সিসাল এক ধরনের ফাইবার বা তন্তু যা “ক্যাকটাস” গাছের মত এক প্রকার গাছের পাতা থেকে সংগ্রহ করা হয়। এই গাছ মধ্য আমেরিকা, আফ্রিকা, জাকার্তা, ব্রাজিল, পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ ও ফ্লোরিডায় জন্মে। গাছের পাতা গুলো সোজা অনেকটা তলোয়ারের মতো। সিসাল ফাইবারের রং হলুদে। ফাইবারটি নানা পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। উন্নতমানের দড়ি, কাছি তৈরির জন্য সিসাল উপযোগী। তবে তা জাহাজের দড়ি হিসেবে ব্যবহার না করা শ্রেয়। কারণ লবন পানি সিসাল আঁশের ক্ষতি সাধন করে। অনেক ক্ষেত্রে ঘোড়ার লেজের পশমের বিকল্প হিসেবে এই ফাইবার ব্যবহার করা হয়। হেম্প এর সাথে মিশ্রিত করে দ্রব্যাদি ও প্রস্তুত করা যায়।
এটি একটি প্রাকৃতিক ফাইবার। এই ফাইবার কে লিফ ফাইবার ও বলা হয়। একে কখনও কখনও “সিসাল শণ” হিসেবে অভিহিত করা হয়।
ইতিহাস:
প্রাচীন মেক্সিকো(Maxican) এর অ্যাজটেক(Aztec) সম্প্রদায় পরিধানের জন্য সিসাল নামক আঁশ থেকে তৈরি কাপড় ব্যবহার করত। যা একধরনের গাছের পাতা থেকে সংগৃহীত হত। গাছটি মধ্য আমেরিকার স্বকীয়। মেক্সিকোউপসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থিত ইউকাটন শহরের সিসাল বন্দরের নাম অনুসারে এই আঁশটির নাম সিসাল।
বৈজ্ঞানিক শ্রেণিবিন্যাস:
বৈজ্ঞানিক নাম: Agave sisalana
প্রজাতি: আ. সিসালা
গাছের বর্ণনাঃ
সিসাল গাছ, আগাভা সিসালানা তলোয়ার আকৃতির লম্বা পাতা ১.৫-২ মিটার (৪.৯-৬.৬ ফুট) নকশাকৃত থাকে। কচিপাতার কিনার ধরে অনেক দাঁতের মত আছে, কিন্তু পরিপক্ক হলে এগুলো হারিয়ে যেতে পারে। একটি সিসাল উদ্ভিদ৭-১০ বছরের জীবন লাভ করে এবং সাধারণত বাণিজ্যিকভাবে প্রতিটি গাছ থেকে প্রায় ৪০০ টি পাতার উৎপাদন করে।প্রতিটি গাছের পাতা থেকে প্রায় ১০০০ তন্তু গড়ে ওঠে।সিসাল গাছ ২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপ এবং রোদ উপরিউক্ততাপমাত্রার থেকে উৎপাদন ভাল হয়,এটি ক্রান্তীয় ও উপ-ক্রান্তীয় হিসেবে গণ্য করা হয়।
চাষ পদ্ধতি:
সিসাল গাছের ৬ বা ৭ বছর বয়সে গাছে ফুল আসে। ফুল ফোটার সময় গাছের উচ্চতা ২০ ফুট এর মত হয়। ফুল যখনঝড়ে যায় তখন ঝড়ে যাওয়া ফুলের বোঁটায় ছোট ছোট অংকুর দেখা যায়।যা পরে ছোট চারা গাছে পরিণত হয়।এই চারাগুলো এক সময় মাটিতে ঝড়ে পড়ে মাটিতে গাছ জন্মায় এবং মাতৃ গাছটি মারা যায়।চারা গাছ প্রয়োজনে অন্যস্থানেনিয়ে রোপণ করা যায়।সিসাল গাছ প্রায় ভূমি সমতল থেকে শুরু করে সারা জীবনে প্রচুর পরিমাণে পাতা দেয়। গাছেরআড়াই থেকে ৪ বছর বয়স থেকে পাতা সংগ্রহ শুরু হয় এবং নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর গাছ মারা না যাওয়া পর্যন্ত পাতাপাওয়া যায়। একটি ভাল গাছ সারা জীবনে ৪০০-এর মত পাতা দেয়া এবং প্রতি পাতায় প্রায় ১০০০ আঁশ থাকে। পরিপক্কপাতা কেটে মেশিন দ্বারা আঁশ থেকে জলীয় পদার্থ আলাদা করা হয়।পরে ধুয়ে রোদে শুকানো হয়।
সিসাল ফাইবারের রাসায়নিক উপাদান:
সেলুলোজ (Cellulose): ৭১.৫%
হেমি সেলুলোজ(Hemi cellulose): ১৮.১%
লিগনিন(Lignin): ৫.৯%
পেকটিন(Pectin): ২.৩%
পানিতে দ্রবণীয় পদার্থ(Water solubles): ১.৭%
চর্বি ও মোম(Fat and wax): ০.৫%
মোট =১০০%
সিসাল ফাইবারের ভৌত গুনাবলী বর্ণনা:
১.দৈর্ঘ্য: ২-৪ ফুট (৬০-১২০সেঃ মি…
২.শক্তি:খুবই শক্তিশালী ৫২ গ্ৰাম/টেক্স।
৩.স্থিতিস্থাপকতা:-ভাল নয়।শক্ত এবং অস্তিতিস্থাপক আঁশ।
৪.উজ্জ্বলতা:ভাল।
৫.ছেড়ার পূর্বে প্রসারণঃ৫%
৬.রং:প্রায় সাদা।
রাসায়নিক গুনাবলী:
১.এসিডে ক্রিয়া: শক্তিশালী ঘন এসিড ঠান্ডা অবস্থায় এবং পাতলা এসিড গরম অবস্থায় আঁশকে নষ্ট করে দেয়।পাতলা এসিড ঠান্ডা অবস্থায় আঁশের ক্ষতি করতে পারে না।
২.ক্ষারের প্রতি ক্রিয়া: ক্ষারের প্রতি প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই ভাল। এমনকি শক্তিশালী ক্ষারও তেমন ক্ষতি করতেপারে না।
৩.পোকা মাকড়ের প্রতি প্রতিরোধ ক্ষমতা: অত্যন্ত ভাল।
৪.অনুজীব এর প্রতি প্রতিরোধ ক্ষমতা: ভাল।
৫.রং করার ক্ষমতা: রং এর প্রতি আকর্ষণ ভাল।ডাইরেট ডাই , এসিড ডাই ও বেসিক ডাই দ্বারা রং করা যায়।
ব্যবহার:
১.প্যারাসুটের রশি, বাঁধার জন্য রশি,বস্তা,ছাকন কগজ এবং অন্যান্য শিল্প কারখানায় ব্যাপক ভাবে সিসাল ব্যবহারিতহয়।
২.জুতার ব্রাশ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
৩.ঘোড়ার লেজের পশমের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
৪.অত্যাধিক শক্তি,উজ্জ্বলতা এবং সুন্দর রং এর জন্য টেক্সটাইল এর বিভিন্ন ক্ষেএে এর ব্যবহার দেখা যায়।যেমন:মেয়েদের টুপি,ম্যাট,কম্বল ইত্যাদি।
বৈশ্বিক উৎপাদন ও বাণিজ্যঃ
২০০৭ সালে সিসাল ফাইবার গ্লোবাল প্রকাশনায় ব্রাজিল- বৃহত্তম উৎপাদক দেশ ১১৩,০০০ টন উৎপাদিত হয় যা ২৪০হাজার টন পর্যন্ত উৎপাদিত হয়। তানজানিয়ায়২৭.৬০০ টন উৎপাদিত হয়, কেনিয়ায় প্রায় ৩৭,০০০ টন, ভেনিজুয়েলাতে১০,৫০০ টন এবং ৯,০০০ টন মাদাগাস্কায় উৎপাদিত হয়। চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, মোজাম্বিক, হাইতি, এবং কিউবা থেকেআসছে কম পরিমাণে ৪০,০০০ টন। সিসাল গাছের তন্তু বিশ্বের প্রকাশনায় (উদ্ভিদ তন্তু হিসেবে বিশ্বের ৬৫% প্রদান)২% প্রতিনিধিত্বমূলক ফাইবার গাছপালা মধ্যে ৬ষ্ঠ স্থান দখল করে আছে। বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক তন্তু হিসাবেসিসালকে গণ্য করা হয়।
Major sisal producers—2007 (China 2006) (thousands of tonnes) | |
ব্রাজিল | 113.3 |
তানজানিয়া | 36.9 |
গণচীন | 34.0 |
কেনিয়া | 27.6 |
মাদাগাস্কার | 9.1 |
হাইতি | 2.2 |
দক্ষিণ আফ্রিকা | 1.6 |
World total | 240.7 |
Source: FAO Fibres Statistical Bulletin |
লেখক পরিচিতিঃ
ফাহমিদা ফাতেমা
১ম বর্ষ, ব্যাচ-২৪
বস্ত্র পরিচ্ছদ ও বয়নশিল্প বিভাগ
বাংলাদেশ গার্হস্থ অর্থনীতি কলেজ
কামরুন নাহার নিশি
১ম বর্ষ, ব্যাচ-২৪
বস্ত্র পরিচ্ছদ ও বয়নশিল্প বিভাগ
বাংলাদেশ গার্হস্থ অর্থনীতি কলেজ