✍সিল্ক হলো প্রাকৃতিক প্রোটিন ফাইবার । সিল্ক ফাইবার মূলত তুতগাছের রেশমপোকা হতে উৎপন্ন করা হয় । ফাইবারটি চমৎকার উজ্জলতা (Luster) প্রদান করে থাকে এছাড়াও সিল্ক ফাইবার মসৃণ এবং শক্তিশালী হয়ে থাকে । সিল্ক ফাইবার এ ডাই করা খুব সহজ এবং চমৎকার ডাই করা এবং গাঢ় রঙ দেওয়া সম্ভব । এছাড়াও সিল্ক ফাইবারের আরো চমৎকার বৈশিষ্ট্য রয়েছে যার কারনে সিল্ক কে ফাইবারের রানী হিসেবেও অভিহিত করা হয় ।
✍সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ
খ্রিস্টপূর্ব ২৭ শতাব্দীতে সিল্কের ইতিহাস শুরু হয়েছিল চীন থেকে । চীন থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত বাণিজ্যিক উপায়গুলি উপস্থিত না হওয়া অবধি এটি একমাত্র ব্যবহার ছিল । খ্রিস্টপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দের শেষার্ধে সিল্ক বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে । রেশমের চাষ জাপানে ছড়িয়ে পড়ে প্রায় ৩০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে এবং ৫২২ খ্রিস্টাব্দে বাইজেন্টাইনরা রেশমপোকার ডিম পেতে সক্ষম হয়েছিল এবং তাদের নিজস্ব খামারে রেশম পোকার চাষ শুরু করে । সময়ের সাথে সাথে চীনারা কোরিয়ান এবং ভারতীয়দের কাছে তাদের গোপনীয়তা হারিয়ে ফেলে । চীন দেশে কেবল মহিলারা রেশম পোকা চাষ করতো । অনেক মহিলা রেশম পোকার খামারে কর্মরত ছিলেন । সিল্ককে একটি বিলাসবহুল আইটেম হিসাবে বিবেচনা করা হত এবং রেশম উচ্চ সমাজের মধ্যে খুব জনপ্রিয় হয়েছিলো । জনপ্রিয়তা ছিল এমন যে সাম্রাজ্যীয় পরিবারের সদস্যদের সিল্কের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও সীমাবদ্ধ করার জন্য আইন তৈরি করা হয়েছিলো । ইউরোপীয় রেশম শিল্পে হ্রাস পেলে ১৮৪৫ সালে রেশম পোকার কোকুনের দাম বেড়ে যায় । ইউরোপে সংকট দেখা দিলে জাপান বিশ্বের সিল্কের সর্বাধিক উৎপাদক হয়ে ওঠে যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত স্থায়ী ছিলো । তবে বর্তমানে চীন বিশ্বের বৃহত্তম সিল্ক উৎপাদনকারী ।
✍রেশম পোকার জীবনচক্রঃ
স্ত্রী রেশম পোকা ডিম দেওয়ার সাথে সাথেই রাসম পোকার জীবনচক্র শুরু হয় । লার্ভা রেশম মথের ডিম থেকে বের হয় । রেশম পোকা তুঁত পাতাতে খায় এবং পিউপা জন্ম দেয় । পিউপা পর্যায়ে একটি বুনন নিজেকে ধরে রাখার জন্য রেশম পোকা জাল তৈরী করে । তারপরে এটি তার মাথাটি দুলায় একটি প্রোটিন দিয়ে তৈরি একটি ফাইবার স্পিনিং করে সিল্ক ফাইবারে পরিণত হয় । বেশ কয়েকটি পোকা পিউপার চারপাশে একটি প্রতিরক্ষামূলক স্তর গঠন করে এবং এই আচ্ছাদনটি কোকুন হিসাবে পরিচিত । রেশম সুতা সিল্ক মথের কোকুন থেকে পাওয়া যায় । জীবনচক্রের বিস্তারিত ধাপ ব্যাখ্যা করা হলো ।
১) ডিম দেওয়াঃ
ডিম দেওয়া হলো রেশমপোকার জীবনচক্রের প্রথম স্তর । একটি মহিলা পোকা বসন্তের সময়ে একবারে ৩৫০ টিরও বেশি ডিম দেয় বাতাসের উষ্ণতার কারণে ডিমগুলি লার্ভা ফোটায় । এই পদ্ধতিটি প্রতি বছরে একবার হয়।
২) রেশমপোকাঃ
ডিম ফোটার পরে একটি লোমশ রেশমপোকা বের হয়। রেশমপোকাগুলির এই পর্যায়ে, বৃদ্ধি ঘটে । এরা পরবর্তী পর্যায়ে যাওয়ার আগে প্রায় ৩০ দিন ধরে প্রচুর পরিমাণে তুত পাতা খেয়ে থাকে ।
৩) কোকুনঃ
এই পর্যায়ে রেশমপোকাগুলি নিজের চারপাশে একটি প্রতিরক্ষামূলক কোকুন তৈরী করে । এটি একটি ছোট সুতির বলের আকার এর মত এবং এটি রেশমের একক সুতা দিয়ে তৈরি ।
৪) পিউপাঃ
পিউপা পর্যায় একটি গতিহীন পর্যায় । এই পর্যায়ে ফুটন্ত পানিতে কোকুন ডুবিয়ে পুপাকে হত্যা করা হয় এবং সিল্কের সুতো খুলে ফেলা হয় ।
৫) মথঃ
এই পর্যায়ে পিউপা একটি প্রাপ্তবয়স্ক পোকায় পরিবর্তিত হয় । স্ত্রী পোকার সাথে সঙ্গম হলে পরে ডিম দেয় এবং এভাবে রেশমপকার জীবনচক্র আবার শুরু হয় ।
✍বিভিন্ন প্রকারের সিল্কঃ
১) Mulberry silk
২) Tashar silk
৩) Eri silk
৪) Muga silk
৫) Anaphe silk
৬) Fagara silk
৭) Coan silk
৮) Mussel silk
৯) Spider silk
✍সিল্ক ফাইবার এর বৈশিষ্ট্যাবলীঃ
১) উপাদানঃ ৮০% ফাইব্রোইন (প্রোটিন) ও ২০% সেরিসিন ।
২) রঙঃ হলুদ, ধূসর, বাদামী, সবুজ ।
৩) দৈর্ঘ্যঃ ৪০০-৭০০ মিটার ।
৪) সূক্ষতাঃ ১১-১২ মাইক্রন ।
৫) ক্রস সেকশনঃ ত্রিভূজাকার ।
৬) স্থিতিস্থাপকতাঃ ১৫% ।
৭) আদ্রতাঃ ১১% আদ্রতা পুনরুদ্ধার ক্ষমতাবিশিষ্ট ।
৮) জ্বলনযোগ্যতাঃ শিখার সহায়তায় ধীরে ধীরে জ্বলে ।
৯) পরিবাহীতাঃ বিদ্যুৎ ও তাপ পরিবাহীতা কম ।
১০) আপেক্ষিক গুরুত্বঃ ১.২৫ – ১.৩৫ ।
✍রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যঃ
১) ফাইব্রোইন প্রোটিনসমূহ শক্তিশালী এসিড যেমন নাইট্রিক এসিডে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় ।
২) দূর্বল ক্ষার দ্বারা সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় ।
৩) শক্তিশালী ব্লিচিং এজেন্ট সিল্ক ফাইবারের ক্ষতিসাধন করে ।
৪) জৈব দ্রাবক দ্বারা সিল্ক ফাইবার প্রভাবিত হয় না
৫) ছত্রাক, পোকামাকড় দ্বারা প্রভাবিত হয় না ।
✍সিল্ক ফাইবারের ব্যাবহারঃ
১) বিলাসবহুল পোশাক ।
২) স্কার্প , গ্লাভস ।
৩) শার্ট, পায়জামা ।
৪) অন্তর্বাস ।
৫) বিছানার কভার ।
৬) গৃহসজ্জার সামগ্রী ।
৭) স্কার্ট, স্যুট ইত্যাদি।
Writer:
Tanjidur Rahman Sakib
Department of Apparel Engineering
Sheikh Kamal Textile Engineering College
Email: [email protected]