Thursday, December 19, 2024
Magazine
More
    HomeFiberসিল্ক ফাইবার পর্যালোচনা

    সিল্ক ফাইবার পর্যালোচনা

    ✍সিল্ক হলো প্রাকৃতিক প্রোটিন ফাইবার । সিল্ক ফাইবার মূলত তুতগাছের রেশমপোকা হতে উৎপন্ন করা হয় । ফাইবারটি চমৎকার উজ্জলতা (Luster) প্রদান করে থাকে এছাড়াও সিল্ক ফাইবার মসৃণ এবং শক্তিশালী হয়ে থাকে । সিল্ক ফাইবার এ ডাই করা খুব সহজ এবং চমৎকার ডাই করা এবং গাঢ় রঙ দেওয়া সম্ভব । এছাড়াও সিল্ক ফাইবারের আরো চমৎকার বৈশিষ্ট্য রয়েছে যার কারনে সিল্ক কে ফাইবারের রানী হিসেবেও অভিহিত করা হয় ।

    ✍সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ

    খ্রিস্টপূর্ব ২৭ শতাব্দীতে সিল্কের ইতিহাস শুরু হয়েছিল চীন থেকে । চীন থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত বাণিজ্যিক উপায়গুলি উপস্থিত না হওয়া অবধি এটি একমাত্র ব্যবহার ছিল ।  খ্রিস্টপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দের শেষার্ধে সিল্ক বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে । রেশমের চাষ জাপানে ছড়িয়ে পড়ে প্রায় ৩০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে এবং ৫২২ খ্রিস্টাব্দে বাইজেন্টাইনরা রেশমপোকার ডিম পেতে সক্ষম হয়েছিল এবং তাদের নিজস্ব খামারে রেশম পোকার চাষ শুরু করে । সময়ের সাথে সাথে চীনারা কোরিয়ান এবং ভারতীয়দের কাছে তাদের গোপনীয়তা হারিয়ে ফেলে । চীন দেশে কেবল মহিলারা রেশম পোকা চাষ করতো । অনেক মহিলা রেশম পোকার খামারে কর্মরত ছিলেন । সিল্ককে একটি বিলাসবহুল আইটেম হিসাবে বিবেচনা করা হত এবং রেশম উচ্চ সমাজের মধ্যে খুব জনপ্রিয় হয়েছিলো ।  জনপ্রিয়তা ছিল এমন যে সাম্রাজ্যীয় পরিবারের সদস্যদের সিল্কের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও সীমাবদ্ধ করার জন্য আইন তৈরি করা হয়েছিলো ।  ইউরোপীয় রেশম শিল্পে হ্রাস পেলে ১৮৪৫ সালে রেশম পোকার কোকুনের দাম বেড়ে যায় । ইউরোপে সংকট দেখা দিলে জাপান বিশ্বের সিল্কের সর্বাধিক উৎপাদক  হয়ে ওঠে যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত স্থায়ী ছিলো । তবে বর্তমানে চীন বিশ্বের বৃহত্তম সিল্ক উৎপাদনকারী ।

    ✍রেশম পোকার জীবনচক্রঃ

    স্ত্রী রেশম পোকা ডিম দেওয়ার সাথে সাথেই রাসম পোকার জীবনচক্র শুরু হয় । লার্ভা রেশম মথের ডিম থেকে বের হয় । রেশম পোকা তুঁত পাতাতে খায় এবং পিউপা জন্ম দেয় । পিউপা পর্যায়ে একটি বুনন নিজেকে ধরে রাখার জন্য রেশম পোকা জাল তৈরী করে । তারপরে এটি তার মাথাটি দুলায় একটি প্রোটিন দিয়ে তৈরি একটি ফাইবার স্পিনিং করে সিল্ক ফাইবারে পরিণত হয় । বেশ কয়েকটি পোকা পিউপার চারপাশে একটি প্রতিরক্ষামূলক স্তর গঠন করে এবং এই আচ্ছাদনটি কোকুন হিসাবে পরিচিত । রেশম সুতা সিল্ক মথের কোকুন থেকে পাওয়া যায় ।  জীবনচক্রের বিস্তারিত ধাপ ব্যাখ্যা করা হলো ।

    ১) ডিম দেওয়াঃ

    ডিম দেওয়া  হলো রেশমপোকার জীবনচক্রের প্রথম স্তর । একটি মহিলা পোকা বসন্তের সময়ে একবারে ৩৫০ টিরও বেশি ডিম দেয় বাতাসের উষ্ণতার কারণে ডিমগুলি লার্ভা ফোটায় । এই পদ্ধতিটি প্রতি বছরে একবার হয়।

    ২) রেশমপোকাঃ

    ডিম ফোটার পরে একটি লোমশ রেশমপোকা বের হয়। রেশমপোকাগুলির এই পর্যায়ে, বৃদ্ধি ঘটে । এরা পরবর্তী পর্যায়ে যাওয়ার আগে প্রায় ৩০ দিন ধরে প্রচুর পরিমাণে তুত পাতা খেয়ে থাকে ।

    ৩) কোকুনঃ

    এই পর্যায়ে রেশমপোকাগুলি নিজের চারপাশে একটি প্রতিরক্ষামূলক কোকুন তৈরী করে । এটি একটি ছোট সুতির বলের আকার এর মত এবং এটি রেশমের একক সুতা দিয়ে তৈরি ।

    ৪) পিউপাঃ

    পিউপা পর্যায় একটি গতিহীন পর্যায় । এই পর্যায়ে ফুটন্ত পানিতে কোকুন ডুবিয়ে পুপাকে হত্যা করা হয় এবং সিল্কের সুতো খুলে ফেলা হয় ।

    ৫) মথঃ

    এই পর্যায়ে পিউপা একটি প্রাপ্তবয়স্ক পোকায় পরিবর্তিত হয় । স্ত্রী পোকার সাথে সঙ্গম হলে পরে ডিম দেয় এবং এভাবে রেশমপকার জীবনচক্র আবার শুরু হয় ।

    ✍বিভিন্ন প্রকারের সিল্কঃ

    ১) Mulberry silk
    ২) Tashar silk
    ৩) Eri silk
    ৪) Muga silk
    ৫) Anaphe silk
    ৬) Fagara silk
    ৭) Coan silk
    ৮) Mussel silk
    ৯) Spider silk

    ✍সিল্ক ফাইবার এর বৈশিষ্ট্যাবলীঃ

    ১) উপাদানঃ ৮০% ফাইব্রোইন (প্রোটিন) ও ২০% সেরিসিন ।
    ২) রঙঃ হলুদ, ধূসর, বাদামী, সবুজ ।
    ৩) দৈর্ঘ্যঃ ৪০০-৭০০ মিটার ।
    ৪) সূক্ষতাঃ ১১-১২ মাইক্রন ।
    ৫) ক্রস সেকশনঃ ত্রিভূজাকার ।
    ৬) স্থিতিস্থাপকতাঃ ১৫% ।
    ৭) আদ্রতাঃ ১১% আদ্রতা পুনরুদ্ধার ক্ষমতাবিশিষ্ট ।
    ৮) জ্বলনযোগ্যতাঃ শিখার সহায়তায় ধীরে ধীরে জ্বলে ।
    ৯) পরিবাহীতাঃ বিদ্যুৎ ও তাপ পরিবাহীতা কম ।
    ১০) আপেক্ষিক গুরুত্বঃ ১.২৫ – ১.৩৫ ।

    ✍রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যঃ

    ১) ফাইব্রোইন প্রোটিনসমূহ শক্তিশালী এসিড যেমন নাইট্রিক এসিডে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় ।
    ২) দূর্বল ক্ষার দ্বারা সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় ।
    ৩) শক্তিশালী ব্লিচিং এজেন্ট সিল্ক ফাইবারের ক্ষতিসাধন করে ।
    ৪) জৈব দ্রাবক দ্বারা সিল্ক ফাইবার প্রভাবিত হয় না
    ৫) ছত্রাক, পোকামাকড় দ্বারা প্রভাবিত হয় না ।

    ✍সিল্ক ফাইবারের ব্যাবহারঃ

    ১) বিলাসবহুল পোশাক ।
    ২) স্কার্প , গ্লাভস ।
    ৩) শার্ট, পায়জামা  ।
    ৪) অন্তর্বাস ।
    ৫) বিছানার কভার ।
    ৬) গৃহসজ্জার সামগ্রী ।
    ৭) স্কার্ট, স্যুট ইত্যাদি।

    Writer:
    Tanjidur Rahman Sakib
    Department of Apparel Engineering
    Sheikh Kamal Textile Engineering College
    Email: [email protected]
                

    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    Related News

    - Advertisment -

    Most Viewed