মানুষ স্বভাবতই সবসময় নতুন কিছু চায়। নতুনত্ব মানুষকে সবসময় আকৃষ্ট করে থাকে। তাই মানুষের নতুনত্বকে প্রাধান্য দিয়ে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিগুলো নিয়ে এসেছে ভার্চুয়াল মিরর (আয়না)।
বর্তমানে অনলাইন/ই-কমার্স সাইট এর আধিক্য অনেকাংশে বেড়ে গেছে। মানুষ এখন সব ধরনের কাজই অনলাইনে করতে পারছে। পোশাক এর জন্যও এখন অনেকগুলো অনলাইন শপ আছে। মানুষ অন্যসব জিনিস অনলাইন থেকে কিনতে সাচ্ছন্দবোধ করলেও পোশাক কিনতে বরাবরই মানুষ দোকান থেকে কিনতে স্ব্যাচ্ছদ্যবোধ করে থাকে। এর পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ হলো ফিটিংস এর ইস্যুটি।অনলাইন থেকে কেনার আগে পোশাকটা পরে দেখা যায় না যে পোশাকটা কি শরীরের সাথে মানানসই হবে নাকি হবে না। দোকান থেকে কিনলে ট্রায়াল দিয়ে কিনতে পারে বলেই মানুষ দোকান থেকে কিনতে সাচ্ছন্দবোধ করে।
আগে সব দোকানে ট্রায়াল দেয়ার সিস্টেম থাকলেও বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে অনেক দোকানেই এই ট্রায়াল দেয়ার সিস্টেমটা বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে মানুষ আগের মত ট্রায়াল দিয়ে পোশাকটা শরীরের সাথে মানানসই হলো কিনা, রঙটা ভালো লাগতেসে কিনা সেটা দেখতে পারছে না। এর ফলে মানুষের কেনার আগ্রহটাও দিন দিন কমে যাচ্ছে। তাই এই সমস্যা থেকে পরিত্রান পাবার জন্য বর্তমানে অনেকগুলো ব্র্যান্ডের দোকান ভার্চুয়াল মিরর প্রযুক্তির দিকে ধাবিত হচ্ছে।
ভার্চুয়াল মিরর কী?
ভার্চুয়াল মিরর হলো বাস্তবের একটি বর্ধিত ধারণা। অর্থাৎ, কোনো একটা পোশাক পরা ছাড়াই ব্যবহারকারীকে ওই পোশাকটা পরলে কেমনে লাগবে সেটা একটা স্কিনে দেখানো। এটা একইসাথে বডি ফিটিংস দেখায় এবং মোশন রেন্ডারিং প্রযুক্তির (ক্রেতার বডির মুভমেন্ট বা নড়ন) মাধ্যমে ব্যবহারকারীকে দিনে ও রাতে পোশাকটা পরলে কেমন লাগবে সেটাও দেখায়। এই প্রযুক্তি নির্ভুলভাবে পোশাকের ফিটিংস দেখাতে সক্ষম। এটি গ্রাহকদের স্বল্প সময়ে অনেকগুলো পোশাক দেখাতে পারে যা একইসাথে গ্রাহকের সময় ও কষ্ট দুইটাই বেচেঁ যায়।
এ.আই. (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) ভিত্তিক ভার্চুয়াল মিরর কিভাবে কাজ করে?
একটি আয়না, আরএফআইডি (রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন) এবং অগমেন্টেড রিয়েলিটি প্রযুক্তি ব্যবহার করে যা ট্রায়াল/ফিটিংস রুমের কাজ করে থাকে। প্রথমে ক্রেতা তার পছন্দকৃত পোশাকটি ভার্চুয়াল মিরর এর সামনে আনে তখন মিররটি পোশাকটিকে স্কেন করে ফেলে। তারপর মিররটা ক্রেতার বডি স্কেন করে পোশাকটা পরলে তাকে কেমন লাগবে সেটা দেখায়। যখন ক্রেতা স্কিনের সামনে নড়াচড়া করে পুরো পোশাকটা দেখার জন্য তখন মিররও তাকে ৩৬০ ডিগ্রীতে পোশাকের বিভিন্ন দিক দেখায়। কিছু কিছে অনলাইন শপও বর্তমানে এই প্রযুক্তিটি ব্যবহার করে ব্যবহারকারীকে পোশাক, জুতা ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিকগুলো পরলে কেমন লাগবে তা দেখিয়ে থাকে।
ভার্চুয়াল মিরর কীভাবে বিক্রেতা ও ক্রেতাদের সাহায্য করবে?
ভার্চুয়াল মিরর বিক্রেতাদের বিক্রি অনেকাংশেই বাড়িয়ে তুলতে পারবে। এটা একটা নতুন প্রযুক্তি বলে এটা অধিক ক্রেতা আকর্ষণ করতে সাহায্য করবে। মানুষ পোশাক পরে যেভাবে পোশাকটির বিভিন্ন দিক দেখতে পারে ঠিক সেভাবে পোশাকটির বিভিন্ন দিক দেখতে পারে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে। এটা ক্রেতার অনেক সময় বাঁচিয়ে দেয় এবং কম সময়ের মধ্যে অনেকগুলো পোশাক দেখতে সাহায্য করে । ভার্চুয়াল মিরর এর বদৌলতে মানুয়ের ট্রায়াল রুম ব্যবহার করার ঝামেলা নেই। ট্রায়াল রুমে যাবার জন্য দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে সময় নষ্ট করা লাগছে না, শুধু মিরর এর সামনে পোশাকটা নিয়ে দাঁড়ালেই কাজ হচ্ছে। পোশাক পরে দেখা লাগছে না বলে এটা মানুষের জন্য অনেকটা নিরাপদ। কেননা এক পোশাক অনেকজন ট্রায়াল দেয়ার ফলে সহজেই একজনের শরীর থেকে অন্যজন এর শরীরে রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে, বিশেষভাবে করোনা।
কারা কারা ভার্চুয়াল মিরর ব্যবহার শুরু করেছে?
অনেকগুলো বড় বড় ব্যান্ড যেমন এইচএন্ডএম (H&M), জারা (Zara), বারবেরি (Burberry), রাল্ফ লরেন (Ralph Lauren) এই প্রযুক্তিটা ব্যবহার করা শুরু করেছে। এআর চালিত স্মার্ট এই আয়নাগুলো অনলাইন ও অফলাইন শপিংয়ের বড় একটা অংশে পরিণত হচ্ছে এবং মানুষের পোশাক ক্রয়ের পুরনো পদ্ধতিটা পরিবর্তন করে দিচ্ছে যে পদ্ধতিতে মানুষ কিনে অভ্যস্ত। এটা খুবই সুবিধাজনক ও সময়োপযোগী দক্ষ প্রযুক্তি যার ব্যবহার ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে এবং অদূর ভবিষ্যতে সব জায়গায় এই প্রযুক্তিই ব্যবহার হবে।
Writer Information:
Name: Adnan Mahmud Chowdhury
Institute: Primeasia University
Department: Textile Engineering.
Batch: 201
Mobile No: 01991239763
Email: [email protected]