Thursday, November 14, 2024
Magazine
More
    HomeBusinessসোহাগপুর হাট, সিরাজগঞ্জ "

    সোহাগপুর হাট, সিরাজগঞ্জ “

    বিশ্বব্রহ্মান্ডের বৈচিত্র‍্যপূর্ণ আয়োজনে মানব সভ্যতা যেনো বৈচিত্রের রূপ দানে অন্যন্য এক নিয়ামক।সৃষ্টির শুরু থেকেই ধরনী যেনো তার রূপবৈচিত্রের পসরা সাজিয়ে মাতিয়ে তুলেছে এ ধরা।কতোই না তার আয়োজন, কতই না তা উচ্ছ্বাস। আদি হতে নব্য জীবন ব্যবস্থার প্রতিটি শিরায় শিরায় পরিবর্তন যেনো তার বাহারী আবির ছড়িয়ে রাংগিয়ে তুলেছে কোলাহলে আদৃত জীবনব্যবস্থা কে।বৈচিত্র্যময় জীবন ব্যাবস্থার ভূমিকায় কালক্ষেপণ না করে যেতে চাই মূল আলোচ্যো বিষয়ে।জানাতে চাই রূপালী জীবন ব্যবস্থার বাহারি আয়োজন, বস্ত্র হাট নিয়ে।আলোচনা করতে চাই দেশের ঐতিহ্যবাহী একটি বস্ত্র হাট নিয়ে।সেই সাথে পর্যায়ক্রমে জানিয়ে দিতে চাই বস্ত্র হাটের নেপথ্যে থাকা জানা অজানা কিছু তথ্য। সম্মিলিত ভাবে উপস্থাপন করতে চাই একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের পোশাক হাটের বর্তমান অবস্থা।

    সিরাজগঞ্জ দেশের অন্যতম তাঁত অধ্যূষিত একটি এলাকা।জেলাটি তাঁত বস্ত্র উৎপাদনের জন্য সারা দেশে তথা বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত সুপরিচিত। সিরাজগঞ্জ জেলার সাথে তাঁত শব্দটি যেনো জড়িয়ে আছে ওতোপ্রোতভাবে সেই আদি লগ্ন থেকেই।কতই হলো উত্থান, আর কতই না হলো পতন।সমস্ত বিপত্তি কে তুড়ি মেরে সিরাজগঞ্জের তাঁত শিল্প এগিয়ে চলেছে যেনো দুর্নিবার গতিতে।আর এ দুর্নিবার গতির পেছনে অন্যতম নিয়ামক হলো সিরাজগঞ্জের বিখ্যাত সব বস্ত্র হাট।মূলত তাঁত শিল্প কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা হাটগুলো দেশের গন্ডি পেরিয়ে সমান ভাবে আলো ছড়াচ্ছে প্রবাসেও।সেই সাথে শক্ত করছে দেশের অর্থনৈতিক ব্যাবস্থা।সিরাজগঞ্জ জেলার তাঁতীরা শাড়ী, লুঙ্গি, গামছা, থান কাপড়, থ্রি পিচ, গ্রামীণ চেক সহ বিভিন্ন প্রকার বস্ত্র উৎপাদন করে থাকে। জেলার কয়েকটি হাটে তাঁতীদের উৎপাদিত বস্ত্র বিক্রি হয়ে থাকে যার মধ্যে সোহাগপুর হাট, শাহাজাদপুর হাট, এনায়েতপুর হাট ও সিরাজগঞ্জ নিউমার্কেট হাট উল্লেখযোগ্য । প্রধানত মাঝারি বা বড় মহাজন বস্ত্র ক্রয় করে থাকে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা তাঁতীদের নিকট থেকে।
    উপরে উল্লেখিত হাট গুলোর মধ্যে আজ আলোচনা করবো সিরাজগঞ্জের তথা সমগ্র দেশের একটি বিখ্যাত বস্ত্র হাট “সোহাগপুর হাট” নিয়ে।সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার ঐতিহ্যবাহী সোহাগপুর হাট এর বয়সকাল বিবেচনা করলে এটি প্রায় ৬৫ বছরের পুরোনো এবং ঐতিহ্যবাহী একটি হাট।একটা দীর্ঘ সময় যাবৎ বেলকুচি উপজেলার সোহাগপুর নামক গ্রামে প্রতি বুধবার হাট টি বসত।সব ঠিক ভাবেই চলছিলো,কিন্তু বিপত্তি ঘটে ১৯৮৫ সালে।সেবার গোটা সোহাগপুর এলাকা যমুনাগর্ভে বিলীন হলে হাটটি স্থানান্তরিত হয় উপজেলার মুকন্দগাতী এলাকার বেলকুচি সরকারি কলেজ এলাকায়।প্রতি সপ্তাহে সোম, মঙ্গল ও বুধবারে বসে হাটটি।সপ্তাহে তিনদিন হাটটি বসলেও কিছুটা ভিন্নতা আছে হাট ব্যাবস্থাপনায়।সপ্তাহের সোম ও মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার বয়নশিল্পীদের তৈরি শাড়ি, লুঙ্গি ও গামছা বিক্রি হয়।এবং বুধবার বুধবার বিক্রি হয় সুতা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা সামগ্রী।হাটটির অর্থনৈতিক গুরূত্ব হার মানিয়ে দিবে নিজের কল্পনাকে। সপ্তাহের সোম ও মংগলবার দুই দিন প্রায় ১৪ কোটি টাকার শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা ও অন্যান্য পণ্য সামগ্রী বিক্রি হয়।শুধুমাত্র একটি বস্ত্র হাট থেকে সপ্তাহে দুদিন এ বিপুল অর্থ বিক্রির বেপারটি অবাক করে দেয় প্রতিটি সাধারণ মানুষকে।
    একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে সিরাজগঞ্জ জেলায় তাঁতী পরিবারের সংখ্যা সর্বমোট প্রায় ১৪,৭০০ টি। অবাক করা বিষয় যে, প্রতিবছর এ জেলায় হস্ত চালিত তাঁত থেকে প্রায় ২৩ কোটি মিটার বস্ত্র উৎপাদিত হয়ে থাকে যা সত্যিই অভাবনীয় একটি বিষয় ।তাদের উৎপাদিত পণ্য বিপণনের প্রচলিত ব্যবস্থা এখনও অত্যন্ত অসংগঠিত।এরই পরিপ্রেক্ষিতে তাঁত বস্ত্র বিপণনের প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো গড়ে তোলার বেপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা যেনো সময়ের দাবি হয়ে দাড়িয়েছে।এছাড়াও ক্রমাগত সুতার মূল্য বৃদ্ধি, রং ও রাসায়নিক দ্রব্যাদির দাম বৃদ্ধি এবং তাদের উৎপাদিত বস্ত্র সুষ্ঠু বাজারজাতকরণের সমস্যার কারণে তাঁতীরা তাদের পণ্যের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তিতে যেনো মূল বাধা হয়ে দাড়িয়েছে।তবে কিছু প্রশংসনীয় উদ্যোগ ও গ্রহন করেছেন কতৃপক্ষ। সিরাজগঞ্জ জেলার তাঁত শিল্পের ও তাঁতীদের সার্বিক উন্নয়নে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের তিনটি বেসিক সেন্টার রয়েছে এ জেলায়। সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি, কামারখন্দ, কাজিপুর ও তাড়াশ উপজেলা নিয়ে বেসিক সেন্টার সিরাজগঞ্জ, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলা নিয়ে বেসিক সেন্টার শাহজাদপুর এবং উল্লাপাড়া ও রায়গঞ্জ উপজেলা নিয়ে বেসিক সেন্টার উল্লাপাড়া কাজ করে যাচ্ছে।

    সকল প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে দেশের তাঁত শিল্প এগিয়ে যাবে দুর্নিবার গতিতে,সচল হবে দেশের উন্নতির চাকা,বিশ্ব ব্যাপী আলোচিত হবে দেশীয় তাঁত ব্যবস্থাপনা এ আকুতি সর্ব সাধারণের।কর্তৃপক্ষের উন্নয়নের দৃষ্টিই পারে দেশের তাঁত শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে।এগিয়ে যাক বিশ্ব,এগিয়ে যাক আমাদের সোনার বাংলাদেশ।

    তথ্যসূত্রঃ প্রথম আলোhttps://www.prothomalo.com/special-supplement/%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A6%9C%E0%A7%81%E0%A7%9C%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%AA%E0%A7%9C%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%9F

    Muntachir Rahman
    Department Of Textile Engineering
    BGMEA UNIVERSITY OF FASHION AND TECHNOLOGY

    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    Related News

    - Advertisment -

    Most Viewed