারে কমছে প্রতিনিয়ত। ঘাসের ডগায় লেগে থাকা বৃষ্টির ফোটার মতো শিশির তা স্পষ্টভাবে জানান দিচ্ছে।
সেই ক্ষুদেবার্তার ন্যায় সত্যিই যেন আনন্দের ধুম পড়ে যায় শীতে। ভোরে ঘুম ভাঙতেই খেঁজুরের রস, ধোয়া ওঠা ভাপা পিঠা, পাটালি গুড়সহ নানা বর্ণের নকশি পিঠা-পুলির উৎসব লেগে যায়। উৎসবের পাশাপাশি ছোটবেলায় শীত এলেই ধুম পড়ে যেত ‘শীতের সকাল’ রচনা মুখস্ত করার। কারণ, সব বার্ষিক পরীক্ষাই শীতকালে হতো। শীতের সকালে এক চিমটি রোদ যেন স্বর্গের ছোঁয়া জায়গায় মনের কোণে। শীতের সকালে রোদ পোহানোর আনন্দটাই অন্যরকম। কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকালে গায়ে লেপ/চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকি আর অপেক্ষা কখন সূর্যি মামা হাসিমুখ নিয়ে দেখা দেবে পূর্বাকাশে।
শীতে শিশুদের সর্দি, কাশি, ঠাণ্ডা বা কমন কোল্ড, গলা ব্যথার মতো সাধারণ কিছু রোগবালাইয়ের প্রকোপ বেশি দেখা দেয়। এ ছাড়া অনেক শিশু নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, এডিনয়েডের মতো অসুখের কবলে পড়ে। এসব অসুখের বেশির ভাগ সাধারণত ঠাণ্ডাজনিত রোগ। মূলত শীত থেকে শিশুকে সুরক্ষা দিতে না পারার কারণেই এসব অসুখবিসুখ বেশি হয়ে থাকে। এ জন্য শিশুর শীতের পোশাক খুব জরুরি একটি জিনিস। শীতকালে শিশুকে যেন ঠাণ্ডার কবলে পড়তে না হয় এ জন্য তাদের পোশাকের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। মনে রাখতে হবে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
শিশুদের শীতের পোশাক যেমন হওয়া উচিতঃ
শিশুরা সংবেদনশীল। আর শীতের সময় তো তাদের রাখতে হয় বাড়তি নজর। তাই এ সময় তাদের জন্য পোশাকটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। শীতের পোশাকের কাপড় সুতি হলে আরামদায়ক হয়। তাই শিশুদের বেশিরভাগ শীতের পোশাক হওয়া উচিত সুতির। শিশুদের শীতের পোশাক নরম কাপড়ের হওয়া উচিত। কারণ খসখসে কিংবা শক্ত কাপড়ে তাদের নরম ত্বকের ক্ষতি করে। শিশুদের শীতের পোশাক সুতি কাপড়ের, ফ্লানেল কাপড়ের হলে শিশুরা পরে খুব আরাম পায়। তাই তাদের শীতের পোশাকের নিচে বিশেষ করে উলের পোশাকের নিচে একটি পাতলা সুতি কাপড়ের পোশাক পরিয়ে দেয়া উচিত। তবে হালকা শীতে শিশুকে খুব মোটা কিংবা খুব বেশি গরম কাপড় পরানো উচিত নয়। কারণ খুব বেশি গরম কাপড় পরালে গরমে ঘেমে তার ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে।
অনেক ভারী পোশাক নয়ঃ
শীতে শিশুকে ঠান্ডা থেকে বাঁচাতে অনেক বাবা-মা প্রচুর কাপড় ব্যবহার করেন। যেন অনেকগুলো পোশাক পরিয়ে দিলেই শিশুর সমস্ত ঠান্ডা, খারাপ লাগা- সব গায়েব হয়ে যাবে। বাস্তবে কিন্তু ব্যাপারটা একেবারেই তা না। সাধারণত, শীতে প্রাপ্তবয়স্কদের চাইতে এক পরত বেশী কাপড়ের প্রয়োজন হয় শিশুদের। এর বেশি না। আপনার শিশুকে পোশাক পরিয়ে দেওয়ার পর তার কাপড়ের নীচে হাত দিন। দেখুন শিশুর শরীর গরম আছে কিনা। অতিরিক্ত গরম বা ঘর্মাক্ত মনে হলে কাপড়ের পরিমাণ কমিয়ে দিন। মাঝেমধ্যে অতিরিক্ত কাপড়ের কারণে শিশুদের ত্বকে র্যাশ দেখা দেয়। তেমনটা হলে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন।
হাত এবং মাথা ঢেকে রাখুনঃ
সারা শরীরে কাপড় পরিয়ে দিলেও শিশুদের হাত এবং মাথা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাইরে থাকে। তাই আপনার শিশুকে কোলে নিয়ে বাইরে বের হওয়ার সময় তার মাথা আর হাত ভালো করে ঢেকে দিন। দরকার পড়লে তার চেহারার উপরে একটি পাতলা কাপড়ের আস্তরন দিয়ে রাখুন। এতে করে তার ঠান্ডার ভাব কমে যাবে।
গোসলে গরম পানি নয়ঃ
অনেক মা-বাবাই শিশুকে শীতকালে গরম পানি দিয়ে গোসল করিয়ে দেন। তবে খেয়াল রাখবেন, পানিটা যেন অনেক বেশি গরম না হয়ে যায়। গোসলের পানি আরামদায়ক হতে পারে, গরম নয়। গরম পানি ত্বকের ময়েশ্চারের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। তাই গরম পানিতে শিশুকে গোসল করানো থেকে বিরত থাকুন। শুধু তা-ই নয়, গোসলের সময়টাকেও সংক্ষিপ্ত করে ফেলুন। খুব ছোট শিশু হলে তাকে পাঁচ মিনিটের বেশি গোসল করাবেন না। নাহলে তার শরীরের ময়েশ্চার কমে গিয়ে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়বে।
শিশুর একটি প্রাণখোলা হাসিতে সুন্দর হয়ে ওঠে অনেক বিচ্ছিরি আর বাজে দিনও। অনেক কষ্টের ভেতরেও ফোকলা দাঁতের মিষ্টি হাসিতে মন ভালো হয়ে যায়। আর সেই হাসি যদি হয় নিজের নাড়ি ছেড়া ধন, নিজের সন্তানের, তাহলে তো তার কোনো তুলনাই নেই! তাই খুব যত্নে আগলে রাখুন আপনার শিশুর প্রতিটি হাসিমাখা মুহূর্ত এই শীতেও।
সাজ্জাদুল ইসলাম রাকিব
ক্যাম্পাস প্রতিনিধি – টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স সোসাইটি।
নিটার (১০ম ব্যাচ)