সিজিপিএ 3.8. বা 4 out of 4 শুধু কোন ভাল স্টুডেন্ট এর ইনডিকেশন না
তোমরা যারা ওয়েট প্রসেসিং নিয়েছ আমরা ধরে নেই তোমরা সবাই ভাল স্টুডেন্ট। ভাল স্টুডেন্ট বলতে সিজিপিএ 3.8. বা 4 out of 4 শুধু কোন ভাল স্টুডেন্ট এর ইনডিকেশন না।
আমাদের একাডেমিক স্ট্রাকচার টা এমন হয়ে গেছে আমরা টিচাররা শুধু কিছু শিট সাপ্লাই দেই, সেগুলো যে ভালভাবে মুখস্ত করে লিখে আসতে পারে সেই ভাল নম্বর পায়। এটা কিন্তু ভাল স্টুডেন্ট এর লক্ষন না।ঐ ধরনের ভাল রেসাল্টকে আমি এট লিস্ট মূল্যায়ন করব না। তোমরা এমন একটি সাব্জেক্ট পড়ছ যা তোমাদেরকে ফ্যাক্টরিতে যেয়ে ইমপ্লিমেন্ট করতে হবে।তোমার সিজিপিএ ভাল কিন্তু তুমি তোমার নলেজ কে ডেভেলপ করতে পারলে না তবে তুমি ভাল করতে পারবে না।
অনেক উদাহরণ আছে সিজিপিএ 3.9 নিয়ে ফ্যাক্টরিতে নিজেকে সেভাবে ইমপ্লিমেন্ট করতে পারে নাই আবার অনেক উদাহরণ আছে সিজিপিএ 2.9 নিয়েও ফ্যাকটরিতে নিজেকে অনেক ভালভাবে ইমপ্লিমেন্ট করেছে। তার মানে এই না আমি ভাল সিজিপিএ যাদের তাদের অবমূল্যায়ন করছি আর যাদের সিজিপিএ খারাপ তাদেরকে মূল্যায়ন করছি। আমি শুধু সিস্টেম এর একটি অসংগতি বললাম।
আমাদের স্টুডেন্টরা ক্লাস ওয়ান থেকে মুখস্থ করে করে পরীক্ষা দিয়ে আসছে, ফলে তারা সৃষ্টিশীলতার চর্চা করেনা। ফলে দেখা যায় তারা এক ধরণের জড় পদার্থে পরিণত হয়। আমি মনে করি মুখস্থ করে লেখা আর নকল করে লেখার মাঝে কোন পার্থক্য নেই। নকল করে লেখলে সামনে একটা বই থাকত আর মুখস্থ করে লিখলে সেই বইটা থাকে না সামনে এটাই পার্থক্য।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ব্যবস্থা আর স্কুল লেভেল এর শিক্ষা ব্যবস্থার মাঝে পার্থক্য আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থার উদ্দ্যেশ্য হল চিন্তাকে জাগ্রত করা।যা তোমাকে সৃষ্টিশীল করবে। নতুন কে চিনতে শেখাবে। আমাদের দেশের প্রাইভেট পাব্লিক নির্বিশেষে সকল শিক্ষা ব্যবস্থা এখনো সেই স্কুল লেভেলেই পরে আছে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা সেই চিন্তাশক্তি জাগ্রত করতে বাধা দিচ্ছে। স্টুডেন্ট রা দেখছে যে মুখস্থ করতেছে সেই ভাল করতেছে তবে কেন এত চিন্তা করব। ফলে আমাদের ক্রিয়েটিভিটি কমে যাচ্ছে।
ফলে ফ্যাকটরিতে স্টুডেন্ট রা কোন প্রসেস ডেভেলপ করতে পারছে না। কারণ যে গত বিশ বছরে নিজের চিন্তাকে জাগ্রত, সৃষ্টিশীল করতে পারেনাই, সে প্র্যাকটিক্যাল লাইফ এ গিয়ে তা করতে পারবে না এটাই স্বাভাবিক।
ফলাফলে দেখা যাচ্ছে যে আমাদের জনশক্তি আছে কিন্তু দক্ষ টেক্নোলোজিস্ট আমরা পাচ্ছি না। টেক্সটাইল সেক্টরেই দেখবা প্রচুর ফরেনার কাজ করছে। এখন যেখানে প্রতিবছর বাংলাদেশেই পাব্লিক প্রাইভেট মিলে প্রায় চার হাজার টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার বের হচ্ছে সেখানে কেন চল্লিশ হাজারের মত ফরেনার কাজ করবে?
কেন ইন্ডিয়ান রা বাংলাদেশে আসছে, শ্রীলংকানরা আসছে, চাইনিজ আসতেছে, টার্কিশরা আসতেছে?
কারণ আমাদের ইনভেস্টররা বাংলাদেশী ম্যানপাওয়ার সেরকম ডেভেলপ হয়নাই যে ভরসা করতে পারে।
আমাদের সরকারো কিছুটা দায়ী। উদাহরণস্বরুপ রানা ইন্ডিয়াতে একটি চাকরি পেয়েছে। ওকে ইন্ডিয়ান সরকার এর কাছে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে ইন্ডিয়া যেতে হবে কিন্তু ভারতীয় সরকার তা দিবে না, অন্যথায় বাংলাদেশে কি হচ্ছে?
যাদের ওয়ার্ক পারমিট নাই, ভ্যালিড কোন ডকুমেন্ট নাই পাখির মত এসে চাকরি করা শুরু করে দিচ্ছে।সরকার এটাকে দেখছে না।
ফলে আমাদের ইঞ্জিনিয়াররা কাজ করতে পারছে না, পরের আন্ডারে কাজ করছে বাট আমরা একটি স্বাধীন জাতি।
কেন আমরা বাইরের দেশের লোকের আন্ডারে কাজ করব?যেখানে ফরেনার রা আসছে সেখানে পলিটিক্স ও চলে আসছে।
এই ব্যাপারগুলো ওভারকাম করার জন্য জাতি তোমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তোমরা যদি তোমাদের কাজটাকে ঠিকভাবে কর তোমরাই হয়ত কোম্পানি, বায়ার্স কিংবা রিটেইলগুলোর কান্ট্রি ম্যানেজার হবা,বা অন্যান্য উচ্চ পদে চাকরি করবা। ফলে আর কোন ফরেনার থাকবে না আমাদের দেশে। তোমাদের হাতে দায়িত্ব অনেক।
টেক্সটাইল সেকটরে অনেক কিছু করার আছে। অনেকে বলে টেক্সটাইল সেক্টরে জব নাই। কথাটা মিথ্যা। অনেকে বলে রেফারেন্স ছাড়া জব হয়না।
অনেক ছাত্র দেখেছি অনেক মেধাবী, আশেপাশের সবার রেফারেন্স রেফারেন্স করা দেখে আশেপাশের পরিবেশ দেখেসেও সিদ্ধান্ত নেয় তার একটি রেফারেন্স লাগবে। ফলে দেখা যায় সে হয়ত রেফারেন্স ছারাই নিজের যোগ্যতায় নিজেকে ইমপ্লিমেন্ট করে একটি ভাল চাকরি পেতে পারত কিন্তু রেফারেন্স নিয়ে সে তার যোগ্যতার চেয়ে কম যোগ্যতার একটি চাকরি নিল।
এটা শুধুমাত্র মাইন্ডসেট। এখনো অনেক চাকরি আছে। শুধু নিজেকে বিকশিত কর। নিজের স্মার্টনেসকে জাগ্রত কর।
আমরা ইন্ডাস্ট্রি তে যেসব জব করি সেসব হাইলি টেকনিক্যাল কোন জব না বা হাই পার্ফর্মেন্স কোন জব না।
ফ্যাক্টরিতে তোমরা যেসব কাজ কর তার চেয়ে অনেক জটিল জটিল জিনিস ক্লাস এ শেখানো হয়। তারপরো তোমরা অনেকেই দেখা যায় তেমন ভাল করতেছ না।
কারণ এই সেকটরে জব করতে যে তোমাকে টেক্নিক্যালি কাজ করতে হবে শুধুমাত্র তা না সাথে কিছু এক্স ফ্যাকটর থাকতে হবে। এটিচিউড,কমিউনিকেটিভ স্কিল, ফ্লুয়েন্ট ইংরেজী,ম্যানেজি
ং এবিলিটি ইত্যাদি লাগবে।
আমাদের স্টুডেন্ট রা অনেক জানে কিন্তু এক্সপ্রেস সবাই করতে পারেনা। আমাদের ইঞ্জিনিয়ারিং কালচারে প্রসেন্টেশন কম তাই এই সমস্যা হয়।
আমি তোমাদেরকে অনুরোধ করব, এক্সাম
এর ব্যাপারটা ভুলে যাও। এক্সাম এর ভয় যখন ই থাকবে তখন শেখা আর হয়না। আমাদের ছাত্ররা এক্সামে কি আসবে সেটা নিয়ে ব্যস্ত থাকে শেখার ব্যাপার তো পরে।
পুরোপুরি মুখস্থ করে উত্তর দেয়ার চেয়ে নিজের মত করে লজিক্যালি বুঝে যে উত্তর করবে তাকে আমি বেশি নম্বর দেই। ইউনিভার্সিটি শিক্ষার উদ্দ্যেশ্য লজিক্যাল। ব্যাখা করা। যুক্তি বিশ্লেষন করা।
আমি বিশ্বাস করি আজ
আমার এখানে যে স্টুডেন্ট গুলো আছে তারা হায়ার এডুকেশন এ বাইরে যাবে, পিএইচডি করবে, বড় বড় ইন্ডাস্ট্রি বায়িং হাউজ গুলোতে ভাল জব করবে, রিটেইলসগুলোতে ভাল চাকরি করবে।
আমি নিশ্চিত আজ থেকে দশ বছর পরে তোমাদের মধ্যেই থাকবে। আজকে তোমাদের সাথে দেখার আগে এক স্টুডেন্ট এর সাথে দেখা। 091 ব্যাচ। সে এসে সালাম দিয়ে বলল স্যার আমি নিজের টাকায় গাড়ি কিনেছি। তার পাঁচ বছর ও কিন্তু লাগেনি। তোমরাও এর চেয়ে ভাল করবা। তোমরাই এ দেশটাকে চালাবা। তোমাদের দিকে জাতি তাকিয়ে আছে।
তোমরা নিজেদেরকে যোগ্য করে তুলবা।
নিজেকে যত দ্রুত মডিফাই করতে পারবা, পজিটিভ চেঞ্জগুলো যত দ্রুত আসবে তত ভাল। স্টুডেন্ট লাইফ এ শুধু মার্ক্স এর চিন্তা করবা না, শেখার কথা ভাববা। আর জব সেকটরে শুধু সেলারির চিন্তা করবা না। নিজের কাজ কে ভালবাসবা। কাজকে ভালবাসবা টাকাটা অটোমেটিক আসবে। তোমরা মার্ক্স এর কথা চিন্তা করবা না।
তোমরা আগে জান। আবারো বলছি, “mark is not everything. ”
জিজ্ঞাসু মনোভাবকে বাড়াও, নিজের স্বত্তাকে জাগ্রত কর। আমার দুই ঘন্টা লেকচার নেয়ার বড় উদ্দ্যেশ্য হচ্ছে আমি প্রতিটা স্টুডেন্ট এর প্রশ্ন শুনব। নিজের হীনমন্যতাকে ঝেরে ফেলে দেও। আমি যে শতভাগ সঠিক তা না, তবে আমি আমার এক্সপেরিয়েন্স থেকে শতভাগ চেষ্টা করব।
আমার স্টুডেন্ট এর সাথে টাইপিক্যাল টিচার স্টুডেন্ট এর চেয়ে বড় ভাই ছোট ভাই সম্পর্ক। তোমরা যেকোন অসুবিধায় আমাকে বলতে হীনমন্যতা বোধ করবা না।
আমি তোমাদেরকে লেকচার ম্যাটরিয়েলস সাপ্লাই দিব তোমরা সেটা নিউজপেপার পড়ার মত একবার পড়ে আসবে আগে থেকে। অনেক সিরিয়াস প্রিপারেশন নিয়ে পড়াশোনা করার দরকার নাই।
আমাদের স্টুডেন্ট দের গার্জিয়ানরা বুঝায় দেয় এটা রেফারেন্স বুক এটা আউট বুক। যখন পাঠ্যপুস্তক নিয়ে কোন স্টুডেন্ট পড়তে বসে তখন সে ভাবে পরীক্ষায় পাস করতে এটা পড়তে হবে।সেটা তার বেসিদিন মনে থাকেনা।
কিন্তু যখন সে একটা নোভেল পড়ে তখন সে পাঁচ বছর পরো হয়ত সেটা মনে রাখে। কারণ কি? জ্ঞান অর্জন আনন্দের বিষয়। টেক্সটবুক তার কাছে জঞ্জাল এর মত মনে হয়। জ্ঞান অর্জন তার কাছে নিরানন্দ হয়ে পড়ে।
চাপ প্রয়োগ করে জ্ঞান অর্জন হয়না। অনেক ফ্যামিলিতে এখনো স্টুডেন্ট কোন বিষয় নিবে তা ঠিক করে গার্জিয়ান।
যখনি কোন কাজ করবা ইচ্ছার বিরুদ্ধে করবা না। যদি ইচ্ছের বিরুদ্ধে কাজ কর, তবে জীবনের শেষ বয়সে এসে মনে হবে জীবনে কিছুই করলাম না।
অন্যের দারা পরিচালিত হয়ে, মরীচিকার পেছনে ছুটতে ছুটতে জীবন শেষ করে দিলাম। এখন আর কিছু করার নেই। নিজেকে ব্যর্থ মানুষ মনে হবে। এট যেন না হয়।
তোমাদের বয়স এখন 21, 22 or 23. অনেক সময় পরে আছে জীবনকে সুন্দর করার। ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করার দরকার নেই। কেন করবা?
স্বপ্ন টাকে বড় কর। তোমার মাঝে স্বপ্নের মেঘমালা জাগ্রত কর। স্বপ্ন দেখে দিবানিদ্রায় গেলে হবে না।
তার জন্য স্বপ্ন সামনে নিয়ে ছুটতে হবে। এমন কোন উদাহরণ নেই যে স্বপ্নের পিছনে ছুটেছে কিন্তু স্বপ্ন সার্থক হয়নি।
Chase your dream.
কনফিউজ থাকা যাবে না। লাইফ এ স্ট্রেইট ফরোওয়ার্ড হতে হবে। আত্মবিশ্বাস অনেক জরুরী।
আর এটেন্ডেন্স! এটা তোমার ইচ্ছার উপর। তুমি আসলেও পাঁচ পাবা, না আসলেও পাঁচ পাবা। তোমার ইচ্ছে না হলে ক্লাস এ আসার দরকার নেই।
Written by-
Rahman Mustafij
Assistant Professor, BUTEX