ফাইবারঃ ফাইবারকে উদ্ভিদ বা প্রানি বা অন্যান্য পদার্থের টিস্যুগুলির একটি সুক্ষ্ম চুলের অংশ হিসেবে সংঙ্গায়িত করা হয় যার দৈর্ঘ্য অবশ্যই ব্যাস থেকে কয়েক হাজার (সাধারণত ৫০০/৭০০-৫০০০)গুন বেশি হতে হবে।
অন্যদিকে,
টেক্সটাইল ফাইবারঃ যে সকল ফাইবারের নূন্যতম শক্তি, দৈর্ঘ্য, সূক্ষ্মতা, স্থিতিস্থাপকতা, প্রসারণ, রেসিলিয়েন্সি, নমনীয়তা, বিশোষণ, ঊজ্জলতা, ড্রেপাবিলিটি সর্বপরি সুতা তৈরির গুণাবলি বিদ্যমান থাকে তাকে টেক্সটাইল ফাইবার বলে।
টেক্সটাইল ফাইবার হতে হলে একটি ফাইবারে যে বৈশিষ্ট্য গুলো থাকা আবশ্যক:
১। আশেঁর শক্তি(fiber strength): আশেঁর শক্তির ওপর সুতা থেকে কাপড় উভয়ের মান নির্ভর করে। টেনসাইল স্ট্রেংথ দিয়ে এর পরিমাপ করা হয়।আর বহুল ব্যাবহৃত একক পাউন্ড/বর্গ ইঞ্চি(P.S.I).কিছু ফাইবার সব অবস্থাতেই শক্তিগড়েই থাকে,তবে কিছু ফাইবারকে ভিজা অবস্থায় শক্তিহীন হতে দেখা যায়।তবে কটন ফাইবার ভিজলে শক্তি বেড়ে যায়।তাই ময়শ্চারাইজেসন প্রক্রিয়ায় কটনের শক্তি স্থায়ীভাবে বাড়ানো সম্ভব। শক্তির বৈচিত্র প্রকট এক্রাইলিক ফাইবারে,এখানে উল্লেখ্য জেফরান এক্রাইলিক মোড এক্রাইলিক থেকে বেশি শক্তিশালী।ভিসকসের শক্তি অ এর থেকে কম।
২। অাশেঁর দৈর্ঘ্য (fiber length): অাশেঁর গুণাগুণের অন্যতম বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করা হয় অাশেঁর দৈর্ঘ্যকে।উন্নতমানের সুতা তৈরিতে বড় দৈর্ঘ্য অপেক্ষাকৃত মসৃণ ও শক্ত অাশেঁর প্রয়োজন।দৈর্ঘ্য অবশ্যই ব্যাস থেকে কয়েক হাজার (সাধারণত ৫০০/৭০০-৫০০০)গুন বেশি হতে হবে।
৩। অাশেঁর সুক্ষ্মতা (fiber fineness): অাশেঁর সুক্ষ্মতা একটি সুবিবেচনার বিষয়।এটির ওপর সুতার মান ধরণ এগুলোর ভালোরকম নির্ভরতা রয়েছে।একক দৈর্ঘ্যের ওজন হিসেবে এর ভালোমন্দ হিসেব করা হয়।
৪। স্থিতিস্থাপকতা (elasticity): ফাইবার প্রসারিত হওয়ার ক্ষমতা ও টান মুক্ত করলে পূর্ব অবস্থায় ফিরে আসার প্রবণতা নিরুপণে স্থিতিস্থাপকতা মাপকাঠি ব্যাবহার করা হয়। ফাইবারের এই বৈশিষ্ট্য পোশাককে অারামদায়ক করে। পোশাকের টেকসই গুন ও এর ওপর নির্ভরশীল।
৫। প্রসারণ (elongation): এটা ফাইবার এর প্রসারিত হওয়ার গুন।সুতা ও কাপড় তৈরির জন্য নূন্যতম ১৮% প্রসারণ ক্ষমতা থাকা আবশ্যক।
৬। রেসিলিয়েন্সি (resiliency): এটি কাপড়ের আরামপ্রদ অনুভূতি এনে দেয়। মুলত কাপড় ভাজ পাক বা টানের ফলে বিকৃত হওয়ার পর পূর্ব অবস্থায় ফিরে আসার ক্ষমতাটাই রেসিলিয়েন্সি। ভাল রেসিলিয়েন্সির কাপড়ের সৌন্দর্য, স্থায়িত্ব বেশি। উল ও সিল্ক এর রেসিলিয়েন্সি কটন ও লিনেন এর চেয়ে বেশি।
৭। নমনীয়তা (pliability or flexibility): অাশঁ নমনীয় থাকার কারণে সহজে পাক দেওয়া যায়। পোশাক ও বিরক্তিকর অনুভূতির কারণ হয় না।একই কারণে পোশাক ভাজ করা যায়।
৮। বিশোষণ (absorbency): ফাইবারের জলীয়বাষ্প গ্রহণ করার এই ক্ষমতাকে বিশোষণ বলে। অাদর্শ মান (৬৩/৬৫/৬৭)%। উলের ময়শ্চার ধারণ ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি। ময়শ্চারে বিগেইন ১৬% এর মত। রাসায়নিক সংযুক্তি ও অাণবিক বিন্যাস বিশোষণ ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। কার্বক্সিলিক
(COOH),অ্যামাইনো (NH2) গ্রুপযুক্ত ফাইবারের অ্যাবজরবেন্সি বেশি।
৯। ঊজ্জলতা (lustre): কাপড়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে অার ব্যাবসায়িক স্বার্থ হাসিলে এই বৈশিষ্ট্যের বিকল্প নেই। প্রতিযোগিতার বাজারে টিকতে স্পিনিং দ্রবণে পিগমেন্ট বা অস্বচ্ছ তৈল ব্যাবহার করা হয়।
১০। ড্রেপাবিলিটি (drapability): ঝুলে আর ব্যাবহারকারীর শরীর লেপ্টে থাকার প্রবণতা ড্রেপাবিলিটি। প্রাকৃতিক প্রোটিন ফাইবারের মধ্যে উল ও সিল্কের ড্রেপিং গুনটা চমৎকার।
সুতরাং বলা যায় যে ফাইবারের মধ্যে উপরিউক্ত সকল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান না সে সকল ফাইবার টেক্সটাইল ফাইবার নয়।
এজন্যেই বলা যায়, সকল টেক্সটাইল ফাইবার, ফাইবার কিন্তু সকল ফাইবার টেক্সটাইল ফাইবার নয়।
উদাহরণস্বরুপ,
মানুষের চুল একটি প্রোটিন ফাইবার কিন্তু এটি টেক্সটাইল ফাইবার নয়। যদিও চুলের কিছু strength, length, fineness এবং টেক্সটাইল ফাইবারের অন্যান্য গুণাবলী আছে তথাপি এটাকে টেক্সটাইল ফাইবার বলা যায় না কারণ এটার বহিরাবরণ বেশি গোলাকার,এটার কোনো মুক্ত প্রজেক্টিং প্রান্ত নেই এবং এর পাকধারণ ক্ষমতা নেই। মানুষের চুল গভীরভাবে পিগমেন্টেড যা টেক্সটাইল ব্যাবহার করার জন্য অনুপযোগী।
writer,
Nurun Nahar Tinny
Department of textile engineering
NITER (10th batch)