✍পাটকে সোনালী আঁশ বলা হয়ে থাকে এবং পাট বাংলার শত বর্ষের ঐতিহ্য।ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলায় এবং পাকিস্তানি আমলে পূর্ব বাংলায় (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে) পাটজাত দ্রব্য সামগ্রী উৎপাদন ছিল একক বৃহত্তম শিল্প। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর জাতীয় জিডিপি এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এই শিল্পের অবদান হ্রাস পায় ঠিকই কিন্তু বরাবরই এই শিল্প দেশের অর্থনৈতিক খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
✍কলকারখানা মালিকদের প্রতি রাষ্ট্রের অবহেলা,প্রযুক্তির ছোঁয়া,পারস্পারিক সহযোগিতার অভাব,ক্ষতিকর জেনেও নবায়নযোগ্য পাটের অভ্যুত্থান ঘটিয়ে অনবায়নযোগ্য বস্তু ব্যবহার শুরু হয় তথাকথিত প্লাষ্টিকের মধ্য দিয়ে।এই টেকসই কিন্তু অনবায়নযোগ্য প্লাস্টিকই হুমকির মুখে ফেলে দেয় রাষ্ট্র তথা পুরো বিশ্বকে।পুরো বিশ্ব এমনকি বাংলাদেশের পাট শিল্পের মালিকরা যখন নতুন করে পাট শিল্পকে বাধ্যতামূলক করছে সেই সময় পাটের সবচেয়ে বড় উৎপাদক বাংলাদেশ তার রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ২৫টি পাটকল বন্ধ করে দিতে যাচ্ছে!সত্য-মিথ্যে মিলিয়ে এক বিভ্রান্তিকর অজুহাত দেখিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে রাষ্ট্রের অধীনে থাকা পাটকলগুলো।এগুলো নামে মাত্র কারখানা,বাজার অর্থনীতিতে বিন্দুমাত্র ভূমিকা রাখে না,কোটি কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি।তাই সাত-পাঁচ না ভেবে বন্ধ করে দেওয়াই উত্তম সিদ্ধান্ত।এবার বন্ধ করার জন্য তারা বলছেন- “মৌসুমে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকলগুলো পর্যাপ্ত কাঁচা পাট ক্রয় ও মজুদ করতে পারেনি।” বন্ধ করার পেছনে এই খোঁড়া অজুহাতটাই যথেষ্ট।
✍যখন ভুল তথ্যমিশ্রিত হলফনামা দাঁড় করিয়ে লোকসানের কথা বলে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকল বন্ধ করা হচ্ছে, ঠিক সেই সময়ে সোয়া ২ শ’ বেসরকারী পাটকল পূর্ণ উৎপাদনে চলছে! এই
বেসরকারী কারখানার মালিকরা কোথা হতে কাঁচামাল আমদানি করে? নিশ্চই তাদের নিজস্ব তৈরী কোন গোপন জায়গা থেকে!সরকারী পাটকলগুলো বন্ধ হচ্ছে ঠিকই কিন্তু কিছুদিন পরে ব্যক্তিউদ্যেগে তা ঠিকই চালু হবে!আর এসব বন্ধ হওয়ার পেছনে রয়েছে এক শ্রেণীর সুদৃঢ় পরিকল্পনা। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে,পরবর্তীতে বেসরকারী কলকারখানায় নাম লিখিয়ে এসব কারখানাগুলোর উৎপাদন পুরো দমে শুরু হবে!
✍যখন ব্যর্থতা স্কন্ধে চেপে বসে তখন তার উপর আরোপিত হয় এক শ্রেণীর অজুহাত।বন্ধ করার লক্ষ্যে তারা এও বলেছেন- “করোনায় বন্ধ থাকার কারণে মিলগুলো যথাযথভাবে পাট কিনতে পারেনি। এ কারণে এখন মিলগুলো চালু হলেও প্রয়োজনীয় উৎপাদন করতে পারছে না। কাঁচা পাট সংকটের কারণে বর্তমানে মিলগুলোতে উৎপাদন এক তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে।” তার সাথে যোগ হয় ব্যতিক্রমধর্মী একগাদা অজুহাত।
কে বলছেন? বিজেএমসি’র খুলনা অঞ্চলের লিয়াজোঁ কর্মকর্তা বনিজ উদ্দিন মিঞা। উপরমহলের ক’জনের কাছে ভিত্তিহীন এসব অজুহাতের প্রাচুর্যতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধির পাশাপাশি দিন দিন তাদের অবহেলা ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় সবার নিকট দৃষ্টিগোচর হয়।তাদের দেওয়া অজুহাতের কিছু নমুনা দেখে নেয়া যাক-
“পাট মৌসুমে মিলগুলো ভালমানের যে পাট ২১শ টাকা দরে ক্রয় করতো তা এখন পাওয়া যাচ্ছে না। এখন পাওয়া যাচ্ছে ক্রস পাট। তা মৌসুমে ১৯৫০ টাকা দরে বিক্রি হতো। কিন্তু এখন করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে পাট রপ্তানি বন্ধ। তাই পাটের দর ১৮শ টাকায় নেমে এসেছে। মিলগুলো এখন এই পাটই ক্রয় করছে। যা দিয়ে উৎপাদন চালিয়ে রাখা যাবে।(ঢাকা ট্রিবিউন, ৮মে, ২০২০)।”
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই পুলিশ,সেনাবাহিনীসহ অনেকেই সাধারণ জনগণকে ঘরে রাখার উদ্দেশ্যে সতর্ক নজরদারী শুরু করে। শত সতর্ক ও নজরদারী থাকা সত্ত্বেও দিন দিন আক্রান্ত ও মৃত্যুহার বেড়েই চলছে।এর মধ্যেই ‘ইচ্ছা থাকিলে উপায় হয়’-এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে পাটমন্ত্রী বলেন,”আমরা লোকসান নিয়ে পাটকল চালাতে পারি না। সরকার চিন্তা করেছে শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেক দিয়ে এই খাতকে এগিয়ে নিতে হবে।দেশে সরকারি পাটকলগুলো পিপিই’র আওতায় চলবে। আর শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেক দেয়া হবে।পাটকল শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেক দেওয়ার পর সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিই’র) মাধ্যমে পাটকলগুলোকে আধুনিকায়ন করে উৎপাদনমুখী করা হবে। তখন শ্রমিকরা সেখানে চাকরি করার সুযোগ পাবেন। ” (সময় সংবাদ,২৮.০৬.২০২০) যেখানে সেবা দেওয়া চিকিৎসকের জীবন অনিশ্চিত,যেখানে চিকিৎসকরাই মারা যাচ্ছেন সেখানে শ্রমিকদের শুধুমাত্র গোল্ডেন হ্যান্ডশেক দিয়ে তাদের জীবনকে কতটুকু নিরাপদ রাখা যাবে?উত্তরটা সহজেই অনুমেয়।
নাম:বাঁধন মজুমদার
ডিপার্টমেন্ট:টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার
প্রতিষ্ঠান:জাতীয় বস্ত্র প্রকৌশল ও গবেষণা ইনস্টিটিউট