পোশাক শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হলো তুলা, দেশীয় উৎস থেকে পর্যাপ্ত পরিমান উচ্চমানের তুলা সরবরাহ না থাকায় তুলা শিল্প বর্তমানে অনেকটা আমদানির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এদিকে ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে প্রায় ৭৬ লাখ বেল তুলা আমদানি করা হয়েছে, যাতে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। আর এসব তুলা আমদানি হয় মূলত ভারত, মালি, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিল থেকে। সবচেয়ে গর্বের বিষয় হলো বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তুলা আমদানিকারক দেশ হচ্ছে আমাদের বাংলাদেশ।
বর্তমানে দেশে বছরে প্রায় ৮০ লাখ বেল তুলার চাহিদার মাত্র ২ দশমিক ৩৫ শতাংশ দেশে উৎপাদিত হচ্ছে।
এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে, তুলা উন্নয়ন বোর্ড (আন্তর্জাতিক পরমানু শক্তি সংস্থা এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার) সাথে যৌথভাবে পারমাণবিক প্রযুক্তির সাহায্যে তুলার একটি নতুন জা্ত উদ্ভাবন করেন। নতুন এই তুলার জাতটির নাম রাখা হয়েছে ‘সিডিবি তুলা এম- ১’। ২০২১ সালের ১৩ মার্চ এই নতুন জাতের তুলা আনুষ্ঠানিকভাবে অবমুক্ত ও নিবন্ধন করা হয়।
তুলার এই নতুন জাতটি এখন বাংলাদেশের ১৩টি স্থানে পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে চাষ করা হচ্ছে। আর ১ হাজারেরও বেশি কৃষককে এই জাত চাষের ব্যাপারে প্রশিক্ষৃত করছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন তুলা উন্নয়ন বোর্ড (সিডিবি) এখন দেশের সর্বত্র এই নতুধ তুলার জাত ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।
নতুন জাতটির কিছু প্রধান বৈশিষ্ট্য হলোঃ
-এটি অন্যান্য জাতের তুলনায় অন্তত ৩০ দিন আগে সংগ্রহ করা যায়।
-সিডিবি তুলা এম-১’ তুলার জাতটি অল্প জায়গায় অধিক উৎপাদনশীল।
(অন্যান্য জাতের তুলা রোপণের বেলায় সাধারণত সারি-থেকে-সারিতে ৯০ সেন্টিমিটার এবং চারা-থেকে-চারায় ৪৫ সেন্টিমিটার দূরত্ব রাখতে হয়, কিন্তু এই জাতটির ক্ষেত্রে সারি-থেকে-সারিতে মাত্র ৭০ সেন্টিমিটার এবং চারা-থেকে চারায় ৩০ সেন্টিমিটার দূরত্ব রাখা হয়
নতুন এই জাতটির সম্ভাব্য হেক্টরপ্রতি ফলন হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৫ টন, যেখানে অন্যান্য জাতের ফলন মাত্র ৪ টন।
-এই জাতটি শুষ্ক মৌসুমে সহজেই চাষ করা যাবে।
-খুব বেশি সেচের প্রয়োজন হবে না।
-এছাড়াও এটি চরম জলবায়ু-সহনশীল জাত।
পরিশেষে বলতে পারি, আমরা যদি নতুন এই জাতটি ব্যবহার করি তবে তা দেশের জন্য সামষ্টিক অর্থনৈতিক সুবিধা বয়ে নিয়ে আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
এবং বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, দ্রুত বর্ধনশীল এই জাত কৃষকদের আয় ৪০ শতাংশে বাড়াবে , যার ফলে আমাদের আমদানিকৃত তুলার পরিমান কমবে এবং বাংলাদেশের রাজস্ব অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে।
সোর্সঃ
মোঃ নাঈমুর রহমান
(ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট),
মোঃ শাকিল ইসলাম সজীব
(ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট)
ও
মোঃ সাহারিয়ার সাকিব
(এপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট)
৩য় ব্যাচ, ড এম এ ওয়াজেদ মিয়া টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, পীরগঞ্জ, রংপুর।