Saturday, November 16, 2024
Magazine
More
    HomeBusiness২৫টি রাষ্ট্রায়াত্ব পাটকল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, কারণ কিন্তু ‘করোনা’ নয়!-৩য় ও শেষ...

    ২৫টি রাষ্ট্রায়াত্ব পাটকল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, কারণ কিন্তু ‘করোনা’ নয়!-৩য় ও শেষ পর্ব

    ✍বাংলাদেশের সরকারী পাটকলের অনেক শ্রমিকের ভবিষ্যৎ এই কলকারখানাগুলোর উপর নির্ভরশীল ছিলো। এই পাটকল বন্ধ হওয়ার খবর প্রচার হওয়ার পর -“শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ ও চিকিৎসাসহ যাবতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে পাটকল করা বন্ধ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন । বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি জহিরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল রায় যৌথ বিবৃতিতে বলেন, সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অথচ করোনা মহামারির এ সময়ে শ্রমিকদের খাদ্য,চিকিৎসাসহ যাবতীয় কোনো নিশ্চয়তা না দিয়েই এ সিদ্ধান্ত শ্রমিকদের জীবনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবে। গত চার বছরে পাটকল শ্রমিকদের বর্ধিত মজুরি বকেয়া পড়েছে প্রায় ১৬১২ কোটি টাকা। দেশের পাট শিল্প, পাটশ্রমিক ও চাষিদের রক্ষায় সরকারের টাকা নেই অথচ অস্ত্র কিনতে সরকারের টাকার অভাব হয় না। বাংলাদেশ চীন থেকে দু’টি সাবমেরিন কিনেছে ১৬৫০ কোটি টাকায়। এখন কক্সবাজারে সাবমেরিন ঘাঁটি তৈরি করা হবে ১০২ কোটি টাকায়। সরকার ভারত থেকে ৪ হাজার কোটি টাকার ও রাশিয়া থেকে ৮ হাজার কোটি টাকার অস্ত্র কিনবে (বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম, জুন ২৫, ২০২০)।”

    ✍আমরা আরও একটু পেছনে গিয়ে যদি দেখি-তাহলে ভালেমানুষরুপী কিছু মানুষের মাধ্যমেই সামনে আসে সামান্য কিছু সত্য। আর সেটা হলো-
    ‘২৫টি সরকারি পাটকল নিয়ে বেকায়দায় সরকার, বছরে লোকসান ৪ হাজার কোটি টাকা!’
    তখনকার হিসেব মতে বিজেএমসির অধীন রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ২৫টি পাটকলে স্থায়ী শ্রমিক ছিল ২৫ হাজার ৫১৯ জন। বদলি তালিকাভুক্ত শ্রমিক ২২ হাজার ৯৯৮ জন। দৈনিকভিত্তিক তালিকাভুক্ত শ্রমিক ৪ হাজার ৯১০ জন। এসব মিলে তখন প্রতিদিন গড়ে কাজ করত ২৭ হাজার ৯৫৭ জন শ্রমিক।

    ✍এসব শ্রমিকের জন্য ২০১৫ সালের মজুরি কমিশন গঠিত হলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। এখনও তারা ২০১০ সালের বেতন কাঠামোতেই বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। এরপরও মাসের পর মাস বাকিই থাকছে।
    ২০১১-১২ অর্থবছরে বিজেএমসির লোকসান ছিল ৭৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এরপর ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৩৯৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫১৩ কোটি ৮ লাখ টাকা, পরের অর্থবছরে ৭২৯ কোটি টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৬৬৯ কোটি ২০ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে (প্রাইম নিউজ বিডি ডট কম, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৯)
    “পাট মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) আওতাধীন ২৬টি পাটকলের মধ্যে বর্তমানে চালু আছে ২৫টি। এর মধ্যে ২২টি পাটকল ও ৩টি নন-জুট। মিলস ফার্নিশিংস লিমিটেড নামের নন-জুট কারখানা ছাড়া বাকি ২৪ প্রতিষ্ঠান লোকসানে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিজেএমসির পাটকলগুলোর (জুট ও নন-জুট) লোকসানের পরিমাণ ছিল ৪৮১ কোটি টাকা (প্রথম আলো, ২২ জানুয়ারি, ২০১৮)”

    ✍শ্রমিক!শ্রমিক!!শ্রমিক!!!
    দুই পক্ষের অজুহাতই সেই শ্রমিক!দোষীকে সাজা দেওয়া অবশ্য কর্তব্য।কিন্তু যে বিচার করবে সে যদি দোষী হিসেবে সাব্যস্ত হয় তাহলে এ সমাজ বিচার চাইবে কার কাছে?
    সরকার বলছে, শ্রমিকের স্বার্থে লোকসান দিয়ে পাটকল চালাতে হচ্ছে। অন্যদিকে বিজেএমসি লোকসানের জন্য শ্রমিকদের বেশি মজুরি ও সংখ্যা বেশি হওয়াকে দায়ী করে আসছে।
    বিজেএমসি বলে ‘স্থায়ী শ্রমিকদের উচ্চ মজুরি পাটকলগুলোর লোকসানের প্রধান কারণ।প্রয়োজনের চেয়ে শ্রমিক বেশি। এ জন্য উৎপাদন খরচ বাড়ে। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকলগুলোতে গত জুনে ৩৩ হাজার ১৯১ স্থায়ী শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তা ছিল। এ ছাড়া তালিকাভুক্ত বদলি শ্রমিক ও দৈনিক ভিত্তিক শ্রমিক আরও ৩০ হাজার ৯৫২ জন। গত অর্থবছর সংস্থাটির আয় ছিল ১ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫৬ শতাংশ বা ৬৫১ কোটি টাকা শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তার মজুরি ও বেতন বাবদ ব্যয় হয়েছে।’ বিজেএমসি ও শ্রমিকনেতাদের ক্রোন্দলে শ্রমিক নেতারা বলেন-‘মজুরি বেশি হওয়া কখনো লোকসানের কারণ নয়। বিজেএমসির ব্যবস্থাপনা ঠিক থাকলে পাটকল লোকসানে পড়ত না। প্রয়োজনের চাহিদায় জনবল সংকটে আছে কারখানাগুলো।অবসরে যাওয়া স্থায়ী শ্রমিকের শূন্য পদে নিয়োগ হচ্ছে না।

    ✍এদিকে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে বেসরকারী পাট খাতের উৎপাদন ও জনশ্রুতি পাচ্ছে মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনের দিক দিয়ে।চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে পাট ও পাটপণ্য রপ্তানিতে আয় বেড়েছে ২১ শতাংশ। এর মধ্যে পাটকলগুলোর উৎপাদিত মূল পণ্য পাটসুতা ৩৩ শতাংশ এবং চট ও বস্তা রপ্তানি ৬ শতাংশ বেড়েছে। রপ্তানির ৮০ শতাংশই বেসরকারি পাটকলের দখলে। তার একমাত্র কারণ-পরিশ্রম ও সদৃচ্ছা। বিজেএমসিও স্বীকার করে- বেসরকারি পাটকলগুলোর ব্যবস্থাপনা ভালো, উৎপাদনশীলতা বেশি ও উৎপাদন খরচ কম। পাটকলের ব্যবসা নির্ভর করে কাঁচা পাট কেনার ওপর। কোনো পাটকল ১০০ টাকার পাট যদি ১৫০ টাকায় কেন, তাহলে লাভ করবে কিভাবে?’
    তবে ২৫টি পাটকল বন্ধ করে দেওয়া বা বিক্রি করে দেওয়া তো আর বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত নয়। এটা বর্তমানে থাকা সরকারের নীতিতেই ছিল।

    ✍“২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পরই বেসরকারীকরণ প্রক্রিয়া থেকে সরে আসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। এরপরই বেসরকারি হাতে ছেড়ে দেওয়া বিভিন্ন পাটকল সরকার নিজের হাতে নিয়ে এসে নতুন করে চালাতে চেষ্টা করে। কিন্তু সরকার চালাতে পারেনি (প্রথম আলো, ২২ জানুয়ারি ২০১৮)।”

    ✍এর পরবর্তী দৃশ্যপট অতীব পরিষ্কার,স্বচ্ছ পানির ন্যায়।এ বিষয়ে পরে কি ঘটবে সেটা ভবিষ্যৎদ্বানী করে দিয়ে এখানে যে কেউ জ্যোতিষের খেতাব লাভ করতে পারে।এই ১৬১২ কোটি টাকাও সরকার একবারে পরিশোধ করবে না,অথচ সবগুলো পাটকল লকআপ হবে।এই অজুহাত ও দায়িত্বহীনতার সিনেমায় তৃতীয় ব্যক্তি মানে শ্রমিকরা কিছুদিন রাস্তায় অবরোধ করবে।
    কিছু বিপক্ষ দল বিবৃতি দেবে। কিছু অভুক্ত কান্নারত শ্রমিকের করুন্ণ ছবি পত্র-পত্রিকায়, সামাজিক মাধ্যমে ঘুরে বেড়াবে। তাদের অজান্তেই কোনো পরিচালক হয়তো তৈরী করে ফেলবে শর্টফিল্ম বা কোনো ঔপন্যাসিক লিখে ফেলবে উপন্যাস।দিনের পর দিন তারা পথে বসে থাকতে থাকতে এক সময় করোনার ভয়ে প্রাণ বাঁচাতে ঘরে ফিরে যাবে। তাদের চোখের জল আপাত শুকোলেও দীর্ঘ মেয়াদে বুকের ভেতর কান্নার শব্দ পাওয়া যাবে,চোখ বুজলেই যখন অনিশ্চিত ভবিষ্যত দেখতে পাবে তখন আনমনেই বুকের ভেতরটা হাহাকার করে উঠবে।

    ✍কর্মকর্তা সিন্ডিকেটের কোনো ক্ষতি নেই। তারা একদিন এই মন্ত্রণালয় থেকে বদলি হয়ে অন্য কোনো মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত হবেন। তাদের চাকরি হারানোর ভয় কোন কালেই নেই।কেউ কেউ হয়ত আরও বেশি সুযোগ-সুবিধায় বেসরকারী পাটকলের তোয়ালে-চেয়ার দখল করে পত্রিকায়,চ্যানেলে,সভা,সেমিনারে পাটের ভবিষ্যৎ নিয়ে জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা দেবেন। দিতেই থাকবেন। দিতেই থাকবেন।

    নাম:বাঁধন মজুমদার
    ডিপার্টমেন্ট:টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার
    প্রতিষ্ঠান:জাতীয় বস্ত্র প্রকৌশল ও গবেষণা ইনস্টিটিউট

    RELATED ARTICLES

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    Related News

    - Advertisment -

    Most Viewed