ফেব্রিক এমন একটি পণ্য যা জীবনের প্রতিটি মূহুর্তেই ব্যবহৃত হয়। ঘুমোতে যাবে তো সেখানে বেড কভার, বালিশের কাভার রয়েছে যা ফেব্রিক দিয়ে তৈরি, গোসল সেরে শরীর মুছতে হলে ফেব্রিক লাগে। খেতে বসেছেন_সেখানেও ফেব্রিক আর পরিধেয় বস্ত্র তা র কথা না হয় বাদ ই দিলাম।তাহলে কোথায় নেই ফেব্রিকসের ব্যবহার?
বর্তমান যুগের টেক্সটাইল ছাড়া বিশ্বকে চিন্তাই করা যায় না। মানুষের বেঁচে থাকার চাহিদাগুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা টেক্সটাইল পূরণ করে। টেক্সটাইল পণ্যের ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে।
এখন আমাদের মনে কৌতুহল জাগতেই পারে আসলে এই টেক্সটাইল ফেব্রিকস কি?
টেক্সটাইল শব্দটি ফ্রেন্স শব্দ “Texere” থেকে এসেছে যার অর্থ to weave বুনা বা বয়ন করা।আর Fabric শব্দটি এসেছে ফ্রেন্স শব্দ “Fabrique” থেকে _যার অর্থ কিছু তৈরি করা। টেক্সটাইল ফেব্রিক প্রাথমিক ভাবে উভেন ফেব্রিকস বলা হত। সকল প্রকার ফেব্রিকের raw material হচ্ছে ফাইবার। বর্তমানে টেক্সাইল সেক্টরে নতুন নতুন প্রযুক্তি আসার কারনে ফেব্রকের বহুবিধ ব্যবহার ও প্রয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
সর্বাধিক ব্যবহৃত ফেব্রিকসমূহ ১.কটন ২.উল ৩.লিনেন ৪.ভ্যালভেট ৫.পলিয়েস্টার ৬.ভিকুনা ৭.সাটিন ৮.সিল্ক ৯.ডেনিম ১০.শিফন ইত্যাদি।
নিম্নে ফেব্রিকসমূহ নিয়ে আলোচনা করা হলঃ
কটন ফেব্রিক্সঃ-
কটন একটি উভেন ফেব্রিক।প্রাকৃতিক ফাইবার গুলোর মধ্যে সর্বাধিক ব্যবহৃত ফাইবার হচ্ছে কটন বা তুলা।এটিকে প্রাকৃতিক সেলুলোজ ফাইবারও বলা হয়। কটন ফেব্রিক দেখতে কম চকচকে। এই ফেব্রিক দ্রুত শরীর থেকে ঘাম শুষে নিয়ে বাতাসে ছেড়ে দেয় এবং বাইরের ঠান্ডা বাতাস ভিতরে আসতে দেয় ফলে এই ফেব্রিক অনেক আরামদায়ক।
আরবি শব্দ থেকে কটন (cotton) শব্দের আবির্ভাব। ইতিহাসের পাতা উল্টালে কটন ফাইবারের যে ঐতিহ্য চোখে পড়ে তা অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও প্রাচীন। খৃষ্টপূর্ব ৩,০০০ বছর পূর্বে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম তুলা চাষ শুরু হয় এবং এর ব্যবহার প্রথমে শুরু হয়েছিল ভূমধ্যসাগরীয় তথা আরবদেশ গুলোতে।
কটন ফেব্রিক এর বৈশিষ্ট্যঃ
১. কটন ফেব্রিক হাইগ্রোস্কোপিক অর্থাৎ বায়ুমন্ডলে আর্দ্রতা শোষণের জন্য ফাইবারের কাছাকাছি কটন ফাইবারের ভাল হিমোগ্লোসিপিসিটি রয়েছে, 8-10% এর আর্দ্রতা উপাদান।
২. তাপ প্রবাহ সম্পূরক অত্যন্ত কম, এবং কটন ফেব্রিক porous, উচ্চ স্থিতিস্থাপকতা, ফেব্রিকের মধ্যে একটি বৃহত পরিমাণে বায়ু জমা করতে পারে।
৩. বিশুদ্ধ কটন ফেব্রিক ভাল তাপ প্রতিরোধের, 110 ℃ নীচের 0 ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা, শুধুমাত্র বাষ্পীভবন উপর ফ্যাব্রিক কারণে, জল ফাইবার ক্ষতি হবে না, তাই বিশুদ্ধ কটন ফ্যাব্রিক, ব্যবহারের জন্য ঘর তাপমাত্রায় যেমন ওয়াশিং এবং বস্ত্র রঞ্জনবিদ্যা হিসাবে আছে কোন প্রভাব নেই, এইভাবে কটন ফ্যাব্রিক ওয়াশিং স্থিতিশীলতা কর্মক্ষমতা উন্নত।
কটন ফেব্রিকের সুবিধা ঃ
~এলার্জি থেকে ভাল থাকা যায়।
~তাপ শোষন এবং শরীরের ঘাম শোষন করে।
~সহজেই পাওয়া যায় এবং অনেক ডিজাইনের হয়ে থাকে।
~মিতব্যয়ীতা অর্থাৎ কটন কাপড় অনেক উৎপাদন হয় বিধায় এর উৎপাদন খরচ কম। ফলে তৈরিকৃত পোশাক এর মূল্য ও কম।
কটন ফেব্রিক শার্ট থেকে মোজা বা জ্যাকেট পর্যন্ত বেশিরভাগ ধরণের পোশাক, বিছানার চাদর, বালিশের কভার, গালিচা,সুতি কার্পেট ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
উল ফেব্রিক্সঃ-
Wool হলো ভেড়া এবং অন্যান্য প্রাণী থেকে প্রাপ্ত টেক্সটাইল ফাইবার, যার মধ্যে কাশ্মীর এবং মহিয়ার ছাগলের কাছ থেকে বাইসন , খরগোশের কাছ থেকে অ্যাঙ্গোরা এবং উট থেকে অন্যান্য ধরণের পশম পাওয়া যায়। অতিরিক্তভাবে, পার্বত্যাঞ্চল এ যথাক্রমে গবাদি পশুর মাঙ্গালিকা প্রজাতির পশমের পোশাক রয়েছে।উল কম শতাংশের লিপিড এবং প্রোটিন এর সাথে যুক্ত হয়ে গঠিত হয়।উলের আশগুলি বাতাস আটকে রাখতে পারে। মানে বাতাস কুপরিবাহী।ফলে বাইরে থেকে বাতাস ঢুকতে পারে না বিধায় উল ফেব্রিক উষ্ণ থাকে।
৯,০০০ থেকে ১১,০০০ বছর আগে ভেড়া গৃহপালিত হয়েছিল। ইরানে প্রাপ্ত মূর্তি থেকে প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ হতে জানা যায় যে উলের জন্য খ্রিস্টপূর্ব ৬০০০ সালের দিকে ভেড়া বাছাই করা শুরু হতে পারে। তিন হাজার বছর পরে। ভেড়ার পশম খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ সহস্রাব্দের প্রথম দিকে পূর্ব ইউরোপে প্রবর্তিত হয়েছিল। প্রাচীনতম ইউরোপীয় উলের টেক্সটাইল,খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ সালে, একটি ডেনিশ বগে সংরক্ষণ করা হয়েছিল।
উল ফেব্রিকের বৈশিষ্ট্য ঃ
উল ফেব্রিক এর বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ:
১.এগুলো অ্যামিনো অ্যাসিড দ্বারা গঠিত।
২.এদের চমৎকার শোষণ ক্ষমতা আছে।
৩.আর্দ্রতা ফিরে পাওয়ার ক্ষমতা উচ্চ।
৪.উল ফেব্রিক উষ্ণ হয়ে থাকে।
৫.উল ফেব্রিকের ক্ষারীয় প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তবে অ্যাসিডের প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাল থাকে।
উল ফেব্রিক মূলত ভারী কম্বল, ক্যাপস, লেগিংস,মাফলার,চাদর, সোয়েটার, টিউনিকস, পোশাক, স্কার্ফ এবং টুপি ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
লিনেন ফেব্রিক্সঃ-
লিনেন একটি অতি বহুমুখী ফ্যাব্রিক যা বাড়ির সজ্জা, ফ্যাশন এবং এমনকি কোয়েল্টের জন্য ব্যবহার করা হয়।লিনেন হ’ল লিনেন প্ল্যান্ট (লিনাম ইউএসাইটেটিসিমিয়াম) এর জঞ্জালের উপর জন্মে সেলুলোজ ফাইবারের তৈরি একটি টেক্সটাইল।লিনেন খুব শক্তিশালী এবং শোষণকারী।
লিনেন ফেব্রিকের উল্লেখ পাওয়া যায় বাইবেলে।এই বহুল ব্যবহৃত ফেব্রিক্সটির আবিষ্কার হয়েছে বহু যুগ আগে। তাই একে আদিম ফেব্রিক বলা হয়। প্রায় ৩০,০০০বছর আগেও এই ফেব্রিক্সের ব্যবহার ছিল।মিশর এবং দক্ষিণ ইউরোপে এই ফেব্রিক ব্যবহার করা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।মিশরের পিরামিডের মমি গুলো যে কাপড় দিয়ে জড়ানো তা আর অন্য কিছু না লিনেন ফেব্রিক।লিলেন বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন টেক্সটাইল।
লিনেন ফেব্রিকের বৈশিষ্ট্য সমূহ ঃ
১.লিনেন ফেব্রিক খুব টেকসই, শক্তিশালী ফ্যাব্রিক।
২.লিনেন ফ্যাব্রিক দ্রুত শোষণ এবং জল হ্রাস করার ক্ষমতা আছে।
৩.লিনেন ফেব্রিক নরম এবং মসৃন।কিন্তু এর স্থিতিস্থাপকতা কম।
৪.কাপড় সহজে কুচকে যায়।
৫.লিনেন ফেব্রিক তুলনামূলক ভাবে বেশি আরামদায়ক।
লিনেন ফেব্রিক টেবিলক্লথ, গামছা,বেডশীট,বালিশের কভার,নৌকার পাল,ন্যাপকিন,গ্রীষ্মকালীন পোশাক ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
ভ্যালভেট ফেবিক্সঃ-
ভ্যালভেট ফেব্রিক বর্মের গ্রেড কাঁচামাল, যা রেশমের তৈরি, এবং তুলো সুতা রশ্মি বা রেয়ন পাইল লুপের সাথে ভাঁজ-বিযুক্ত হয়। জাল এবং বুনন উভয় প্রথম degummed বা আধা degummed, dyed, এবং twisting পরে weaved হয়।
ভ্যালভেট এর একটি দীর্ঘ ইতিহাস আছে এবং মিং রাজবংশে প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হয়েছে। এটা ঐতিহ্যগত চীনা কাপড় এক। এটি জাংঝোঝু, ফুজিয়ান প্রদেশ, চীন থেকে উদ্ভূত হয়েছিল, তাই এটি মখমল নামেও পরিচিত।
ভ্যালভেট ফেব্রিক্স এর বৈশিষ্ট্য ঃ
১.ভ্যালভেট fluff বা loops শক্তিশালি, ঘর্ষণ প্রতিরোধকারী এবং ফেইড সঙ্গে শক্তভাবে শক্তিশালী এবং পোশাক এবং বিছানা যেমন কাপড় ব্যবহার করা যেতে পারে
২.টেক্সচার নরম, পাতলা এবং স্বচ্ছ, এবং হ্যান্ডেল মসৃণ এবং ইলাস্টিক।
৩.ভাল বায়ু permeability এবং drape ভ্যালভেট মোটা এবং মসৃণ, পুরু জমিন, নরম অনুভূতি, নরম আলো, পরিধান-প্রতিরোধী এবং টেকসই, ভাল উষ্ণতা, স্থিতিস্থাপকতা পূর্ণ।
৪.ভ্যালভেট ফেব্রিক উজ্জ্বল রং,পুরু এবং সূক্ষ্ম।
৫.ভেলভেট ব্যাপকভাবে পোশাক কাপড় ব্যবহৃত হয়, চমৎকার শিকড় প্রতিরোধের, স্থিতিস্থাপকতা এবং মাত্রিক স্থিতিশীলতা, ভাল নিরোধক বৈশিষ্ট্য, ব্যবহার খুব ব্যাপক, পুরুষদের, মহিলাদের এবং শিশুদের জন্য পোশাক জন্য উপযুক্ত।
পোশাক, সোফা কাপড়, বাড়ির টেক্সটাইল, প্রসাধন, ইত্যাদি জন্য উপযুক্ত, ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত, পাবলিক সঙ্গে জনপ্রিয়!
পলিয়েস্টারঃ-
পলিয়েস্টার খুবই জনপ্রিয় একটা ফাইবার।এ ফাইবার দৈনন্দিন জীবনে অনেক ব্যবহার করা হয়।পলিয়েস্টার একটি man-made সিনথেটিক ফাইবার।এটি পেট্রোলিয়ামের পেট্রোকেমিক্যাল থেকে তৈরি। এই ফাইবার টি এসিড এবং অ্যালকোহল এর মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে তৈরি হয়।পলিয়েস্টার ফাইবার গুলি খুবই আয়নায় অনু তৈরি করতে পারে যা খুব স্থিতিশীল এবং শক্তিশালী।
পলিয়েস্টার এর বৈশিষ্ট্যঃ-
১/পলিস্টার ফেব্রিক টেকসই উচ্চ শক্তি এবং ইলাস্টিক পুনরুদ্ধার ক্ষমতা আছে।
২/পলিস্টার কৃত্তিম কাপড়ের মধ্যে সেরা তাপ প্রতিরোধী ফেব্রিক।এটিতে থার্মোপ্লাস্টিক বৈশিষ্ট্য আছে।
৩/এই ফেব্রিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারে না এবং ঘামের মত তরল শোষণ করে না।
৪/পলিস্টার ফেব্রিকের গরিব হাইড্রোকোপিসিটি রয়েছে।
পলিয়েস্টার ফাইবার ব্যবহার করে তৈরি করা হয়-Bottles,films,safety belts,car tire reinforcement etc.
ভিকুনা ফেব্রিকঃ-
ভিকুনা একটি প্রাণীর নাম। আর এই প্রাণীর পশম দিয়ে তৈরী করা হয় ভিকুনা ফাইবার। এই ফাইবার থেকে তৈরি পোশাক খুবই নরম,উষ্ণ ও মোলায়েম হয়ে থাকে। বর্তমানে এই ফাইবার পাওয়া খুব-ই কষ্টকারক।কারণ এই প্রাণীটি স্বল্প কয়েকটি দেশে পাওয়া যায়। যেমনঃ-দক্ষিণ আমেরিকা,চিলি, আর্জেন্টিনা ইত্যাদি।এক সময় এই ফেব্রিক টি ছিল পোশাকশিল্পের আভিজাত্য। সময়ের সাথে সাথে ভিকুনা প্রাণীটির সংখ্যা কমে যাচ্ছে বলে তার উৎপাদন কমে যাচ্ছে।
ভিকুনা ফেব্রিক এর বৈশিষ্ট্যঃ-
১/এটি উষ্ণ ও মোলায়েম হয়ে থাকে।
২/পরিবেশের কোনো ক্ষতি করে না।
৩/পানি ধারণ ক্ষমতা কম।
৪/তাপমাত্রা সংবেদনশীল।
৫/বায়ো-ডিগ্রেডেবল বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন।
ভিকুনা ফেব্রিক ব্যবহার করে তৈরি করা হয়ঃ-সুট কোট, সোয়েটার, শাল,মাফলার, ওভারর্কোট ইত্যাদি।
সাটিন ফেব্রিক্সঃ-
সাটিন একটি ওভেন ফেব্রিক। টেক্সটাইল শিল্পে ব্যবহৃত তিনটি মৌলিক বুননের মধ্যে একটি হলো সাটিন।সাটিন ফেব্রিক খুব উজ্জ্বল ও মসৃণ। অনেকে এই ফেব্রিক কে সিল্কের কাপড় হিসেবে মনে করে থাকে। আসলে আমরা দৈনিন্দন জীবনে যেটা সিল্ক কাপড় হিসেবে চিনি ওইটার অধিকাংশই সাটিন ফেব্রিক।এই কাপড় সাধারণত ব্যবহার করা হয় বিবাহের পোশাক, গাউন,রাজা বাদশাদের জন্য। কারণ কাপড়গুলো সাথে একটা রাজকীয় ভাব লেগে আছে।
সাটিন শব্দটি আসলে জাইতুন থেকে এসেছে।প্রায় ২০০০ বছর আগে চিনে এই সাটিন কাপড় বোনা শুরু হয়। চীনের এক নগরীতে এই কাপড় বোনা হয়। আরবি ভাষায় জায়গাটির নাম কোয়ানজহোর।
সাটিন ফেব্রিক এর বৈশিষ্ট্যঃ-
১/ এই ফেব্রিক অত্যন্ত টেকসই।
২/এই ফেব্রিক খুব উজ্জ্বল এবং চকচকে।
৩/কাপড় সহজে কুঁচকায় না।
৪/এর উপরের প্রান্ত খুবই মসৃন কিন্তু ভিতরের প্রান্ত অমসৃণ।
৫/এই কাপড় হাইপোঅ্যালারজিক।
৬/এই কাপড়ের উপর অনেক সুন্দর ডিজাইন ফুটিয়ে তোলা যায়।
সাটিন ফেব্রিক ব্যবহার করে যা যা তৈরি করা যায়ঃ-
shirts,weeding dress,skirts,hats,gloves,sashes,underwear,blouses etc
সিল্ক ফেব্রিক্সঃ-
সিল্ক একধরনের প্রাকৃতিক প্রোটিন তন্তু, যার কয়েকটি ধরন বস্ত্রশিল্প বয়নের কাজে ব্যবহার করা হয়। সিল্কের সর্বাধিক পরিচিত ধরন বম্বিক্স মোরি নামের রেশম পোকার লার্ভার গুটি থেকে সংগ্রহ করা হয়।বিশেষ ব্যবস্থায় রেশম পোকা চাষের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে এই সূতা প্রস্তুত করা হয়।
প্রাচীনকাল সর্বপ্রথম চীনে রেশমগুটির চাষ করা হয়। চীনা সম্রাটরা রেশমগুটির চাষের উৎপাদন পদ্ধতি গোপন রাখার জন্য অনেক সর্তকত
সিল্ক বাণিজ্যের প্রথম প্রমাণ পাওয়া যায় মিশরের ২১তম রাজবংশে (সি. ১০৭০ খ্রিস্টপূর্ব) একটি মমির চুলে পাওয়া রেশম থেকে।
বাংলাদেশে রাজশাহীর সিল্ক নামটি অনেক ঐতিহ্য বহন করে । বিশেষ করে শাড়িতে ।
রাজশাহীর সিল্ক অনেক সুক্ষ এবং নরম মোলায়েম আঁশ। আঁশের উপাদান পিউপা আসে তুঁত রেশম থেকে এবং এটি প্রোটিন এর আবরন যা সারসিনা নামে ডাকা হয়। তুঁত রেশম সুক্ষ ও মূল্যবান।আরানি সিল্ক শাড়ী একপ্রকারের সিল্কজাত হাতে বোনা শাড়ী, এ শাড়ির দুই দিক দুই রঙের হওয়ার ফলে একে দুবার এবং দু’ভাবে ব্যবহার করা যায়। আরানি সিল্ক কম ওজন বিশিষ্ট হয়।
রাজশাহী রেশম শিল্পের জন্য একটি সিল্ক কারখানা এবং একটি সিল্ক গবেষণা ইনস্টিটিউট গড়ে তুলেছে।এ অঞ্চলের রেশম চাষ সমগ্র বাংলাদেশের সিল্কের যোগানদাতা হিসাবে গ্রাহ্য করা হয়।
সিল্কের বৈশিষ্ট্যঃ
১. আরামদায়ক
সিল্ক প্রোটিন ফাইবার সমন্বয়ে গঠিত, যা মানুষের শরীর এবং মসৃণ পৃষ্ঠের সাথে ভাল বায়োম্পোপ্যাটিবিলিটি করে। ফলে আরামদায়ক হয়।
২. হাইগ্রোস্কোপিসিটি
হাইড্রোফিলিক গোষ্ঠীগুলি আর্দ্রতা বা জলের সরবরাহকে বাতাসে শুষে নিতে পারে এবং অল্প জল রাখতে পারে। সাধারণ তাপমাত্রায় এটি ত্বককে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে আর্দ্রতা বজায় রাখতে সহায়তা করে, এটি একটি ভাল নিরোধক।
৩. তাপ-প্রতিরোধী, শব্দ-শোষণকারী, ধুলো-প্রমাণ
সিল্ক কাপড়ের বড় ছিদ্র এবং ভাল শব্দ শোষণ রয়েছে,এছাড়াও, সিল্ক তুলনামূলকভাবে তাপ-প্রতিরোধী ফাইবারও বটে।
৪. রেশমের ভাল অতিবেগুনী প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে।
৫. বর্ণের দুর্দান্ত বৈশিষ্ট্য
রেশম কাপড়ের ছোপানো চমৎকার বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তারা অম্লীয়, ক্ষারীয়।
সিল্ক ফেব্রিক শাড়ি,কার্পেট,টেপেসি ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
ডেনিম ফেব্রিক্সঃ-
ডেনিম এক প্রকার ফ্যাব্রিক যা ১০০ % কটন টুইল বা স্টেচ টুইল দ্বারা তৈরি। ডেনিম হচ্ছে কটনের মজবুত গঠনের ওয়ার্প ফেস্ড টুইল টেক্সটাইল যেখানে ওয়েফ্ট সুতা দুই বা ততোধিক ওয়ার্প সুতার নিচ দিয়ে যায়। এটি একটি ওভেন ফ্যাব্রিক যার টানায় থাকে নীল কটন আর পড়েনে থাকে সাদা কটন, এটি ইন্ডিগো ডেনিম নামে পরিচিত। সারা বিশ্ব জুড়ে জিন্স, জ্যাকেটস, শার্ট, ব্যাগ তৈরি তে ডেনিম ফেব্রিক ব্যবহৃত হয়।
১৯৬৯ সালে ‘আমেরিকান ফেব্রিকস’ নামক ম্যাগাজিনের একজন রিপোর্টার লিখেছিলেন যে, “পৃথিবীর আদি ফেব্রিক বা কাপড়সমূহের মধ্যে ডেনিম অন্যতম হলেও এর যৌবন চিরন্তন।” সেই সতেরো শতক থেকে এখন পর্যন্ত ডেনিমের চাহিদা না কমে বরং বেড়েছে দিন কে দিন।
বিশ্বব্যাপী ফ্যাশন কনজিউসারদের দ্বারা ব্যাপকভাবে ডেনিমের ব্যাপক ব্যবহার বাংলাদেশের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশে শিল্প বর্তমানে ২৫টি ডিনিম উৎপাদনকারী কারখানা রয়েছে।
ডেনিম ফেব্রিক্স এর বৈশিষ্ট্যঃ
১, যদিও ডেনিম তৈরি হয় কটন দিয়ে তবুও হেম্প ডেনিমও মাঝে মাঝে পাওয়া যায়।
২. ডেনিম ফ্যাব্রিকে সহজে ক্রিজ পড়ে না।
৩. এটি খুব শক্তিশালী এবং স্থায়ী।
৪. পরিধানের সময় শক্ত সুরক্ষা দেয়।
৫. ডেনিম ডাই এ ভ্যাট ও সালফার ডাই ব্যবহার করা হয় বলে পরিধানে গরম লাগে না ।
আধুনিক বিশ্বের ডেনিম তৈরি পোশাক খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ।পুরুষদের ট্রাউজার,শার্ট, মহিলাদের পোষাকে প্রতিদিন দিনে ডেনিম ব্যবহার করা হয়। মহিলাদের হ্যান্ডব্যাগ, স্কুল এবং কলেজ ব্যাগ, এবং ভ্রমণ ব্যাগ তৈরীর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ডেনিম । সুতরাং ডেনিম এর পরিসীমা দিন দিন বাড়ছে। সানগ্লাস ফ্রেম করতে ব্যবহৃত হয়।
শিফন ফেব্রিক্সঃ-
শিফন হালকা ওজনের, সুষম প্লেইন-বোনা নিখুঁত ফ্যাব্রিক। শিফন ফেব্রিকটি মূলত ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়ে রেশম থেকে তৈরীকৃত ফেব্রিক যা কিনা ততকালীন সময়ে ইউরোপ এবং আমেরিকান উচু শ্রেণীর মহিলাদের মাঝে ব্যাপক চাহিদাময় ছিল। “শিফন” শব্দটি ফরাসি এবং এটির আক্ষরিক অর্থ “কাপড়”।
শিফন ফ্যাব্রিক সর্বপ্রথম ফ্রান্সে তৈরি হয়েছিল।
প্রথম নন-সিল্ক শিফন ১৯৩৮ সালে ভোক্তাদের ব্যবহারের জন্য তৈরী হয়েছিল নাইলন থেকে যা সেই সময় ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল।কিন্তু মাঝে কিছুদিন এই নাইলনের শিফনের কিছু সমস্যা দেখা দেয়। যার ফলস্বরূপ ১৯৫৮ সালে শিফনের একটি পলিয়েস্টার সংস্করণ তৈরি করা হয় এবং বর্তমানে বেশিরভাগ শিফন এই খাঁটি সিনথেটিক উপাদান থেকেই তৈরি। কিন্তু তবুও এটা আসল রেশমি টেক্সটাইলের মতো নরম ছিল না।চীন হচ্ছে ফিনিস শিফন ফ্যাব্রিক পণ্যের অন্যতম বৃহত্তম রফতানিকারীকারক।
শিফন ফেব্রিক্স এর বৈশিষ্ট্য:
১.উলম্বরুপ: শিফন ফ্যাব্রিকের রয়েছে নিখুঁত ও স্বচ্ছ চেহারা। যখন ম্যাগনিফাইং গ্লাসের নীচে রাখা হয় তখন এটি সূক্ষ্ম জালের মতো দেখায়।
২.প্রসারণ ক্ষমতা: শিফনের কিছুটা স্প্যানডেক্সের মতো অনুভূতি রয়েছে। পলিয়েস্টার শিফনের তুলনায় সিল্ক শিফনের কিছুটা প্রসারণ ক্ষমতা বেশি থাকে।
৩.দৃঢ়তা: কাপড়ের আঁটসাঁট বুননের ফলে সিল্ক এবং সিন্থেটিক উভয়ই শিফন ফ্যাব্রিক অত্যন্ত শক্তিশালী।
৪.উজ্জ্বলতা: শিফনের পৃষ্ঠ হয় ঝলমলে ধরনের ।
৫.অলংকরণ: শিফনের একটি সুন্দর drape রয়েছে যা সান্ধ্য কালীন গাউনগুলিকে জন্য জনপ্রিয়। সিল্ক শিফন কাপড়ের রংগুলিকে সুন্দরভাবে প্রদর্শন করে কারণ সিল্ক ফাইবার প্রচুর রং শোষণ করার ক্ষমতা রয়েছে।
শিফন ফ্যাব্রিক খুব সূক্ষ্ম এবং দামী তাই এটি সাধারণত দৈনন্দিন পোশাক হিসাবে ব্যবহৃত হয় না।এটি সাধারনত মহিলাদের পোশাক যেমন
নাইটগাউন,শাড়ি,হিজাব, সান্ধ্যকালীন পার্টি ড্রেস বা বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য পোশাকে ব্যবহার করা হয়।
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া, Fibre2fashion, Youtube,বাংলাপিডিয়া।
Writer Information :
Shrabonti Maishan Proma (Batch 41)
Soma Akter (Batch 39)
Sabina Yeasmin Zuti (Batch 41)
Department Of Textile Engineering
Ahsanullah University of science and technology