“চোখের সামনে ফুটন্ত ফুল, উড়ছে মন মৌমাছি,
একটা জীবন্ত খেলনা হাতে ধরে বসে আছি,
হ্যাঁ আমি একজন মানব শিশুর কথা বলছি।”
সৃষ্টির সেরা জীব হলো মানুষ আর মানবজাতির কাছে সৃষ্টিকর্তার সেরা উপহার হলো তাদের সন্তান। প্রতিটি পিতামাতাই তাদের সন্তানকে ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে রাখেন। সন্তানের ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যাপারেও বাবা-মা চিন্তিত হয়ে পড়েন। কিন্তু বর্তমান সময়ে সময়ের সাথে তাল মেলাতে ব্যস্ততাময় এ পৃথিবীতে শিশুদের জন্য এসেছে ডায়পার যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মায়েদের কাজকেই করেছে সহজতর। কিভাবে! চলুন জেনে নেয়া যাক-
আজকের সময়ে এসে মা ও সন্তানের জন্য প্রতিদিনকার এক সঙ্গী হলো ডায়পার। কিন্তু এখনো দাদী-নানীরা ডায়পারের নাম শুনলে মুখ ঘুরিয়ে নেন। মূলত তাদের আমলে বাচ্চাদের জন্য ছোট ছোট কাঁথা ব্যবহার করা হতো যা মোটেও স্বাস্থ্যকর ছিলো না। কিন্তু বর্তমান সময়ে বিশেষত একজন চাকুরীজীবি মায়েদের সন্তানের শৈশব খুব সহজে ডায়পার ছাড়া কল্পনা করা যায় না। তাছাড়া সারাদিন কর্মব্যস্ত জীবন কাটানোর পর মাঝরাতে বাচ্চার কান্নায় যখন ঘুম ভাঙে, তখনও সবচেয়ে সুন্দর সমাধান এই ডায়পার। ডায়পার মূলত শিশুর শরীরের বর্জ্য পদার্থ শোষণ করার মাধ্যমে শিশুকে শুকনো ও আরামদায়ক অনুভুতি প্রদান করে। বর্তমান সময়ে যেসব ডায়পার অধিক জনপ্রিয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- হাগিস, চুচু, পেম্পারস ইত্যাদি।
বাংলাদেশে বাচ্চাদের জন্য ডায়পারের ব্যবহার কয়েক দশক আগে থেকে আরম্ভ হলেও উন্নত দেশগুলোতে এর যাত্রা শুরু হয়েছিল গত শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে। মূলত ১৯৪০ সালের আগে পর্যন্ত কাপড়ের তৈরি ন্যাপকিন দিয়ে কাজ চালানো হতো। পরবর্তীতে ১৯৪৮ সালে প্রথম ডিসপোজেবল ডায়পারটি আবিষ্কার করেন ইন্ডিয়ানা ফোর্ট ওয়েনের মা মেরিওন ডোনভান। সময়ের সাথে সাথে পরবর্তীতে ডায়পারের বৈশিষ্ট্য আরও উন্নত হয়েছে।
ডায়পারের উৎপাদনঃ এক্ষেত্রে শিশুর ত্বকের সাথে মানানসই উপকরণসমূহ ডায়পার উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে- বাঁশ বা কাঠ থেকে প্রাপ্ত মন্ড, তরল শোষণকারী পদার্থ, জীবাণুনাশক পদার্থ। এছাড়া সুগন্ধিজাতীয় পদার্থও ব্যবহার করা হয়।একটি আদর্শ ডায়পারে মূলত বেশ কিছু লেয়ার বা অংশ থাকে। সর্বপ্রথম যে লেয়ার থাকে তা সরাসরি শিশুর ত্বকের সাথে যুক্ত থাকে। তরল পদার্থকে শোষণের মাধ্যমে দ্বিতীয় লেয়ারে পাঠানো ও বাচ্চার ত্বককে শুষ্ক রাখা এই লেয়ারের কাজ। কেননা ভেজা ত্বক পরবর্তীতে ঐসব স্থানে র্যাশ সৃষ্টি করে যা শিশুর নরম ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। এজন্য এই অংশটির ফেব্রিকে মূলত পলিপ্রপিলিন নামক রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়। এরপর যে লেয়ারটি রয়েছে এই লেয়ারটি মূলত ডায়পারের মূল কাঠামো হিসেবে কাজ করে। কেননা, ডায়পারের প্রধান কার্যকরী উপাদানগুলো এই অংশেই থাকে। উপাদানগুলোর মধ্যে হাইড্রোফিলিক পলিমার ও কাঠ বা বাঁশ থেকে প্রাপ্ত মন্ডই প্রধান। এসব উপাদান শোষণকৃত তরলকে জেল বা জেলির মতো বানিয়ে ফেলে যা শিশুর ত্বককে শুষ্ক রাখার জন্য প্রয়োজনীয়। এছাড়া আরও কিছু রাসায়নিক উপাদান এই অংশে রয়েছে। এরপরই থাকে প্রথম দুই অংশকে একত্রিত করে আকৃতি দানের জন্য প্লাস্টিকের তৈরি বহিরাবরণ। সবশেষে রয়েছে শিটের মতো একটি আবরণ যা ডায়পারের সর্ববহিঃস্থ অংশ।
ডায়পারের ব্যবহারবিধিঃ বর্তমান সময়ে বাচ্চাদের ডায়পার পড়ানো খুবই প্রচলিত একটি ঘটনা। এটি কর্মজীবি মায়ের সময় বাঁচানোর পাশাপাশি ঘর-বাড়ি ও কাপড় নোংরা করা থেকেও মুক্তি দেয়। তবে এটি ব্যবহারের সঠিক সময় ও নিয়ম না জানা থাকলে শিশুর অস্বস্তির পাশাপাশি শিশুর কোমল সংবেদনশীল ত্বকে নানা সমস্যা দেখা দেয়। এজন্য ডায়পার কেনার সময় অধিক আরামদায়ক, তরল শোষণক্ষম এবং লিকপ্রুফ কি-না দেখে কিনতে হবে। রাতে বাচ্চাকে ডায়পার পরিয়ে ঘুম পারালে কিংবা দিনের বেলা বাচ্চাকে সবসময় ডায়পার পরিয়ে রাখলেও খেয়াল রাখতে হবে কোনোভাবেই যেন পাঁচ-ছয় ঘন্টার অধিক এক ডায়পার না রাখা হয়। এতে শিশুর ত্বকে র্যাশ সৃষ্টি হয় যা বাচ্চার জন্য অস্বস্তিকর ও কষ্টদায়ক। বিশেষ করে ভ্রমণের সময় বেশি করে ডায়পার সঙ্গে রাখা উচিত এবং বাচ্চা প্রস্রাব বা পায়খানা করলে যত দ্রুত সম্ভব বদলে দেয়া উচিত। কোনো ক্রমেই ভেজা ডায়পার বাচ্চাদের পড়িয়ে রাখা উচিত নয়।
আজকের শিশুরাই আগামীর ভবিষ্যত। সুতরাং তাদের সুস্বাস্থ্যের প্রতি নজর রেখে দেশ ও পৃথিবীর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য যথাযথ আধুনিক টেক্সটাইলের ব্যবহার একান্তই আবশ্যক। তাছাড়া বর্তমানে ডায়পার যে শুধুমাত্র শিশুদের জন্যই ব্যবহৃত হয় তা নয়, আধুনিক টেক্সটাইলের অগ্রযাত্রার ফলে অসুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বাজারে এসেছে এডাল্ট ডায়পার।
বিশ্বব্যাপি জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নগরায়ণ, স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে বতর্মান সময়ে জনগণ ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতন হচ্ছে। তাই ডিসপোজেবল ডায়পারের চাহিদাও বিশ্বব্যাপী দিন দিন বাড়ছে। সেই সাথে বাংলাদেশে আমদানিকৃত ডায়পারের দাম বেশি হওয়ায় স্থানীয় ডায়পারের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা তাদের এই লাভজনক শিল্পে সময় ও অর্থ বিনিয়োগ করে এটির বাজারকে আরও উচ্চ মাত্রায় নিয়ে যেতে সক্ষম হবে।
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া, টেক্সটাইল ফোকাস, হাগিস, প্রথমআলো, ইউটিউব
Written by:
Name: Jannatuz Faria
Dept. of Apparel Engineering (2nd Batch)
Dr. M A Wazed Miah Textile Engineering College
Name: Md. Istiaque Hossain Ullash
Dept. of Fabric Engineering (2nd Batch)
Dr. M A Wazed Miah Textile Engineering College